মহাকাশের দুটি ভিন্ন স্থান থেকে এসেছে রহস্যময় ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্ট’

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১৬
Thumbnail image
কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইনটেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্ট রেডিও টেলিস্কোপ। ছবি: সিএনএন

২০০৭ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই রহস্যময় ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্ট’ বা এফআরবি কিংবা মহাকাশ থেকে আসা মিলিসেকেন্ড-দীর্ঘ উজ্জ্বল রেডিও তরঙ্গ নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বেড়েই চলেছে। এই তরঙ্গগুলো এক সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে সূর্যের পুরো এক দিনের সমান শক্তি নির্গত করে।

শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখনো এই মহাজাগতিক সংকেতগুলোর প্রকৃতি, উৎস এবং সৃষ্টির পদ্ধতি উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছেন। বিশেষায়িত টেলিস্কোপের সাহায্যে ইতিমধ্যে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি এবং পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরত্বের এফআরবি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

নতুন চারটি গবেষণা সম্প্রতি এফআরবির উৎপত্তিস্থান সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে। এসব তথ্য রেডিও তরঙ্গটির কারণ উদ্‌ঘাটনে সহায়ক হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক দুটি তরঙ্গ সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি জায়গা থেকে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে একটি এফআরবি এসেছে একটি চৌম্বকীয়ভাবে সক্রিয় পরিবেশ থেকে, যেখানে ‘ম্যাগনেটার’ নামে পরিচিত একটি ঘন নিউট্রন তারা অবস্থিত। আরেকটিকে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এটির উৎপত্তি হয়েছে একটি মৃত, তারকাহীন গ্যালাক্সির প্রান্ত থেকে।

এই সংকেতগুলো শনাক্ত করতে কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইনটেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্ট রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২০ সালে এই টেলিস্কোপ হাজারো এফআরবি শনাক্ত করেছে।

২০২২ সালে টেলিস্কোপটি একটি দ্রুত রেডিও বার্স্ট শনাক্ত করেছিল, যা মাত্র ২.৫ মিলিসেকেন্ড স্থায়ী ছিল। গবেষণায় দেখা যায়, এই সংকেতের রেডিও তরঙ্গ অত্যন্ত মেরুকৃত এবং ইংরেজি ‘এস’ আকৃতির একটি নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যি ম্যাগনেটারের ঘূর্ণনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

গবেষক দলটি সংকেতটির উৎস নির্ধারণ করে ২০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সি। গবেষণায় আরও দেখা যায়, এটি নিউট্রন তারার চৌম্বক ক্ষেত্রের কাছ থেকে উদ্ভূত, যা অত্যন্ত চুম্বকীয় এবং ঘন প্লাজমায় পূর্ণ।

গবেষণা অনুযায়ী, এই পরিবেশে এমন শক্তি সঞ্চিত থাকে, যা চৌম্বক ক্ষেত্রকে পুনর্গঠন করে এবং এফআরবির মতো সংকেত তৈরি করে।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেকটি এফআরবি শনাক্ত করা হয়, যা পরবর্তী পাঁচ মাসে আরও ২১টি সংকেত পাঠিয়েছে। এই এফআরবির উৎস একটি ১ হাজার ১৩০ কোটি বছরের পুরোনো মৃত গ্যালাক্সির প্রান্ত। এখানে নতুন কোনো তারার সৃষ্টি হয় না।

গবেষকেরা ধারণা করছেন, এই সংকেতি এমন একটি তারার ঘনগুচ্ছ থেকে এসেছে, যেখানে নিউট্রন তারার সংঘর্ষ বা মৃত সাদা বামন তারার ধসের ফলে ম্যাগনেটার তৈরি হতে পারে।

এফআরবির উৎপত্তিস্থান সম্পর্কে বৈচিত্র্যময় তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, যা এই সংকেতগুলোর সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং উৎস সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই রহস্য পুরোপুরি উদ্‌ঘাটনে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত