পুরুষের ক্রোধ-আগ্রাসন কমাতে পারে নারীর অশ্রুর ঘ্রাণ

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

অশ্রু বা কান্না নারী বড় অস্ত্র এটি প্রায় সর্বজনবিদিত একটি বিষয়। তারই একটি প্রমাণ নতুন করে যেন আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, নারীর অশ্রু পুরুষের ক্রোধ কমাতে পারে, পরিবর্তন আনতে পারে পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবেও। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছি পিয়ার রিভিউড জার্নাল পিএলওস বায়োলজিতে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের একদল গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নারীর কান্নার ঘ্রাণে পুরুষের আগ্রাসী মনোভাব অন্তত ৪৪ শতাংশ কমে আসে। এতে বলা হয়েছে, পুরুষের মস্তিষ্কের যে অংশটি তাঁকে আক্রমণাত্মক করে তোলে, নারীর কান্নার ঘ্রাণ সেই অংশকে দুর্বল করে দেয়। 

মানুষ কেন কাঁদে, তারও একটি ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে গবেষণাটিতে। সেখানে বলা হয়েছে, কান্না সম্ভবত পরিস্থিতিকে শান্ত করার একটি কার্যকর জৈবিক কৌশল। মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা বলছেন, চোখের জলে যে রাসায়নিক উপাদান থাকে তা সামাজিক সংকেত হিসেবে কাজ করে। এর প্রভাবও খুব শক্তিশালী। 

আগে থেকেই জানা ছিল, পুরুষ ইঁদুরের অশ্রুতে এমন একটি রাসায়নিক থাকে, যা নারী ইঁদুরকে যৌনতার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা ইঁদুরের গর্ভপাতও হতে পারে। ইঁদুরের অশ্রুও আগ্রাসী আচরণকেও প্রভাবিত করে। নারী ইঁদুরেরা নিজেদের পুরুষের আগ্রাসী আচরণ থেকে রক্ষায় কান্নার আশ্রয় নেয়। আর নারী ইঁদুরের কান্নায় এমন রাসায়নিক থাকে, যা পুরুষ ইঁদুরের লড়াই থামিয়ে দেয়। শিশু ইঁদুরের কাছেও আত্মরক্ষার একমাত্র সম্বল কান্না। 

কিন্তু মানুষের কান্না আগ্রাসী মনোভাব কমাতে বা ক্রোধ দমনে কতটা প্রভাব রাখতে পারে, সে বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না। এই গবেষণার গবেষকেরাই আগে দেখিয়েছিলেন, পুরুষ যখন আবেগাক্রান্ত নারীর অশ্রুর ঘ্রাণ শুঁকে তখন তাদের টেস্টোস্টেরন ক্ষরণের মাত্রা কমে যায়। ফলে যৌনতার প্রতিও আগ্রহ কমে আসে। 

গবেষণাটির মূল লক্ষ্য ছিল পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষেত্রে কান্নার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা। ছয়জন নারীর কাছ থেকে অশ্রু সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকেরা। অশ্রু সংগ্রহ করার আগে একটি বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। ওই ছয় নারীর সঙ্গী পুরুষদের একটি ভিডিও গেম খেলতে দেওয়া হয়, যা তাদের আগ্রাসী মনোভাব উসকে দেয়। যে সময় পুরুষেরা ভিডিও গেমটি খেলছিলেন তখন এমআরআই স্ক্যানার দিয়ে তাদের ব্রেইনের কার্যকলাপ মাপা। 

গবেষকেরা দেখতে পান, নারীদের কান্নার ঘ্রাণ পেয়ে গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের আগ্রাসী আচরণ ৪৩ দশমিক ৭ ভাগ কমে গেছে। ব্রেইন ইমেজিং পরীক্ষায় দেখা গেছে, কান্নার ঘ্রাণ পেয়ে আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে যুক্ত ব্রেইনের অংশটিও তার কার্যকলাপের মাত্রা কমিয়ে দেয়। 

গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইজম্যানস ব্রেইন সায়েন্সেস ডিপার্টমেন্টের গবেষক হোয়াম সোবেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা খেয়াল করেছি, অশ্রু ব্রেইনের ঘ্রাণজনিত রিসেপ্টরগুলোকে সক্রিয় করে তোলে আর আগ্রাসন সম্পর্কিত অংশটিকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এতে উল্লেখযোগ্যভাবে আগ্রাসী আচরণ কমে আসে।’ 

হোয়াম সোবেল আরও বলেন, ‘অশ্রু হলো একটি রাসায়নিক রক্ষাকবচ, যা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এই প্রভাবটি ইঁদুর ও মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রেও সাধারণ বৈশিষ্ট্য হতে পারে।’ শিশুদের ক্ষেত্রে কান্নার প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, ভাষাহীন যোগাযোগের (নন ভারবাল কমিউনিকেশন) ক্ষেত্রে কান্না গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

মানুষের আগ্রাসী আচরণে লিঙ্গ ও যৌনতা কতটা প্রভাব রাখে পারে সেটিও উঠে এসেছে এই গবেষণায়। ২০১৫ সালের সামাজিক ও আচরণগত বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক এনসাইক্লোপিডিয়ার বলা হয়, লৈঙ্গিক পার্থক্য মনোবিজ্ঞানের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রাচীনতম আবিষ্কারের একটি। এই গবেষণা দেখিয়েছে, অশ্রুতে থাকা রাসায়নিকের মাধ্যমে পুরুষের আক্রমণাত্মক আচরণ জৈবিক সংকেত দিয়ে কতটা পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে এই বিষয়টি নিয়ে এখনো পূর্ণাঙ্গ চিত্র জানা যায়নি। 

গবেষকেরা বলছেন, ‘আমরা জেনেছি, অশ্রুর ঘ্রাণ শুঁকলে টেস্টোস্টেরন কমে এবং টেস্টোস্টেরন কমলে তা নারীর তুলনায় পুরুষে আগ্রাসী আচরণের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে। এখন, এই প্রভাবের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে নারীদেরও আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, যাতে গবেষণাটি আরও প্রসারিত হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত