অরুণ কর্মকার
সমগ্র বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে। আমূল বদলে যাওয়ার স্বপ্ন। বাংলাদেশকে এই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, এই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে কেন্দ্র করেই স্বপ্নগুলো আবর্তিত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ প্রস্তুত হচ্ছে দিনবদলের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করার জন্য।
স্বপ্নের সেই বাংলাদেশে চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ছুটবে না কর্মক্ষম কোনো তরুণ। বরং উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁরা প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন এ দেশের মানুষের জন্য। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেও প্রচুর চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে এখানে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে সেই বাংলাদেশ হবে বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ স্থান। বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার সীমাবদ্ধ বেড়াজাল ছিঁড়ে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা নানা রকম সৃজনশীল ধারণাও পাবেন বাংলাদেশের কাছে।
সদ্য সমাপ্ত বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে লক্ষণীয় আগ্রহ দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সেই স্বপ্নযাত্রায় শরিক হওয়ার। তাঁদের অনেকে এখানে বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও দিয়েছেন। চীন থেকে ২০০ জন বিনিয়োগকারীসহ একজন মন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও খবর বেরিয়েছে।
স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ এমন হবে যে প্রতিবেশীদের কাছে দেশটি ঈর্ষার বিষয় হয়ে উঠবে। সেই বাংলাদেশকে তারা সমীহ করে চলবে। তাদের সঙ্গে ঝুলে থাকা দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোর ফয়সালা হবে। হোক তা তিস্তার পানি বণ্টন কিংবা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন। শুধু প্রতিবেশীরা কেন, সারা পৃথিবী সেই বাংলাদেশের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে। এখনকার শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, সেবা খাত হবে পৃথিবীতে নতুন বিস্ময় সৃষ্টিকারী। স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ হবে প্রকৃত অর্থেই সমৃদ্ধ। প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রা হবে মসৃণ, সুন্দর।
বাংলাদেশকে আজ এই স্বপ্ন যাঁরা কিংবা যিনি দেখাচ্ছেন, তাঁরা কিংবা তিনি এই স্বপ্ন পূরণের পথের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কেও সম্যক জানেন বলে আশা করি। তবে সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার কৌশলও তাঁদের জানা আছে বলে মনে করি। আছে স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সাহস ও মনোবলও। আজ দেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাঁদের দেখানো স্বপ্নের সহযাত্রী। তারপরও রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের কিছু কিছু ঘটনা সারা দেশে অশনিসংকেত ছড়াচ্ছে। তাতে ওই স্বপ্নযাত্রী মানুষেরাও নিঃশঙ্ক থাকতে পারছেন না। ওইসব ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মবতন্ত্র। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই এই মবের প্রকৃতি ছিল রাজনৈতিক। পর্যায়ক্রমে এখন সেই মবের প্রকৃতিতে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। যেকোনো অজুহাতে একটা মব সৃষ্টি করে ভাঙচুর, লুটপাট করা ক্রমান্বয়ে এক সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরূপ প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এই মবতন্ত্র যে এতটা ডালপালা মেলতে পেরেছে, তার প্রধান কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্পৃহতা। এই বাহিনীর প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা ছাড়া যে এসব ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, সে কথা সবাই বোঝে। কিন্তু একটি সফল গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব ঘটনা রোধে অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারের জন্য এবং জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত এবং এখনো পারে। সেটা যে দেখা যাচ্ছে না, মানুষের কাছে তা এক রহস্য বটে।
অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা প্রধান উপদেষ্টা যে স্বপ্নগুলো বাংলাদেশকে দেখাচ্ছেন, সেগুলো বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে অপরিহার্য কাজটি হলো রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং তার যথার্থ বাস্তবায়ন। কিন্তু সেই সংস্কারের বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মতৈক্যের তুলনায় মতানৈক্যের পাল্লাই এখন পর্যন্ত ভারী বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ণের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহে সংস্কারের প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং নবগঠিত এনসিপির মধ্যে ভিন্নমত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অন্য ছোট দলগুলোরও স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে, যাকে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য অনুকূল বলা যায় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের প্রণীত সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যতটুকু আলোচনা করেছে, তাতে দলগুলোর মধ্যেকার ভিন্নমত কমে আসা কিংবা জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতির কোনো লক্ষণ নেই। কারণ, মুখে যতই গণতন্ত্র, রাষ্ট্র সংস্কার প্রভৃতির কথা বলুক না কেন, কোনো দলই তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে নতুন কিছু গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। ফলে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলোর পরিবর্তন সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য কতটা সম্ভব, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সন্দেহ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। বিএনপি এই সুপারিশের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেছে। তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ফিরে যেতে চায়। তাদের স্পষ্ট কথা হলো, সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ পঞ্চম সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। আর ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদে জাতীয়তাবাদ, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য পঞ্চম সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি এটা ছাড়া অন্য কিছু মানবে না।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত পরিবর্তনই মানতে চায়। শুধু বহুত্ববাদের পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিস্থাপন করতে চায়। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সবই মানে। কিন্তু তারা চায় নতুন সংবিধান এবং গণপরিষদের নির্বাচন। এ রকম আরও অনেক বিষয়ে বর্তমানে ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতভেদ আছে।
কিন্তু কথা হলো, এই মতভেদ না ঘুচলে, অন্তত ন্যূনতম একটা ঐকমত্য না হলে তো কোনো সংস্কারই হবে না। আর সংস্কার না হলে রাষ্ট্রের চরিত্র অপরিবর্তিত থাকবে। সেই চরিত্রের রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে কতটুকু সহায়ক হবে, তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
সমগ্র বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে। আমূল বদলে যাওয়ার স্বপ্ন। বাংলাদেশকে এই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, এই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে কেন্দ্র করেই স্বপ্নগুলো আবর্তিত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ প্রস্তুত হচ্ছে দিনবদলের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করার জন্য।
স্বপ্নের সেই বাংলাদেশে চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ছুটবে না কর্মক্ষম কোনো তরুণ। বরং উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁরা প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন এ দেশের মানুষের জন্য। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেও প্রচুর চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে এখানে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে সেই বাংলাদেশ হবে বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ স্থান। বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার সীমাবদ্ধ বেড়াজাল ছিঁড়ে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা নানা রকম সৃজনশীল ধারণাও পাবেন বাংলাদেশের কাছে।
সদ্য সমাপ্ত বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে লক্ষণীয় আগ্রহ দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সেই স্বপ্নযাত্রায় শরিক হওয়ার। তাঁদের অনেকে এখানে বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও দিয়েছেন। চীন থেকে ২০০ জন বিনিয়োগকারীসহ একজন মন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও খবর বেরিয়েছে।
স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ এমন হবে যে প্রতিবেশীদের কাছে দেশটি ঈর্ষার বিষয় হয়ে উঠবে। সেই বাংলাদেশকে তারা সমীহ করে চলবে। তাদের সঙ্গে ঝুলে থাকা দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোর ফয়সালা হবে। হোক তা তিস্তার পানি বণ্টন কিংবা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন। শুধু প্রতিবেশীরা কেন, সারা পৃথিবী সেই বাংলাদেশের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে। এখনকার শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, সেবা খাত হবে পৃথিবীতে নতুন বিস্ময় সৃষ্টিকারী। স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ হবে প্রকৃত অর্থেই সমৃদ্ধ। প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রা হবে মসৃণ, সুন্দর।
বাংলাদেশকে আজ এই স্বপ্ন যাঁরা কিংবা যিনি দেখাচ্ছেন, তাঁরা কিংবা তিনি এই স্বপ্ন পূরণের পথের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কেও সম্যক জানেন বলে আশা করি। তবে সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার কৌশলও তাঁদের জানা আছে বলে মনে করি। আছে স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সাহস ও মনোবলও। আজ দেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাঁদের দেখানো স্বপ্নের সহযাত্রী। তারপরও রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের কিছু কিছু ঘটনা সারা দেশে অশনিসংকেত ছড়াচ্ছে। তাতে ওই স্বপ্নযাত্রী মানুষেরাও নিঃশঙ্ক থাকতে পারছেন না। ওইসব ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মবতন্ত্র। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই এই মবের প্রকৃতি ছিল রাজনৈতিক। পর্যায়ক্রমে এখন সেই মবের প্রকৃতিতে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। যেকোনো অজুহাতে একটা মব সৃষ্টি করে ভাঙচুর, লুটপাট করা ক্রমান্বয়ে এক সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরূপ প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এই মবতন্ত্র যে এতটা ডালপালা মেলতে পেরেছে, তার প্রধান কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্পৃহতা। এই বাহিনীর প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা ছাড়া যে এসব ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, সে কথা সবাই বোঝে। কিন্তু একটি সফল গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব ঘটনা রোধে অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারের জন্য এবং জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত এবং এখনো পারে। সেটা যে দেখা যাচ্ছে না, মানুষের কাছে তা এক রহস্য বটে।
অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা প্রধান উপদেষ্টা যে স্বপ্নগুলো বাংলাদেশকে দেখাচ্ছেন, সেগুলো বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে অপরিহার্য কাজটি হলো রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং তার যথার্থ বাস্তবায়ন। কিন্তু সেই সংস্কারের বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মতৈক্যের তুলনায় মতানৈক্যের পাল্লাই এখন পর্যন্ত ভারী বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ণের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহে সংস্কারের প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং নবগঠিত এনসিপির মধ্যে ভিন্নমত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অন্য ছোট দলগুলোরও স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে, যাকে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য অনুকূল বলা যায় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের প্রণীত সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যতটুকু আলোচনা করেছে, তাতে দলগুলোর মধ্যেকার ভিন্নমত কমে আসা কিংবা জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতির কোনো লক্ষণ নেই। কারণ, মুখে যতই গণতন্ত্র, রাষ্ট্র সংস্কার প্রভৃতির কথা বলুক না কেন, কোনো দলই তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে নতুন কিছু গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। ফলে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলোর পরিবর্তন সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য কতটা সম্ভব, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সন্দেহ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। বিএনপি এই সুপারিশের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেছে। তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ফিরে যেতে চায়। তাদের স্পষ্ট কথা হলো, সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ পঞ্চম সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। আর ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদে জাতীয়তাবাদ, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য পঞ্চম সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি এটা ছাড়া অন্য কিছু মানবে না।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত পরিবর্তনই মানতে চায়। শুধু বহুত্ববাদের পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিস্থাপন করতে চায়। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সবই মানে। কিন্তু তারা চায় নতুন সংবিধান এবং গণপরিষদের নির্বাচন। এ রকম আরও অনেক বিষয়ে বর্তমানে ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতভেদ আছে।
কিন্তু কথা হলো, এই মতভেদ না ঘুচলে, অন্তত ন্যূনতম একটা ঐকমত্য না হলে তো কোনো সংস্কারই হবে না। আর সংস্কার না হলে রাষ্ট্রের চরিত্র অপরিবর্তিত থাকবে। সেই চরিত্রের রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে কতটুকু সহায়ক হবে, তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এবার যে নববর্ষের আগমন, তা রাঙিয়ে দিয়ে যাক প্রত্যেক মানুষের জীবন। বাংলা নববর্ষের উজ্জীবনী সুধায় স্নান করুক মানুষ। আশা ও আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নপূরণে সার্থক হোক পৃথিবী। গ্লানি, জ্বরা মুছে গিয়ে অগ্নিস্নানে ধরণিকে শুচি করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ...
২ দিন আগেবাংলা নববর্ষ বরণকে কেন্দ্র করে আমাদের নগরকেন্দ্রিক জীবনে উপচানো আবেগ-উচ্ছ্বাস উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আবেগ-উচ্ছ্বাস জাতিগত পারস্পরিক সৌহার্দ্যের নয়, সমষ্টিগতও নয়, একান্তই আত্মকেন্দ্রিকতায় সীমাবদ্ধ।
২ দিন আগেনতুন বছরে প্রবেশ করলাম আমরা। পৃথিবীব্যাপী বসবাসরত নানা জনগোষ্ঠী যেমন নতুন বছরকে উৎসবের মাধ্যমে বরণ করে নেয়, তেমনি বাঙালিও নানা আনন্দ-আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। একটি নতুন আশা, উদ্দীপনা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বছরের প্রথম দিনটিতে।
২ দিন আগেআশেকা ইরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক চেয়ারপারসন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র জেন্ডার, ভূ-কৌশলগত ও আঞ্চলিক সম্পর্ক নিয়ে। ফিলিস্তিন পরিস্থিতিতে আরব বিশ্বের ভূমিকা...
৩ দিন আগে