আবিষ্কারের ৫ বছর পর জানা গেল গ্রহটির অস্তিত্বই নেই

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ০৮: ০০

ভলকান গ্রহ আবিষ্কারের ৫ বছর পরই এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অন্য গবেষকেরা। গ্রহটি ৪০ এরিডানি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে বলে এত দিন দাবি করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি নতুন গবেষণায় জানা যায়, এই গ্রহের কোনো অস্তিত্বই নেই! 

কল্পবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি মুভি ও সিরিজ—স্টার ট্রেক। এই মুভির অন্যতম প্রধান চরিত্র মিস্টার স্পকের বাড়ি কাল্পনিক গ্রহ ভলকানে। ২০১৮ সালে ভলকান গ্রহ খুঁজে পাওয়ার কথা জানান গবেষকেরা। স্টার ট্রেকের ভলকানের সঙ্গে নামের সাদৃশ্য থাকায় গ্রহটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তবে পাঁচ বছর পর এটি নিয়ে আবার গবেষণা শুরু করলে এর অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।

কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের কিট পাহাড়ের চূড়ায় নাসার একটি এনএসএফ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এটি গ্রহের অবস্থান নির্ভুলভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে ভলকান গ্রহের যে কোনো অস্তিত্ব নেই তা নির্ভুলভাবে প্রমাণিত হয়। 

ভলকান একটি এক্সোপ্ল্যানেট (যেসব গ্রহ সূর্য ছাড়া অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে)। এসব গ্রহকে দুই পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা যায়। এর একটি হলো ট্রানজিট বা অতিক্রমণ পদ্ধতি। কোনো গ্রহ যদি বিশাল আকারের অন্য একটি নক্ষত্র ও পৃথিবীর মধ্যকার শূন্যস্থান দিয়ে সরাসরি অতিক্রম করে, এর ফলে যদি বিশাল নক্ষত্রের সামান্য অংশ আড়াল হয়ে যায়, তাহলে সেই ঘটনাটিকে বলা হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ। সেসময় নক্ষত্রের আলো কিছুটা বাধা পায়। মনে হয় যেন, নক্ষত্রে একটি ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে। এভাবে বোঝা যায় নক্ষত্রকে আবর্তন করে এমন একটি গ্রহ রয়েছে। 

আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো ‘রেডিয়াল ভেলোসিটি’। এই পদ্ধতিতে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পার্থক্য পরিমাপের মাধ্যমে নক্ষত্রের গতি সম্পর্কে জানা যায়। রেডিয়াল ভেলোসিটির মান ঋণাত্মক হলে নক্ষত্রটি পৃথিবীর দিকে সরে আসে বলে বোঝা যায়। আর মান যদি ধনাত্মক হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। 

গ্রহ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করার সময় এটি নক্ষত্রের ওপর একটি মহাকর্ষীয় বল প্রয়োগ করে। যার ফলে এটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামান্য নড়াচড়া করে। এই গতি নক্ষত্রের বর্ণালি রেখার ওপর একটি সূক্ষ্ম ডপলার বিচ্যুতি তৈরি করে, যা নক্ষত্রের আলোক বর্ণালিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন হিসেবে শনাক্ত করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। 

সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনগুলো পরিমাপ করে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র প্রদক্ষিণকারী গ্রহের উপস্থিতি অনুমান করতে পারেন এবং এমনকি এর ভর ও কক্ষপথের বৈশিষ্ট্যগুলোও নির্ধারণ করতে পারেন। এই পদ্ধতি এমন গ্রহ শনাক্তের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যেগুলো পৃথিবীর দিক থেকে তাদের নক্ষত্রের পৃষ্ঠ প্রদক্ষিণ করে না। 

ভলকান গ্রহটির ‘এইচডি ২৬৯৬৫ বি’ নামকরণ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে স্টার ট্রেকের কাল্পনিক গ্রহ ভলকানের সঙ্গে তুলনা করেন গবেষকেরা। একে ‘সুপার আর্থ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটি ১৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বলে জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এটি সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। এই গ্রহের এক দিন পৃথিবীর ৪২ দিনের সমান। গ্রহটি নেপচুনের চেয়ে ছোট। 

গ্রহ শনাক্তের রেডিয়াল ভেলোসিটি পদ্ধতিটি ২০১৮ সালে ছিল না। তাই এই গ্রহ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গবেষকেরা ভুল করেছেন। 

ভলকান গ্রহের অস্তিত্ব নেই প্রমাণিত হলেও এটি বিজ্ঞান জগতের জন্য খারাপ সংবাদ নয়। কারণ এখন বিজ্ঞানীরা সূক্ষ্মভাবে রেডিয়াল ভেলোসিটি পরিমাপ করতে পারেন। ফলে প্রকৃত গ্রহ ও দূরবর্তী নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন। 

নতুন গবেষণাটি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালে গত মে মাসে প্রকাশিত হয়। ডার্টমাউথ কলেজের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যাবিগেল বারোর নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত