বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন, ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ৪৬
Thumbnail image
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন। ছবি: মেহেদী হাসান

আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানাপোড়েন চলে আসছে বেশ কিছুদিন থেকেই। দুই পক্ষের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

সন্ধ্যায় ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। সেখান থেকে মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগ হয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যায়। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এতে কার্যালয়ের নিচতলার কয়েকটি কক্ষ পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। এছাড়া ভাঙচুর করা হয় কার্যালয়।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন। ছবি: মেহেদী হাসান
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন। ছবি: মেহেদী হাসান

এই ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’ এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে ৮টায় মিছিল নিয়ে তাঁরা বিজয়নগরে যাবেন। ‘জাতীয় বেইমানদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম সাড়ে ৭টার দিকে একই রকম একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে যাচ্ছি।’

ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ হাসিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টিএসসি থেকে মশাল মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে আসেন তাঁরা। জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে ব্রিফিংয়ের পরিকল্পনা ছিল। যেন আগামী ২ তারিখ জাতীয় পার্টি তাঁদের মহাসমাবেশ করতে না পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মিছিলটি যখন পার্টি অফিসের সামনে চলে আসে, তখন দলটির নেতা-কর্মীরা আক্রমণ করে। সেই আক্রমণে ১০-১৫ জন আহত হন।

আহত হওয়ার খবরটি সমন্বয়কদের কাছে চলে গেলে, তাঁরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সামনে আসতে চায়। ততক্ষণে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীরা জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়, ভাঙচুর করে এবং এরশাদের ছবিসহ লোগো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলে।

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীন এ দেশে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে সহায়তা করা এই জাতীয় পার্টি কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ করতে পারবে না। যেকোনো মূল্যে তাঁদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৯ টা) ছাত্র-জনতার অন্তত ১৫০-২০০ জন জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দিচ্ছেন। পরিচিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি টহল টিম সেখানে উপস্থিত রয়েছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা এখনই কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। আমরা বসব, আলোচনা করে পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।’

আগামী ২ নভেম্বরের সমাবেশ অব্যাহত থাকবে কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটাও আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব। আজকে রাতের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেব।’

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। এদিনই পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যান ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট বিকেলে সেনা দপ্তরে দেশের রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের কেউ ডাক না পেলেও, আওয়ামী লীগের ছায়ায় থাকা ওই সরকারের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ডাক পায়। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সেনাপ্রধানের ওই বৈঠকে অংশ নেন।

জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর ও মেরুদণ্ডহীন ফ্যাসিস্টের দালাল হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। দলটিকে সংলাপে আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তাঁরা। পরে আর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে ডাকা হয়নি। এর প্রতিক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। গত ১৪ অক্টোবর রাতে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির এই যৌথ সভায় এই ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান। এর প্রতিবাদে সেদিন রাতেই রংপুর নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত