৯৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ওপর নজদারি চলে, কীভাবে করে তারা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ০০

ম্যানেজার বা মানবসম্পদ বিভাগের নানা আচরণে যে কোনো কর্মীর ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, অফিস কর্তৃপক্ষ তাঁর ওপর নজরদারি করছে। এমন সন্দেহ কিন্তু অমূলক নয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় শতাভাগ করপোরেট প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তির সহায়তায় কর্মীদের ওপর নজরদারি করে। কোভিড মহামারীর আগে এই হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের ওপর নজরদারি করতে নানা উপায় অবলম্বন করে। প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতিতে এই কাজটি অনেক সহজ ও সুলভ হয়ে উঠেছে। কর্মীদের কাজকর্মের ওপর নজর রাখার উদ্দেশ্যেই হোক বা তাঁদের অফিসে আসা যাওয়ার হিসাব রাখার উদ্দেশ্যেই হোক— এ নজরদারি এখন প্রায় সবখানে। অনেক প্রতিষ্ঠান সীমা অতিক্রমও করে ফেলছে। কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ডে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা যেতে পারে কি না তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।

করোনা মহামারিতে কর্মস্থলে গিয়ে কাজ করা যখন অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন অনেক প্রতিষ্ঠানই ঘরে থেকে কাজ করার উপায় বেছে নেয়। এ নিয়ে ওই সময় নানা মডেল ভাবা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই অনেক পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়েছে। তবে, এখন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের অফিসে ফেরার জন্য চাপ দিচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুসারে, অফিসে ফেরার এ তাড়ার মধ্যে কর্মীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোরও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। 

কর্মীদের ওপর নজরদারিতে যেসব উপায় অবলম্বন করছে প্রতিষ্ঠানগুলো—

আইডি কার্ড সোয়াইপ
অনেক প্রতিষ্ঠানেই প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য একটি অপটিক্যাল ডিভাইসে পরিচয়পত্র সোয়াইপ করতে হয়। এ ছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের আইরিস অথবা ফেসিয়াল বায়োমেট্রিক পদ্ধতিও ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে কর্মীদের অফিসে অবস্থান করাকালীন সব তথ্য জমা হয় মানবসম্পদ বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপকের কাছে। করোনার পর অফিসে ফেরার নীতি প্রয়োগের শুরু করার ফলে কর্মীদের এ ধরনের এখন কোম্পানিগুলোর কাছে সোনার খনি হয়ে উঠেছে! 

ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যেক বিভাগের কর্মীদের অফিসে উপস্থিতির রেকর্ডে নজর রাখা শুরু করেছে ই–কমার্স জায়ান্ট আমাজন। এমনকি কর্মীরাও তাঁদের এই উপস্থিতি রেকর্ড দেখতে পান। এ রেকর্ডে প্রতি সপ্তাহে তাঁরা কয়দিন অফিসে এসেছেন— এমন আট সপ্তাহের তালিকা পর্যন্ত দেখা যায়। 

যেখানে আগে শুধু নিরাপত্তা ও স্থান সংকুলানের উদ্দেশ্যে গোপনে কর্মীদের যাওয়া–আসার রেকর্ড রাখা হতো। 

আমাজনের মুখপাত্র রব মুনোজ ইনসাইডারকে ই–মেইল বার্তায় বলেন, ‘একটি করপোরেট ভবনে কর্মীরা কয়দিন প্রবেশ করেছেন, এ টুল ব্যবহার করে কর্মী ও ব্যবস্থাপক উভয়েই তার হিসাব দেখতে পান। এ তথ্য ব্যবহার করে কর্মীরা অফিসে আসার বিষয়ে সহকর্মীর সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করতে পারবেন।’ 

কোনো কর্মী অফিসে এসে কাজে পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন কি না তা জানতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুজাতিক সংস্থা আইডি সোয়াইপ ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগানও একই উপায় অবলম্বন করেছে। 

জেপি মরগানের ড্যাশবোর্ডটি কর্মীদের কর্মদিবসে উপস্থিতির হার নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করতে সাহায্য করে। 

কি–স্ট্রোক, ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং ওয়েবক্যাম
কর্মীরা তাঁদের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার কী করছেন, কোম্পানিকে সেটি জানার সুযোগ দেয় টাইম–ট্র্যাকিং সফটওয়্যারগুলো।

কর্মদিবস বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান টাইম ডক্টরের কনটেন্ট মার্কেটিং ম্যানেজার কার্লো বোরজা বলেন, তাঁদের সফটওয়্যার কর্মীদের কর্মক্ষমতা নিয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ ছাড়া সফটওয়্যারটিতে কর্মীদের অফিসে প্রবেশ করার ও বের হওয়া, বিশ্রাম নেওয়া, ইন্টারনেট ও অ্যাপ ব্যবহারের সময়ের রেকর্ড রাখা হয়। এমনকি টাইম ডক্টরের একটি টুল ব্যবহার করে কর্মীদের ব্যবহৃত ডিভাইসের ডিসপ্লের স্ক্রিনশট ও ভিডিও রেকর্ডিং রাখা যায়।

কার্লো বলেন, ‘আমরা কর্মীদের কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করি।’

কিছু কিছু সফটওয়্যার কর্মীদের কি–স্ট্রোকের রেকর্ড অর্থাৎ কি–বোর্ড ব্যবহারের ওপর নজরদারি করতে পারে। এ ছাড়া কর্মীদের অজ্ঞাতসারে তাঁদের ব্যবহৃত ডিভাইসের মাইক্রোফোন ও ওয়েবক্যাম চালু করতেও সক্ষম এসব সফটওয়্যার।

জেপি মরগান আরও বিস্তৃত তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘ওয়ার্ক ফোর্স অ্যাক্টিভিটি ডেটা ইউটিলিটি’ নামের একটি সিস্টেম ব্যবহার করে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে কর্মীরা কতক্ষণ জুম কল, ই–মেইল এবং স্প্রেডশিটে (এক্সেল বা এমন অন্য কিছু) সময় ব্যয় করেন তা থেকে শুরু করে তাঁরা কতক্ষণ অফিসের সিটে বসে থাকছেন তা পর্যন্ত জানা যায়। 

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বের ওপর জরিপ চালিয়েছে রেজুমি বিল্ডার ডটকম। তারা দেখেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৯৬ শতাংশ ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানেই কর্মীদের ওপর নজরদারি করার মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে মহামারির আগে এ হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। 

অফিসে কর্মীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণের সেন্সর
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মীরা অফিসের কোন জায়গায় বেশি সময় কাটান তার ওপরও নজর রাখে। অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান এক্সওয়াই সেন্স এমন সব সেন্সর সরবরাহ করে যা অফিস পর্যবেক্ষণের জন্য ছাদে সেঁটে দেওয়া যায়। এসব সেন্সর অফিসের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত স্থান এবং সবচেয়ে কম ব্যবহৃত স্থান চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। 

এক্সওয়াই সেন্সের সিইও অ্যালেক্স বির্চ বলেন, ‘এ যন্ত্রটি কর্মীদের পরিচয় চিহ্নিত করতে না পারলেও প্রতি জনের বিপরীতে স্ক্রিনে একটি করে ডট দেখায়। এটি কারও ওপর নজরদারির জন্য নয় বরং অফিসের জায়গাগুলো কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয়।’ 

পানি শীতলকরণ যন্ত্র
হাই–টেক পানি শীতলকরণ যন্ত্রগুলোতেও কর্মীদের তথ্য জমা হয়। বিভিন্ন স্বাদযুক্ত পানীয় তৈরির যন্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘বেভি’ কর্মীরা কতবার যন্ত্রটি ব্যবহার করেন তার তথ্য সংগ্রহ করে। এ প্রতিষ্ঠানের সহ–প্রতিষ্ঠাতা শান গ্রান্ডি বলেন, তাঁদের মেশিনে সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, মহামারির আগের তুলনায় কর্মীদের ৯টার আগে অফিসে আসার বা ৫টার পরেও অফিসে অবস্থান করার হার বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত