এ বছরের ৭ অক্টোবর, তখনো পুবের আকাশে সূর্যের দেখা নেই, অনেকটা অন্ধকার। একদল ইসরায়েলি তরুণ গাজা উপত্যকার সীমান্তের কাছাকাছি একটি গানের আসর ঘিরে আনন্দ উৎসবে মগ্ন। তাদের অনেকেই কল্পনা করতে পারেনি যে নির্মম মৃত্যু খুব কাছেই ওত পেতে আছে, তাদের জীবনে আর কোনো দিন সূর্য উঠবে না। আচমকা রকেট এবং গুলির আঘাতে প্রাণ হারায় ২০০ তরুণ। সেদিন হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করেছে। ইতিহাসে আরেকটি ভয়াবহ এবং রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূচনা হয়। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সম্প্রসারণবাদী ইহুদি রাষ্ট্রটি আবারও আরেকবার নিজেদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রচণ্ড হুমকির সম্মুখীন হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমন একটি খবরের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন। অনেকেই মনে করেন, এমন হামলার খবরটি তিনি আগে থেকেই জানতেন। মিসরীয় গোয়েন্দারা একটি গোপন বার্তায় হামাসের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছিল। প্রশ্ন উঠেছে, আগে থেকে জানার পরেও তিনি নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিলেন না কেন?
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজ দেশে ক্ষমতা ধরে রাখতে বেশ বেকায়দায় আছেন। কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে সমঝোতা করেও কোনো কূল করতে পারছেন না। জনসমর্থন তলানির দিকে। এ সময়ে তাঁর দরকার একটি যুদ্ধের। আর তা যদি হয় আজীবনের জাত শত্রু দেশহীন, দুর্বল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে, তাহলে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে সহজেই জয়ের নিশানা ওড়ানো যাবে।
লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবেন। সে কারণেই হামাসের এমন আক্রমণের জবাবে বিলম্ব না করে, গাজাকে ‘জনমানবহীন’ করে ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের ‘মানুষরূপী পশু’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। হামাসের সন্ত্রাসী হামলা তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছে গাজায় ভয়াবহ ধ্বংস, নিধনযজ্ঞের দয়াহীন, দায়হীন লাইসেন্স।
ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে গাজা উপত্যকা ফিলিস্তিনের মাত্র ১৪১ বর্গমাইলের এক টুকরো অবরুদ্ধ ভূমিতে বসবাস করে ২২ লাখ মানুষ। এর ৪০ শতাংশ ১৪ বছরের নিচে; প্রায় ৯ লাখ শিশু। উন্নত প্রযুক্তিতে ঠাসা ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে অবরুদ্ধ গাজার অধিবাসীর ওপর। সমগ্র পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে, হাত-পা বেঁধে নৃশংস হামলা চালানো হচ্ছে এই জনগোষ্ঠীর ওপর। বোমায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের বাড়িঘর, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ সব অবকাঠামো। নির্বিচারে হত্যা করছে নিরীহ, নিরস্ত্র গাজাবাসীকে। মানুষের তাজা রক্তে ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশি রক্তাক্ত। এই ছিটমহল এখন এক ভয়াবহ মৃত্যু উপত্যকা। শিশুদের খণ্ডবিখণ্ড দেহের সারি সারি লাশ বিশ্ববিবেককে তাড়িত করে না, বিশ্বজুড়ে এক অদ্ভুত নীরবতা।
বিশ্বজুড়ে সবাই যে নীরব তা নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ আগ্রাসী ইসরায়েলের পক্ষে সরব হয়েছেন, ছুটে গেছেন ইসরায়েলে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে শুধু আলিঙ্গন করে তাঁদের সহমর্মিতা প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি, এমন অসম যুদ্ধে, জাতি নিধনে সরাসরি সাহায্যের কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই দখলদার ইসরায়েলে মারণাস্ত্র পাঠাতে শুরু করেছে। যেন হামাসের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে গাজার সব সাধারণ মানুষের। এমন অন্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছে ইসরায়েল; আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সক্ষমতা তো তার আছেই। সমর্থনকারীদের যুক্তি একটাই তা হলো—দখলদারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
যাদের ভূমি দখল করা হলো, তাদের কথা শোনার কেউ নেই। নিরাপত্তা শুধু ইসরায়েলের জন্যই প্রযোজ্য, ফিলিস্তিনের জন্য নয়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বহু বছর যাবৎ এই অঞ্চলের মানুষদের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেও তাদের রক্তের তৃষ্ণা মিটছে না; বরং দিন দিনই তা বাড়ছে। ইসরায়েলি হামলায় তিন সপ্তাহে গাজা এবং পশ্চিম তীরে প্রাণ হারিয়েছে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিশু। একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও মানব ইতিহাসের এমন মর্মস্পর্শী এবং কলঙ্কময় অধ্যায়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সভ্যতার দাবিদার মানুষকে।
ইসরায়েলকে সমর্থন না করলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতার সিঁড়ি নড়বড়ে হয়ে পড়বে। ঠিক তেমনই যুক্তরাষ্ট্রের লেজুড় ধরে ঝুলে থাকা ঋষি সুনাকের দাপট হ্রাস পাবে। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ তো গত নির্বাচনে চরম ডানপন্থীদের চরম হেনস্তার শিকার হয়ে ক্ষমতা থেকে প্রায়ই ছিটকে পড়তে বসেছিলেন। তাই তাঁরও ইসরায়েলের একান্ত আশীর্বাদ প্রয়োজন। এ কারণেই মানবতাবিরোধী অপরাধকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা, আত্মরক্ষার যুদ্ধ বলে চালিয়ে দেওয়ার ব্যত্যয় ঘটেনি এবারও। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা আবারও এক চোখ বন্ধ করে পুরোনো ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলছে।
অনৈক্য, গণতন্ত্রহীন, দুর্নীতিগ্রস্ত, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিমুখ এবং নৈতিকভাবে বিচ্যুত ধর্মাশ্রয়ী সস্তা রাজনীতির চর্চাকারী আরব দেশগুলো আজ প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েল এবং পশ্চিমাদের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল, মেরুদণ্ডহীন তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে কপট সমবেদনার কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করলেও জাতিসংঘসহ কোনো দেশই আজ পারমাণবিক শক্তিধর ইসরায়েলকে ঘাঁটানোর দুঃসাহস দেখায় না। আর এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের সরাসরি সাহায্য, সহযোগিতায় এবং সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, শক্তিশালী জনসংযোগব্যবস্থার সুদক্ষ এবং সময়োচিত প্রয়োগে প্রায় ৯০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইসরায়েল মধপ্রাচ্যে অনেকটা পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করতে সক্ষম হয়েছে।
এ কথা মানতেই হবে, ফিলিস্তিনিদের অনেকেই সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। তেমনই খোদ ইসরায়েলেও বহু নাগরিক আছেন যাঁরা স্বাধীন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে আইজ্যাক রবিন ও ইয়াসির আরাফাত অসলো শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে আলোচনা না হলেও, সার্বভৌম ফিলিস্তিন গঠনের পক্ষে ইসরায়েলিদের প্রচ্ছন্ন সায় ছিল। ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে সহানুভূতিশীল হওয়ার কারণে ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর তেলআবিবে খুন হন ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন। হত্যাকারী ছিল ইগাল আমির, পঁচিশ বছর বয়সী ইসরায়েলি চরমপন্থী। এর ১৪ বছর পর, ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর ইয়াসির আরাফাত মারা যান। ফলে এই দুই ভূখণ্ডের মানুষের মধ্যে শান্তি আলোচনা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে জাতিগত নিধন, নির্বিচারে হত্যা, অবিচার, দমনপীড়ন, উপনিবেশ স্থাপন, দখলদারি এবং জাতিবিদ্বেষের শিকার বহুধাবিভক্ত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের একটি স্বাধীন ভূমির আকাঙ্ক্ষা, মুক্তির স্বপ্ন যেন আজ অনেকটা ঊষর মরুর মরীচিকা। স্পন্দনহীন, স্থবির জীবনে অভ্যস্ত নিজ দেশে পরবাসী ফিলিস্তিনিদের অসহায় মৃত্যুই যেন কপালের লিখন। তাদের বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই। ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সন্ত্রাসবাদ দানা বাঁধে, সন্ত্রাসী দলগুলো সহজেই দল ভারী করে।
সম্প্রসারণ, সন্ত্রাস, নিপীড়ন, গণহত্যা চালিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তাতে ঘৃণার চাষ হয়, বিদ্বেষের বিষবাষ্পে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের হীনস্বার্থ চরিতার্থ হলেও, সভ্যতার স্খলন ঘটে, মানবতা লাঞ্ছিত হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর তা না হলে বিশ্ববিবেকের লাশের ওপরে বিষবৃক্ষ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করলে কেউ রক্ষা পাবে না।
এ বছরের ৭ অক্টোবর, তখনো পুবের আকাশে সূর্যের দেখা নেই, অনেকটা অন্ধকার। একদল ইসরায়েলি তরুণ গাজা উপত্যকার সীমান্তের কাছাকাছি একটি গানের আসর ঘিরে আনন্দ উৎসবে মগ্ন। তাদের অনেকেই কল্পনা করতে পারেনি যে নির্মম মৃত্যু খুব কাছেই ওত পেতে আছে, তাদের জীবনে আর কোনো দিন সূর্য উঠবে না। আচমকা রকেট এবং গুলির আঘাতে প্রাণ হারায় ২০০ তরুণ। সেদিন হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করেছে। ইতিহাসে আরেকটি ভয়াবহ এবং রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূচনা হয়। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সম্প্রসারণবাদী ইহুদি রাষ্ট্রটি আবারও আরেকবার নিজেদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রচণ্ড হুমকির সম্মুখীন হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমন একটি খবরের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন। অনেকেই মনে করেন, এমন হামলার খবরটি তিনি আগে থেকেই জানতেন। মিসরীয় গোয়েন্দারা একটি গোপন বার্তায় হামাসের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছিল। প্রশ্ন উঠেছে, আগে থেকে জানার পরেও তিনি নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিলেন না কেন?
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজ দেশে ক্ষমতা ধরে রাখতে বেশ বেকায়দায় আছেন। কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে সমঝোতা করেও কোনো কূল করতে পারছেন না। জনসমর্থন তলানির দিকে। এ সময়ে তাঁর দরকার একটি যুদ্ধের। আর তা যদি হয় আজীবনের জাত শত্রু দেশহীন, দুর্বল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে, তাহলে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে সহজেই জয়ের নিশানা ওড়ানো যাবে।
লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবেন। সে কারণেই হামাসের এমন আক্রমণের জবাবে বিলম্ব না করে, গাজাকে ‘জনমানবহীন’ করে ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের ‘মানুষরূপী পশু’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। হামাসের সন্ত্রাসী হামলা তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছে গাজায় ভয়াবহ ধ্বংস, নিধনযজ্ঞের দয়াহীন, দায়হীন লাইসেন্স।
ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে গাজা উপত্যকা ফিলিস্তিনের মাত্র ১৪১ বর্গমাইলের এক টুকরো অবরুদ্ধ ভূমিতে বসবাস করে ২২ লাখ মানুষ। এর ৪০ শতাংশ ১৪ বছরের নিচে; প্রায় ৯ লাখ শিশু। উন্নত প্রযুক্তিতে ঠাসা ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে অবরুদ্ধ গাজার অধিবাসীর ওপর। সমগ্র পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে, হাত-পা বেঁধে নৃশংস হামলা চালানো হচ্ছে এই জনগোষ্ঠীর ওপর। বোমায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের বাড়িঘর, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ সব অবকাঠামো। নির্বিচারে হত্যা করছে নিরীহ, নিরস্ত্র গাজাবাসীকে। মানুষের তাজা রক্তে ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশি রক্তাক্ত। এই ছিটমহল এখন এক ভয়াবহ মৃত্যু উপত্যকা। শিশুদের খণ্ডবিখণ্ড দেহের সারি সারি লাশ বিশ্ববিবেককে তাড়িত করে না, বিশ্বজুড়ে এক অদ্ভুত নীরবতা।
বিশ্বজুড়ে সবাই যে নীরব তা নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ আগ্রাসী ইসরায়েলের পক্ষে সরব হয়েছেন, ছুটে গেছেন ইসরায়েলে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে শুধু আলিঙ্গন করে তাঁদের সহমর্মিতা প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি, এমন অসম যুদ্ধে, জাতি নিধনে সরাসরি সাহায্যের কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই দখলদার ইসরায়েলে মারণাস্ত্র পাঠাতে শুরু করেছে। যেন হামাসের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে গাজার সব সাধারণ মানুষের। এমন অন্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছে ইসরায়েল; আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সক্ষমতা তো তার আছেই। সমর্থনকারীদের যুক্তি একটাই তা হলো—দখলদারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
যাদের ভূমি দখল করা হলো, তাদের কথা শোনার কেউ নেই। নিরাপত্তা শুধু ইসরায়েলের জন্যই প্রযোজ্য, ফিলিস্তিনের জন্য নয়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বহু বছর যাবৎ এই অঞ্চলের মানুষদের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেও তাদের রক্তের তৃষ্ণা মিটছে না; বরং দিন দিনই তা বাড়ছে। ইসরায়েলি হামলায় তিন সপ্তাহে গাজা এবং পশ্চিম তীরে প্রাণ হারিয়েছে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিশু। একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও মানব ইতিহাসের এমন মর্মস্পর্শী এবং কলঙ্কময় অধ্যায়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সভ্যতার দাবিদার মানুষকে।
ইসরায়েলকে সমর্থন না করলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতার সিঁড়ি নড়বড়ে হয়ে পড়বে। ঠিক তেমনই যুক্তরাষ্ট্রের লেজুড় ধরে ঝুলে থাকা ঋষি সুনাকের দাপট হ্রাস পাবে। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ তো গত নির্বাচনে চরম ডানপন্থীদের চরম হেনস্তার শিকার হয়ে ক্ষমতা থেকে প্রায়ই ছিটকে পড়তে বসেছিলেন। তাই তাঁরও ইসরায়েলের একান্ত আশীর্বাদ প্রয়োজন। এ কারণেই মানবতাবিরোধী অপরাধকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা, আত্মরক্ষার যুদ্ধ বলে চালিয়ে দেওয়ার ব্যত্যয় ঘটেনি এবারও। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা আবারও এক চোখ বন্ধ করে পুরোনো ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলছে।
অনৈক্য, গণতন্ত্রহীন, দুর্নীতিগ্রস্ত, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিমুখ এবং নৈতিকভাবে বিচ্যুত ধর্মাশ্রয়ী সস্তা রাজনীতির চর্চাকারী আরব দেশগুলো আজ প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েল এবং পশ্চিমাদের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল, মেরুদণ্ডহীন তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে কপট সমবেদনার কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করলেও জাতিসংঘসহ কোনো দেশই আজ পারমাণবিক শক্তিধর ইসরায়েলকে ঘাঁটানোর দুঃসাহস দেখায় না। আর এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের সরাসরি সাহায্য, সহযোগিতায় এবং সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, শক্তিশালী জনসংযোগব্যবস্থার সুদক্ষ এবং সময়োচিত প্রয়োগে প্রায় ৯০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইসরায়েল মধপ্রাচ্যে অনেকটা পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করতে সক্ষম হয়েছে।
এ কথা মানতেই হবে, ফিলিস্তিনিদের অনেকেই সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। তেমনই খোদ ইসরায়েলেও বহু নাগরিক আছেন যাঁরা স্বাধীন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে আইজ্যাক রবিন ও ইয়াসির আরাফাত অসলো শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে আলোচনা না হলেও, সার্বভৌম ফিলিস্তিন গঠনের পক্ষে ইসরায়েলিদের প্রচ্ছন্ন সায় ছিল। ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে সহানুভূতিশীল হওয়ার কারণে ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর তেলআবিবে খুন হন ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন। হত্যাকারী ছিল ইগাল আমির, পঁচিশ বছর বয়সী ইসরায়েলি চরমপন্থী। এর ১৪ বছর পর, ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর ইয়াসির আরাফাত মারা যান। ফলে এই দুই ভূখণ্ডের মানুষের মধ্যে শান্তি আলোচনা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে জাতিগত নিধন, নির্বিচারে হত্যা, অবিচার, দমনপীড়ন, উপনিবেশ স্থাপন, দখলদারি এবং জাতিবিদ্বেষের শিকার বহুধাবিভক্ত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের একটি স্বাধীন ভূমির আকাঙ্ক্ষা, মুক্তির স্বপ্ন যেন আজ অনেকটা ঊষর মরুর মরীচিকা। স্পন্দনহীন, স্থবির জীবনে অভ্যস্ত নিজ দেশে পরবাসী ফিলিস্তিনিদের অসহায় মৃত্যুই যেন কপালের লিখন। তাদের বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই। ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সন্ত্রাসবাদ দানা বাঁধে, সন্ত্রাসী দলগুলো সহজেই দল ভারী করে।
সম্প্রসারণ, সন্ত্রাস, নিপীড়ন, গণহত্যা চালিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তাতে ঘৃণার চাষ হয়, বিদ্বেষের বিষবাষ্পে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের হীনস্বার্থ চরিতার্থ হলেও, সভ্যতার স্খলন ঘটে, মানবতা লাঞ্ছিত হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর তা না হলে বিশ্ববিবেকের লাশের ওপরে বিষবৃক্ষ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করলে কেউ রক্ষা পাবে না।
১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত খুব প্রয়োজন। সেই বন্দোবস্তের রূপরেখাটা কেমন হবে, সেটা নিয়ে বহু বছর ধরে কথা হচ্ছে।
১২ ঘণ্টা আগেযেকোনো সরকারের অজনপ্রিয় তথা জনবিচ্ছিন্ন হওয়া এবং তার পরিণতিতে পতনের পেছনে আমলাতন্ত্রের বিরাট ভূমিকা থাকে। বিপরীতে সরকারের জনপ্রিয় হওয়ার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে তার প্রশাসনযন্ত্র। কেননা, সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা এবং তার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয় প্রশাসনের লোকজনের মাধ্যমেই
১৩ ঘণ্টা আগেনভেম্বর মাসে ঢাকা শহরের অবস্থা কতটা অরক্ষিত ছিল, সেটা বোঝা যাবে ১১ নভেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদে। সংক্ষেপে সে খবরটি এ রকম: রোকেয়া হলে ডাকাতি গত মঙ্গলবার দিবাগত শেষ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এক মারাত্মক ডাকাতি সংঘটিত হয়। দুষ্কৃতিকারীরা হলের প্রভোষ্ট ও হলে অবস্থানকারী ছাত্রীদের হাজার হাজার
১৩ ঘণ্টা আগেপ্রতিকূলে চলা মানুষেরাই। আমাদের খাই খাই স্বভাবের সমাজে একজন ব্যতিক্রমী মানুষের উদাহরণ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলী। তিনি একাই ১ লাখ ১০ হাজার তালগাছ রোপণ করেছেন। এ জন্য তিনি নিজের জমি বিক্রি করতেও কার্পণ্য করেননি। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নন খোরশেদ। অভাব-অনটন তাঁর সংসারে
১৩ ঘণ্টা আগে