Ajker Patrika

এআইয়ের বাজার দাঁড়াবে ৪.৮ ট্রিলিয়ন ডলার, হুমকিতে ৪০ শতাংশ চাকরি

অনলাইন ডেস্ক
এআইয়ের কারণে জ্ঞানভিত্তিক খাতগুলো এখন সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হবে। ছবি: লিংকডইন
এআইয়ের কারণে জ্ঞানভিত্তিক খাতগুলো এখন সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হবে। ছবি: লিংকডইন

বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে নতুন সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বৈষম্য বাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের ট্রেড ও ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ইউএনসিটিএডি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে এআইয়ের বাজার ৪ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে, যা জার্মানির বর্তমান অর্থনীতির সমান। তবে বিশ্বের ৪০ শতাংশ চাকরিতে প্রভাব ফেলবে এআইয়ের বিপ্লব।

জাতিসংঘের (ইউএন) প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক এআইয়ের বাজার ৪ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা জার্মানির অর্থনীতির সমান।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি) সতর্ক করে বলেছে, যদিও এআই অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করছে এবং বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করছে। তবে এটি বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়াতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআই উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে বিভিন্ন কাজকে স্বয়ংক্রিয় করে এবং বিভিন্ন চাকরি খাতকে প্রতিস্থাপিত করবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের ৪০ শতাংশ চাকরি প্রভাবিত হবে।

ইউএনসিটিএডি আরও জানায়, আগের প্রযুক্তি বিপ্লবগুলো মূলত নিচু স্তরের চাকরিগুলোকে প্রভাবিত করলেও এআইয়ের কারণে জ্ঞানভিত্তিক খাতগুলো এখন সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ উন্নত অর্থনীতিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে একই সঙ্গে এআইয়ের সুবিধাগুলো কাজে লাগানোর জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত রয়েছে এসব দেশ।

এআইয়ের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ সম্পন্ন করার বিষয়টি সস্তা শ্রমের পরিবর্তে পুঁজির পক্ষেই কাজ করে, যা বৈষম্য বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেহেতু সস্তা শ্রম রয়েছে, সেগুলোর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা (অর্থাৎ কম দামে কাজ করানোর সুযোগ) কমে যেতে পারে। কারণ, বড় কোম্পানিগুলো এখন প্রযুক্তি বা রোবট ব্যবহার করে সস্তা শ্রমের পরিবর্তে কাজ করতে পারবে।

ইউএনসিটিএডির প্রধান রেবেকা গ্রিনস্প্যান এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে ক্ষেত্রে মানবিক বিষয়কে লক্ষ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রযুক্তির পরিবর্তে মানুষের ওপর মূল মনোযোগ ধরে রাখা ও একটি বৈশ্বিক এআই কাঠামো তৈরি করার জন্য দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০২৩ সালে ইন্টারনেট, ব্লকচেইন, ৫ জি, ৩ডি প্রিন্টিং ও এআইয়ের মতো প্রযুক্তির বাজার ছিল ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা আগামী দশকে ছয় গুণ বেড়ে ১৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

আগামী দশকগুলোতে এই খাতের প্রধান প্রযুক্তি হবে এআই। ২০৩৩ সালের মধ্যে যার মূল্য হবে ৪ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

তবে ইউএনসিটিএডি সতর্ক করে দিয়েছে, এআই অবকাঠামো ও বিশেষজ্ঞদের অ্যাকসেস কিছু নির্দিষ্ট দেশে সীমাবদ্ধ। বর্তমানে বড় প্রযুক্তির ১০০টি কোম্পানি মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে অবস্থিত। এসব কোম্পানি বিশ্বব্যাপী করপোরেট গবেষণা ও উন্নয়নে ৪০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করছে।

সংস্থাটি বলেছে, দেশগুলোকে এখনোই কাজ শুরু করতে হবে। ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, সক্ষমতা তৈরি ও এআই শাসন প্রতিষ্ঠা করে তারা এআইয়ের সম্ভাবনা টেকসই উন্নয়নকাজে লাগাতে পারে।

এআই শুধু চাকরি প্রতিস্থাপন করবে না, এটি নতুন শিল্প তৈরি ও কর্মীদের ক্ষমতায়ন করতে পারে। দক্ষতা অর্জন ও শ্রমশক্তির অভিযোজনের জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এআই চাকরি নির্মূল করার পরিবর্তে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায়।

জাতিসংঘের সংস্থাটি আরও জানায়, এআই বিশ্বের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠন করছে। তবে এআই নীতিমালা, বিধিনিষেধ, আইন তৈরির আলোচনাগুলোতে উন্নয়নশীল ১১৮টি দেশের অংশগ্রহণ নেই।

সংস্থাটি সতর্ক করেছে, এআই নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক কাঠামো তৈরির আলোচনায় অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশ নেওয়া উচিত, যাতে এআই বৈশ্বিক অগ্রগতির পক্ষে কাজ করে, শুধু কিছু দেশের স্বার্থে নয়।

তথ্যসূত্র: এএফপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত