বিভুরঞ্জন সরকার
দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত মানুষের নাম হিরো আলম। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মুখেও তাঁর নাম। সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখেও হিরো আলম। দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় তাঁর খবর, মন্তব্য ছাপা হচ্ছে গুরুত্ব দিয়ে। এত দিন তিনি আলোচিত ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, এখন মূলধারার গণমাধ্যমেও। তাঁকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। নামীদামি কলাম লেখকের রাজনৈতিক কলামও ভরে উঠছে হিরো আলমকে নিয়ে।
কে এই হিরো আলম—তা নিশ্চয়ই পাঠককে মনে করিয়ে দিতে হবে না। বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনে যে উপনির্বাচন হয়ে গেল ১ ফেব্রুয়ারি, তার মধ্যে বগুড়ার দুটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। একটি আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। হিরো আলম অবশ্য মনে করেন, তিনি হারেননি; তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। হিরো আলম বলেছেন, ভোটের জন্য গণসংযোগের সময় কেউ তাঁকে বিমুখ করেননি; তাঁরা আপ্যায়ন করেছেন, খাইয়েছেন। এ থেকে বগুড়া-৪ আসনে নিজের বিজয় নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন।
তাহলে তিনি পরাজিত হলেন কীভাবে? হিরো আলম বলেছেন, একশ্রেণির মানুষ তাঁকে ‘স্যার’ ডাকতে চান না। তাঁরাই ষড়যন্ত্র করে তাঁর ফল বদলে দিয়েছেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা অসম্ভব বলেও মনে করা যায় না। ভোট নিয়ে নিয়ে তামাশা এখন নিয়মিত বিষয়। তবে হিরো আলমের মতো একজন অরাজনৈতিক ও নবাগত প্রার্থীকে কেন হাারিয়ে দেওয়া হবে? জবাবটা হিরো আলম দিয়েছেন এভাবে, ‘আমি নির্বাচিত হলে চোর-বাটপারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতাম—এটা তারা বুঝেই আমাকে জাতীয় সংসদে যেতে দেয়নি।’
বগুড়া-৪ আসনে এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৮৮ জন। এঁরা সবাই বয়সে তরুণ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, হিরো আলমকে যাঁরা অনুসরণ করেন, তাঁরা বেশির ভাগ তরুণ; ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর নিয়মিত দর্শক। এই তরুণদের সাহস, পরামর্শেই ভোটের মাঠে নেমে ‘খেলা’ দেখিয়ে দিয়েছেন হিরো। তাঁর চেহারায় নায়কোচিত কোনো ছাপ না থাকলেও তরুণরাসহ অনেকেও তাঁকে হিরো হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সম্ভবত এই কারণে যে তাঁর মধ্যে কোনো মেকি কিছু নেই, ভেজাল নেই। তাঁর ভেতরে-বাইরে সমান রাঙা।
নির্বাচনী এলাকার কয়েকজন তরুণ ভোটার গণমাধ্যমের কাছে হিরো আলমকে তাঁদের পছন্দের কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট করেই বলেছেন, রাজনীতিবিদ ছাড়া একজন সাধারণ মানুষ সংসদে গেলে তাঁদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন। এ কারণে তাঁদের মতো অনেক তরুণই ভালোবেসে হিরো আলমকে ভোট দিয়েছেন। তাঁকে বিজয়ীর বেশে দেখতে চেয়েছেন। হিরো আলম সব সময় গরিবের পাশে থাকেন উল্লেখ করে ভোটাররা অনেকে বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা ভোট নিয়ে পরে আর জনগণের খোঁজ রাখেন না। তাই তাঁরা হিরো আলমকে ভোট দিয়েছেন।
রাজধানীতে বসে বড় রাজনৈতিক খেলায় মনোযোগ বেশি থাকায় সম্ভবত বড় রাজনৈতিক দলের বড় নেতারা তৃণমূলে কীভাবে রাজনীতিতে কী কী পরিবর্তন ঘটছে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। ভোটের মাঠে বিএনপি নেই, উপনির্বাচন নিয়ে অধিকাংশ মানুষের আগ্রহ কম—এসব ভেবে ১৪ দলীয় জোটপ্রার্থী মশাল প্রতীক নিয়ে ভেবেছিলেন, তাঁকে ঠেকায় কে? কিন্তু ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে’—এটা হয়তো ভুলে ছিলেন মশালের তানসেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হিরো আলম আজ প্রমাণ করেছেন যে আওয়ামী লীগ তাঁর কাছেও কতটা অসহায়। হিরো আলমের কাছেও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয়।
তাঁর জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে সংসদকে ছোট করতে হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। মির্জা ফখরুল ভেবেছিলেন, হিরো আলম জিতে যাবে। কিন্তু “হিরো আলম জিরো” হয়েছেন, ফখরুলের হয়েছে “স্বপ্নভঙ্গ”।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের জবাবও দিয়েছেন হিরো আলম। তিনি বলেছেন, তাঁকে কেউ কোনো দিন জিরো বানাতে পারেননি। হিরোকে যারা জিরো বানাতে এসেছে, তারাই এখন জিরো হয়েছে।
হিরো আলমকে বিএনপি ভোটে দাঁড় করিয়েছে—এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমার কথা, বিএনপি কেন আমাকে দাঁড় করাবে। ভোটের মাঠে আমার পাশে কি বিএনপির কাউকে দেখা গিয়েছিল? বিএনপির নেতা ফখরুল ইসলাম স্যার বলেছেন, বর্তমান সরকার আজকে হিরো আলমের কাছে অসহায়। আমি বলতে চাই, আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি—এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?’
তিনি বলেছেন, ‘আমি হিরো আলম কোনো দলের সঙ্গে জড়িত না। না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ, না অন্য কোনো দল। তাই আপনারা আমাকে নিয়ে কোনো মাখামাখি করবেন না। আমাকে নিয়ে আপনারা একজন আরেকজনকে দোষ দেবেন না।’
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন দেন। প্রতি সেন্টারে সিসি ক্যামেরা দেন। বুথে সিসি ক্যামেরা দেন। ইভিএম দিবেন না। কারণ, ইভিএম হলো চোর। বাইরের দেশ ইভিএম ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। সেটা আমাদের দেশ কুড়িয়ে এনে ভোট করছে। এখানেও কারচুপি হয়। ইভিএমে টিপি মারলে একটায়, যায় আরেকটায়।’
হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ হয়তো উপেক্ষা করা হবে কিংবা তাঁর কণ্ঠ রোধের কোনো উপায়ও খোঁজা হতে পারে। কিন্তু হিরো আলম যে বাংলাদেশের রাজনীতির এক নতুন ‘সিনড্রোম’ তা অস্বীকার করলে ভালো হবে কি?
হিরো আলমের আসল নাম আশরাফুল আলম। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওচিত্র আপলোড করে তিনি আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি যেসব ভিডিওচিত্র নির্মাণ করে মানুষকে বিনোদিত ও আমোদিত করেন, তা অনেকের কাছে মানসম্পন্ন নয়।
নিজে সুদর্শন ও সুকণ্ঠের অধিকারী না হয়েও গান করেন, এমনকি রবীন্দ্রসংগীতও, আবার নিজের নামের আগে হিরো শব্দটি বসিয়ে হয়েছেন হিরো আলম। তিনি লেখাপড়া তেমন জানেন না, বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণে কথা বলেন। একধরনের চটুলতা ও ভাঁড়ামি হলো তাঁর মূল কনটেন্ট। তাঁর গানের কথা, সুর, তাঁর অভিনয়–কোনো কিছুই শিল্পসম্মত নয়। উচ্চমার্গের নয়। গভীর দর্শন নেই, নেই চিন্তাশীলতার ছাপ। কিন্তু এটাই তো চলছে বাংলাদেশে।
তাঁর ফ্যান-ফলোয়ারের সংখ্যা প্রচুর। তাঁকে শিক্ষিত উচ্চবর্গের মানুষ পাতে তুলতে না চাইলেও তিনি সাধারণ মানুষের মন কেড়েছেন এর মধ্যেই। বাণিজ্যিকভাবে তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। ‘বিকৃত সুরে’ রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে হিরো আলম পুলিশেরও ধাতানি খেয়েছেন আর রবীন্দ্রসংগীত না গাওয়ার মুচলেকা দিয়েছেন।
প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজন না থাকলেও এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না হয়েও হিরো আলম নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে এবং জিততে জিততে হেরে গিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে পারলেন—এটাকে আমাদের রাজনীতির বিশেষ সিনড্রোম হিসেবে বিবেচনা না করে উপায় আছে?
আজকের আলোচনাটা শেষ করছি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতিকেরা রাজনীতিকে ভালো মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেনি। আমরা যারা রাজনীতি করি, এই ব্যর্থতা, দায় আমাদের। এটা স্বীকার করতেই হবে। শেখ হাসিনা এক দিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কোনো সেতু নির্মাণ করতে পারিনি। রাজনৈতিক কর্ম সম্পর্কটা আমাদের থাকা উচিত ছিল। এভাবে গণতন্ত্র বাঁচতে পারে না। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। আমাদের দেশে এখানেই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। কারণ, আমরা নষ্ট রাজনীতির কাছে বারবার আত্মসমর্পণ করি। নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষের জন্ম দেয়। নষ্ট রাজনীতিকেরা নষ্ট রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে। বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছে ঠিক তাই।’
নষ্ট রাজনীতির জন্ম দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে হিরো আলমের উত্থানে অন্য পাঁচালি পাঠ করলে চলবে কেন? আমাদের রাজনীতি, গণমাধ্যম সব চলছে ‘চলতে হয়, তাই চলা’ ধাঁচে। সুদূরপ্রসারী চিন্তা নেই, নেই বিবেচনাবোধও। সেখানে মানুষ হিরো আলমের মতো নেতা বেছে নিলে দোষ বা দায় আসলে কার?
দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত মানুষের নাম হিরো আলম। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মুখেও তাঁর নাম। সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখেও হিরো আলম। দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় তাঁর খবর, মন্তব্য ছাপা হচ্ছে গুরুত্ব দিয়ে। এত দিন তিনি আলোচিত ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, এখন মূলধারার গণমাধ্যমেও। তাঁকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। নামীদামি কলাম লেখকের রাজনৈতিক কলামও ভরে উঠছে হিরো আলমকে নিয়ে।
কে এই হিরো আলম—তা নিশ্চয়ই পাঠককে মনে করিয়ে দিতে হবে না। বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনে যে উপনির্বাচন হয়ে গেল ১ ফেব্রুয়ারি, তার মধ্যে বগুড়ার দুটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। একটি আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। হিরো আলম অবশ্য মনে করেন, তিনি হারেননি; তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। হিরো আলম বলেছেন, ভোটের জন্য গণসংযোগের সময় কেউ তাঁকে বিমুখ করেননি; তাঁরা আপ্যায়ন করেছেন, খাইয়েছেন। এ থেকে বগুড়া-৪ আসনে নিজের বিজয় নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন।
তাহলে তিনি পরাজিত হলেন কীভাবে? হিরো আলম বলেছেন, একশ্রেণির মানুষ তাঁকে ‘স্যার’ ডাকতে চান না। তাঁরাই ষড়যন্ত্র করে তাঁর ফল বদলে দিয়েছেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা অসম্ভব বলেও মনে করা যায় না। ভোট নিয়ে নিয়ে তামাশা এখন নিয়মিত বিষয়। তবে হিরো আলমের মতো একজন অরাজনৈতিক ও নবাগত প্রার্থীকে কেন হাারিয়ে দেওয়া হবে? জবাবটা হিরো আলম দিয়েছেন এভাবে, ‘আমি নির্বাচিত হলে চোর-বাটপারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতাম—এটা তারা বুঝেই আমাকে জাতীয় সংসদে যেতে দেয়নি।’
বগুড়া-৪ আসনে এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৮৮ জন। এঁরা সবাই বয়সে তরুণ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, হিরো আলমকে যাঁরা অনুসরণ করেন, তাঁরা বেশির ভাগ তরুণ; ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর নিয়মিত দর্শক। এই তরুণদের সাহস, পরামর্শেই ভোটের মাঠে নেমে ‘খেলা’ দেখিয়ে দিয়েছেন হিরো। তাঁর চেহারায় নায়কোচিত কোনো ছাপ না থাকলেও তরুণরাসহ অনেকেও তাঁকে হিরো হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সম্ভবত এই কারণে যে তাঁর মধ্যে কোনো মেকি কিছু নেই, ভেজাল নেই। তাঁর ভেতরে-বাইরে সমান রাঙা।
নির্বাচনী এলাকার কয়েকজন তরুণ ভোটার গণমাধ্যমের কাছে হিরো আলমকে তাঁদের পছন্দের কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট করেই বলেছেন, রাজনীতিবিদ ছাড়া একজন সাধারণ মানুষ সংসদে গেলে তাঁদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন। এ কারণে তাঁদের মতো অনেক তরুণই ভালোবেসে হিরো আলমকে ভোট দিয়েছেন। তাঁকে বিজয়ীর বেশে দেখতে চেয়েছেন। হিরো আলম সব সময় গরিবের পাশে থাকেন উল্লেখ করে ভোটাররা অনেকে বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা ভোট নিয়ে পরে আর জনগণের খোঁজ রাখেন না। তাই তাঁরা হিরো আলমকে ভোট দিয়েছেন।
রাজধানীতে বসে বড় রাজনৈতিক খেলায় মনোযোগ বেশি থাকায় সম্ভবত বড় রাজনৈতিক দলের বড় নেতারা তৃণমূলে কীভাবে রাজনীতিতে কী কী পরিবর্তন ঘটছে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। ভোটের মাঠে বিএনপি নেই, উপনির্বাচন নিয়ে অধিকাংশ মানুষের আগ্রহ কম—এসব ভেবে ১৪ দলীয় জোটপ্রার্থী মশাল প্রতীক নিয়ে ভেবেছিলেন, তাঁকে ঠেকায় কে? কিন্তু ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে’—এটা হয়তো ভুলে ছিলেন মশালের তানসেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হিরো আলম আজ প্রমাণ করেছেন যে আওয়ামী লীগ তাঁর কাছেও কতটা অসহায়। হিরো আলমের কাছেও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয়।
তাঁর জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে সংসদকে ছোট করতে হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। মির্জা ফখরুল ভেবেছিলেন, হিরো আলম জিতে যাবে। কিন্তু “হিরো আলম জিরো” হয়েছেন, ফখরুলের হয়েছে “স্বপ্নভঙ্গ”।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের জবাবও দিয়েছেন হিরো আলম। তিনি বলেছেন, তাঁকে কেউ কোনো দিন জিরো বানাতে পারেননি। হিরোকে যারা জিরো বানাতে এসেছে, তারাই এখন জিরো হয়েছে।
হিরো আলমকে বিএনপি ভোটে দাঁড় করিয়েছে—এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমার কথা, বিএনপি কেন আমাকে দাঁড় করাবে। ভোটের মাঠে আমার পাশে কি বিএনপির কাউকে দেখা গিয়েছিল? বিএনপির নেতা ফখরুল ইসলাম স্যার বলেছেন, বর্তমান সরকার আজকে হিরো আলমের কাছে অসহায়। আমি বলতে চাই, আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি—এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?’
তিনি বলেছেন, ‘আমি হিরো আলম কোনো দলের সঙ্গে জড়িত না। না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ, না অন্য কোনো দল। তাই আপনারা আমাকে নিয়ে কোনো মাখামাখি করবেন না। আমাকে নিয়ে আপনারা একজন আরেকজনকে দোষ দেবেন না।’
চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে হিরো আলম বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন দেন। প্রতি সেন্টারে সিসি ক্যামেরা দেন। বুথে সিসি ক্যামেরা দেন। ইভিএম দিবেন না। কারণ, ইভিএম হলো চোর। বাইরের দেশ ইভিএম ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। সেটা আমাদের দেশ কুড়িয়ে এনে ভোট করছে। এখানেও কারচুপি হয়। ইভিএমে টিপি মারলে একটায়, যায় আরেকটায়।’
হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ হয়তো উপেক্ষা করা হবে কিংবা তাঁর কণ্ঠ রোধের কোনো উপায়ও খোঁজা হতে পারে। কিন্তু হিরো আলম যে বাংলাদেশের রাজনীতির এক নতুন ‘সিনড্রোম’ তা অস্বীকার করলে ভালো হবে কি?
হিরো আলমের আসল নাম আশরাফুল আলম। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওচিত্র আপলোড করে তিনি আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি যেসব ভিডিওচিত্র নির্মাণ করে মানুষকে বিনোদিত ও আমোদিত করেন, তা অনেকের কাছে মানসম্পন্ন নয়।
নিজে সুদর্শন ও সুকণ্ঠের অধিকারী না হয়েও গান করেন, এমনকি রবীন্দ্রসংগীতও, আবার নিজের নামের আগে হিরো শব্দটি বসিয়ে হয়েছেন হিরো আলম। তিনি লেখাপড়া তেমন জানেন না, বগুড়ার আঞ্চলিক উচ্চারণে কথা বলেন। একধরনের চটুলতা ও ভাঁড়ামি হলো তাঁর মূল কনটেন্ট। তাঁর গানের কথা, সুর, তাঁর অভিনয়–কোনো কিছুই শিল্পসম্মত নয়। উচ্চমার্গের নয়। গভীর দর্শন নেই, নেই চিন্তাশীলতার ছাপ। কিন্তু এটাই তো চলছে বাংলাদেশে।
তাঁর ফ্যান-ফলোয়ারের সংখ্যা প্রচুর। তাঁকে শিক্ষিত উচ্চবর্গের মানুষ পাতে তুলতে না চাইলেও তিনি সাধারণ মানুষের মন কেড়েছেন এর মধ্যেই। বাণিজ্যিকভাবে তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। ‘বিকৃত সুরে’ রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে হিরো আলম পুলিশেরও ধাতানি খেয়েছেন আর রবীন্দ্রসংগীত না গাওয়ার মুচলেকা দিয়েছেন।
প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজন না থাকলেও এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না হয়েও হিরো আলম নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে এবং জিততে জিততে হেরে গিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে পারলেন—এটাকে আমাদের রাজনীতির বিশেষ সিনড্রোম হিসেবে বিবেচনা না করে উপায় আছে?
আজকের আলোচনাটা শেষ করছি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতিকেরা রাজনীতিকে ভালো মানুষের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেনি। আমরা যারা রাজনীতি করি, এই ব্যর্থতা, দায় আমাদের। এটা স্বীকার করতেই হবে। শেখ হাসিনা এক দিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু রাজনীতিতে আমরা কোনো সেতু নির্মাণ করতে পারিনি। রাজনৈতিক কর্ম সম্পর্কটা আমাদের থাকা উচিত ছিল। এভাবে গণতন্ত্র বাঁচতে পারে না। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। আমাদের দেশে এখানেই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। কারণ, আমরা নষ্ট রাজনীতির কাছে বারবার আত্মসমর্পণ করি। নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষের জন্ম দেয়। নষ্ট রাজনীতিকেরা নষ্ট রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখে। বাংলাদেশের অবস্থা হয়েছে ঠিক তাই।’
নষ্ট রাজনীতির জন্ম দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে হিরো আলমের উত্থানে অন্য পাঁচালি পাঠ করলে চলবে কেন? আমাদের রাজনীতি, গণমাধ্যম সব চলছে ‘চলতে হয়, তাই চলা’ ধাঁচে। সুদূরপ্রসারী চিন্তা নেই, নেই বিবেচনাবোধও। সেখানে মানুষ হিরো আলমের মতো নেতা বেছে নিলে দোষ বা দায় আসলে কার?
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যাঁরা পালাতে পারেননি তাঁদের জনাকয়েক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনকালে বিএনপিসহ অন্য নেতাদের যেভাবে হেলমেট পরিয়ে জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হতো, এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের একই কায়দায়
২ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিন যত যাচ্ছে, ততই নতুন নতুন কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। প্রশ্নগুলো যে গভীরতর রাজনৈতিক বিষয়সংশ্লিষ্ট, তা বলাই বাহুল্য। অনেক সময়ই প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে সংবাদ সম্মেলন বা সংবাদ ব্রিফিং করে বিষয়গুলো খোলাসার চেষ্টা করা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও জনমনে আস্থার সংকটের প্রেক্ষাপটে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে অটোরিকশা বন্ধের প্রস্তাবে চালকদের রাস্তায় নেমে আসা এবং শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবরোধে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
১৯ ঘণ্টা আগে