ড. বদিউল আলম মজুমদার
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনরত মোটরশ্রমিক নূর হোসেন পুলিশের গুলিতে নিহত হন, যা প্রতিবছর ‘নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মৃত্যুকালে নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা স্লোগান ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত দিশেহারা জাতির জন্য জেগে ওঠার এক ঘণ্টাধ্বনি।
আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণায় অঙ্গীকার ছিল: ‘গণতান্ত্রিত পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক
মনবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ এরই প্রতিফলন ঘটে আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদের নির্দেশনায়: ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র’। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে অঙ্গীকার করা হয় প্রজাতন্ত্রের সকল প্রশাসনিক স্তরে জনগণের প্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠার। এমনই এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যাতে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে নূর হোসেন আত্মত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু এ স্বপ্ন যেন আজ এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কতগুলো রাজনৈতিক অধিকার এবং নাগরিক অধিকার। দুর্ভাগ্যবশত এসব অধিকার আমাদের দেশে আজ চরমভাবে সংকুচিত। নির্বাচন আজ নির্বাসনে চলে গেছে এবং সরকার আর জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং তাতে জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের সুযোগ আজ প্রায় অনুপস্থিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভূলণ্ঠিত। আইনের শাসনের পরিবর্তে অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার এবং গুম-খুনের এক অপসংস্কৃতি আজ আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ, সংসদ ও নির্বাচন কমিশন আমাদের দেশে অনুপস্থিত।
আমাদের এসব ক্রম অবক্ষয়ই প্রতিফলিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার-সম্পর্কিত স্কোরে। বর্তমানে বাংলাদেশের স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৩৯, যা ২০১৭ ছিল ৪৭। ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট অনুযায়ী, আমরা একটি হাইব্রিড রেজিম বা সংকর গণতন্ত্র, যেখানে গণতন্ত্রের সব অনুষ্ঠান-আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু অকার্যকর। আর জার্মানির থিংকট্যাংক বরাটেলসম্যান স্টিফটুং আমাদের অটোক্রেটিক বা স্বৈরাচার বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের এ দুরবস্থারই প্রতিফলন ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় ‘ডেমোক্রেসি সামিট’-এ আমাদের আমন্ত্রণ না জানানোর মাধ্যমে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হাল ছেড়ে দিয়েছে, যা আমাদের জেগে ওঠার জন্য আবারও এক ঘণ্টাধ্বনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হাল ছেড়ে দিলেও আমরা সে বিলাসিতা প্রদর্শন করতে পারি না। কারণ, বাংলাদেশ আমাদের রক্তের দামে কেনা স্বদেশ এবং এর সঙ্গে আমাদের এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভবিষ্যৎ জড়িত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো ম্যাজিক ফর্মুলা নেই, নেই কোনো সহজ পথ। একমাত্র পথ হলো নাগরিকের সক্রিয়তা ও অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা। বস্তুত সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর জন্য আরও প্রয়োজন ক্ষমতাসীনদের নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত হয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করার পরিবর্তে জনস্বার্থে কাজ করার সদিচ্ছা।
লেখক: সম্পাদক, সুজন।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলনরত মোটরশ্রমিক নূর হোসেন পুলিশের গুলিতে নিহত হন, যা প্রতিবছর ‘নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মৃত্যুকালে নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা স্লোগান ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত দিশেহারা জাতির জন্য জেগে ওঠার এক ঘণ্টাধ্বনি।
আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণায় অঙ্গীকার ছিল: ‘গণতান্ত্রিত পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক
মনবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ এরই প্রতিফলন ঘটে আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদের নির্দেশনায়: ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র’। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে অঙ্গীকার করা হয় প্রজাতন্ত্রের সকল প্রশাসনিক স্তরে জনগণের প্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠার। এমনই এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যাতে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে নূর হোসেন আত্মত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু এ স্বপ্ন যেন আজ এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কতগুলো রাজনৈতিক অধিকার এবং নাগরিক অধিকার। দুর্ভাগ্যবশত এসব অধিকার আমাদের দেশে আজ চরমভাবে সংকুচিত। নির্বাচন আজ নির্বাসনে চলে গেছে এবং সরকার আর জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং তাতে জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের সুযোগ আজ প্রায় অনুপস্থিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভূলণ্ঠিত। আইনের শাসনের পরিবর্তে অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়ার এবং গুম-খুনের এক অপসংস্কৃতি আজ আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ, সংসদ ও নির্বাচন কমিশন আমাদের দেশে অনুপস্থিত।
আমাদের এসব ক্রম অবক্ষয়ই প্রতিফলিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার-সম্পর্কিত স্কোরে। বর্তমানে বাংলাদেশের স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৩৯, যা ২০১৭ ছিল ৪৭। ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট অনুযায়ী, আমরা একটি হাইব্রিড রেজিম বা সংকর গণতন্ত্র, যেখানে গণতন্ত্রের সব অনুষ্ঠান-আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু অকার্যকর। আর জার্মানির থিংকট্যাংক বরাটেলসম্যান স্টিফটুং আমাদের অটোক্রেটিক বা স্বৈরাচার বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের এ দুরবস্থারই প্রতিফলন ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় ‘ডেমোক্রেসি সামিট’-এ আমাদের আমন্ত্রণ না জানানোর মাধ্যমে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হাল ছেড়ে দিয়েছে, যা আমাদের জেগে ওঠার জন্য আবারও এক ঘণ্টাধ্বনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হাল ছেড়ে দিলেও আমরা সে বিলাসিতা প্রদর্শন করতে পারি না। কারণ, বাংলাদেশ আমাদের রক্তের দামে কেনা স্বদেশ এবং এর সঙ্গে আমাদের এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভবিষ্যৎ জড়িত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো ম্যাজিক ফর্মুলা নেই, নেই কোনো সহজ পথ। একমাত্র পথ হলো নাগরিকের সক্রিয়তা ও অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা। বস্তুত সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর জন্য আরও প্রয়োজন ক্ষমতাসীনদের নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত হয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করার পরিবর্তে জনস্বার্থে কাজ করার সদিচ্ছা।
লেখক: সম্পাদক, সুজন।
১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত খুব প্রয়োজন। সেই বন্দোবস্তের রূপরেখাটা কেমন হবে, সেটা নিয়ে বহু বছর ধরে কথা হচ্ছে।
১৮ ঘণ্টা আগেযেকোনো সরকারের অজনপ্রিয় তথা জনবিচ্ছিন্ন হওয়া এবং তার পরিণতিতে পতনের পেছনে আমলাতন্ত্রের বিরাট ভূমিকা থাকে। বিপরীতে সরকারের জনপ্রিয় হওয়ার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে তার প্রশাসনযন্ত্র। কেননা, সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা এবং তার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয় প্রশাসনের লোকজনের মাধ্যমেই
১৯ ঘণ্টা আগেনভেম্বর মাসে ঢাকা শহরের অবস্থা কতটা অরক্ষিত ছিল, সেটা বোঝা যাবে ১১ নভেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদে। সংক্ষেপে সে খবরটি এ রকম: রোকেয়া হলে ডাকাতি গত মঙ্গলবার দিবাগত শেষ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এক মারাত্মক ডাকাতি সংঘটিত হয়। দুষ্কৃতিকারীরা হলের প্রভোষ্ট ও হলে অবস্থানকারী ছাত্রীদের হাজার হাজার
১৯ ঘণ্টা আগেপ্রতিকূলে চলা মানুষেরাই। আমাদের খাই খাই স্বভাবের সমাজে একজন ব্যতিক্রমী মানুষের উদাহরণ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলী। তিনি একাই ১ লাখ ১০ হাজার তালগাছ রোপণ করেছেন। এ জন্য তিনি নিজের জমি বিক্রি করতেও কার্পণ্য করেননি। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নন খোরশেদ। অভাব-অনটন তাঁর সংসারে
১৯ ঘণ্টা আগে