সাফের বৃত্তে আর কতকাল

জহির উদ্দিন মিশু, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৫৩
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ০৫
Thumbnail image
সাফ শিরোপা ছাড়া অন্য কোনো শিরোপা জিততেই পারছে না বাংলাদেশ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের ফুটবল যেন সাফ-বৃত্তেই বন্দী! প্রতিবেশী দেশগুলো যখন ফুটবলে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের ঘুরপাক সাফের গণ্ডিতে। এখান থেকে বেরোনোর উপায় কী? সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন জহির উদ্দিন মিশু

এখন যেখানে দাঁড়িয়ে
গত ৫২ বছরে ছেলেদের ফুটবলে বিনিয়োগের তুলনায় অর্জন খুবই সামান্য। সেই ২০০৩ সালে সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই ফুটবলে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। গেল এক দশকে উন্নতি দূরে থাক, উল্টো অবনতির দিকে যাচ্ছে ফুটবল। সর্বশেষ ২০২৩ সালে সেমিফাইনাল পর্যন্ত নাম লেখায় পুরুষ দল। তার আগের পাঁচ আসরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। আর এশিয়ান পর্যায়ে ভালো করা দূরে থাক, অংশগ্রহণ করাটাই পুরুষ দলের কাছে স্বপ্নের মতো। নিজেদের ইতিহাসে ১৯৮০ সালে একবারই এশিয়ান কাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। মেয়েদের ফুটবলও যে খুব বেশি এগিয়েছে, তা-ও নয়। সাফই তাদের এখন পর্যন্ত বড় অর্জন। বয়সভিত্তিক দলও সেই পথের পথিক।

সমস্যাটা কোথায়
এত বছরেও বদলায়নি দেশের ফুটবলের চিত্র। এমন থেমে থাকার পেছনে অনেক কারণই দেখছেন ফুটবলবোদ্ধারা। জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম বললেন, লিগের ম্যাচগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে বিদেশি নির্ভরতায় সুযোগ হারাচ্ছেন দেশিরা, ‘বড় একটা কারণ পেশাদার লিগের ম্যাচগুলোর মূল পজিশনে বিদেশি খেলোয়াড় খেলানো। যেমন স্ট্রাইকিং পজিশনে বেশির ভাগ দলই বিদেশি নির্ভর; আবার রক্ষণেও বিদেশি। সে ক্ষেত্রে লোকাল খেলোয়াড়েরা শিখবেন কী করে।’ আর সাবেক কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু ফুটবলের এই স্থবিরতার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে গুরুত্ব না দেওয়াকেই দুষছেন, ‘মেয়েদের খেলা তো ঢাকা ছাড়া কোথায়ও হয় না। তা ছাড়া দিনের পর দিন ক্যাম্পে রেখে দিলেন আর অনুশীলন করালেন, তাতে কত দূর উন্নতি হবে। অনুশীলন আর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার মধ্যে অনেক পার্থক্য। মফস্বলে তো ছেলেদের কোনো খেলাই নেই। পাইপলাইন বলে একটা কিছু থাকতে হয়। তারপর না হয় সেখান থেকে দক্ষদের বেছে ট্রেনিং করিয়ে তৈরি করতে হয়।’

উত্তরণের পথ কী
এ বছরও ফুটবলে অনেক ব্যস্ততা। ছেলেদের সিনিয়র সাফের পাশাপাশি রয়েছে এশিয়ান কাপের বাছাই। আর সাফজয়ী মেয়েরাও জুনে খেলবে এশিয়ান কাপের বাছাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী দলের এক ফরোয়ার্ড আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টুর্নামেন্টের কয়েক দিন আগে আমাদের নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। ক্যাম্পে থেকে প্রস্তুতিও পরিপূর্ণ হয় না। আসলে আমাদের দরকার বেশি বেশি ম্যাচ খেলা। এই দিকে গুরুত্ব দিলে ভালো হতো।’ আর সাফ-সেরা গোলকিপার রুপনা চাকমা জানিয়েছেন, এশিয়ান কাপের বাছাই নিয়ে এখনো কিছু জানেন না তিনি। কবে ক্যাম্পে ফিরবেন, তা-ও তাঁর জানা নেই। গোলাম সারোয়ার টিপু তো আক্ষেপ করেই ফুটবলের এই দশাকে কুয়োর ব্যাঙের সঙ্গে তুলনা করেছেন, ‘কী আর বলব, আমরা তো কুয়ার মধ্যেই রয়ে গেলাম। আর কুয়ার ব্যাঙ যদি সমুদ্রে আসতে চায়, সেটা চিন্তা করাও ঠিক হবে না। যখন একটা মেয়ে কিংবা ছেলের বয়স ছয়-সাত, তখন থেকেই আমাদের নার্সিংটা করতে হবে। ধাপে ধাপে ট্রেনিং দিয়ে তাদের প্রস্তুত করতে হবে।’ কেবল সাফকে গুরুত্ব না দিয়ে এশিয়ান পর্যায়ের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তারকা জাহিদ হাসান এমিলি।

তবু চ্যালেঞ্জ এশিয়ান বাছাই
প্রতিবারই দারুণ স্বপ্ন নিয়ে বছর শুরু করেন ফুটবলাররা। কিন্তু বাস্তবে সেই স্বপ্নটা অধরাই থেকে যায়। তরুণ ফরোয়ার্ড পিয়াস আহমেদ নোভা বলছেন, এশিয়ান কাপের বাছাইটা তাঁদের জন্য বড় পরীক্ষা, ‘চ্যালেঞ্জটা হবে এশিয়ান বাছাইয়ে। লিগে অনেকে ভালো করছেন, তাঁদের নিয়ে যখন একটা দল গড়া হবেম সেটা আমার মনে হয় একটা লড়াই করতে পারবে।’ জাতীয় দলের ডিফেন্ডার ইসা ফয়সালও কঠিন পথ দেখছেন, ‘এশিয়ান বাছাইটা আমাদের জন্য সহজ হবে না। তবে লিগে দেশি খেলোয়াড়দের গোল পাওয়া ইতিবাচক। এখান থেকে খেলোয়াড় উঠে এলে তারা জাতীয় দলের জন্যও সর্বোচ্চটা দিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত