স্টিভেন আর ওকুন
আমেরিকায় নির্বাচন, আর এশিয়াজুড়ে সরকার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, কমলা হ্যারিস বর্তমান বাইডেন সরকারের একটি ধারাবাহিকতা হবেন। আর ট্রাম্প ২.০ হবেন ট্রাম্প ১.০-এর মতোই।
এটা ঠিক যে একজন কমলা হ্যারিসের বিজয়ে দেখতে পাওয়া যাবে জাতীয় মার্কিন স্বার্থকে সর্বোত্তমভাবে এগিয়ে নিতে অংশীদার ও মিত্রদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার মতো পররাষ্ট্রনীতি—যা আমেরিকার চিরাচরিত ব্যবস্থা, তারই ধারাবাহিকতা। সেটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ওভাল অফিসে ট্রাম্প ফিরলে তাঁর ‘আমেরিকা প্রথম’ পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা দেখতে পাওয়া যাবে, যা বিশ্বকে একটি সংকীর্ণ দ্বিপক্ষীয় লেন্সের মাধ্যমে দেখে থাকে।
সিঙ্গাপুরের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব বিলাহারি কৌসিকান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতোই দ্বিতীয় মেয়াদে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি লিখেছেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের সবটাই খারাপ ছিল না। টিপিপি থেকে তাঁর সরে যাওয়া একটি ধাক্কা ছিল সত্যি, যার রেশ এখনো রয়ে গেছে।’ কৌসিকান আরও লিখেছেন, ‘আমেরিকান কঠোর শক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য ট্রাম্প যা করেছেন তাতে অবশ্যই আমাদের স্বার্থে ছিল।’ তাঁর কথায়, ‘প্রেসিডেন্ট ওবামা সুন্দর বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন, সম্ভবত সহজাতভাবে কঠিন শক্তিই ভালো।’
সত্য যে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ পদ্ধতির সাফল্য ছিল। এর বড় কারণ তাঁর প্রশাসনের প্রতিভাবান ও কার্যকর কর্মকর্তারা, রাজনৈতিক নিয়োগকারী এবং ক্যারিয়ার সচেতন কর্মকর্তারা এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সম্ভবত আগের মেয়াদের মতো এমনটা ঘটবে না।
আনুগত্যের প্রশ্ন
মার্কিন সরকারে কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করতে হলে প্রত্যেককে ‘আমেরিকার সংবিধানকে সমর্থন ও রক্ষা করার’ শপথ নিতে হয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই সেই শপথটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। এর বড় উদাহরণ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষাসচিব জেমস ম্যাটিস ও মার্ক এসপার, চিফ অব স্টাফ জন কেলি প্রমুখ।
নিবেদিতপ্রাণ সরকারি কর্মকর্তারা ট্রাম্পের নীতির বাস্তবায়নকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁরা এই নীতিকে কার্যকর ও মার্কিন আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে তোলেন, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা অনেক বিষয়ের সঙ্গে একমত না হলেও। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের প্রশাসনে এই ধরনের কর্মকর্তারা থাকবেন কি না সন্দেহ। দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনে কীভাবে কর্মী নিয়োগ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করার সময় ‘ট্রাম্প-২০২৪ ট্রানজিশন’ টিমের কো-চেয়ার হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের কেবল তখনই ডাকা হবে, যদি তাঁরা ট্রাম্পের প্রথম জমানায় ‘আনুগত্য’-এর প্রমাণ দিয়ে থাকেন।
রিপাবলিকান ইন নেম ওনলি (রিনোস) অর্থাৎ শুধু নামসর্বস্ব রিপাবলিকান হওয়াটা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সহ্য করা হবে না। দলীয় পরিচয় থাকলেই রাজনৈতিক নিয়োগে বাজে পছন্দের একচেটিয়া অধিকার খর্ব করা হবে। বরং এর পরিবর্তে রাজনৈতিক নিয়োগের জন্য ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যকে অপরিহার্য করে তোলা হবে, যাতে বিদ্যমান প্রশাসনের ক্ষমতাকে কমানো সম্ভব হয়।
প্রথম মেয়াদের শেষ কয়েক মাসে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যা কেন্দ্রীয় সরকারের হাজার হাজার কর্মীকে সরিয়ে পাল্টা নিয়োগের নতুন ক্ষমতা দিয়েছিল। এই আদেশের আওতায় এমন অনেকে আছেন যাঁরা বিদেশি নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন। তিনি এটা করেছিলেন আমেরিকার ‘ডিপ স্টেট’কে খতম করতে।
ট্রাম্প এই ‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে ফেলার আদেশ জারি করেছিলেন যাতে তাঁর কাজে সহায়তা করতে অনুগতদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পরে আদেশটি প্রত্যাহার করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে ট্রাম্প সম্ভবত এটিকে পুনরুজ্জীবিত করবেন প্রথমেই।
ট্রাম্প ২.০-এর জন্য এই ধ্বংসের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই) কাজ করেছিল। আমি এএফপিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচটি বৈঠক করেছি। আলাপচারিতায় বুঝতে পেরেছি, তাঁরা মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তাঁদের অনেককেই স্মার্ট, নিবেদিতপ্রাণ এবং ভালোভাবে প্রস্তুত বলে মনে হয়েছে আমার। কোনো সন্দেহ নেই যে তাঁরা থাকলে সরকার কার্যকর হবে।
এএফপিআইয়ের নীতিসংক্রান্ত পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ‘কোনো বৈষম্যমূলক কারণে কর্মীদের অপসারণ করতে এজেন্সিগুলোকে স্বাধীন হতে হবে।’ এর মানে, রাজনৈতিক নিয়োগকারীরা আক্ষরিক অর্থে যেকোনো কারণে বেসামরিক কর্মচারীদের বরখাস্ত করতে পারবেন।
ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন, তাহলে তিনি পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় হাত দেবেন বলে আশা করা যায় না, যার অর্থ কূটনৈতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা নীতির নির্ধারণে নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারবেন।
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অধীনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি যিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টেও কাজ করেছিলেন, সেই মাইক ম্যাককারি আমাকে বলেছেন, ‘মূল বিষয়টি হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ পরিচালনার জন্য কে বা কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন।’ ম্যাককারি বলেন, ‘আমি একজন পেশাদার ফরেন সার্ভিস অফিসার এবং বেসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে দেশের হয়ে কাজ করেছি, আমিই প্রশাসনের নীতি ও নির্দেশনা পূরণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। এই লোকগুলোকে হারালে তা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি অনুমান করছি যে রাজনৈতিক নিয়োগকারী হিসেবে যাঁরা যোগ্য হতে পারেন তাঁরা দূরে থাকবেন এবং যাঁরা চাকরি পাবেন তাঁরা সামান্য যোগ্য হবেন এবং তাঁদের প্রভাব ফেলতে এক বা দুই বছর সময় লাগবে, তবে তাঁরা তা করবেন।’
শূন্যগর্ভে প্রবেশ
‘যে ব্যক্তি এশিয়াকে বোঝার জন্য ৪০ বছরের বেশি সময় ব্যয় করেছেন এবং এই অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে ভালো কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করেছেন, এর মধ্যে ৩০ বছর তিনি মার্কিন স্বার্থের প্রচারের জন্য যুক্ত—তাঁর ব্যাপারে আমেরিকাকে আগ্রহী হতে হবে।’ বলছিলেন কার্ট টং, যিনি এপিইসিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং হংকংয়ে মার্কিন কনসাল-জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন। আমার সঙ্গে কথায় কথায় তিনি বললেন, ‘আমরা কি ওয়াশিংটনে একটি শূন্যগর্ভ প্রশাসন চাই? কেন এটা ভালো জিনিস হবে? মনে হচ্ছে “ডিপ স্টেট” উভয় দলের রাজনৈতিক নেতাদের ভালোভাবে সেবা দিতে পেরেছে।’
ট্রাম্প জয়ী হলে, নীতি প্রণয়ন ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের পেশাদার কর্মকর্তাদের প্রয়োজন, তাঁরা কিন্তু বিদায় নিতে পারেন। যদি তাই হয়, তাঁদের সঙ্গে তাঁদের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা ও সম্পর্ক চলে যাবে। এটি শুধু নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দক্ষতা হ্রাস করবে না, বরং আঞ্চলিক কর্মকর্তাদেরও প্রভাবিত করবে, যাঁরা রাজধানী ওয়াশিংটনে বসে তাঁদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বছরের পর বছর ব্যয় করেছেন। এখন পর্যন্ত সেই প্রশাসন রয়ে গেছে।
নির্বাচনের একটা প্রভাব আছে। ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হন, তাহলে তাঁকে ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি বাস্তবায়নের স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, প্রধান নির্বাহী হিসেবে তিনি এটাকে উপযুক্ত মনে করেন। কিন্তু এই নীতিটি প্রেসিডেন্টের প্রতি সর্বাগ্রে অনুগত ও পেশাদার কর্মকর্তাদের প্রজ্ঞা ও নির্দেশনা ছাড়াই তৈরি। আর তা কার্যকর হবে ‘ট্রাম্প প্রথম’ নীতিতে। আমেরিকার এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে এশিয়ার নেতা ও নীতিনির্ধারকদের শিগগির লড়তে হবে।
স্টিভেন আর ওকুন, বিল ক্লিনটন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা
(এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
আমেরিকায় নির্বাচন, আর এশিয়াজুড়ে সরকার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, কমলা হ্যারিস বর্তমান বাইডেন সরকারের একটি ধারাবাহিকতা হবেন। আর ট্রাম্প ২.০ হবেন ট্রাম্প ১.০-এর মতোই।
এটা ঠিক যে একজন কমলা হ্যারিসের বিজয়ে দেখতে পাওয়া যাবে জাতীয় মার্কিন স্বার্থকে সর্বোত্তমভাবে এগিয়ে নিতে অংশীদার ও মিত্রদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার মতো পররাষ্ট্রনীতি—যা আমেরিকার চিরাচরিত ব্যবস্থা, তারই ধারাবাহিকতা। সেটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ওভাল অফিসে ট্রাম্প ফিরলে তাঁর ‘আমেরিকা প্রথম’ পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা দেখতে পাওয়া যাবে, যা বিশ্বকে একটি সংকীর্ণ দ্বিপক্ষীয় লেন্সের মাধ্যমে দেখে থাকে।
সিঙ্গাপুরের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব বিলাহারি কৌসিকান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতোই দ্বিতীয় মেয়াদে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি লিখেছেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের সবটাই খারাপ ছিল না। টিপিপি থেকে তাঁর সরে যাওয়া একটি ধাক্কা ছিল সত্যি, যার রেশ এখনো রয়ে গেছে।’ কৌসিকান আরও লিখেছেন, ‘আমেরিকান কঠোর শক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য ট্রাম্প যা করেছেন তাতে অবশ্যই আমাদের স্বার্থে ছিল।’ তাঁর কথায়, ‘প্রেসিডেন্ট ওবামা সুন্দর বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন, সম্ভবত সহজাতভাবে কঠিন শক্তিই ভালো।’
সত্য যে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ পদ্ধতির সাফল্য ছিল। এর বড় কারণ তাঁর প্রশাসনের প্রতিভাবান ও কার্যকর কর্মকর্তারা, রাজনৈতিক নিয়োগকারী এবং ক্যারিয়ার সচেতন কর্মকর্তারা এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সম্ভবত আগের মেয়াদের মতো এমনটা ঘটবে না।
আনুগত্যের প্রশ্ন
মার্কিন সরকারে কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করতে হলে প্রত্যেককে ‘আমেরিকার সংবিধানকে সমর্থন ও রক্ষা করার’ শপথ নিতে হয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেই সেই শপথটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। এর বড় উদাহরণ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষাসচিব জেমস ম্যাটিস ও মার্ক এসপার, চিফ অব স্টাফ জন কেলি প্রমুখ।
নিবেদিতপ্রাণ সরকারি কর্মকর্তারা ট্রাম্পের নীতির বাস্তবায়নকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁরা এই নীতিকে কার্যকর ও মার্কিন আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে তোলেন, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা অনেক বিষয়ের সঙ্গে একমত না হলেও। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের প্রশাসনে এই ধরনের কর্মকর্তারা থাকবেন কি না সন্দেহ। দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনে কীভাবে কর্মী নিয়োগ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করার সময় ‘ট্রাম্প-২০২৪ ট্রানজিশন’ টিমের কো-চেয়ার হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের কেবল তখনই ডাকা হবে, যদি তাঁরা ট্রাম্পের প্রথম জমানায় ‘আনুগত্য’-এর প্রমাণ দিয়ে থাকেন।
রিপাবলিকান ইন নেম ওনলি (রিনোস) অর্থাৎ শুধু নামসর্বস্ব রিপাবলিকান হওয়াটা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সহ্য করা হবে না। দলীয় পরিচয় থাকলেই রাজনৈতিক নিয়োগে বাজে পছন্দের একচেটিয়া অধিকার খর্ব করা হবে। বরং এর পরিবর্তে রাজনৈতিক নিয়োগের জন্য ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যকে অপরিহার্য করে তোলা হবে, যাতে বিদ্যমান প্রশাসনের ক্ষমতাকে কমানো সম্ভব হয়।
প্রথম মেয়াদের শেষ কয়েক মাসে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যা কেন্দ্রীয় সরকারের হাজার হাজার কর্মীকে সরিয়ে পাল্টা নিয়োগের নতুন ক্ষমতা দিয়েছিল। এই আদেশের আওতায় এমন অনেকে আছেন যাঁরা বিদেশি নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন। তিনি এটা করেছিলেন আমেরিকার ‘ডিপ স্টেট’কে খতম করতে।
ট্রাম্প এই ‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে ফেলার আদেশ জারি করেছিলেন যাতে তাঁর কাজে সহায়তা করতে অনুগতদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পরে আদেশটি প্রত্যাহার করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে ট্রাম্প সম্ভবত এটিকে পুনরুজ্জীবিত করবেন প্রথমেই।
ট্রাম্প ২.০-এর জন্য এই ধ্বংসের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এএফপিআই) কাজ করেছিল। আমি এএফপিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচটি বৈঠক করেছি। আলাপচারিতায় বুঝতে পেরেছি, তাঁরা মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। তাঁদের অনেককেই স্মার্ট, নিবেদিতপ্রাণ এবং ভালোভাবে প্রস্তুত বলে মনে হয়েছে আমার। কোনো সন্দেহ নেই যে তাঁরা থাকলে সরকার কার্যকর হবে।
এএফপিআইয়ের নীতিসংক্রান্ত পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ‘কোনো বৈষম্যমূলক কারণে কর্মীদের অপসারণ করতে এজেন্সিগুলোকে স্বাধীন হতে হবে।’ এর মানে, রাজনৈতিক নিয়োগকারীরা আক্ষরিক অর্থে যেকোনো কারণে বেসামরিক কর্মচারীদের বরখাস্ত করতে পারবেন।
ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন, তাহলে তিনি পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় হাত দেবেন বলে আশা করা যায় না, যার অর্থ কূটনৈতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা নীতির নির্ধারণে নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারবেন।
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অধীনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি যিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টেও কাজ করেছিলেন, সেই মাইক ম্যাককারি আমাকে বলেছেন, ‘মূল বিষয়টি হলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ পরিচালনার জন্য কে বা কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন।’ ম্যাককারি বলেন, ‘আমি একজন পেশাদার ফরেন সার্ভিস অফিসার এবং বেসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে দেশের হয়ে কাজ করেছি, আমিই প্রশাসনের নীতি ও নির্দেশনা পূরণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। এই লোকগুলোকে হারালে তা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি অনুমান করছি যে রাজনৈতিক নিয়োগকারী হিসেবে যাঁরা যোগ্য হতে পারেন তাঁরা দূরে থাকবেন এবং যাঁরা চাকরি পাবেন তাঁরা সামান্য যোগ্য হবেন এবং তাঁদের প্রভাব ফেলতে এক বা দুই বছর সময় লাগবে, তবে তাঁরা তা করবেন।’
শূন্যগর্ভে প্রবেশ
‘যে ব্যক্তি এশিয়াকে বোঝার জন্য ৪০ বছরের বেশি সময় ব্যয় করেছেন এবং এই অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে ভালো কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা করেছেন, এর মধ্যে ৩০ বছর তিনি মার্কিন স্বার্থের প্রচারের জন্য যুক্ত—তাঁর ব্যাপারে আমেরিকাকে আগ্রহী হতে হবে।’ বলছিলেন কার্ট টং, যিনি এপিইসিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং হংকংয়ে মার্কিন কনসাল-জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন। আমার সঙ্গে কথায় কথায় তিনি বললেন, ‘আমরা কি ওয়াশিংটনে একটি শূন্যগর্ভ প্রশাসন চাই? কেন এটা ভালো জিনিস হবে? মনে হচ্ছে “ডিপ স্টেট” উভয় দলের রাজনৈতিক নেতাদের ভালোভাবে সেবা দিতে পেরেছে।’
ট্রাম্প জয়ী হলে, নীতি প্রণয়ন ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের পেশাদার কর্মকর্তাদের প্রয়োজন, তাঁরা কিন্তু বিদায় নিতে পারেন। যদি তাই হয়, তাঁদের সঙ্গে তাঁদের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা ও সম্পর্ক চলে যাবে। এটি শুধু নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দক্ষতা হ্রাস করবে না, বরং আঞ্চলিক কর্মকর্তাদেরও প্রভাবিত করবে, যাঁরা রাজধানী ওয়াশিংটনে বসে তাঁদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বছরের পর বছর ব্যয় করেছেন। এখন পর্যন্ত সেই প্রশাসন রয়ে গেছে।
নির্বাচনের একটা প্রভাব আছে। ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হন, তাহলে তাঁকে ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি বাস্তবায়নের স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, প্রধান নির্বাহী হিসেবে তিনি এটাকে উপযুক্ত মনে করেন। কিন্তু এই নীতিটি প্রেসিডেন্টের প্রতি সর্বাগ্রে অনুগত ও পেশাদার কর্মকর্তাদের প্রজ্ঞা ও নির্দেশনা ছাড়াই তৈরি। আর তা কার্যকর হবে ‘ট্রাম্প প্রথম’ নীতিতে। আমেরিকার এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে এশিয়ার নেতা ও নীতিনির্ধারকদের শিগগির লড়তে হবে।
স্টিভেন আর ওকুন, বিল ক্লিনটন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা
(এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
একাত্তরের ডিসেম্বরের শীত এখনো যেন গায়ে লেগে আছে। আবার একই সঙ্গে শীতের মধ্যে উষ্ণতার কথাটাও মনে পড়ে—ঢাকার পতন হচ্ছে, বিজাতীয় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের, নৃশংসতার অবসান হচ্ছে। অন্যদিকে, আমাদের পতাকা যে শকুনেরা খামচে ধরেছিল, তা-ও মুক্ত হচ্ছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলাম। বিজয়ের সংবাদ আসছে। সে
৫ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় প্রচলিত বাগধারাসমূহের মধ্যে একটি অতিপরিচিত বাগধারা হলো শুভঙ্করের ফাঁকি। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই এই বাগধারাটি প্রয়োগ করেছি। কিন্তু এই শুভঙ্কর আসলে কে? আর শুভঙ্করের ফাঁকির ইতিহাসটিইবা কী? শুভঙ্করের কী ফাঁকি দিয়ে বাংলা ভাষার প্রবাদের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেল? তবে চলুন আজ জানব শুভঙ্করের
৫ ঘণ্টা আগে‘জয় বাংলার’ জয়—১৯৭১ সালের ৫ মার্চ এটাই ছিল দৈনিক ইত্তেফাকের শিরোনাম। সাংবাদিকতার ছাত্রমাত্রই জানেন, শিরোনাম তৈরিতে সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন অতুলনীয়। ৩ মার্চ প্রকাশিত ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম তিনি দিয়েছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
৫ ঘণ্টা আগেকোনো ভাঙা সড়ক দিয়ে নিশ্চয়ই কোনো পর্যটকের যাওয়া-আসা করতে ভালো লাগার কথা নয়। ভালো লাগেনি আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংবাদটি পড়েও—১৫ বছর ধরে ভাঙছে সড়ক, সংস্কার নেই। এখানে বলা হয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপের একটি সড়কের কথা। দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার প
৫ ঘণ্টা আগে