Ajker Patrika

কেন নেই শিশু আদালত

সম্পাদকীয়
কেন নেই শিশু আদালত

আমাদের দেশে একধরনের সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে—যখন যে ধরনের অপরাধ সমাজের মধ্যে বেড়ে যায়, তখন সে বিষয়টি নিয়ে সব জায়গায় আলোচনা চলতে থাকে। সম্প্রতি মাগুরার একটি শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। সেটার রেশ কাটতে না কাটতে আরও বেশ কয়েকটি নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি প্রতিটি জেলায় শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য চিঠি দিয়েছেন। সেই আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৩ সালের শিশু আইনে স্পষ্ট বিধান ছিল। এক যুগ পরে কেন উচ্চ আদালত সেটা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিচ্ছেন, সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। এটা তো সুপ্রিম কোর্টের শুধু বিষয় নয়। বিগত সরকার কেন সেটা প্রতিষ্ঠা করেনি, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই।

আজকের পত্রিকায় ১৯ মার্চের প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা তাঁদের নিয়মিত কাজের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিশু আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারণে বিচারকদের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শিশুবিষয়ক মামলাগুলোর নিষ্পত্তি আশঙ্কাজনকভাবে বিলম্বিত হয়ে থাকে। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিচারাধীন শিশুবিষয়ক মামলার সংখ্যা ৪২ হাজার ৫৬৯। এই বিপুলসংখ্যক মামলার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিচারকের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আগের একটি নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু বিচারিক কার্যক্রমের জন্য বিচারক ও মামলার অনুপাত ১: ৫৭৮ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু প্রতিটি জেলায় যদি শিশু আদালত প্রতিষ্ঠাও করা হয়, তাহলে এই অনুপাত দাঁড়াবে ১: ৬৬৫, যা স্পষ্টতই বিচারকের স্বল্পতা নির্দেশ করে। এ জন্য প্রতিটি জেলায় একাধিক শিশু আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছিল।

প্রধান বিচারপতির নির্দেশে দেশের প্রতিটি জেলায় শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন হলো, আইন প্রণয়নের এক যুগ পরে কেন এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হলো? কেন একটি সুস্পষ্ট আইনি বাধ্যবাধকতা এত দীর্ঘ সময় ধরে উপেক্ষিত ছিল?

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিগত সরকারের নিষ্ক্রিয়তাই শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রধান কারণ। এটি সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। মামলাজট কমাতে এবং শিশুদের দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রতিটি জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত স্থাপন করা অত্যাবশ্যক। শুধু তা-ই নয়, শিশু আদালতের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্টসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক উদ্যোগ আশার আলো দেখালেও সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা এবং দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করা সম্ভব। এখন দ্রুত সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বর্তমান সরকার উপলব্ধি করে যদি শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা করে, তবে সুপ্রিম কোর্টের সেই আহ্বান কার্যকর হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেলিকপ্টারে নেওয়ার অবস্থায় নেই, দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে তামিম

উসকানিতে প্রভাবিত না হতে বললেন সেনাপ্রধান

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বিরুদ্ধে ৪৭ ব্রিটিশ এমপিকে ‘সন্দেহজনক’ ই-মেইল

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, পালানোকালে আটক ৫ পুলিশ সদস্য

১৭ বছরে ভোটার চান ড. ইউনূস, এনসিপির প্রস্তাব ১৬ বছর: যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত