৪৫ হাজার বছর আগে মানুষের পাশাপাশি টিকে ছিল নিয়ান্ডারথালরাও

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

আজ থেকে প্রায় ৪৫ হাজার বছর আগে মানবজাতি বা হোমো সেপিয়েন্সের পাশাপাশি কয়েক হাজার বছর ধরে টিকে ছিল নিয়ান্ডারথাল মানবেরা। মধ্য জার্মানির একটি এলাকা থেকে আবিষ্কৃত হওয়া হাড়ের অবশেষের জেনেটিক বা বংশগতি বিশ্লেষণ থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স ডেইলির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ক একটি নিবন্ধ পৃথকভাবে দুটি জার্নাল নেচার ও নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধ অনুসারে, জার্মানির রানিস নামের শহরের একটি এলাকা থেকে ওই হাড়ের ধ্বংসাবশেষগুলো উদ্ধার করা হয়। এই অঞ্চলটিতে এর আগেও প্রস্তরযুগের মানুষদের বিভিন্ন উপকরণের নমুনা পাওয়া গেছে। রানিস থেকে পাওয়া হাড়ের ধ্বংসাবশেষের জেনেটিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও আইসোটোপিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, যে প্রমাণ পাওয়া গেছে সে অনুসারে—অঞ্চলটিতে হোমো সেপিয়েন্স ও হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস একই সময়ে পাশাপাশি টিকে ছিল। এমনকি মানুষের এই দুই প্রজাতির মধ্যে শংকর প্রজননের ঘটনাও ঘটেছে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণা থেকে আরও একটি ধারণার ভিত্তি শক্ত হয় যে, আজ থেকে ৫০ হাজা বছর আগে, আধুনিক মানুষ ইউরোপ ও এশিয়ায় ব্যাপকভাবে আক্রমণের ফলেই নিয়ান্ডারথাল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

রানিসে পাওয়া পাথরের তৈরি তীক্ষ্ণ ফলাগুলো চেক রিপাবলিকের মোরাভিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া আধুনিক মানুষের তৈরি পাথরের হাতিয়ারের মতোই। এই এসব স্থানে পাওয়া হাতিয়ারগুলোর গঠনের ধরন বিবেচনায় বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন যে, এগুলো একই সংস্কৃতিতে থাকা মানব প্রজাতি তৈরি করেছে। তবে সেটি হোমো সেপিয়েন্স না কি হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস সে বিষয়ে প্রথমে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না। এর আগে, কার্বন ডেটিংয়ের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, রানিসে ৪০ হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতা ছিল।

যাই হোক, রানিস থেকে আবিষ্কৃত নমুনার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের হাতিয়ারগুলো আধুনিক মানুষেরই তৈরি। এ বিষয়ে এই গবেষণা নিবন্ধের অন্যতম মূল লেখক এলেনা জাভালা বলেছেন, ‘আমরা নতুন অনুসন্ধান থেকে যে তথ্য পেয়েছি তার ভিত্তিতে বলা যায়, হোমো স্যাপিয়েন্সই এই প্রযুক্তিটি তৈরি করেছিল এবং আজ থেকে ৪৫ হাজার বছর আগেও হোমো সেপিয়েন্স এই অঞ্চলে ছিল।’

এলেনা জাভালা জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজির পিএইচডি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী। ফ্রান্সের কলেজ দে ফ্রান্সের অধ্যাপক ও ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজির সাবেক পরিচালক জ্যঁ জ্যাক হাবলিনের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে জাভালা রানিসে খননকাজ শুরু করেন।

এ বিষয়ে হাবলিন বলেন, ‘রানিস গুহা সাইটটি ইউরোপের উত্তরাংশ জুড়ে হোমো সেপিয়েন্সের প্রথম ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ দেয়। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, পাথরের হাতিয়ারের যে নিদর্শন নিয়ান্ডারথালদের তৈরি বলে মনে করা হতো এত দিন তা প্রকৃতপক্ষে হোমো সেপিয়েন্সের হাতিয়ারই ছিল।’

জ্যঁ জ্যাক হাবলিন আরও বলেন, ‘এটি মৌলিকভাবে (হোমো সেপিয়েন্সের ইউরোপে নিয়ান্ডারথাল মানুষের এলাকায় পৌঁছানোর) সময়কাল সম্পর্কে আমাদের আগের জানাশোনাকে বদলে দিয়েছে। হোমো সেপিয়েন্স তথা আধুনিক মানুষ দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে নিয়ান্ডারথাল মানব প্রজাতির অদৃশ্য হওয়ার অনেক আগে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছেছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত