মানুষের ভাষা উপলব্ধির ক্ষমতা ছিল নিয়ান্ডারথালদের

সাইরুল ইসলাম
Thumbnail image

ঢাকা: আধুনিক মানুষের প্রাচীন নিকটাত্মীয় নিয়ান্ডারথালদের নতুন বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করেছেন গবেষকেরা। এ সম্পর্কিত নতুন এক গবেষণার তথ্য বলছে, মানুষের ভাষা উপলব্ধি করতে পারত তারা। এমনকি নিজেরা সেই ভাষা তৈরি ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তা ব্যবহারও করতে পারত।

এই গবেষক দলে ছিলেন বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রলফ কোয়াম ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী অ্যালেক্স ভেলেজ। নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন নামের একটি পত্রিকায় এ–সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাঁরা এই দাবি করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ যে পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে নিয়ান্ডারথালরাও সেই একই পূর্বপুরুষ থেকেই এসেছে বলে ধারণা করা হয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Homo neanderthalensis। ইউরোপে মানবজাতির আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই সেখানে বসবাস করে আসছে নিয়ান্ডারথালরা। প্রায় ৩০-৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে এই প্রজাতি। একটা সময় মানুষের সঙ্গেই বসবাস করত তারা। ফলে এদের নিয়ে গবেষণা করলে মানবজাতির বিকাশ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

গবেষক রলফ কোয়াম মনে করেন, এই গবেষণা জীবাশ্ম নিয়ে এবং এর ভাষা নিয়ে কাজ করতে সহায়তা করবে। মানবজাতির বিকাশ নিয়ে জানতে নিয়ান্ডারথালদের ভাষা এবং তাদের যোগাযোগের সংকেত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সিএনএন জানায়, গবেষণাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সিটি স্ক্যান। এই স্ক্যানের মাধ্যমে মানুষ, নিয়ান্ডারথাল এবং অন্যান্য কিছু জীবাশ্মের কানের গঠনের ভার্চ্যুয়াল থ্রিডি মডেল বানানো হয়েছে। এর পর এর তথ্যগুলো নিয়ে সেটি প্রবেশ করানো হয়েছে একটি বিশেষ সফটওয়্যারে। এতে দেখা গেছে, ৪-৫ কিলোহার্জ ছিল নিয়ান্ডারথালদের শ্রবণ ক্ষমতা, যা মানুষের কাছাকাছি। এই পদ্ধতিতে এমনকি সম্ভাব্য শব্দের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যও বের করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকেরা। ব্যান্ডউইডথের ক্ষেত্রেও নিয়ান্ডারথালরা মানুষের খুব কাছাকাছি। এ ক্ষেত্রে তারা তাদের নিকটতম অন্য প্রজাতির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কোনো কিছু শোনার পর মানুষের মতোই কম সময়ে তারা বার্তা অন্যত্র পাঠাতে পারত।

নিয়ান্ডারথালরা আধুনিক যুগের মানুষের মতোই নিজেদের মধ্যে জটিল ও কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুসরণ করত বলে মনে করেন গবেষক দলের আরেক সদস্য স্পেনের আলকালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্চেডেজ কন্ডে-ভালভার্দে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, নিয়ান্ডারথালরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় ইংরেজি বর্ণমালার ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ করত আধুনিক উপায়ে। তারা কীভাবে স্বরবর্ণ উচ্চারণ করত, সেটি নিয়ে এখন গবেষণা চলছে। কিন্তু গবেষক কোয়াম মনে করেন, এটি গবেষণার ভুল পথ। ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে কাজ করলে এই গবেষণা আরও দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

নিয়ান্ডারথালদের কান পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এর গঠন এমন, যেন তা মানুষের তৈরি শব্দের কম্পাঙ্ক (ফ্রিকোয়েন্সি) সহজেই ধরতে পারে। কোনো কিছু শোনা ও শব্দ তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের যে দক্ষতা, সেই একই দক্ষতা ছিল নিয়ান্ডারথালদের। কিন্তু নিকটতম প্রজাতি অ্যাটাপোয়েরকা থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে তারা।

ব্যাপারটি নিয়ে দুই দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছেন এই গবেষক দল। অবশেষে চমকপ্রদ এই তথ্যটি পেলেন। তবে তাঁরা এ গবেষণা থামিয়ে রাখবেন না। বরং আরও নতুন নতুন দিক উন্মোচনের লক্ষ্যে তাঁরা এটি অব্যাহত রাখবেন। তবে গবেষকেরা মনে করছেন, নিয়ান্ডারথালদের ভাষা নিয়ে, দক্ষতা নিয়ে মানবজাতির যে জিজ্ঞাসা এবং আগ্রহ ছিল, তা পূরণ হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত