অস্ট্রেলিয়া-ধাক্কার পরই বাংলাদেশের ভারত-পরীক্ষা

রানা আব্বাস, অ্যান্টিগা থেকে
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৪, ১০: ০৬

অ্যান্টিগায় হুট করে বৃষ্টি আসে, হুট করে চলেও যায়—ছোট্ট এ দ্বীপে পা রেখেই আবহাওয়ার মতিগতি সম্পর্কে একটা ধারণা মিলেছিল। বৃষ্টির এই লুকোচুরি যথারীতি বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও। খেলা বারবার বিঘ্নিত হলেও ম্যাচের ফল দেখতে প্রকৃতি বড় কোনো বাধা হয়নি। বাংলাদেশ বৃষ্টি আইনে ম্যাচটা হেরেছে ২৮ রানে। 

স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে রাত ৮টার দিকে টস শুরুর আগেই একপশলা বৃষ্টি। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, এতে তাই অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। এমনকি স্কোরবোর্ডে কোনো রান না যোগ করে তানজিদ তামিমের ফিরে যাওয়াতেও বিস্ময়ের কিছু ছিল না। বাংলাদেশের টপ অর্ডার তো এমনই ভঙ্গুর! তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত ভিন্ন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। দুজনের ৪৮ বলে ৫৮ রানের জুটি অজিদের বিপক্ষে ভালো একটা স্কোর গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। 

অ্যাডাম জাম্পার সোজা বল হাঁটু গেড়ে সুইপ করতে গিয়ে লিটন (১৬) ফিরলেন বোল্ড হয়ে। নাজমুল হোসেন শান্ত উইকেটে থাকলেন, কিন্তু আর বড় কোনো জুটি হলো না বাংলাদেশের। এ ম্যাচে অধিনায়ক রানে ফিরেছেন, নিঃসন্দেহে বড় স্বস্তি বাংলাদেশ দলে। 

তবে তিনি ফিরলেন বড় অসময়ে। নিজেও ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, তিনি ১৩ তম ওভারে আউট না হয়ে যদি ১৬-১৭ ওভার পর্যন্ত টিকতেন, দল তাহলে অ্যান্টিগার ভালো উইকেটে কাঙ্ক্ষিত ১৭০ রানের স্কোর পেত। 

শান্ত না হয় জাম্পার বলে এলবিডব্লু হয়ে ৪১ রানে ফিরে এসেছেন, কিন্তু তাওহীদ হৃদয় তো ছিলেন। হৃদয় তাঁর নিজের নিয়মিত ব্যাটিং পজিশন পাঁচে নামলেও চমকে দিয়ে চারে নামানো হয় রিশাদ হোসেনকে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ম্যাচের আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করবেন। সেই ভিন্ন কিছুর চেষ্টা থেকেই রিশাদকে এত ওপরে নামানো। ফাটকাটা কাজে লাগেনি, রিশাদ ফিরেছেন মোটে ২ রান করে। 

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনে মন্থর গতিতে এগোনো বাংলাদেশকে শেষ ধাক্কাটা দেন প্যাট কামিন্স। ১৮ তম ওভারের পঞ্চম বলে মাহমুদউল্লাহ আর ওভারের শেষ বলে শেখ মেহেদীকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করার কাজ ৭০ শতাংশ এগিয়ে রেখেছিলেন অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার। হ্যাটট্রিক করতে কামিন্সের সামনে যেটা করণীয় ছিল—নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই উইকেট নেওয়া। সুযোগটা তিনি পেলেন ১৯.১ ওভারের প্রথম বলেই। থিতু হয়ে যাওয়া হৃদয় (৪০) শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে স্কুপ করতে চেয়েছিলেন কামিন্সের স্লোয়ারটা। জশ হ্যাজেলউডের হাতে বল জমতেই ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখল প্রথম হ্যাটট্রিক। 

বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই আবার বৃষ্টির হানা। যখন-তখন বৃষ্টি নামছে, এটি বুঝে খেলা শুরু হতেই দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর ট্রেভিস হেড দ্রুতগতিতে রান তুলতে শুরু করলেন। ১১.২ ওভারে যখন বৃষ্টি আবারও বাদ সাধল, ততক্ষণে অজিরা ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন নিয়মে ২৮ রানে এগিয়ে গেছে। ম্যাচ রেফারি অস্ট্রেলিয়াকে ২৮ রানেই জয়ী ঘোষণা করেন। 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার খুব একটা সময় নেই বাংলাদেশের। আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় (স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০ টা) তাদের নেমে পড়তে হচ্ছে একই মাঠে সুপার এইটে ভারতের বিপক্ষে খেলতে। বাংলাদেশ সময় দেখলে মনে হচ্ছে, সাকিব-শান্তরা বোধ হয় টানা দুদিন ম্যাচ খেলছেন। অ্যান্টিগায় ঠিক তা নয়, মাঝে এক দিনের বিশ্রাম পাচ্ছেন তাঁরা। বাংলাদেশ-অ্যান্টিগার সময়ের পার্থক্য ১০ ঘণ্টার কারণে এমনটা মনে হলেও বিশ্রাম আসলেই খুব কম। বাংলাদেশকে ভারতের বিপক্ষে মানসিকভাবেই তৈরি হতে হচ্ছে। রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে ২০ ওভারের ক্রিকেটে রেকর্ড খুব একটা ভালো নয় সাকিবদের। ১৩ সাক্ষাতে মাত্র একটিতেই হারাতে পেরেছে ভারতকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চার দেখায় কোনোটিতেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। 

এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ভারত দুদিন আগেই বার্বাডোজে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে অ্যান্টিগায় এসেছে। স্যার ভিভের দ্বীপে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালের রাস্তা তারা পরিষ্কার রাখতে চায়। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের ধাক্কা আর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বিবর্ণ পরিসংখ্যান থাকলেও বাংলাদেশ এখনো আশা ছাড়েনি। কিসের আশা? সেমিফাইনালে ওঠার।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত