Ajker Patrika

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি আইন বাতিল চান ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
চিপ শিল্পের উন্নয়নের জন্য ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি দিতে চেয়েছিল বাইডেন সরকার। ছবি: লজিক্যালি ফাইন্যান্স
চিপ শিল্পের উন্নয়নের জন্য ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি দিতে চেয়েছিল বাইডেন সরকার। ছবি: লজিক্যালি ফাইন্যান্স

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ভর্তুকি আইন বাতিল করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য গত মঙ্গলবার মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাঁদের উচিত ২০২২ সালের ঐতিহাসিক দ্বিদলীয় আইনটি বাতিল করা। সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন ও তৈরির জন্য ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ২৭০ কোটি ডলার ভর্তুকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে আইনটি পাস করা হয়েছিল।

কংগ্রেসের এক বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, ‘আপনার চিপ আইনটি একটি ভয়ানক ব্যাপার। আমরা শত শত বিলিয়ন ডলার দিই, কিন্তু এর কোনো মানে হয় না। তারা আমাদের টাকা নিয়ে যায় এবং কোনো কাজে লাগায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের উচিত আইনটি বাতিল করা এবং যেটুকু টাকা বাকি থাকবে, তা যেন দেনা কমাতে ব্যবহৃত হয়।’

বাইডেন প্রশাসনের সময়ে সই করা ‘দ্য চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্ট’ আইনটি ২০২২ সালে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের উন্নয়নের জন্য ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি এবং ৭৫ বিলিয়ন ডলারের সরকারি ঋণ প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের তাদের টাকা দিতে হবে না। নতুন শুল্ক আরোপ না করা হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা তৈরি করতে রাজি হবে।’

অন্যদিকে, বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লাটনিক এই প্রোগ্রামের প্রশংসা করেছেন। তবে তিনি আগে বলেছিলেন যে, তিনি বাইডেন প্রশাসনের অধীনে চূড়ান্ত করা ভর্তুকিগুলো পুনঃ আলোচনা করতে চান।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিভিন্ন বৈশ্বিক শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপনের জন্য সরকারি ভর্তুকি দিতে চেয়েছিল বাইডেন সরকার। এর মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করেছিলেন বাইডেন প্রশাসনের বাণিজ্যসচিব জিনা রাইমন্ডো।

বাইডেন প্রশাসনের শেষ পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ভর্তুকি চূড়ান্ত করেছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল—দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের জন্য ৪ দশমিক ৭৪৫ বিলিয়ন ডলার, ইন্টেলের জন্য ৭ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (টিএসএমসি) জন্য ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, মাইক্রনের জন্য ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প বলেন, চিপ আইনটি একটি ভয়ানক ব্যাপার। ছবি: এএফপি
ট্রাম্প বলেন, চিপ আইনটি একটি ভয়ানক ব্যাপার। ছবি: এএফপি

কিছু কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে সই হওয়া ভর্তুকির চুক্তিগুলো অবৈধ করার চেষ্টা করতে পারেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে তিনি সেই ভর্তুকি বা সরকারি সহায়তা বাতিল করার চেষ্টা করতে পারেন, যা কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে।

গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল বলেন, এই আইনের কারণেই ‘মাইক্রন’ যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলার এবং ৫০ হাজার কর্মসংস্থান নিয়ে আসছে।

চলতি মাসে টিএসএমসি এবং ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ করবেন, যার আওতায় আগামী কয়েক বছরে সেখানে পাঁচটি নতুন চিপ উৎপাদনের কারখানা নির্মাণ করা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির একটি বড় পদক্ষেপ।

এই বিনিয়োগের জন্য টিসএমসিকে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লাটনিক। তবে তিনি পরিষ্কার করেন যে, এই ভর্তুকির বাইরে কোম্পানিকে নতুন কোনো ভর্তুকি দেওয়া হবে না। তবে টিএসএমসি একটি ২৫ শতাংশ উৎপাদন বিনিয়োগ কর ছাড় পাওয়ার যোগ্য। অর্থাৎ, তারা উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ করবে, তার ২৫ শতাংশ করছাড় পাবেন।

গত মাসে টিএসএমসি জানায়, তারা ইতিমধ্যে এই ভর্তুকির অংশ হিসেবে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এর মানে, তারা যে ভর্তুকি বা সরকারি সহায়তা পাবে, তা ধাপে ধাপে দেওয়া হচ্ছে এবং পুরো প্রক্রিয়া এখনো চলমান।

প্রতিনিধি গ্রেগ স্ট্যানটন বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল ‘সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এবং অ্যারিজোনার হাজার হাজার কর্মীকে সরাসরি আক্রমণ।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, টিএসএমসির ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চিপ আইন ছাড়া সম্ভব হতো না। এর মানে, এই আইন ছিল টিএসএমসির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে প্ররোচিত করেছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত