গেমের ভুবন

মো. নাহিদ হাসান
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৫৯

খেলতে ভালোবাসে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। ছেলে, বুড়ো, তরুণ—সবারই পছন্দ খেলা। মাঠ কমেছে, সশরীরে খেলার সময়, সুযোগ বা বয়স নেই অনেকেরই। তাতে কী! এসবের কোনোটারই তোয়াক্কা করার দরকার পড়বে না যে খেলায়, সেই স্ক্রিনের খেলায়ই এখন দুনিয়া মেতে উঠেছে। যাকে আমরা বলছি গেম। ভিডিও গেম এখন আরও বৈচিত্র্যময়, আরও বর্ণিল। আজকাল গেম আর শুধু শিশুদের নয়, প্রাপ্তবয়স্কদেরও।

গ্লোবাল গেমিং মার্কেটের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে এ বছর প্রায় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ গেম খেলবে। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী গেমিং মার্কেট ১৮৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আইএমএআরসি গ্রুপ ধারণা করছে, ২০২৭ সালের মধ্যে গেমিং মার্কেট ৩১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। ২০২২ থেকে ২০২৭ সালের প্রতিবছর গেমিং মার্কেট বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে এসে পুরো পৃথিবীর প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন আসছে। সব ইন্ডাস্ট্রিতে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। তেমনি গেম ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় এর অন্যতম চালক প্রযুক্তি। মূল গেমিং প্রযুক্তিপ্রবণতা গেম ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন এনেছে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ভিআর গেমিং ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি বিশেষ স্থানে রয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে ভিআর গেমগুলো আরও জনপ্রিয় হবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর খেলোয়াড়দের নিমগ্ন অভিজ্ঞতা দেয়। ভালোভাবে ডিজাইন করা হলে এই ভিআর গেমিং গেমিং জগতে খুব আকর্ষণীয় হতে পারে। বেশ কিছু সাম্প্রতিক ভিআর প্রযুক্তিগত গেম-এর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলছে। যেমন:

  • অ্যারিজোনা সানশাইন
  • অ্যাস্ট্রো বট: রেসকিউ মিশন
  • ব্যাটম্যান: আরখাম ভিআর
  • বিট সাবের
  • এলিট ডেঞ্জারাস ভিআর

আমরা প্রায়ই ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটির কথা একসঙ্গে বলে থাকি। গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) জনপ্রিয়তাও চোখে পড়ার মতো। যেমন:

  • পোকেমন গো
  • ডিসি: ব্যাটম্যান ব্যাট-টেক এডিশন
  • হ্যারি পটার: উইজার্ডস ইউনাইট
  • জুরাসিক ওয়ার্ল্ড অ্যালাইভ
  • জম্বি, রান!

মেটাভার্স
মেটাভার্স সম্পর্কে প্রচুর-আলোচনা রয়েছে এবং এটি গেমিং জগতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন্ড এখন। মেটাভার্স ভিআর, এআর, মোবাইল ও ব্লক চেইন বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এটি হবে অনলাইন জগৎ, যা মানুষ কাজ এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার জন্য ব্যবহার করবে।
যদিও মেটাভার্সের উন্নয়ন অনেকটাই চলছে এখনো। তবে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি ইতিমধ্যেই এ ধারণাটিকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। মেটাভার্স স্টার্ট-অ্যান্ড-স্টপ সিস্টেম নয়। গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে মেটাভার্সের ক্রমবর্ধমান ট্রেন্ড আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জনপ্রিয় মেটাভার্স গেমগুলোর মধ্যে আছে:

  • এক্সি ইনফিনিটি
  • ডিসেন্ট্রাল্যান্ড
  • স্যান্ডবক্স
  • চেন অব অ্যালায়েন্স
  • মাই নেইবার এলাইস

ব্লক চেইন ও এনএফটি
ব্লক চেইন ও এনএফটি গেমিং জগতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। অনেক জনপ্রিয় মেটাভার্স গেমই এনএফটি গেম। উদাহরণস্বরূপ এক্সি ইনফিনিটি, স্যান্ডবক্স, ফারমার্স ওয়ার্ল্ড ইত্যাদি। ব্লক চেইন এবং এনএফটির কারণে প্লে-টু-আর্ন গেমের প্রবণতা শুরু হয়েছে।

ব্লক চেইন-এনএফটি গেমিং মার্কেট দ্রুত বাড়ছে। ব্লক চেইন গেম অ্যালায়েন্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেমিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত ক্রিপ্টো ওয়ালেটের সংখ্যা ২০২১ সালের শুরুতে ২৯ হাজার ৫৬৩ থেকে বেড়ে ২০২১-এর আট মাসে এসে হয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার। এ রিপোর্ট নির্দেশ করে, ব্লক চেইন গেমিং আট মাসে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। তারা উল্লেখ করেছে যে এক্সি ইনফিনিটি গেমিং মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার করেছে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
গেমিংয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইর ব্যবহার জোরদার হচ্ছে। এআই ডেভেলপারদের অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ণ গেম তৈরি করতে সাহায্য করছে।
কাউন্টার-স্ট্রাইক, নিড ফর স্পিড, সিভিলাইজেশন, মাইনক্রাফট, হ্যালো: কমব্যাট ইভলভডের মতো জনপ্রিয় গেমের ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা হয়েছে।

ই-স্পোর্টস
ই-স্পোর্টসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ কারণে ই-স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের চাহিদা বাড়বে দিন দিন। ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতামূলক খেলার মতো, ই-স্পোর্টসের দর্শক, লিগ, টুর্নামেন্ট, স্পনসরশিপ, পুরস্কারের অর্থ, বেতনভোগী খেলোয়াড় এবং মিডিয়া গুঞ্জন রয়েছে।

আধুনিক প্রযুক্তি ভিডিও গেমের জগৎ সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। মাঠভর্তি দর্শকসহ এশিয়া কাপ ক্রিকেটের যে উত্তেজনা, ভিডিও গেমের উত্তেজনা তার চেয়ে খুব কম নয় এখন। খেলাধুলার প্রতিটি মুহূর্ত একেবারে জীবন্ত করে তুলতে ডেভেলপারদের এখন বিশ্রাম নেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত