সাকিবের শেষ কোথায়, কানপুর নাকি মিরপুর

আহমেদ রিয়াদ, কানপুর থেকে
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০: ৩০
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ০৪

কানপুরের ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার্সের ছাদে পরশু রাতে খেতে গেছেন নির্বাচক হান্নান সরকার। সেখানে ছিলেন সাকিব আল হাসানও। নির্বাচককে দেখে সাকিব বললেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা আছে।’ জানালেন, অবসরের ঘোষণাটা তাহলে এবার দিয়ে দেওয়া যায়। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হান্নান ঘটনাস্থলে ডাকলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও ম্যানেজার রাবীদ ইমামকে। ফোনে সাকিবের কথা হলো বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে। সাকিব দলের সব সতীর্থের সামনে নয়, একেবারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন সংবাদ সম্মেলনে। 

অথচ কাল দুপুরেও সংবাদমাধ্যমের ধারণা ছিল, কানপুর টেস্টপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তই হয়তো আসবেন। কিন্তু শান্তর জায়গায় চমকে দিয়ে সাকিবের আসার খবরেই বোঝা গেল, বড় কোনো সংবাদ আসছে। কিছুক্ষণ পর জানা গেল সেই বড় খবর—টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে অবসরের ঘোষণা সাকিবের। ওয়ানডে চালিয়ে যাবেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনের প্রায় শেষের দিকে এক প্রশ্নে সাকিব বললেন, ‘কানপুর টেস্টের পর দেশের মাটিতে লাল বলে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি দেখছেন। এ নিয়ে ফারুক ভাইয়ের (বিসিবি সভাপতি) সঙ্গে কথা হয়েছে। যদি দেশে আসার পরিস্থিতি আমার জন্য অনুকূলে থাকে, দেশে এসে সিরিজ খেলে বিদায় নিতে চাই। না হলে হয়তো এই কানপুরেই শেষ।’ 

কানপুর টেস্ট খেলেই যেহেতু সাকিবের ভারত সফর শেষ, বিদায় বলতে ঐতিহ্যবাহী মাঠ কানপুরকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। তাঁর অবসর ঘোষণায় কানপুর টেস্টের আলোচনা যেন পেছনে পড়ে গেল। কাল বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে আজও। প্রথম দিনের খেলা ঠিকঠাক হয় কি না, একটু সংশয় আছে। অবশ্য যে টেস্টের আগে সাকিবের মতো খেলোয়াড়ের অবসরের ঘোষণা আসে, সেখানে কে আর খেলার খবর রাখে! পুরো বাংলাদেশ দল আচ্ছন্ন সাকিবের অবসর ঘোষণায়। 

যদিও অবসর নিয়ে তিনি চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন সবশেষ পাকিস্তান সফর থেকেই। তখন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর সঙ্গে কিছুটা আলাপ-আলোচনা শুরু করেছিলেন। চেন্নাইয়ে দলের সঙ্গে থাকা বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও নির্বাচক হান্নানের সঙ্গে আলোচনা করেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কানপুরে এসে উপসংহারে পৌঁছে যাওয়া। সাকিব নিজেই জানিয়েছেন, তিনি অভিমান কিংবা কষ্ট থেকে নয়, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ দল, নির্বাচক প্যানেল ও বিসিবি—স্বাগত জানিয়েছে তাঁর সিদ্ধান্তকে। সাকিব বলেছেন, ‘আমি খুশি। কোনো অনুশোচনা নেই। জীবনে কখনো অনুশোচনা ছিল না। এখনো নেই। যত দিন উপভোগ করেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমার জন্য সঠিক সময়, যে কারণে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া। কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক, বোর্ড—সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’ 

কানপুরে উপসংহারে পৌঁছালেও সাকিবের এখনই শেষ হচ্ছে না। তাঁর ইচ্ছা, অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ঘরের মাঠে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাতে চান। শুধু তা-ই নয়, দেশে অবস্থান করা এবং খেলা শেষে দেশ ত্যাগ করা—পুরোটা সময় সাকিব শতভাগ নিরাপত্তা চান। হয়রানি না হওয়ার নিশ্চয়তা চান। তবে তাঁর এই চাওয়া আদৌ পূরণ হবে কি না, তাতে যথেষ্ট সংশয় আছে। সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিসিবি কেমন নিশ্চয়তা পায়, সেটিও দেখার।

কাল বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ অবশ্য সাকিবের দেশে খেলার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। পরিষ্কার জানিয়েছেন, সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না বিসিবি। 

সাকিবের টেস্টে শুরুটা হয়েছিল ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে। টেস্টের শেষটাও কি তবে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে? সাকিবের শেষ আসলে কানপুরে নাকি মিরপুরে—তাঁর চরিত্রের মতো অবসরের বিষয়টিও ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হয়ে রইল!

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত