আমীন আল রশীদ
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তি হলো ৮ নভেম্বর শুক্রবার। এর চার দিন আগে ৪ নভেম্বর গণমাধ্যমের একটি খবরের শিরোনাম: ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় বাধ্যতামূলক অবসরে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন।
খবরে বলা হয়, গত ২৪ অক্টোবর বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসানের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন জালাল উদ্দীন আহমেদ। বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তিনি। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সিভিল সার্জনের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এরপর প্রথমে তাঁকে ওএসডি করা হয় এবং পরদিনই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
এর দুই মাস আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে মেট্রোরেলের স্প্যামে লেখা ‘জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো’ লেখাটি মুছে দেন ছয়জন শিক্ষার্থী। তাদের একজন এস এম এহসান উল্লাহ (ধ্রুব) বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে মেট্রোরেলে ফ্যাসিবাদের দলীয় স্লোগান “জয় বাংলা” লেখা ছিল। স্বৈরাচার তার অস্তিত্ব বিভিন্নভাবে মানুষের মনস্তত্ত্বে ঢুকিয়ে দিতে চায়। তারই প্রতীক হিসেবে ক্যাম্পাসের সব থেকে দৃশ্যমান স্থানে ছিল এই লেখা। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের সব সিম্বলিক নিদর্শন মুছে ফেলতে চাই। যেন স্বৈরাচার কোনোভাবেই পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।’
এই শিক্ষার্থীর বক্তব্য খুব স্পষ্ট যে, তিনি বা তাঁরা ‘জয় বাংলা’কে ফ্যাসিবাদের দলীয় স্লোগান বলে মনে করছেন। অথচ এই ‘জয় বাংলা’ই ১৯৭১ সালে এ দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে। আর স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে সেই ‘জয় বাংলা’কে বলা হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের দলীয় স্লোগান’!
প্রসঙ্গত, একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ও মোটো হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এর দুই বছর পরে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত বলে অভিমত দেন উচ্চ আদালত। প্রশ্ন হলো, কী এমন ঘটনা ঘটল, ওই অভিমতের পাঁচ বছরের মাথায় সেই ‘জয় বাংলা’ বলার কারণে একজন সিভিল সার্জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হলো?
কয়েকটি প্রশ্ন আছে।
⬤ ‘জয় বাংলা’ কি দলীয় স্লোগান বা কোনো একটি দলের নিজস্ব স্লোগান?
⬤ একজন সরকারি কর্মচারী কি কোনো অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ বলে বক্তৃতা শেষ করতে পারেন বা এর কোনো প্রয়োজন আছে?
⬤ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হলেও যেহেতু এটি আওয়ামী লীগের স্লোগান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অতএব একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের পরে একটি অন্তর্বর্তী সময়ে একজন সরকারি কর্মচারী কেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে গেলেন? দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা, অতি উৎসাহ, নাকি প্রতিবাদ?
২. পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের নির্মম শোষণ, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী বাঙালির লড়াইয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দারুণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে ‘জয় বাংলা’ জনসাধারণের স্লোগানে পরিণত হয় এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এটিই ছিল প্রধান স্লোগান।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা আফতাবউদ্দিন আহমদ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি প্রথম উচ্চারণ করেন। সভা চলাকালীন সবাইকে আকস্মিকভাবে চমকে দিয়ে চিৎকার করে তিনি ‘জয় বাংলা’ বলতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে আরও সাত-আটজন কর্মী সমস্বরে এই স্লোগান দেন (আমি সিরাজুল আলম খান, একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য, পৃষ্ঠা ১০৯)।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার বটমূলে আলোচনা ও শোভাযাত্রা। আলোচনা সভার সভাপতি মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আইয়ুব খান প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পরে এই প্রথম জনসমক্ষে শেখ মুজিব। মঞ্চে উপবিষ্ট বঙ্গবন্ধুর পেছনে দেবদারু পাতায় ছাওয়া ব্যানারে হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে লেখা দুটি শব্দ: ‘জয় বাংলা’। আলোচনা শেষে ছাত্রলীগ ‘জয় বাংলা’ লেখা ওই ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে, যা শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরদিন সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার পাশাপাশি ‘জয় বাংলা’ ব্যানারটির কথাও উল্লেখ করা হয়।
প্রশ্ন হলো, সেই স্লোগান নিয়েই কেন এখন বিতর্ক হচ্ছে? যে স্লোগান বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে, সেই স্লোগানকে কেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘ফ্যাসিবাদের স্লোগান’ মনে করছে? একজন সিভিল সার্জনের ‘জয় বাংলা’ বলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তার অপসারণের দাবিতে কেন মানুষ বিক্ষোভ করবে? এর দায় কার?
যে স্লোগান ছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙালির মূল অনুপ্রেরণা, সেই স্লোগান কেন সর্বজনীন হলো না বা সর্বদলীয় স্লোগান করা গেল না? কেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই স্লোগান নিজের করে নিতে পারল না? ‘জয় বাংলা’ কেন শুধুই আওয়ামী লীগের স্লোগান হয়ে থাকল?
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যগুলো যে নির্মমভাবে ভেঙে ফেলা হলো, বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই দায় এড়াতে পারেন? কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো? বঙ্গবন্ধুকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে অন্য সবাইকে খারিজ করে দেওয়ার যে রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেছে, সেটি কি আখেরে বঙ্গবন্ধুকে মহান করল? পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতির পিতা, আর কোনো স্বাধীনতার স্থপতির ক্ষেত্রে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে?
সবকিছুর জন্য আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে দায়ী করা গেলেও এটা ঠিক যে, ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ, একদলীয় শাসন চালুর আগপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রশ্নে কোনো দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি নাগরিকের প্রশ্ন বা সংশয় থাকা উচিত নয়।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মানেই এখন ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে; ‘জয় বাংলা’ বললেই তাকে আওয়ামী লীগ বা স্বৈরাচারের দালাল বলে গালি দিতে হবে—এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
একটি জাতির জীবনে কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্য থাকতে হয়। কিছু বিষয়কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবের, সবচেয়ে অহংকারের মুক্তিযুদ্ধকেও প্রশ্ন ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারিনি। এ দেশে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়ও যেমন ভুয়া লোক আছে, তেমনি স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করতে গিয়েও লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, সর্বত্র দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রতিটি জিনিস নষ্ট করা হয়েছে—স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে।
সাংবাদিক ও লেখক
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তি হলো ৮ নভেম্বর শুক্রবার। এর চার দিন আগে ৪ নভেম্বর গণমাধ্যমের একটি খবরের শিরোনাম: ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় বাধ্যতামূলক অবসরে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন।
খবরে বলা হয়, গত ২৪ অক্টোবর বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসানের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন জালাল উদ্দীন আহমেদ। বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তিনি। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সিভিল সার্জনের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এরপর প্রথমে তাঁকে ওএসডি করা হয় এবং পরদিনই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
এর দুই মাস আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে মেট্রোরেলের স্প্যামে লেখা ‘জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো’ লেখাটি মুছে দেন ছয়জন শিক্ষার্থী। তাদের একজন এস এম এহসান উল্লাহ (ধ্রুব) বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পেছনে মেট্রোরেলে ফ্যাসিবাদের দলীয় স্লোগান “জয় বাংলা” লেখা ছিল। স্বৈরাচার তার অস্তিত্ব বিভিন্নভাবে মানুষের মনস্তত্ত্বে ঢুকিয়ে দিতে চায়। তারই প্রতীক হিসেবে ক্যাম্পাসের সব থেকে দৃশ্যমান স্থানে ছিল এই লেখা। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের সব সিম্বলিক নিদর্শন মুছে ফেলতে চাই। যেন স্বৈরাচার কোনোভাবেই পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।’
এই শিক্ষার্থীর বক্তব্য খুব স্পষ্ট যে, তিনি বা তাঁরা ‘জয় বাংলা’কে ফ্যাসিবাদের দলীয় স্লোগান বলে মনে করছেন। অথচ এই ‘জয় বাংলা’ই ১৯৭১ সালে এ দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে। আর স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে সেই ‘জয় বাংলা’কে বলা হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের দলীয় স্লোগান’!
প্রসঙ্গত, একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ও মোটো হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এর দুই বছর পরে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত বলে অভিমত দেন উচ্চ আদালত। প্রশ্ন হলো, কী এমন ঘটনা ঘটল, ওই অভিমতের পাঁচ বছরের মাথায় সেই ‘জয় বাংলা’ বলার কারণে একজন সিভিল সার্জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হলো?
কয়েকটি প্রশ্ন আছে।
⬤ ‘জয় বাংলা’ কি দলীয় স্লোগান বা কোনো একটি দলের নিজস্ব স্লোগান?
⬤ একজন সরকারি কর্মচারী কি কোনো অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ বলে বক্তৃতা শেষ করতে পারেন বা এর কোনো প্রয়োজন আছে?
⬤ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হলেও যেহেতু এটি আওয়ামী লীগের স্লোগান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অতএব একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের পরে একটি অন্তর্বর্তী সময়ে একজন সরকারি কর্মচারী কেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে গেলেন? দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা, অতি উৎসাহ, নাকি প্রতিবাদ?
২. পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের নির্মম শোষণ, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী বাঙালির লড়াইয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দারুণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে ‘জয় বাংলা’ জনসাধারণের স্লোগানে পরিণত হয় এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এটিই ছিল প্রধান স্লোগান।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা আফতাবউদ্দিন আহমদ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি প্রথম উচ্চারণ করেন। সভা চলাকালীন সবাইকে আকস্মিকভাবে চমকে দিয়ে চিৎকার করে তিনি ‘জয় বাংলা’ বলতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে আরও সাত-আটজন কর্মী সমস্বরে এই স্লোগান দেন (আমি সিরাজুল আলম খান, একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য, পৃষ্ঠা ১০৯)।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার বটমূলে আলোচনা ও শোভাযাত্রা। আলোচনা সভার সভাপতি মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আইয়ুব খান প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পরে এই প্রথম জনসমক্ষে শেখ মুজিব। মঞ্চে উপবিষ্ট বঙ্গবন্ধুর পেছনে দেবদারু পাতায় ছাওয়া ব্যানারে হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে লেখা দুটি শব্দ: ‘জয় বাংলা’। আলোচনা শেষে ছাত্রলীগ ‘জয় বাংলা’ লেখা ওই ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে, যা শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরদিন সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার পাশাপাশি ‘জয় বাংলা’ ব্যানারটির কথাও উল্লেখ করা হয়।
প্রশ্ন হলো, সেই স্লোগান নিয়েই কেন এখন বিতর্ক হচ্ছে? যে স্লোগান বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে, সেই স্লোগানকে কেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘ফ্যাসিবাদের স্লোগান’ মনে করছে? একজন সিভিল সার্জনের ‘জয় বাংলা’ বলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তার অপসারণের দাবিতে কেন মানুষ বিক্ষোভ করবে? এর দায় কার?
যে স্লোগান ছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙালির মূল অনুপ্রেরণা, সেই স্লোগান কেন সর্বজনীন হলো না বা সর্বদলীয় স্লোগান করা গেল না? কেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই স্লোগান নিজের করে নিতে পারল না? ‘জয় বাংলা’ কেন শুধুই আওয়ামী লীগের স্লোগান হয়ে থাকল?
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যগুলো যে নির্মমভাবে ভেঙে ফেলা হলো, বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই দায় এড়াতে পারেন? কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো? বঙ্গবন্ধুকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে অন্য সবাইকে খারিজ করে দেওয়ার যে রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেছে, সেটি কি আখেরে বঙ্গবন্ধুকে মহান করল? পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতির পিতা, আর কোনো স্বাধীনতার স্থপতির ক্ষেত্রে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে?
সবকিছুর জন্য আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে দায়ী করা গেলেও এটা ঠিক যে, ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ, একদলীয় শাসন চালুর আগপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান প্রশ্নে কোনো দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি নাগরিকের প্রশ্ন বা সংশয় থাকা উচিত নয়।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে মানেই এখন ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে; ‘জয় বাংলা’ বললেই তাকে আওয়ামী লীগ বা স্বৈরাচারের দালাল বলে গালি দিতে হবে—এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
একটি জাতির জীবনে কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্য থাকতে হয়। কিছু বিষয়কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবের, সবচেয়ে অহংকারের মুক্তিযুদ্ধকেও প্রশ্ন ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারিনি। এ দেশে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়ও যেমন ভুয়া লোক আছে, তেমনি স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করতে গিয়েও লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ, সর্বত্র দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রতিটি জিনিস নষ্ট করা হয়েছে—স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে।
সাংবাদিক ও লেখক
এই ভূখণ্ডের মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস যেমন দীর্ঘ, তেমনি সেই সব সংগ্রামের সাফল্য বা বিজয় বেহাত হওয়ার ইতিহাসও কম দীর্ঘ নয়। এক ইংরেজ শাসনামলেই এখানকার মানুষের সাহসী ও প্রবল সংগ্রামের তিন-চারটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায়ের সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাদের কাছে নবাব সি
১৩ ঘণ্টা আগেউজ্জয়িনীর সম্রাট ছিলেন বিক্রমাদিত্য। সম্রাট বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভা ছিল। সেই সময়কার বিখ্যাত ৯ জন পণ্ডিত এই সভাকে অলংকৃত করতেন। সম্রাট বিক্রমাদিত্য এই নবরত্নদের আদেশ-উপদেশ মেনে রাজ্য পরিচালনা করতেন। নবরত্নদের মধ্যে ছিলেন অমর সিংহ, কালিদাস, ক্ষপণক, আর্যভট্ট, ধন্বন্তরি, বরাহমিহির, বররুচি, বেতাল ভট্ট
১৩ ঘণ্টা আগেযুদ্ধের সময় অবরুদ্ধ নগরীতে সাংবাদিকতা করা ছিল কঠিন। তবে যারা পাকিস্তানি বাহিনীর তাঁবেদারি করেছে, তারা তখন কোনো ধরনের সমস্যায় পড়েনি বরং পাকিস্তানি সরকারের সুনজরে ছিল।
১৩ ঘণ্টা আগেগত শনিবার আজকের পত্রিকায় ‘বৃদ্ধ বাবাকে জঙ্গলে ফেলে গেলেন মেয়ে ও জামাতা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি আমাদের সমাজের এক কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। একটি সমাজের প্রকৃত মেরুদণ্ড হলো তার মানবিকতা। সেই মানবিকতা তখনই বেশি প্রাসঙ্গিক হয়, যখন সমাজের সবচেয়ে দুর্বল কোনো মানুষ বিপদে পড়ে।
১৩ ঘণ্টা আগে