জাহাঙ্গীর আলম
কবির সুমনের ‘ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর, প্রেমের পদ্যটাই/বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি, শুধু তোমাকেই চাই’; অথবা নচিকেতা চক্রবর্তীর ‘প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ/ঘুষ খাওয়া কখনোই নয়’—এমন জীবনমুখী গানে, বিপ্লবে, বিক্ষোভে, রাগে, অনুরাগে বারবার উপলক্ষ হয়েছে চুমু। সিনেমার সাহসী দৃশ্য চুমুর উপাখ্যান। প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার অধিকার আদায়ে জীবন বাজি রাখতেও রাজি অনেকে!
চুমু নিয়ে কেন এই আদিখ্যেতা! রোমান্টিকতার প্রকাশ কি আর কোনোভাবে হয় না? প্রজাতি হিসেবে মানুষের মধ্যেই এই চুমু নিয়ে কেন এত আগ্রহ? নতুন প্রেমে পড়া যুগলের কাছে প্রথম চুমু কেন এত স্পেশাল? এ নিয়ে কিন্তু বিজ্ঞানীরাও ভেবেছেন। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বিবর্তনবাদে। তাতে কিছুটা ব্যাখ্যা মিলেছে। কিন্তু সাধারণীকরণযোগ্য তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
শিশুরা সাধারণত ঠোঁটে চুমু পছন্দ করে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এখানে মাতৃস্তন্য পানের একটা ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করাও কেন ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খায়? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি বিষয় সামনে এনেছেন। প্রথমত, আধুনিক মানুষের একেবারে বিবর্তন শুরুর দিকের কথা বললে, মায়ের দুধ ছাড়ার পরপর শিশুদের চিবিয়ে খেতে শেখানো হতো। খাবার চিবিয়ে নরম করে সেটি শিশুর মুখে দিত। মানুষের পূর্বপুরুষের (এইপ) মধ্যে এটি ছিল একটি সাধারণ আচরণ। তবে আধুনিক মানুষ শিশুর খাবার আবিষ্কার করেছে। মুখ থেকে মুখে খাবার স্থানান্তরের এই অভ্যাস চুমুতে গিয়ে ঠেকেছে—এমনটিই ধারণা।
দ্বিতীয় কারণ হলো—ঠোঁট মানুষের শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল অংশ। বিশেষ করে কাপড়ে ঢাকা থাকে না—এমন বা উন্মুক্ত অংশের মধ্যে সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ ঠোঁট। গবেষকেরা বলেন, বেশি কাপড় শরীরে জড়ানো মানুষেরা বেশি বেশি চুমু খায়। আর শরীরে কাপড় কম থাকলে চুমু খাওয়ার আগ্রহও কম দেখা যায়।
শিকারি মানব গোষ্ঠীর মধ্যে কাপড় পরার সংস্কৃতি প্রায় নেই বললেই চলে। তাদের মধ্যে পরস্পরকে চুমু খেতে দেখা যায় না। তবে একটা মজার ব্যতিক্রম দেখা যায় আর্কটিক সার্কেলে ইনুইট উপজাতির মধ্যে। দেখা যায়, তারা চুমু খায়। তাদের স্টাইলটিও আলাদা। যাকে বলে বিখ্যাত মহাসাগরীয় চুমু। তারা পরস্পরের নাক ঘষে বা মুখ ঘষে। তবে তারা কিন্তু ঠোঁটে চুমু খায় না। পৃথিবীর অন্য এলাকায় যেখানে শিকারি উপজাতিরা এখনো টিকে আছে, তারা কোনো কাপড় পরে না। তার মানে তারা শরীরের যেকোনো অংশে কাঙ্ক্ষিত সংবেদ পেয়ে থাকে। কিন্তু মানুষ যখন কাপড় পরে এবং সারা শরীরে কাপড় জড়িয়ে রাখে, তখন একমাত্র উন্মুক্ত সংবেদনশীল অংশ থাকে মানুষের মুখ।
সর্বশেষ কথা হলো চুমুর একটা বিবর্তনীয় উদ্দেশ্য থাকতে পারে। দুজন মানুষ যখন পরস্পরের খুব ঘনিষ্ঠ হয়, তখন তারা একে অপরের ঘ্রাণ পায়। আর ঘ্রাণ যদি আকৃষ্ট না করে, তাহলে জুড়িও কখনো হয় না। এটি বিবর্তনের একটি সাধারণ ফল বলে মনে করা হয়।
চুমুতে আগ্রহের এই সর্বশেষ ব্যাখ্যা ঠোঁটে ঠোঁট রেখে যে রোম্যান্টিক চুমুর কথা আমরা বলি, সেটি শুধুই যে একটি সাধারণ মানবীয় বৈশিষ্ট্য বা আচরণ নয়—সেদিকেই ইঙ্গিত করে। কারণ, বিশ্বের বহু সংস্কৃতির মধ্যে চুমুর বালাই নেই। বিশ্বের যত আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে, তার অর্ধেকেরও কমে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খাওয়ার প্রচলন আছে।
আমেরিকান অ্যানথ্রোপলজিস্ট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ১৬৮টি আলাদা সংস্কৃতির মধ্যে রোমান্টিক মুহূর্তে ঠোঁটে চুমু খাওয়ার প্রচলন আছে মাত্র ৪৬ শতাংশের মধ্যে। এখানে শিশুকে বাবা–মায়ের চুমু বা কিছু সংস্কৃতিতে আপনজন বা অতিথিকে অভিবাদন বা শুভেচ্ছা জানানোর সংস্কৃতির কথা বাদ দিয়ে এই হিসাব করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এমন পার্থক্য থাকার মানে হলো, মানুষের সংবেদনশীলতার প্রকাশ নানাভাবে ঘটতে পারে। এটি শুধু যে চুমুর মাধ্যমে হতে হবে এমন নয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে সমাজের গঠন যত জটিল, সেখানে আপনি মানুষকে তত বেশি চুমু খেতে দেখবেন। ৩ হাজার ৫০০ বছর আগের হিন্দু বৈদিক সংস্কৃত লিপিতে চুমুর মতো একটা আচরণের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায়।
অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে, বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খাওয়ার ব্যাপার আছে। আমরা এখন যেভাবে চুমু খাই, ঠিক সেরকমটি প্রাচীনকালেও ছিল। কিন্তু ‘মালয় চুমু’ কিছুটা ব্যতিক্রম। চার্লস ডারউইন তাদের সংস্কৃতির বর্ণনায় সেটি আমাদের জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে চুমু খাওয়ার সময় মেয়েরা পা ভাঁজ করে পেছনের দিকে হেলে পড়ে। আর পুরুষেরা তার ওপর অনেকখানি ঝুলে থাকার মতো করে হেলে পড়ে। সেই মুহূর্তে তারা পরস্পরের গন্ধ নেয়। অর্থাৎ, তাৎক্ষণিকভাবে তারা সঙ্গীর গন্ধের একটা নমুনা স্মৃতিতে গেঁথে নেয়।
ট্রব্রিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জে এক উপজাতির মধ্যে খুব অদ্ভুত ব্যাপার দেখা যায়। সেখানে যুগলেরা মুখোমুখি বসে চোখের পাতায় আলতো করে কামড়ে দেয়। এটা কিন্তু একালে আর দেখা যায় না। এটি পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার এক চরম প্রকাশ—তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মানুষের কাছাকাছি আসার উদ্দেশ্যই কিন্তু পরস্পরের একই বিষয়ে আগ্রহ ও ভালোবাসা এবং স্বার্থের প্রশ্ন। এই যে পরস্পরের ঠোঁটের ওপর ঠোঁট চেপে চুমু খাওয়ার অভ্যাস—এটি কিন্তু মানুষের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—চুমুর যদি কোনো বিবর্তনীয় উদ্দেশ্য থেকেই থাকে, তাহলে আমরা অন্য প্রাণীর মধ্যে এমনটা দেখি না কেন? যদিও পাখিদের মধ্যে যুগলেরা পরস্পরের ঠোঁট ঠুকরে দেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। আবার অনেক প্রাণী (যেমন: কুকুর) গন্ধ শুঁকে শত্রু–মিত্র নির্ধারণ করে। খুব কম প্রাণীই পরস্পরের ঠোঁটে ঠোঁট রাখে। স্তন্যপায়ী অন্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের ঘ্রাণ ক্ষমতা তুলনামূলক কম। এ কারণেই হয়তো অন্য প্রাণী প্রজাতিগুলো তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ঘ্রাণই যথেষ্ট মনে করে। তারা চুমুর প্রয়োজন বোধ করে না। অন্যদিকে পরস্পরের ঘ্রাণ নিতে মানুষকে তাদের তুলনায় বেশি কাছাকাছি আসতে হয়। আর এখান থেকেই হয়তো মানুষ ঠোঁটে চুমু খাওয়া পর্যন্ত এগিয়েছে।
তাহলে অনেক সংস্কৃতিতে চুমুটুমুর ব্যাপার নেই কেন? এটার একটা ব্যাখ্যা হতে পারে যে, অনেক সমাজেই নানা সময় চুমুর প্রচলন নতুন করে হয়েছে। আবার নানা সময় নানা ইস্যুতে চুমু বাতিল হয়ে গেছে। এটা হতে পারে, রোগবালাই, জীবাণু তত্ত্বের প্রভাব। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে। ঠিক এই কারণেই অনেক সম্রাট চুমু নিষিদ্ধও করেছিলেন। যেমন: ১৪৩৯ সালের ১৬ জুলাই রাজা ষষ্ঠ হেনরি চুমু নিষিদ্ধ করেছিলেন। মূলত ইউরোপে প্লেগ মহামারি মোকাবিলায় এটি ছিল একটি স্বাস্থ্য সতর্কতা। রোমান সম্রাট টিবেরিয়াস প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন।
নিষিদ্ধের খাঁড়া নামার পরও বারবার এই আচরণ ফিরে এসেছে এবং সামনেও আসতে থাকবে। রোগ, মহামারি বারবার আসবে, কিন্তু রোমান্টিক চুমু আছে, থাকবে।
কবির সুমনের ‘ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর, প্রেমের পদ্যটাই/বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি, শুধু তোমাকেই চাই’; অথবা নচিকেতা চক্রবর্তীর ‘প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ/ঘুষ খাওয়া কখনোই নয়’—এমন জীবনমুখী গানে, বিপ্লবে, বিক্ষোভে, রাগে, অনুরাগে বারবার উপলক্ষ হয়েছে চুমু। সিনেমার সাহসী দৃশ্য চুমুর উপাখ্যান। প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার অধিকার আদায়ে জীবন বাজি রাখতেও রাজি অনেকে!
চুমু নিয়ে কেন এই আদিখ্যেতা! রোমান্টিকতার প্রকাশ কি আর কোনোভাবে হয় না? প্রজাতি হিসেবে মানুষের মধ্যেই এই চুমু নিয়ে কেন এত আগ্রহ? নতুন প্রেমে পড়া যুগলের কাছে প্রথম চুমু কেন এত স্পেশাল? এ নিয়ে কিন্তু বিজ্ঞানীরাও ভেবেছেন। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বিবর্তনবাদে। তাতে কিছুটা ব্যাখ্যা মিলেছে। কিন্তু সাধারণীকরণযোগ্য তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
শিশুরা সাধারণত ঠোঁটে চুমু পছন্দ করে। বিজ্ঞানীরা বলেন, এখানে মাতৃস্তন্য পানের একটা ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করাও কেন ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খায়? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি বিষয় সামনে এনেছেন। প্রথমত, আধুনিক মানুষের একেবারে বিবর্তন শুরুর দিকের কথা বললে, মায়ের দুধ ছাড়ার পরপর শিশুদের চিবিয়ে খেতে শেখানো হতো। খাবার চিবিয়ে নরম করে সেটি শিশুর মুখে দিত। মানুষের পূর্বপুরুষের (এইপ) মধ্যে এটি ছিল একটি সাধারণ আচরণ। তবে আধুনিক মানুষ শিশুর খাবার আবিষ্কার করেছে। মুখ থেকে মুখে খাবার স্থানান্তরের এই অভ্যাস চুমুতে গিয়ে ঠেকেছে—এমনটিই ধারণা।
দ্বিতীয় কারণ হলো—ঠোঁট মানুষের শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল অংশ। বিশেষ করে কাপড়ে ঢাকা থাকে না—এমন বা উন্মুক্ত অংশের মধ্যে সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ ঠোঁট। গবেষকেরা বলেন, বেশি কাপড় শরীরে জড়ানো মানুষেরা বেশি বেশি চুমু খায়। আর শরীরে কাপড় কম থাকলে চুমু খাওয়ার আগ্রহও কম দেখা যায়।
শিকারি মানব গোষ্ঠীর মধ্যে কাপড় পরার সংস্কৃতি প্রায় নেই বললেই চলে। তাদের মধ্যে পরস্পরকে চুমু খেতে দেখা যায় না। তবে একটা মজার ব্যতিক্রম দেখা যায় আর্কটিক সার্কেলে ইনুইট উপজাতির মধ্যে। দেখা যায়, তারা চুমু খায়। তাদের স্টাইলটিও আলাদা। যাকে বলে বিখ্যাত মহাসাগরীয় চুমু। তারা পরস্পরের নাক ঘষে বা মুখ ঘষে। তবে তারা কিন্তু ঠোঁটে চুমু খায় না। পৃথিবীর অন্য এলাকায় যেখানে শিকারি উপজাতিরা এখনো টিকে আছে, তারা কোনো কাপড় পরে না। তার মানে তারা শরীরের যেকোনো অংশে কাঙ্ক্ষিত সংবেদ পেয়ে থাকে। কিন্তু মানুষ যখন কাপড় পরে এবং সারা শরীরে কাপড় জড়িয়ে রাখে, তখন একমাত্র উন্মুক্ত সংবেদনশীল অংশ থাকে মানুষের মুখ।
সর্বশেষ কথা হলো চুমুর একটা বিবর্তনীয় উদ্দেশ্য থাকতে পারে। দুজন মানুষ যখন পরস্পরের খুব ঘনিষ্ঠ হয়, তখন তারা একে অপরের ঘ্রাণ পায়। আর ঘ্রাণ যদি আকৃষ্ট না করে, তাহলে জুড়িও কখনো হয় না। এটি বিবর্তনের একটি সাধারণ ফল বলে মনে করা হয়।
চুমুতে আগ্রহের এই সর্বশেষ ব্যাখ্যা ঠোঁটে ঠোঁট রেখে যে রোম্যান্টিক চুমুর কথা আমরা বলি, সেটি শুধুই যে একটি সাধারণ মানবীয় বৈশিষ্ট্য বা আচরণ নয়—সেদিকেই ইঙ্গিত করে। কারণ, বিশ্বের বহু সংস্কৃতির মধ্যে চুমুর বালাই নেই। বিশ্বের যত আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে, তার অর্ধেকেরও কমে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খাওয়ার প্রচলন আছে।
আমেরিকান অ্যানথ্রোপলজিস্ট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ১৬৮টি আলাদা সংস্কৃতির মধ্যে রোমান্টিক মুহূর্তে ঠোঁটে চুমু খাওয়ার প্রচলন আছে মাত্র ৪৬ শতাংশের মধ্যে। এখানে শিশুকে বাবা–মায়ের চুমু বা কিছু সংস্কৃতিতে আপনজন বা অতিথিকে অভিবাদন বা শুভেচ্ছা জানানোর সংস্কৃতির কথা বাদ দিয়ে এই হিসাব করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এমন পার্থক্য থাকার মানে হলো, মানুষের সংবেদনশীলতার প্রকাশ নানাভাবে ঘটতে পারে। এটি শুধু যে চুমুর মাধ্যমে হতে হবে এমন নয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে সমাজের গঠন যত জটিল, সেখানে আপনি মানুষকে তত বেশি চুমু খেতে দেখবেন। ৩ হাজার ৫০০ বছর আগের হিন্দু বৈদিক সংস্কৃত লিপিতে চুমুর মতো একটা আচরণের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায়।
অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে, বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খাওয়ার ব্যাপার আছে। আমরা এখন যেভাবে চুমু খাই, ঠিক সেরকমটি প্রাচীনকালেও ছিল। কিন্তু ‘মালয় চুমু’ কিছুটা ব্যতিক্রম। চার্লস ডারউইন তাদের সংস্কৃতির বর্ণনায় সেটি আমাদের জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে চুমু খাওয়ার সময় মেয়েরা পা ভাঁজ করে পেছনের দিকে হেলে পড়ে। আর পুরুষেরা তার ওপর অনেকখানি ঝুলে থাকার মতো করে হেলে পড়ে। সেই মুহূর্তে তারা পরস্পরের গন্ধ নেয়। অর্থাৎ, তাৎক্ষণিকভাবে তারা সঙ্গীর গন্ধের একটা নমুনা স্মৃতিতে গেঁথে নেয়।
ট্রব্রিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জে এক উপজাতির মধ্যে খুব অদ্ভুত ব্যাপার দেখা যায়। সেখানে যুগলেরা মুখোমুখি বসে চোখের পাতায় আলতো করে কামড়ে দেয়। এটা কিন্তু একালে আর দেখা যায় না। এটি পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার এক চরম প্রকাশ—তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মানুষের কাছাকাছি আসার উদ্দেশ্যই কিন্তু পরস্পরের একই বিষয়ে আগ্রহ ও ভালোবাসা এবং স্বার্থের প্রশ্ন। এই যে পরস্পরের ঠোঁটের ওপর ঠোঁট চেপে চুমু খাওয়ার অভ্যাস—এটি কিন্তু মানুষের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—চুমুর যদি কোনো বিবর্তনীয় উদ্দেশ্য থেকেই থাকে, তাহলে আমরা অন্য প্রাণীর মধ্যে এমনটা দেখি না কেন? যদিও পাখিদের মধ্যে যুগলেরা পরস্পরের ঠোঁট ঠুকরে দেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। আবার অনেক প্রাণী (যেমন: কুকুর) গন্ধ শুঁকে শত্রু–মিত্র নির্ধারণ করে। খুব কম প্রাণীই পরস্পরের ঠোঁটে ঠোঁট রাখে। স্তন্যপায়ী অন্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের ঘ্রাণ ক্ষমতা তুলনামূলক কম। এ কারণেই হয়তো অন্য প্রাণী প্রজাতিগুলো তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ঘ্রাণই যথেষ্ট মনে করে। তারা চুমুর প্রয়োজন বোধ করে না। অন্যদিকে পরস্পরের ঘ্রাণ নিতে মানুষকে তাদের তুলনায় বেশি কাছাকাছি আসতে হয়। আর এখান থেকেই হয়তো মানুষ ঠোঁটে চুমু খাওয়া পর্যন্ত এগিয়েছে।
তাহলে অনেক সংস্কৃতিতে চুমুটুমুর ব্যাপার নেই কেন? এটার একটা ব্যাখ্যা হতে পারে যে, অনেক সমাজেই নানা সময় চুমুর প্রচলন নতুন করে হয়েছে। আবার নানা সময় নানা ইস্যুতে চুমু বাতিল হয়ে গেছে। এটা হতে পারে, রোগবালাই, জীবাণু তত্ত্বের প্রভাব। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে। ঠিক এই কারণেই অনেক সম্রাট চুমু নিষিদ্ধও করেছিলেন। যেমন: ১৪৩৯ সালের ১৬ জুলাই রাজা ষষ্ঠ হেনরি চুমু নিষিদ্ধ করেছিলেন। মূলত ইউরোপে প্লেগ মহামারি মোকাবিলায় এটি ছিল একটি স্বাস্থ্য সতর্কতা। রোমান সম্রাট টিবেরিয়াস প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন।
নিষিদ্ধের খাঁড়া নামার পরও বারবার এই আচরণ ফিরে এসেছে এবং সামনেও আসতে থাকবে। রোগ, মহামারি বারবার আসবে, কিন্তু রোমান্টিক চুমু আছে, থাকবে।
আমাদের অনেকেরই অফিসে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়। আর দিনের একটা বড় সময় বসে থাকাটা বাড়ায় হৃৎপিণ্ডের রোগের ঝুঁকি। এমনকি অবসর সময়ে শরীরচর্চা করেও এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রেহাই মিলবে না। এসব তথ্য উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
২ দিন আগেবিজ্ঞানীরা বলছেন, জিপিএসের সাহায্য ছাড়াই এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া থেকে কোনো ব্যক্তির সাম্প্রতিক অবস্থান চিহ্নিত করা যাবে।
৮ দিন আগেটয়লেটে ফোন নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। এমনও হতে আপনি হয়তো টয়লেটে বসেই মোবাইলে লেখাটি পড়ছেন। শৌচাগারে যে কাজটি ৩ মিনিটে করা সম্ভব সেটি কিছু পড়া, স্ক্রল এবং পোস্ট করে অন্তত ১৫ মিনিট পার করে দিচ্ছেন অনায়াসে। আপাতদৃষ্টিতে এটি সময় কাটানোর নির্দোষ উপায় মনে হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি আপনার স্বাস্থ্যের
৮ দিন আগেসৌরজগতের সপ্তম গ্রহ ইউরেনাস ও এর পাঁচটি চাঁদ সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাল বিজ্ঞানীরা। এই গ্রহ ও এর চাঁদগুলো একেবারে নিষ্প্রাণ নয়, বরং ইউরেনাসের চাঁদগুলোতে সমুদ্র থাকতে পারে। ফলে চাঁদগুলোয় জীবন ধারণের উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে। নতুন এক গবেষণায় এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
৯ দিন আগে