শাইখ সিরাজ
গত ডিসেম্বরের কথা। সকালের সূর্য সবে পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে। ছুটলাম কৃষকের মাঠের দিকে। আমি একা নই। সঙ্গে ২০ খুদে শিক্ষার্থী। তারা নতুন কিছু করবে ভেবে উত্তেজনায় উৎফুল্ল। যেতে যেতে আমরা কথা বলছিলাম বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক নিয়ে। নানা রকমের প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা তাদের। এক এক করে উত্তর দিতে দিতে, তাদের মতামত শুনতে শুনতে পৌঁছে গেলাম কৃষকের বাড়িতে। এবারের ফিরে চল মাটির টানে জুনিয়র অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে জিপিএইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ২০ শিক্ষার্থী। বলছিলাম তাদের কথাই।
চার দশকের বেশি সময় টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে আমাকে কৃষকের মাঠে যেতে হয়। কৃষকের মতোই আমার মাঠে যাওয়ার বিষয়টিও প্রায় নিত্যকার। মাঠের ফসল, গ্রামীণ জীবন, কৃষকের ভালোমন্দ, দেশের খাদ্যপণ্যের বাজার, আধুনিক প্রযুক্তি আর সব মানুষের আশা-নিরাশার জায়গাটি তুলে আনাই আমার কাজ। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনব্যবস্থার সব জায়গাই আমার মোটামুটি দেখা। তারপরও গ্রামের প্রতি আমার কৌতূহল যায়নি। কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেই মনটা বড় টানে। ছুটে যাই গ্রামে। গ্রামে যেতে যেতেই আমার বারবার মনে হয়েছে শুধু আমি গ্রামে গেলে তো হবে না, সব শ্রেণি-পেশার মানুষেরও গ্রামে যাওয়া দরকার। বিশেষ করে শহরের সব শ্রেণির মানুষেরই গ্রামমুখী হওয়া খুব জরুরি। দীর্ঘদিন নগরমুখী চিন্তা আর ইট-পাথরের নাগরিক জীবনের আধুনিকতা খুঁজে খুঁজে আমরা অন্তঃসারশূন্য এক জীবনে এসে পৌঁছেছি। এতে করে আমরা যেন শিকড়হারা হয়ে যাচ্ছি। একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠছে শহরের বুকে, যাদের অধিকাংশই মাটির স্পর্শ পায়নি। তারা জানে না, মাটি যখন ফলে-ফসলে পূর্ণ হয় তখনই রচিত হয় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেখানে রয়েছে কৃষকের লালিত স্বপ্ন। তাঁদের শ্রম আর ঘামের বিনিময়ে উৎপাদন হচ্ছে দেশের মানুষের খাদ্য। তাঁরা নীরবে ঘুরিয়ে যাচ্ছেন আমাদের উন্নয়নের চাকা।
নতুন প্রজন্ম এগুলো না জানা মানে, আমরা যে ভবিষ্যৎ রচনা করছি, তা অপূর্ণাঙ্গ। আজকের প্রজন্মই একদিন রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেবে। তারা জানবে না কী করে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষক কেন তার জীবনকে নিবেদন করে কৃষিকাজে! শহর-নগরের আধুনিক কিশোর-তরুণদের কাছে পেলেই এই ভাবনাগুলো ওদের মাঝে তুলে ধরি। মনে আছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের একঝাঁক শিক্ষার্থীর মাঝে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই, আমার সঙ্গে গ্রামে যেতে রাজি আছো কে? দেখি অনেকেই সাহস করে হাত তুলেছে। তখনই তাদের ভেতর থেকে বাছাই করে চারজনকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। এভাবেই শুরু ‘ফিরে চলো মাটির টানে’ কার্যক্রমের।
আজ শহরের ছেলেরা কম্পিউটার আর মোবাইলে বুঁদ হয়ে ভার্চুয়াল পৃথিবীর মানুষ হয়ে আছে। শহর-নগরে তাদের ছোটাছুটি করার জায়গা নেই। পর্যাপ্ত মাঠ নেই খেলাধুলা করার। আমার চিন্তা ছিল এই তরুণদেরই যদি একজনকে কৃষক বা কৃষিশ্রমিকের ভূমিকায় কয়েক দিনের জন্য নিয়োজিত করা যায়, তাহলে তার মধ্য দিয়ে ভালো কিছু আসতে পারে। অর্থাৎ তার মাথায় এমন কিছু ঢুকবে, এমন এক পরিবেশে সে সিক্ত হবে, যা তার সারা জীবনের এক অনন্য শিক্ষা হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রামে গিয়ে একেবারে আত্মহারা হতে থাকল। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে কয়েক বছরের মধ্যে সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা ও আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাবনাচিন্তায় অনেকটা পরিণত। এই বয়সের মধ্যে তাদের জীবনের একটি লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। সে কারণে কৃষকের মাঠে গিয়ে কৃষকের প্রতি তাদের একটি সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা তৈরি হলেও তারা সেটিকে গভীরভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় কম। বড়জোর তারা তাদের একাডেমিক অর্জনটাকে কৃষির পক্ষে কাজে লাগানোর একটি লাভজনক সুযোগ খুঁজতে পারে। কিন্তু শিশুদের মাঠে নিয়ে যেতে পারলে তাদের মনের গভীরে কৃষি, কৃষক ও গ্রাম একটি স্থায়ী আসন নিয়ে নিতে পারে। এই চিন্তা থেকেই ২০১১ সালে শুরু করেছিলাম ফিরে চলো মাটির টানে জুনিয়র। পঞ্চম শ্রেণির ২০ ছেলেমেয়েকে কৃষকের খেতে নিয়ে আলু রোপণ ও আলু তোলার কাজে যুক্ত করে দেখলাম, এর ফলাফল দারুণ। শিশুরা এক দিনেই তার মাথার মধ্যে এঁকে ফেলে কৃষকের ভালোমন্দ।
আমাদের শিশুদের গ্রামে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ফসল রোপণ ও ফসল তোলার যে আনন্দ, তা যদি তারা বুঝত তাহলে ব্যক্তিজীবনে ওদের কোনো ব্যর্থতা থাকত না। কৃষকের পরিশ্রমকে ওরা যদি আবিষ্কার করতে পারত, তাহলে বুঝত জীবনে কোনো কিছুই সহজে আসে না।
যা-ই হোক, জিপিএইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ২০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পৌঁছালাম মুন্সিগঞ্জের পূর্ব শিলমন্দী গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দীনের বাড়িতে। তিনি শিশুদের জন্য বাড়িতে তৈরি করে রেখেছিলেন নানা রকমের পিঠা। সকালে মিষ্টি রোদে পিঠার উৎসব। পাটিসাপটা, ভাঁপা, পোয়া, চিতই, পুলি—কোনটার কী নাম, তাদের জানা নেই। কিন্তু এত পিঠা একসঙ্গে দেখে খুদে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত। তারা দেখল গ্রামের মানুষের আতিথেয়তা। খাওয়াদাওয়া শেষে বাড়ির চাচিরা বসলেন আলুর চোখ কাটতে। দারুণ আগ্রহ নিয়ে তারা দেখল কীভাবে আলুর চোখ কাটে! মনে মনে বিস্ময়: আলুরও চোখ হয়। কৃষক দেলোয়ার হোসেন বুঝিয়ে দিলেন, আলুর চোখ মানে চোখ নয়, আলুর যে অংশে চারা গজায় সে অংশকে বলে আলুর চোখ।
তারা পর্যায়ক্রমে শিখল আলু রোপণের জন্য আলুবীজ প্রস্তুতির কাজ। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাসেল সিকদার শিখিয়ে দিলেন কীভাবে রোপণ করতে হয় আলুর বীজ।
কৃষকের বাড়ি থেকে বের হয়ে সারি বেঁধে চললাম মাঠে। এবার আলু রোপণের পালা। শহরের ইংরেজি মাধ্যমে পড়া এই শিশুরা জীবনের প্রথম কৃষকের মাঠে কৃষকের ভূমিকায় কাজ করল। যে শিশুদের নিয়ে সকালে রওনা হয়েছিলাম, এ যেন তারা নয়, মাটি ভেতরে কিছু একটা পাল্টে দিয়েছে তাদের।
শিক্ষার্থীরা সরাসরি কথা বলল কৃষকের সঙ্গে। কীভাবে ফসল ফলায়? কী পরিমাণ লাভ? কী কী অসুবিধার ভেতর দিয়ে কৃষককে যেতে হয়? এসবই ছোট্ট শিশুরা জানতে চাইল। কৃষকের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করল। আলু রোপণ শেষে আমরা ফিরে আসলাম। আবার আলু ফলনের পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ওদের নিয়ে যাব আলু তুলতে। এই শিশু-কিশোরের কেউ হয়তো কৃষক হবে না। নানা পেশায় তারা চলে যাবে। যে যেখানেই যাক, যে পেশায় যুক্ত হোক, এদের ভেতর কেউ যদি কৃষির এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা মনে রেখে কৃষির উন্নয়নে সামান্যতম কাজ করে তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে—সেটাই হবে সার্থকতা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
গত ডিসেম্বরের কথা। সকালের সূর্য সবে পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে। ছুটলাম কৃষকের মাঠের দিকে। আমি একা নই। সঙ্গে ২০ খুদে শিক্ষার্থী। তারা নতুন কিছু করবে ভেবে উত্তেজনায় উৎফুল্ল। যেতে যেতে আমরা কথা বলছিলাম বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক নিয়ে। নানা রকমের প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা তাদের। এক এক করে উত্তর দিতে দিতে, তাদের মতামত শুনতে শুনতে পৌঁছে গেলাম কৃষকের বাড়িতে। এবারের ফিরে চল মাটির টানে জুনিয়র অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে জিপিএইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ২০ শিক্ষার্থী। বলছিলাম তাদের কথাই।
চার দশকের বেশি সময় টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে আমাকে কৃষকের মাঠে যেতে হয়। কৃষকের মতোই আমার মাঠে যাওয়ার বিষয়টিও প্রায় নিত্যকার। মাঠের ফসল, গ্রামীণ জীবন, কৃষকের ভালোমন্দ, দেশের খাদ্যপণ্যের বাজার, আধুনিক প্রযুক্তি আর সব মানুষের আশা-নিরাশার জায়গাটি তুলে আনাই আমার কাজ। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনব্যবস্থার সব জায়গাই আমার মোটামুটি দেখা। তারপরও গ্রামের প্রতি আমার কৌতূহল যায়নি। কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেই মনটা বড় টানে। ছুটে যাই গ্রামে। গ্রামে যেতে যেতেই আমার বারবার মনে হয়েছে শুধু আমি গ্রামে গেলে তো হবে না, সব শ্রেণি-পেশার মানুষেরও গ্রামে যাওয়া দরকার। বিশেষ করে শহরের সব শ্রেণির মানুষেরই গ্রামমুখী হওয়া খুব জরুরি। দীর্ঘদিন নগরমুখী চিন্তা আর ইট-পাথরের নাগরিক জীবনের আধুনিকতা খুঁজে খুঁজে আমরা অন্তঃসারশূন্য এক জীবনে এসে পৌঁছেছি। এতে করে আমরা যেন শিকড়হারা হয়ে যাচ্ছি। একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠছে শহরের বুকে, যাদের অধিকাংশই মাটির স্পর্শ পায়নি। তারা জানে না, মাটি যখন ফলে-ফসলে পূর্ণ হয় তখনই রচিত হয় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেখানে রয়েছে কৃষকের লালিত স্বপ্ন। তাঁদের শ্রম আর ঘামের বিনিময়ে উৎপাদন হচ্ছে দেশের মানুষের খাদ্য। তাঁরা নীরবে ঘুরিয়ে যাচ্ছেন আমাদের উন্নয়নের চাকা।
নতুন প্রজন্ম এগুলো না জানা মানে, আমরা যে ভবিষ্যৎ রচনা করছি, তা অপূর্ণাঙ্গ। আজকের প্রজন্মই একদিন রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেবে। তারা জানবে না কী করে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষক কেন তার জীবনকে নিবেদন করে কৃষিকাজে! শহর-নগরের আধুনিক কিশোর-তরুণদের কাছে পেলেই এই ভাবনাগুলো ওদের মাঝে তুলে ধরি। মনে আছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের একঝাঁক শিক্ষার্থীর মাঝে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই, আমার সঙ্গে গ্রামে যেতে রাজি আছো কে? দেখি অনেকেই সাহস করে হাত তুলেছে। তখনই তাদের ভেতর থেকে বাছাই করে চারজনকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। এভাবেই শুরু ‘ফিরে চলো মাটির টানে’ কার্যক্রমের।
আজ শহরের ছেলেরা কম্পিউটার আর মোবাইলে বুঁদ হয়ে ভার্চুয়াল পৃথিবীর মানুষ হয়ে আছে। শহর-নগরে তাদের ছোটাছুটি করার জায়গা নেই। পর্যাপ্ত মাঠ নেই খেলাধুলা করার। আমার চিন্তা ছিল এই তরুণদেরই যদি একজনকে কৃষক বা কৃষিশ্রমিকের ভূমিকায় কয়েক দিনের জন্য নিয়োজিত করা যায়, তাহলে তার মধ্য দিয়ে ভালো কিছু আসতে পারে। অর্থাৎ তার মাথায় এমন কিছু ঢুকবে, এমন এক পরিবেশে সে সিক্ত হবে, যা তার সারা জীবনের এক অনন্য শিক্ষা হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রামে গিয়ে একেবারে আত্মহারা হতে থাকল। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে কয়েক বছরের মধ্যে সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা ও আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাবনাচিন্তায় অনেকটা পরিণত। এই বয়সের মধ্যে তাদের জীবনের একটি লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। সে কারণে কৃষকের মাঠে গিয়ে কৃষকের প্রতি তাদের একটি সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা তৈরি হলেও তারা সেটিকে গভীরভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় কম। বড়জোর তারা তাদের একাডেমিক অর্জনটাকে কৃষির পক্ষে কাজে লাগানোর একটি লাভজনক সুযোগ খুঁজতে পারে। কিন্তু শিশুদের মাঠে নিয়ে যেতে পারলে তাদের মনের গভীরে কৃষি, কৃষক ও গ্রাম একটি স্থায়ী আসন নিয়ে নিতে পারে। এই চিন্তা থেকেই ২০১১ সালে শুরু করেছিলাম ফিরে চলো মাটির টানে জুনিয়র। পঞ্চম শ্রেণির ২০ ছেলেমেয়েকে কৃষকের খেতে নিয়ে আলু রোপণ ও আলু তোলার কাজে যুক্ত করে দেখলাম, এর ফলাফল দারুণ। শিশুরা এক দিনেই তার মাথার মধ্যে এঁকে ফেলে কৃষকের ভালোমন্দ।
আমাদের শিশুদের গ্রামে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ফসল রোপণ ও ফসল তোলার যে আনন্দ, তা যদি তারা বুঝত তাহলে ব্যক্তিজীবনে ওদের কোনো ব্যর্থতা থাকত না। কৃষকের পরিশ্রমকে ওরা যদি আবিষ্কার করতে পারত, তাহলে বুঝত জীবনে কোনো কিছুই সহজে আসে না।
যা-ই হোক, জিপিএইচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ২০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পৌঁছালাম মুন্সিগঞ্জের পূর্ব শিলমন্দী গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দীনের বাড়িতে। তিনি শিশুদের জন্য বাড়িতে তৈরি করে রেখেছিলেন নানা রকমের পিঠা। সকালে মিষ্টি রোদে পিঠার উৎসব। পাটিসাপটা, ভাঁপা, পোয়া, চিতই, পুলি—কোনটার কী নাম, তাদের জানা নেই। কিন্তু এত পিঠা একসঙ্গে দেখে খুদে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত। তারা দেখল গ্রামের মানুষের আতিথেয়তা। খাওয়াদাওয়া শেষে বাড়ির চাচিরা বসলেন আলুর চোখ কাটতে। দারুণ আগ্রহ নিয়ে তারা দেখল কীভাবে আলুর চোখ কাটে! মনে মনে বিস্ময়: আলুরও চোখ হয়। কৃষক দেলোয়ার হোসেন বুঝিয়ে দিলেন, আলুর চোখ মানে চোখ নয়, আলুর যে অংশে চারা গজায় সে অংশকে বলে আলুর চোখ।
তারা পর্যায়ক্রমে শিখল আলু রোপণের জন্য আলুবীজ প্রস্তুতির কাজ। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাসেল সিকদার শিখিয়ে দিলেন কীভাবে রোপণ করতে হয় আলুর বীজ।
কৃষকের বাড়ি থেকে বের হয়ে সারি বেঁধে চললাম মাঠে। এবার আলু রোপণের পালা। শহরের ইংরেজি মাধ্যমে পড়া এই শিশুরা জীবনের প্রথম কৃষকের মাঠে কৃষকের ভূমিকায় কাজ করল। যে শিশুদের নিয়ে সকালে রওনা হয়েছিলাম, এ যেন তারা নয়, মাটি ভেতরে কিছু একটা পাল্টে দিয়েছে তাদের।
শিক্ষার্থীরা সরাসরি কথা বলল কৃষকের সঙ্গে। কীভাবে ফসল ফলায়? কী পরিমাণ লাভ? কী কী অসুবিধার ভেতর দিয়ে কৃষককে যেতে হয়? এসবই ছোট্ট শিশুরা জানতে চাইল। কৃষকের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করল। আলু রোপণ শেষে আমরা ফিরে আসলাম। আবার আলু ফলনের পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ওদের নিয়ে যাব আলু তুলতে। এই শিশু-কিশোরের কেউ হয়তো কৃষক হবে না। নানা পেশায় তারা চলে যাবে। যে যেখানেই যাক, যে পেশায় যুক্ত হোক, এদের ভেতর কেউ যদি কৃষির এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা মনে রেখে কৃষির উন্নয়নে সামান্যতম কাজ করে তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে—সেটাই হবে সার্থকতা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
জাতীয় স্বার্থ, মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব এবং শাসনকাঠামোর পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি আগামী দিনে ঠিক কোন অবয়ব লাভ করবে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনীতিতে যে রূপ বদলের আঁচ লেগেছে, তা বলা যেতেই পারে।
৬ ঘণ্টা আগেগত সপ্তাহে প্যালেস্টেনিয়ান অথরিটি (পিএ) বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে নিষিদ্ধ করেছে, যা কিনা সংবাদভিত্তিক কয়েকটি আন্তর্জাতিক আউটলেটের মধ্যে একটি এবং যারা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী দখলদারত্ব, গাজায় চলমান গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূল অভিযানের খবর ধারাবাহিকভাবে প্রচার ক
৬ ঘণ্টা আগেএ খবর নতুন নয় যে গত বছর ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ও আওয়ামী শাসনের অবসানের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মামলা হচ্ছে ব্যক্তিগত বিরোধ বা আক্রোশ থেকেও—এমন নয় যে তাঁরা সবাই রাজনৈতিক পদধারী কেউ কিংবা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ আছে। এ নিয়ে স
৬ ঘণ্টা আগেআগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছর পেরিয়ে চার বছরে পদার্পণ করবে। বাংলাদেশে বসে এই সময়ে এই যুদ্ধের প্রতি এখন ততটা আগ্রহ দেখাবে না কেউ। দীর্ঘদিন এই যুদ্ধ চলার পর স্বাভাবিকভাবে মানুষ এটাকে নিত্যনৈমিত্তিক একটা ব্যাপার হিসেবে মেনে নিয়েছে।
১ দিন আগে