আকার-ইঙ্গিতে উর্মি-স্বরন বোঝালেন নিজেদের গর্বের কথা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ মে ২০২২, ১৬: ০৮
আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১৮: ৩২

মুখে হাসিটা লেগেই আছে সাদিয়া আক্তার উর্মির। আব্দুল কাদের স্বরনের চোখেও আনন্দ ঝিলিক দিয়ে গেল। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিরা যখন একে একে বলছেন-শোনাচ্ছেন তাঁদের আনন্দের কথা। উর্মি-স্বরনকে তখন সাহায্য নিতে হলো নিজেদের পিতা কিংবা শিক্ষকের। তাঁদের এই অনুভূতি প্রকাশের ভাষাটাই সবার থেকে আলাদা করেছে বিশেষভাবে সক্ষম বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দুই ক্রীড়াবিদকে।

২০১৯ সাল থেকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে বিশেষভাবে সক্ষম ক্রীড়াবিদেরাও পাচ্ছেন তাঁদের সাফল্যের স্বীকৃতি। সেই বছরই টেবিল টেনিস ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পান স্পেশাল অলিম্পিকে তিন সোনাজয়ী টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সাদিয়া আক্তার উর্মি। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন স্পেশাল অলিম্পিকে ছয় সোনাজয়ী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় আব্দুল কাদের স্বরন। সাধারণ সুস্থ খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি সাফল্য এনে দেওয়া এই খেলোয়াড়দের হাতে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার তুলে দেওয়ার প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নিজেদের সাফল্যের স্বীকৃতি ঘরে তুলেছেন উর্মি ও স্বরন। 

কেমন লাগছে পুরস্কার পেয়ে, এই প্রতিবেদকের প্রশ্নটা শুনতে না পেলেও ঠিকই অনুমান করে নিলেন উর্মি। ভাঙা গলায় শুধু বলতে পারলেন ‘ভালো’। ছাত্রীকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন শিক্ষক ও কোচ আব্দুস সেলিম। পাশে দাঁড়িয়ে উর্মির বাবা বাবুল আক্তার। ছাত্রীর সংগ্রামের গল্পটা শোনালেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বিশেষায়িত স্কুলের শিক্ষক আব্দুস সেলিম, ‘অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসার পর উর্মির অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা ছিল। টানা প্রশিক্ষণের পর তার ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সোনাসহ একাধিক পদক জিতেছে।’

মেয়ের সাফল্যে সব কষ্ট যেন আজ দূর হয়ে গেছে উর্মির বাবা বাবুল আক্তারের, ‘কষ্টটা অনেক কঠিন ছিল, কিন্তু আজ সব দূর হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে আজ গর্ব হচ্ছে, আনন্দ হচ্ছে। মেয়ের সাফল্য শুধু আমার না, পুরো দেশের।’

উর্মির মতো স্বরনের গল্পটাও প্রায় একই। শ্রবণ অক্ষমতা নিয়ে জন্মানো ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ডুবে ছিলেন বাবা সুলাইমান হোসেন। সমাজকল্যাণের এক কর্মকর্তার পরামর্শে ২০১৪ সালে ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দেন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান সুইড বাংলাদেশ স্কুলে। কানে শুনতে না পারা সেই স্বরন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭ সোনা। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নিয়েছেন পুরস্কার। আজ বাবাকে নিয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের মঞ্চে। ছেলের এমন সাফল্যে কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছেন বাবা সুলাইমান হোসেন। বললেন, ‘সৃষ্টিকর্তা স্বরনকে শোনার ক্ষমতা দেননি। ওকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করব তা নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। আজ ছেলে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করব ওকে সর্বোচ্চ সমর্থন দেওয়ার। আমাদের জীবনে এ অনেক পাওয়া।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত