দেশের অন্যতম মশা গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। মশা নিয়ে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভেক্টর মশা নিয়ন্ত্রণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর ৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ পৃথিবীর বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্স’ পদক পেয়েছেন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
বর্তমানে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির কী অবস্থা?
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর এ সময়ে পরিস্থিতি খারাপ। এ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের মতো গতানুগতিক নয়।
এ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ কী?
এ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর প্যাটার্নের পরিবর্তন হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবরেও বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে এডিস মশার ঘনত্ব সম্পর্কিত। আবার মশার ঘনত্বের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয়ত, আমরা সময়মতো এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। এখনো প্রকৃতিতে এডিস মশার ঘনত্বের মাত্রা বেশি। সেই সঙ্গে সমাজে ডেঙ্গু রোগীও আছে। তৃতীয়ত, ডেঙ্গু রোগীকেও আমরা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। জলবায়ু পরিবর্তন, এডিস মশার ঘনত্ব বেশি এবং ডেঙ্গু রোগী যখন একই সঙ্গে প্রকৃতি ও সমাজে উপস্থিত থাকে, তখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে কসমোপলিটন ও ডেন-২ নামের নতুন ভ্যারিয়েন্টের কথা এক গবেষণায় এসেছে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ডেঙ্গু বা যেকোনো ভাইরাস খুব দ্রুত মিউটেটেড বা পরিবর্তিত হয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে। আমরা যেমন কোভিড পরিস্থিতির সময় দেখেছি নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট। ঠিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও জলবায়ু পরিবর্তন বা পারিপার্শ্বিক প্রভাবের ডেঙ্গু ভাইরাস মিউটেটেড হয়ে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করতে পারে। তবে আপনি যাঁদের গবেষণার কথা বলছেন, তাঁদের গবেষণার বিষয়টি আমার পুরোপুরি পড়ার সুযোগ হয়নি। দেখলে হয়তো বলতে পারব তাঁদের গবেষণাটি কতটুকু সঠিক।
ডেঙ্গু গত বছর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবার ঢাকা-চট্টগ্রামসহ ১৩টি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ কী?
ডেঙ্গুর প্রভাব দেশের কোন এলাকায় কেমন হবে, সেটা নির্ভর করে সেই এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কেমন, তার ওপর। একটি এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্বের ইনডেক্স (ব্রোটো ইনডেক্স) যদি ২০ বা তার ওপরে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর রোগীও থাকে, তাহলে ওই এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকবে। আমরা আগেই বলেছিলাম যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর এবং ঢাকার কাছে নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছি। আমরা বলেছিলাম এসব এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। কোনো এলাকায় যখন ডেঙ্গু বাড়তে থাকে, সেই এলাকার এডিস মশার ঘনত্ব বা রোগীর সংখ্যার যেকোনো একটির সংখ্যা কমানো সম্ভব না হলে সেই এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। এ বছর এই জেলাগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনের বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় মেয়র না থাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি বৃদ্ধির কারণ নয় কি?
নির্বাচিত মেয়র থাকা বা না থাকার সঙ্গে ডেঙ্গু বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে মশা অথবা ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণ। মশা বা ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণের জন্য যাঁরা কাজ করে থাকেন, তাঁদের চেইন অব কমান্ড যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। এখন যাঁরা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাঁদের দিকনির্দেশনা কেমন হচ্ছে, তাঁদের কমান্ড মাঠপর্যায়ে কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়ররা কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ করেন না। তাঁদের দিকনির্দেশনায় কাজটি হয়ে থাকে। এটার জন্য আলাদা একটা বিভাগই আছে। এই বিভাগ সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ কতটা ঘটাতে পারল, তার ওপর নির্ভর করে ফলাফল। এখন যেসব এলাকায় চেইন অব কমান্ড ভালো কাজ করছে, সেসব জায়গায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আছে। আর যে এলাকায় চেইন অব কমান্ড ভালো কাজ করছে না, সেখানে এডিস মশার আক্রমণ বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার কি এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে আপনার মনে হয়?
কখনোই কোনো সরকার চায় না রাষ্ট্রের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হোক। সেটা অন্তর্বর্তী সরকারই হোক বা নির্বাচিত সরকারই হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো ছোট। এই ছোট কাঠামো দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করা একটু কঠিন। তারা হয়তোবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজগুলো করছে। কোনটার গুরুত্ব আগে, সেই বিবেচনা থেকে কাজগুলো ধীরে ধীরে করছে।
এত এত কার্যক্রম, তবু মশার ঘনত্ব কমে না কেন? ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু কমছে না কেন?
আমার একটা প্রবন্ধে লিখেছিলাম, ‘মেয়র আসে, মেয়র যায়; কিন্তু ডেঙ্গু থেকে যায় এবং মানুষও মারা যায়।’ বাংলাদেশে ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কম-বেশি লোকের মৃত্যু ঘটছে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমরা গবেষণা করছি ডেঙ্গু নিয়ে। আমরা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আমাদের পরামর্শগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যে কারণে ডেঙ্গুর বাহক মশা এবং ডেঙ্গু রোগটা থেকেই গেছে।
দেশের যেকোনো ভালো উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের এই বিষয়টিকে চাকরি হিসেবে নিলে চলবে না, এটাকে সেবা হিসেবে নিতে হবে, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। তবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যখন কোনো একটি রাষ্ট্রের সরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার করবে এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করবে, তাহলে যাঁরা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন তাঁরা সিরিয়াসলি কাজ করবেন। মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব গবেষক দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন, তাঁদের নিয়ে কর্মশালা করে যদি একটি মডেল তৈরি করা হয় এবং সেটি বাস্তবায়ন করা হয়, আমি বিশ্বাস করি এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব। আমার দীর্ঘ সময়ের গবেষণা এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের একটি মডেল প্রস্তাব করেছি। আমার মডেলটি দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ‘কে বি মডেল’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। আমি এই মডেলটি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সাবেক স্বাস্থ্য ডিজি এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকেও দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা গেছে, সেই মডেলটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, কোনো না কোনো সরকার যথার্থ রাজনৈতিক অঙ্গীকার করে সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশ থেকে ডেঙ্গু নির্মূল হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের কলকাতা শহর যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না?
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপনার পরামর্শ কী?
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা যখন মাঠপর্যায়ে এডিস মশার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় যাই, তখন দেখতে পাই ঢাকার অভিজাত এলাকার ভবনের বেজমেন্টে গাড়ি রাখার জায়গায় এডিস মশার ঘনত্ব অনেক। বাড়িতে টায়ার, ভাঙা কমোড, বিভিন্ন বড় পাত্র ফেলে রেখেছে, সেখানে এডিস মশা পাচ্ছি। কুকুরের খাবারের সঙ্গে একটা পানির পাত্র রেখেছে, সেখানেও আমরা এডিস মশা পেয়েছি। এসব জিনিস কিন্তু আমাদের বাড়ি বা এর আশপাশে থাকে। তাই আমাদের বাড়ি বা বাড়ির আশপাশে কোনো পাত্রে যেন পানি জমা না থাকে। যদি এমন কোনো পাত্র থাকে, তাহলে পাত্রটিকে উল্টিয়ে রাখতে হবে যাতে সেখানে পানি জমে এডিস মশার প্রজনন না হতে পারে। যদি এমন হয় যে পাত্রটি উল্টিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। মশার কয়েল এবং অ্যারোসলের মতো মশার লার্ভা নিধনে ব্যবহৃত ‘রেডি ফর ইউজ’ কীটনাশক সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে আনা দরকার। তাহলে তারা নিজেরাই কিনে এগুলো প্রয়োগ করতে পারবে। ব্যক্তিপর্যায়ে যদি নিশ্চিত করা যায়—আমার বাড়ি বা আশপাশে এডিস মশার প্রজনন হয় না—এভাবে যদি প্রতিটা বাড়ির মালিক নিশ্চিত করে, তাহলে অর্ধেকের বেশি এডিস মশা কমে যাবে। আর নাগরিকদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি অফিস এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে, তাহলে সম্মিলিতভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা কোনো অসম্ভব ব্যাপার না।
বর্তমানে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির কী অবস্থা?
আমি দুই মাস আগেই বলেছিলাম, নভেম্বরে পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমি সেটা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিটা আগের বছরগুলোর মতো না। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কমে আসতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর এ সময়ে পরিস্থিতি খারাপ। এ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের মতো গতানুগতিক নয়।
এ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ কী?
এ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর প্যাটার্নের পরিবর্তন হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবরেও বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে এডিস মশার ঘনত্ব সম্পর্কিত। আবার মশার ঘনত্বের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয়ত, আমরা সময়মতো এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। এখনো প্রকৃতিতে এডিস মশার ঘনত্বের মাত্রা বেশি। সেই সঙ্গে সমাজে ডেঙ্গু রোগীও আছে। তৃতীয়ত, ডেঙ্গু রোগীকেও আমরা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। জলবায়ু পরিবর্তন, এডিস মশার ঘনত্ব বেশি এবং ডেঙ্গু রোগী যখন একই সঙ্গে প্রকৃতি ও সমাজে উপস্থিত থাকে, তখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে কসমোপলিটন ও ডেন-২ নামের নতুন ভ্যারিয়েন্টের কথা এক গবেষণায় এসেছে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ডেঙ্গু বা যেকোনো ভাইরাস খুব দ্রুত মিউটেটেড বা পরিবর্তিত হয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে। আমরা যেমন কোভিড পরিস্থিতির সময় দেখেছি নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট। ঠিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও জলবায়ু পরিবর্তন বা পারিপার্শ্বিক প্রভাবের ডেঙ্গু ভাইরাস মিউটেটেড হয়ে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করতে পারে। তবে আপনি যাঁদের গবেষণার কথা বলছেন, তাঁদের গবেষণার বিষয়টি আমার পুরোপুরি পড়ার সুযোগ হয়নি। দেখলে হয়তো বলতে পারব তাঁদের গবেষণাটি কতটুকু সঠিক।
ডেঙ্গু গত বছর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবার ঢাকা-চট্টগ্রামসহ ১৩টি জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ কী?
ডেঙ্গুর প্রভাব দেশের কোন এলাকায় কেমন হবে, সেটা নির্ভর করে সেই এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কেমন, তার ওপর। একটি এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্বের ইনডেক্স (ব্রোটো ইনডেক্স) যদি ২০ বা তার ওপরে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর রোগীও থাকে, তাহলে ওই এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকবে। আমরা আগেই বলেছিলাম যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর এবং ঢাকার কাছে নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছি। আমরা বলেছিলাম এসব এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। কোনো এলাকায় যখন ডেঙ্গু বাড়তে থাকে, সেই এলাকার এডিস মশার ঘনত্ব বা রোগীর সংখ্যার যেকোনো একটির সংখ্যা কমানো সম্ভব না হলে সেই এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। এ বছর এই জেলাগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনের বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় মেয়র না থাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি বৃদ্ধির কারণ নয় কি?
নির্বাচিত মেয়র থাকা বা না থাকার সঙ্গে ডেঙ্গু বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে মশা অথবা ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণ। মশা বা ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণের জন্য যাঁরা কাজ করে থাকেন, তাঁদের চেইন অব কমান্ড যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। এখন যাঁরা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাঁদের দিকনির্দেশনা কেমন হচ্ছে, তাঁদের কমান্ড মাঠপর্যায়ে কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়ররা কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ করেন না। তাঁদের দিকনির্দেশনায় কাজটি হয়ে থাকে। এটার জন্য আলাদা একটা বিভাগই আছে। এই বিভাগ সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ কতটা ঘটাতে পারল, তার ওপর নির্ভর করে ফলাফল। এখন যেসব এলাকায় চেইন অব কমান্ড ভালো কাজ করছে, সেসব জায়গায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আছে। আর যে এলাকায় চেইন অব কমান্ড ভালো কাজ করছে না, সেখানে এডিস মশার আক্রমণ বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
অন্তর্বর্তী সরকার কি এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে আপনার মনে হয়?
কখনোই কোনো সরকার চায় না রাষ্ট্রের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হোক। সেটা অন্তর্বর্তী সরকারই হোক বা নির্বাচিত সরকারই হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো ছোট। এই ছোট কাঠামো দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করা একটু কঠিন। তারা হয়তোবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজগুলো করছে। কোনটার গুরুত্ব আগে, সেই বিবেচনা থেকে কাজগুলো ধীরে ধীরে করছে।
এত এত কার্যক্রম, তবু মশার ঘনত্ব কমে না কেন? ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু কমছে না কেন?
আমার একটা প্রবন্ধে লিখেছিলাম, ‘মেয়র আসে, মেয়র যায়; কিন্তু ডেঙ্গু থেকে যায় এবং মানুষও মারা যায়।’ বাংলাদেশে ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কম-বেশি লোকের মৃত্যু ঘটছে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমরা গবেষণা করছি ডেঙ্গু নিয়ে। আমরা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আমাদের পরামর্শগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যে কারণে ডেঙ্গুর বাহক মশা এবং ডেঙ্গু রোগটা থেকেই গেছে।
দেশের যেকোনো ভালো উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের এই বিষয়টিকে চাকরি হিসেবে নিলে চলবে না, এটাকে সেবা হিসেবে নিতে হবে, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। তবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যখন কোনো একটি রাষ্ট্রের সরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার করবে এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করবে, তাহলে যাঁরা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন তাঁরা সিরিয়াসলি কাজ করবেন। মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব গবেষক দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন, তাঁদের নিয়ে কর্মশালা করে যদি একটি মডেল তৈরি করা হয় এবং সেটি বাস্তবায়ন করা হয়, আমি বিশ্বাস করি এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব। আমার দীর্ঘ সময়ের গবেষণা এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের একটি মডেল প্রস্তাব করেছি। আমার মডেলটি দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ‘কে বি মডেল’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। আমি এই মডেলটি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সাবেক স্বাস্থ্য ডিজি এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকেও দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা গেছে, সেই মডেলটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, কোনো না কোনো সরকার যথার্থ রাজনৈতিক অঙ্গীকার করে সেটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশ থেকে ডেঙ্গু নির্মূল হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের কলকাতা শহর যদি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না?
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপনার পরামর্শ কী?
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা যখন মাঠপর্যায়ে এডিস মশার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় যাই, তখন দেখতে পাই ঢাকার অভিজাত এলাকার ভবনের বেজমেন্টে গাড়ি রাখার জায়গায় এডিস মশার ঘনত্ব অনেক। বাড়িতে টায়ার, ভাঙা কমোড, বিভিন্ন বড় পাত্র ফেলে রেখেছে, সেখানে এডিস মশা পাচ্ছি। কুকুরের খাবারের সঙ্গে একটা পানির পাত্র রেখেছে, সেখানেও আমরা এডিস মশা পেয়েছি। এসব জিনিস কিন্তু আমাদের বাড়ি বা এর আশপাশে থাকে। তাই আমাদের বাড়ি বা বাড়ির আশপাশে কোনো পাত্রে যেন পানি জমা না থাকে। যদি এমন কোনো পাত্র থাকে, তাহলে পাত্রটিকে উল্টিয়ে রাখতে হবে যাতে সেখানে পানি জমে এডিস মশার প্রজনন না হতে পারে। যদি এমন হয় যে পাত্রটি উল্টিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। মশার কয়েল এবং অ্যারোসলের মতো মশার লার্ভা নিধনে ব্যবহৃত ‘রেডি ফর ইউজ’ কীটনাশক সাধারণ জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে আনা দরকার। তাহলে তারা নিজেরাই কিনে এগুলো প্রয়োগ করতে পারবে। ব্যক্তিপর্যায়ে যদি নিশ্চিত করা যায়—আমার বাড়ি বা আশপাশে এডিস মশার প্রজনন হয় না—এভাবে যদি প্রতিটা বাড়ির মালিক নিশ্চিত করে, তাহলে অর্ধেকের বেশি এডিস মশা কমে যাবে। আর নাগরিকদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত স্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি অফিস এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে, তাহলে সম্মিলিতভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা কোনো অসম্ভব ব্যাপার না।
দলীয় রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পাশে রেখেই ইউনূস সরকারের কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে এর ১০০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময়টায়। তবে সাধারণ মানুষ মনে হয় প্রতিদিনই তার জীবনে সরকারের ভূমিকা বিচার করে দেখছে।
১ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছু যে হয়নি, তা নয়। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অস্থিরতার লক্ষণ অস্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই তিন দফায় উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দবন্ধ হলো ‘খোলনলচে’। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছি। বাংলা বাগধারায় আমরা পড়েছি ‘খোলনলচে পালটানো’। বাংলা অভিধানে খোল শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেঅফিসে যাতায়াতের সময় স্টাফ বাসে পরিচয়ের সূত্রে ফারজানা আক্তার আজিমপুরে নিজের বাসায় সাবলেট দিয়েছিলেন ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে। কিন্তু ফাতেমা যে একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, সেটা তাঁর জানা ছিল না।
২ ঘণ্টা আগে