সাদিক হাসান ইমন
সমৃদ্ধিশালী সংস্কৃতির দেশ হিসেবে বিদিত আমেরিকায় গান কালচার বা বন্দুক সংস্কৃতির অপব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কোভিড-১৯ মহামারির ধকলে বিপর্যস্ত অর্থনীতির অবক্ষয় পোক্ত হাতে সামাল দিয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও, দেশটিকে বন্দুক সংস্কৃতির অপব্যবহার মোকাবিলায় যেন হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও জরিপের ওপর নজর রেখে সব আমেরিকানই হয়তো কমবেশি অনুভব করতে পারছেন যে একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে আসা প্রয়োজন। তবুও ঐতিহ্যগত বা জাতিগত বা দলগত স্বার্থের জেরে ঠিক একমতে পৌঁছাতে পারছেন না। তাই সময়ের সঙ্গে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়েই চলেছে ‘ম্যাস শুটিং’য়ের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা। এভাবে অযাচিত বন্দুক ব্যবহারের এই বাতিক অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে এর পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তিত বিশ্লেষকেরা!
আদিকাল থেকেই মার্কিন সভ্যতার সঙ্গে বন্দুক সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পিটজারের মতবাদ অনুযায়ী, বন্দুক সংস্কৃতি মূলত তিনটি কারণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমটি হলো আদিকাল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের বিস্তার ও মালিকানা। আদিকালে আমেরিকা কৃষিনির্ভর ছিল। তখন আমেরিকানরা জীবিকা নির্বাহ বা সহায়ক খাবার জোগাড়ে শিকারের কাজে বন্দুক ব্যবহার করত। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামীণ আমেরিকানদের পৌরুষ বিচার করা হতো শুটিংয়ের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। দ্বিতীয়টি হলো দেশের বিপ্লব ও সীমান্ত রক্ষার ইতিহাস। আমেরিকান বিপ্লবের আগে, আমেরিকান সরকারের পূর্ণকালীন সেনাবাহিনী রাখার মতো বাজেট, জনবল বা ইচ্ছা কোনোটাই ছিল না। তাই বিদেশি সেনাবাহিনী ও নেটিভ আমেরিকানদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায় আমেরিকানরা অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারাও আত্মরক্ষার কাজে অস্ত্র ব্যবহার করত। তৃতীয়টি হলো আধুনিক জীবনে বন্দুক ব্যবহারের পৌরাণিক কাহিনি। বর্তমানে অনেক আমেরিকানই বন্দুক ব্যবহারকে ব্যক্তিস্বাধীনতার চরম বিকাশ বলে বিশ্বাস করে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক স্মল আর্মস সার্ভের (এসএএস) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের একমাত্র দেশ—যেখানে জনগোষ্ঠীর থেকে অস্ত্রের সংখ্যা বেশি। ২০১৭ সালের হিসাবে, দেশটিতে ১০০ জন মানুষ গড়ে প্রায় ১২১টি অস্ত্র বহন করে এবং এই সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে। অনেক আমেরিকানই তাদের অস্ত্র বহনের অধিকারকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। এসএএসের তথ্যমতে, বিশ্বের ৮৫ কোটি ৭০ লাখ অস্ত্রের মধ্যে প্রায় ৩৯ কোটি ৩০ লাখ অস্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। যা মোট অস্ত্রের প্রায় ৪৬ শতাংশ।
আমেরিকানদের কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের যাচাই করার আইন জারি করা হয়েছে। এই আইনটি প্রতিটি অঙ্গরাজ্য মানতে শুরু করলেও, ক্যালিফোর্নিয়া আদালতের মাধ্যমে আইনটি বাতিল করে। এর ফলে অন্য অঙ্গরাজ্যের জন্যও আইনটি হুমকির মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এখন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্যই বন্দুক সহিংসতার ঊর্ধ্বে নয়। স্কুল, পার্ক, রাস্তা, রেস্তোরাঁ, উপাসনালয়, এমনকি বাসা—সবখানেই যেন নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ হানা দিচ্ছে। কারণ স্থান-কাল-নির্বিশেষে প্রতিনিয়ত আগ্নেয়াস্ত্র হামলায় অহরহ মানুষ আহত বা নিহত হচ্ছে।
‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের’ তথ্য বলছে, আমেরিকান শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি তার উপযুক্ত প্রমাণ মিলছে স্কুলগুলোতে বন্দুক সহিংসতার ঘটনাগুলো থেকেই। এই অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতা প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই স্কুলগুলোতে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। যেমন- স্কুলের প্রবেশদ্বারে সতর্কতা বৃদ্ধি, শিক্ষকদের বন্দুক চালনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিরাপত্তাকর্মীদের দ্বারা কঠোর মনিটরিং ইত্যাদি। তবে চিন্তার বিষয় হলো বেশির ভাগ শিক্ষকই অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। অন্যদিকে, রক্ষণশীল বন্দুকের মালিকেরা বলছেন, স্কুলগুলোতে সরকারি দপ্তরগুলোর মতো নিরাপত্তা বাড়ালে শিশু মৃত্যু কমানো যেতে পারে। তবে সরকারি দপ্তরগুলোর তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একই রকম নিরাপত্তা দেওয়া কষ্টসাধ্য বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তা ছাড়া অনেকেই বলছেন, স্কুল, সরকারি অফিস, হাসপাতাল ও পরিবহনগুলোতে বন্দুক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা যায়, যেসব জায়গায় বন্দুকের ব্যবহার কম, সেখানে সহিংসতার হার বেশি। এর রেশ ধরে রক্ষণশীল বন্দুক ব্যবহারকারীরা বন্দুক আইন শিথিলের ব্যাপারে পাল্টা উপদেশ দিচ্ছেন।
কোনো ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে যদি একই সঙ্গে চার বা তার অধিক ব্যক্তিকে আহত বা নিহত করে, তবে সেটা ‘ম্যাস শুটিং’ বলে গণ্য হয়। মতপার্থক্যে সেই সংখ্যাটা তিন বা তার অধিকও হতে পারে। গত কয়েক বছরে ম্যাস শুটিংয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে এ ঘটনার সংখ্যাটি ছিল ২৭৩, ২০১৫ সালে ৩৩৬, ২০১৬ সালে ৩৮৩, ২০১৭ সালে ৩৪৮, ২০১৮ সালে ৩৩৬, ২০১৯ সালে ৪১৭, ২০২০ সালে ৬১০, ২০২১ সালে ৬৯০ এবং ২০২২ সালে ৬৪৭। তা ছাড়া এ বছর সংখ্যাটি ইতিমধ্যে ৮০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা অনুমান করা দুরূহ! ২০২১ সালে বন্দুক সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছিল মোট ৪৮ হাজার ৮৩০ জনের। যা ২০২০ সালের ৪৫ হাজার ২২২ জনের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি এবং ২০১২ সালের চেয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি ৪০ হাজারেরও বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই গবেষণার হার বেড়েছে। কেউ বলছেন, মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিরাই ম্যাস শুটিংয়ের সঙ্গে বেশি জড়িত। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ভিন্ন কথা। ম্যাস শুটিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশের মতো মানসিক বিকারগ্রস্ত। আবার কেউ কেউ বলছেন, যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে তখন বন্দুক সহিংসতার পরিমাণ বেড়ে যায়। এর কারণ বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়, তাপমাত্রা বেশি হলে বাইরে লোক সমাগম বৃদ্ধি পায় এবং হামলাকারীর মাথা গরম থাকে। তা ছাড়া অনেকেই বলছেন, হামলাকারীদের অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে কাজটি করছেন।
এ ছাড়া অনেকে শুধু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার জন্যই হামলা চালাচ্ছেন বলে বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে।
আদিকাল থেকে চলমান বন্দুক সংস্কৃতি আমেরিকানরা এতটাই স্বকীয়ভাবে ধারণ করে আছে যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা চিন্তাও করতে পারে না। আর সেটা হয়তো সম্ভবও নয়। তবে চারপাশে এত এত বন্দুক সহিংসতার ঘটনা বিবেচনায় এনে কঠোর বন্দুক আইন প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ আমেরিকান এমনটাই ভাবছেন। তবে ৩২ শতাংশ আমেরিকান বর্তমান আইনগুলোকেই বহাল রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। আর ১০ শতাংশ আমেরিকানের মত, বন্দুক আইন আরেকটু শিথিল করা হোক। বলা বাহুল্য, বন্দুক আইনের ব্যাপারে কূটনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনতা সবার মাঝেই যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। গ্যালাপের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট কঠোর বন্দুক আইনের পক্ষে থাকলেও, মাত্র ২৪ শতাংশ রিপাবলিকান তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।
তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ‘রেড ফ্লাগ ল’ (অন্য মানুষের ক্ষতি করতে পারে, এমন সন্দেহভাজন মানুষের কাছ থেকে পুলিশ অস্থায়ীভাবে বন্দুক বাজেয়াপ্ত করতে পারবে) চালুর ব্যাপারেও জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারের অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রের বিনিময়ে পুরস্কার ঘোষণার উদ্যোগও খুব একটা কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া দফায় দফায় কঠোর বন্দুক আইন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও যথেষ্ট সমর্থনের অভাবে সেগুলো সিনেটে আটকা পড়ে আছে। সার্বিকভাবে বিবেচনা করে আমেরিকা যদি বন্দুক সহিংসতার ব্যাপারে কঠোর আইন বা কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারে, তবে ভবিষ্যতে তা তাদের সভ্যতা বা সমৃদ্ধির জন্য বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাদের মুক্তমনা সভ্যতা ও সংস্কৃতি অনুসারীরাও যে তার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে—এটা সহজেই অনুমেয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস
সমৃদ্ধিশালী সংস্কৃতির দেশ হিসেবে বিদিত আমেরিকায় গান কালচার বা বন্দুক সংস্কৃতির অপব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কোভিড-১৯ মহামারির ধকলে বিপর্যস্ত অর্থনীতির অবক্ষয় পোক্ত হাতে সামাল দিয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও, দেশটিকে বন্দুক সংস্কৃতির অপব্যবহার মোকাবিলায় যেন হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও জরিপের ওপর নজর রেখে সব আমেরিকানই হয়তো কমবেশি অনুভব করতে পারছেন যে একটা দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে আসা প্রয়োজন। তবুও ঐতিহ্যগত বা জাতিগত বা দলগত স্বার্থের জেরে ঠিক একমতে পৌঁছাতে পারছেন না। তাই সময়ের সঙ্গে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়েই চলেছে ‘ম্যাস শুটিং’য়ের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা। এভাবে অযাচিত বন্দুক ব্যবহারের এই বাতিক অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে এর পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তিত বিশ্লেষকেরা!
আদিকাল থেকেই মার্কিন সভ্যতার সঙ্গে বন্দুক সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পিটজারের মতবাদ অনুযায়ী, বন্দুক সংস্কৃতি মূলত তিনটি কারণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমটি হলো আদিকাল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের বিস্তার ও মালিকানা। আদিকালে আমেরিকা কৃষিনির্ভর ছিল। তখন আমেরিকানরা জীবিকা নির্বাহ বা সহায়ক খাবার জোগাড়ে শিকারের কাজে বন্দুক ব্যবহার করত। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামীণ আমেরিকানদের পৌরুষ বিচার করা হতো শুটিংয়ের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। দ্বিতীয়টি হলো দেশের বিপ্লব ও সীমান্ত রক্ষার ইতিহাস। আমেরিকান বিপ্লবের আগে, আমেরিকান সরকারের পূর্ণকালীন সেনাবাহিনী রাখার মতো বাজেট, জনবল বা ইচ্ছা কোনোটাই ছিল না। তাই বিদেশি সেনাবাহিনী ও নেটিভ আমেরিকানদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায় আমেরিকানরা অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারাও আত্মরক্ষার কাজে অস্ত্র ব্যবহার করত। তৃতীয়টি হলো আধুনিক জীবনে বন্দুক ব্যবহারের পৌরাণিক কাহিনি। বর্তমানে অনেক আমেরিকানই বন্দুক ব্যবহারকে ব্যক্তিস্বাধীনতার চরম বিকাশ বলে বিশ্বাস করে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক স্মল আর্মস সার্ভের (এসএএস) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের একমাত্র দেশ—যেখানে জনগোষ্ঠীর থেকে অস্ত্রের সংখ্যা বেশি। ২০১৭ সালের হিসাবে, দেশটিতে ১০০ জন মানুষ গড়ে প্রায় ১২১টি অস্ত্র বহন করে এবং এই সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে। অনেক আমেরিকানই তাদের অস্ত্র বহনের অধিকারকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। এসএএসের তথ্যমতে, বিশ্বের ৮৫ কোটি ৭০ লাখ অস্ত্রের মধ্যে প্রায় ৩৯ কোটি ৩০ লাখ অস্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। যা মোট অস্ত্রের প্রায় ৪৬ শতাংশ।
আমেরিকানদের কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের যাচাই করার আইন জারি করা হয়েছে। এই আইনটি প্রতিটি অঙ্গরাজ্য মানতে শুরু করলেও, ক্যালিফোর্নিয়া আদালতের মাধ্যমে আইনটি বাতিল করে। এর ফলে অন্য অঙ্গরাজ্যের জন্যও আইনটি হুমকির মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এখন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্যই বন্দুক সহিংসতার ঊর্ধ্বে নয়। স্কুল, পার্ক, রাস্তা, রেস্তোরাঁ, উপাসনালয়, এমনকি বাসা—সবখানেই যেন নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ হানা দিচ্ছে। কারণ স্থান-কাল-নির্বিশেষে প্রতিনিয়ত আগ্নেয়াস্ত্র হামলায় অহরহ মানুষ আহত বা নিহত হচ্ছে।
‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের’ তথ্য বলছে, আমেরিকান শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি তার উপযুক্ত প্রমাণ মিলছে স্কুলগুলোতে বন্দুক সহিংসতার ঘটনাগুলো থেকেই। এই অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতা প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই স্কুলগুলোতে কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। যেমন- স্কুলের প্রবেশদ্বারে সতর্কতা বৃদ্ধি, শিক্ষকদের বন্দুক চালনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিরাপত্তাকর্মীদের দ্বারা কঠোর মনিটরিং ইত্যাদি। তবে চিন্তার বিষয় হলো বেশির ভাগ শিক্ষকই অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। অন্যদিকে, রক্ষণশীল বন্দুকের মালিকেরা বলছেন, স্কুলগুলোতে সরকারি দপ্তরগুলোর মতো নিরাপত্তা বাড়ালে শিশু মৃত্যু কমানো যেতে পারে। তবে সরকারি দপ্তরগুলোর তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একই রকম নিরাপত্তা দেওয়া কষ্টসাধ্য বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তা ছাড়া অনেকেই বলছেন, স্কুল, সরকারি অফিস, হাসপাতাল ও পরিবহনগুলোতে বন্দুক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা যায়, যেসব জায়গায় বন্দুকের ব্যবহার কম, সেখানে সহিংসতার হার বেশি। এর রেশ ধরে রক্ষণশীল বন্দুক ব্যবহারকারীরা বন্দুক আইন শিথিলের ব্যাপারে পাল্টা উপদেশ দিচ্ছেন।
কোনো ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে যদি একই সঙ্গে চার বা তার অধিক ব্যক্তিকে আহত বা নিহত করে, তবে সেটা ‘ম্যাস শুটিং’ বলে গণ্য হয়। মতপার্থক্যে সেই সংখ্যাটা তিন বা তার অধিকও হতে পারে। গত কয়েক বছরে ম্যাস শুটিংয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে এ ঘটনার সংখ্যাটি ছিল ২৭৩, ২০১৫ সালে ৩৩৬, ২০১৬ সালে ৩৮৩, ২০১৭ সালে ৩৪৮, ২০১৮ সালে ৩৩৬, ২০১৯ সালে ৪১৭, ২০২০ সালে ৬১০, ২০২১ সালে ৬৯০ এবং ২০২২ সালে ৬৪৭। তা ছাড়া এ বছর সংখ্যাটি ইতিমধ্যে ৮০ ছাড়িয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা অনুমান করা দুরূহ! ২০২১ সালে বন্দুক সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছিল মোট ৪৮ হাজার ৮৩০ জনের। যা ২০২০ সালের ৪৫ হাজার ২২২ জনের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি এবং ২০১২ সালের চেয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। তা ছাড়া ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি ৪০ হাজারেরও বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই গবেষণার হার বেড়েছে। কেউ বলছেন, মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিরাই ম্যাস শুটিংয়ের সঙ্গে বেশি জড়িত। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ভিন্ন কথা। ম্যাস শুটিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশের মতো মানসিক বিকারগ্রস্ত। আবার কেউ কেউ বলছেন, যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে তখন বন্দুক সহিংসতার পরিমাণ বেড়ে যায়। এর কারণ বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়, তাপমাত্রা বেশি হলে বাইরে লোক সমাগম বৃদ্ধি পায় এবং হামলাকারীর মাথা গরম থাকে। তা ছাড়া অনেকেই বলছেন, হামলাকারীদের অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে কাজটি করছেন।
এ ছাড়া অনেকে শুধু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসার জন্যই হামলা চালাচ্ছেন বলে বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে।
আদিকাল থেকে চলমান বন্দুক সংস্কৃতি আমেরিকানরা এতটাই স্বকীয়ভাবে ধারণ করে আছে যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা চিন্তাও করতে পারে না। আর সেটা হয়তো সম্ভবও নয়। তবে চারপাশে এত এত বন্দুক সহিংসতার ঘটনা বিবেচনায় এনে কঠোর বন্দুক আইন প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ আমেরিকান এমনটাই ভাবছেন। তবে ৩২ শতাংশ আমেরিকান বর্তমান আইনগুলোকেই বহাল রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। আর ১০ শতাংশ আমেরিকানের মত, বন্দুক আইন আরেকটু শিথিল করা হোক। বলা বাহুল্য, বন্দুক আইনের ব্যাপারে কূটনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনতা সবার মাঝেই যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। গ্যালাপের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট কঠোর বন্দুক আইনের পক্ষে থাকলেও, মাত্র ২৪ শতাংশ রিপাবলিকান তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।
তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ‘রেড ফ্লাগ ল’ (অন্য মানুষের ক্ষতি করতে পারে, এমন সন্দেহভাজন মানুষের কাছ থেকে পুলিশ অস্থায়ীভাবে বন্দুক বাজেয়াপ্ত করতে পারবে) চালুর ব্যাপারেও জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারের অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রের বিনিময়ে পুরস্কার ঘোষণার উদ্যোগও খুব একটা কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া দফায় দফায় কঠোর বন্দুক আইন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও যথেষ্ট সমর্থনের অভাবে সেগুলো সিনেটে আটকা পড়ে আছে। সার্বিকভাবে বিবেচনা করে আমেরিকা যদি বন্দুক সহিংসতার ব্যাপারে কঠোর আইন বা কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারে, তবে ভবিষ্যতে তা তাদের সভ্যতা বা সমৃদ্ধির জন্য বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাদের মুক্তমনা সভ্যতা ও সংস্কৃতি অনুসারীরাও যে তার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে—এটা সহজেই অনুমেয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে নীতিনির্ধারণী একটি বিষয় অগ্রাধিকার বিবেচনার জন্য অপেক্ষমাণ আছে, আর তা হলো, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন করা, নাকি যথাশিগগির নির্বাচন আয়োজন করা? অনেক ধরনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদের বিকল্প কিছু আছে বলে মনে হয় না।
৪ ঘণ্টা আগেকিছু কিছু বিতর্ক তৈরি করা হয় সমসাময়িক বিষয় থেকে দৃষ্টি দূরে সরিয়ে রাখার জন্য। পুরো পাকিস্তান আমলেই রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে বিতর্ক জারি রাখা হয়েছিল। আমলাতন্ত্র আর সামরিক আমলাতন্ত্র মিলে পাকিস্তান নামক দেশটায় যে স্বৈরশাসন কায়েম করে রেখেছিল, সেদিকে যেন সচেতন মানুষের চোখ না যায়, সে অভিসন্ধি থেকেই রবীন্দ্রনাথ
৪ ঘণ্টা আগেএকটি কলা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। একটি সাধারণ কলা, যা নিলামে বিক্রি হলো ৭৪ কোটি টাকায়। এটি শিল্প, না কৌতুক, না সামাজিক শ্লেষ—নাকি তিনটির মিশেল? ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটালানের এই ‘কমেডিয়ান’ আমাদের শিল্পের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আর বাজারজাত সৃজনশীলতার প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
৪ ঘণ্টা আগে‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্র ঐক্য ফোরামের নেতা ছিলেন। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এখন পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে...
১ দিন আগে