Ajker Patrika

ভুলে যাওয়ার দিন শেষ!

ফজলুল কবির, ঢাকা
ভুলে যাওয়ার দিন শেষ!

‘কে আমারে যেন এনেছে ডাকিয়া/এসেছি ভুলে।’ না, আক্ষরিক অর্থেই এমন নয়। কিংবা রবিঠাকুরের এই প্রেম-কাব্যের মতো নয়। বয়সের কারণে যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় অনেক মানুষের মধ্যে, তা রীতিমতো বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পদে পদে মনে হয়, একটা আপদ জুড়ে গেল নিজের সঙ্গে। অনেক সময় শত ডাক্তার-বদ্যি করেও আর লাভ হয় না। এ বলে ‘এই করো’, তো ও বলে ‘ওই করো’। কিন্তু বিড়ম্বনার মীমাংসা হয় না। এবার এর একটি মীমাংসার খোঁজ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

কে না জানে যেকোনো সংকট সমাধানের শুরুর ধাপটি হচ্ছে এর কারণ খুঁজে বের করা। বিজ্ঞানীরা বয়স্ক লোকের মনভোলা প্রবণতার কারণ খুঁজে বের করেছেন। পাশাপাশি সমাধানও দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বয়স হলে মানুষের মস্তিষ্ক কোষের বাইরে থাকা ম্যাট্রিক্সে (বিভিন্ন খনিজ, এনজাইম ইত্যাদির সমন্বয়ে একধরনের জালিকা) একধরনের পরিবর্তন আসে। স্নায়ুকোষের চারপাশে থাকা এই জালিকাই এর স্থিতিস্থাপকতা নিয়ন্ত্রণ করে।

কেমব্রিজ ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণা নিবন্ধটি সম্প্রতি মলিকিউলার সাইকিয়াট্রি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, পাঁচ বছর বয়স থেকে মানুষের মস্তিষ্কে পেরিনিউরাল নেটস (পিএনএন) নামের এই ম্যাট্রিক্স বিকাশিত হয়। একসময় বিকাশ বন্ধও হয়। তখন এটি আংশিকভাবে নমনীয়তা হারায়। পিএনএনের নমনীয়তার ওপর নির্ভর করে কোনো মস্তিষ্ক নতুন কিছু কতটা শিখতে পারবে বা নতুন শেখা বিষয়ের প্রয়োগ সে কতটা ভালোভাবে করতে পারবে। তবে এ কারণে মস্তিষ্কের অন্য দক্ষতাগুলো তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

পিএনএনে কী থাকে? এতে থাকে কনড্রয়টিন সালফেট গ্রুপের রাসায়নিক। এর মধ্যে কনড্রয়টিন ৪-সালফেট নিউরোপ্লাস্টিসিটি (নমনীয়তা) কমাতে এবং কনড্রয়টিন ৬-সালফেট এটি বাড়াতে কাজ করে। এ দুই রাসায়নিকের ভারসাম্যের ওপরই নির্ভর করে গুরুত্বপূর্ণ এই জালিকার নমনীয়তার বিষয়টি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে কনড্রয়টিন ৬-সালফেটের পরিমাণ। আর এ কারণেই একটু বেশি বয়সে নতুন করে কিছু শেখা বা নতুন স্মৃতি তৈরি কঠিন হয়ে পড়ে। শুরু হয় ভুলে যাওয়ার গল্প।

কেমব্রিজ ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা চাইলেন, মস্তিষ্কে এই কনড্রয়টিন ৬-সালফেটের জোগান দিয়ে স্মৃতি হারানোর বিষয়টির মীমাংসা করতে। গবেষকেরা ২০ মাস বয়সী কয়েকটি ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান। দেখা যায়, ছয় মাস বয়সী ইঁদুরের চেয়ে এদের স্মৃতিশক্তি অনেক ক্ষেত্রেই কম। এবার তাঁরা বয়স্ক ইঁদুরদের শরীরে একটি ভাইরাস প্রবেশ করান, যা মস্তিষ্কে কনড্রয়টিন ৬-সালফেটের পরিমাণ বাড়ায়। এতে জাদুকরী ফল মেলে। দেখা গেল, তরুণদের মতোই স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছে বয়স্ক ইঁদুরেরা।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বায়োমেডিকেল সায়েন্সের ড. জেসিকা কোয়োক সায়েন্স ডেইলি পত্রিকাকে বলেন, ‘সত্যিই জাদুকরী ফল পেলাম আমরা। একেবারে তরুণ সময়ের মতো শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি অর্জন করেছিল ইঁদুরগুলো।’

বিজ্ঞানীরা আরও একটি সুখবর দিয়েছেন, তাঁরা এরই মধ্যে বয়সের কারণে ভুলোমনা লোকদের জন্য একটি ওষুধ খুঁজে বের করেছেন। তাই আশায় বুক বাঁধাই যায়–বয়স যতই হোক, যে ডাকল, তাকে চিনতে পারার একটা উপায় অন্তত হাতে থাকছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত