জনজীবনে সংকট বাড়াবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ২২
Thumbnail image

প্রাথমিকভাবে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে বলে ৩১ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সাধারণ জনগণের ওপর এর প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে শুক্রবার আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

গত সরকারের আমল থেকে চলে আসা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা করুণ। চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যখন দেশের দরিদ্র মানুষের অবস্থা কাহিল, সেই মুহূর্তে নতুন করে ভ্যাট আরোপের কারণে এ শ্রেণির মানুষের জীবনে আরও ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। এই পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে সরাসরি কর বৃদ্ধির পরিবর্তে পরোক্ষ কর আরোপ করা হচ্ছে, যা ন্যায্য নয় এবং তা শুধু দরিদ্র শ্রেণিই নয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

পরোক্ষ কর, বিশেষ করে ভ্যাট পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা তাদের আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে, তারাই এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধনীদের ওপর সরাসরি কর আরোপ না করে এ ধরনের পরোক্ষ কর রাজস্ব আহরণের সহজ পন্থা হতে পারে, কিন্তু তা সমাজের আয়বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলবে। ফলে এটি জনজীবনের ওপর ন্যায্যতার ঘাটতি সৃষ্টি করবে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা মানুষকে তাদের চাহিদা হ্রাস করতে বাধ্য করবে। এতে শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই সংকট দেখা দেবে না, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতেও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ সিদ্ধান্তকে দীর্ঘমেয়াদি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনার অভাব বলে চিহ্নিত করেছেন।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সমন্বয়হীনতারও ইঙ্গিত বহন করে। একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ভ্যাট বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোক্তাদের ব্যয়ের ভার বাড়ানো হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় অসংগতির সৃষ্টি হচ্ছে।

যখন নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে স্বস্তি প্রয়োজন, তখন রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার সহজ পথ বেছে নিচ্ছে। এটি শুধু জনজীবনে সংকট সৃষ্টি করবে না; বরং দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকারের উচিত ছিল ধনীদের ওপর সরাসরি কর আরোপ করা এবং দুর্নীতি ও কর ফাঁকি রোধের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া প্রয়োজন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই নীতি গ্রহণ করা।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানে শুধু রাজস্ব আদায় নয়, বরং এর অন্যতম লক্ষ্য হওয়া ছিল আয়বৈষম্য কমানো এবং সাধারণ মানুষের কাছে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। নিশ্চিতভাবে ভ্যাট বৃদ্ধির বর্তমান সিদ্ধান্ত নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। তাই সময় এসেছে ন্যায়সংগত, টেকসই এবং সবার জন্য সহায়ক করনীতির দিকে মনোযোগ দেওয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত