আইফোন ১৬ সিরিজ আনল অ্যাপল, দাম ও স্পেসিফিকেশন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭: ৫২
Thumbnail image

বহুল প্রতীক্ষিত আইফোন ১৬ সিরিজ উন্মোচন করল টেক জায়ান্ট অ্যাপল। গতকাল সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপল কুপারটিনো পার্কে আয়োজিত ‘ইটস গ্লোটাইম’ ইভেন্টে আইফোন সিরিজের পাশাপাশি নতুন অ্যাপল ওয়াচ, এয়ারপডসও উন্মোচিত হয়। আইফোনের এই সিরিজে থাকছে চারটি মডেল—আইফোন ১৬, আইফোন ১৬ প্লাস, আইফোন ১৬ প্রো আর আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স। এই সিরিজের অন্যতম আকর্ষণ হলো অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। 

এবারের আইফোনের সবগুলো মডেলের সাইড প্যানেলে যুক্ত হচ্ছে ক্যাপচার ও অ্যাকশন বাটন। ক্যাপচার বাটনের সাহায্যে ফোনের লক না খুলেই খুব সহজে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যাবে। আইফোন ১৬ ও ১৬ প্লাসে বায়োনিক এ১৮ চিপ এবং ১৬ প্রো ও ১৬ প্রো ম্যাক্সে বায়োনিক এ১৮ প্রো চিপ থাকছে। 

অ্যাপলের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্ক্রিনের আইফোন আনল এই সিরিজের মাধ্যমে। এই সিরিজের প্রো মডেলের ডিসপ্লে আকার ৬ দশমিক ৩ ইঞ্চি আর প্রো ম্যাক্সের ৬ দশমিক ৯ ইঞ্চি। আগের সিরিজের তুলনায় এই সিরিজে ব্যাটারির সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। 

ক্যামেরা বাটন 
আইফোনে যেন দিনে দিনে বাহ্যিক বাটনের সংখ্যা বেড়ে চলছে। আইফোন ১৫ প্রো ও আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অ্যাকশন বাটন যুক্ত করেছিল অ্যাপল। এবার আইফোন ১৬ সিরিজের প্রতিটি মডেলে ক্যামেরা বাটন যুক্ত করা হয়েছে। এতে একবার ট্যাপ করলেই ক্যামেরা চালু হবে এবং দ্বিতীয়বার ট্যাপেই আইফোন ছবি তুলবে। আর চাপ দিয়ে বাটনটি ধরে থাকলে এটি ভিডিও রেকর্ডিং শুরু করবে। এর সঙ্গে টাচ গেসচার যুক্ত করা হয়েছে। এটি হালকা ও বেশি চাপের মধ্যে পার্থক্য বুঝবে। হালকা চাপে ফোনটি ফ্রেমিং ঠিক করবে। এ ছাড়া এই বাটনের মাধ্যমে ক্যামেরা জুমও করা যাবে। 

অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে যা যা করা যাবে
সিরির সঙ্গে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত করে একে আরও উন্নত করা হয়েছে। আইফোনের এআই ফিচার কীভাবে ব্যবহার করা যাবে এবং আইফোনে কী করা যাবে তার দিকনির্দেশনা দিতে পারবে সিরি। অ্যাসিস্টেন্টকে নির্দেশনা দিলেই এটি কাউকে ছবি পাঠাতে পারবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বিভিন্ন বস্তু ছড়িয়ে দেবে। অ্যাপলের এআই এমনভাবে বস্তুগুলো সরিয়ে দেবে, যেটির ছায়াও থাকবে না। এ ছাড়া এআই দিয়ে নতুন ইমোজিও তৈরি করা যাবে। কোনো লেখার সারসংক্ষেপও তৈরি করে দেবে এআই এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাহায্য করবে। অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স প্রম্পটের মাধ্যমে ছবিও খুঁজে দেবে এবং বিভিন্ন এআইভিত্তিক রাইটিং টুলও থাকবে। এমনকি প্রোম্পটের মাধ্যমে সিনেমাও তৈরি করে দিতে পারবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স। আর চ্যাটজিপিটি চ্যাটবটও আরও সহজে ব্যবহার করা যাবে। 

আইফোন ১৬, প্লাস, প্রো ও প্রো ম্যাক্সের দাম
নতুন আইফোন ১৬ এবং ১৬ প্লাসের দাম যথাক্রমে ৭৯৯ (প্রায় ৯৫ হাজার ৫৬১ টাকা) ও ৮৯৯ (প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার ৫২১ টাকা) ডলার। আইফোন প্রো এবং প্রো ম্যাক্সের মূল্য যথাক্রমে ৯৯৯ (প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৮১ টাকা) ও ১১৯৯ (প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৪০১ টাকা) ডলার। এই দামগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে আইফোন ১৬ সিরিজের প্রিঅর্ডার নেওয়া শুরু হবে। সিরিজটি আগামী ২০ সেপ্টেম্বরে বাজারে আসবে। 

মডেলগুলোর রং 
আইফোন ১৬ এবং ১৬ প্লাস ব্ল্যাক (কালো), পিংক (গোলাপি), টিল (নীল ও সবুজের মিশ্রণে হালকা সবুজ), আলট্রামেরিন (বেগুনি) ও হোয়াইট (সাদা)—এই পাঁচ রঙে পাওয়া যাবে। 

আইফোন প্রো এবং প্রো ম্যাক্স ডেসার্ট টাইটেনিয়াম, ন্যাচারাল টাইটেনিয়াম, হোয়াইট টাইটেনিয়াম ও ব্ল্যাক টাইটেনিয়াম রঙে পাওয়া যাবে।

আইফোন ১৬ ও আইফোন ১৬ প্লাস স্পেসিফিকেশন 

ডিজাইন ও ডিসপ্লে 
অ্যাপলের ১৬ ও আইফোন ১৬ প্লাসে ‘অ্যারস্পেস–গ্রেড অ্যালুমিনিয়াম’ ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পেছনের কালার–ইনফিউসড গ্লাস থাকবে। আইফোন ১৬ ফোনের ডিসপ্লে ৬ দশমিক ১ ইঞ্চি ও আইফোন ১৬ প্লাসের ডিসপ্লে ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চি। প্রতিটি ডিসপ্লের ব্রাইটনেস হবে ২ হাজার নিটস। 
 
এ দুই মডেলেও অ্যাকশন বাটন রয়েছে। এর মাধ্যমে দ্রুত ভয়েস রেকর্ড, মিউজিক শনাক্ত ও অনুবাদের মতো কাজ করা যায়। এটি বিভিন্ন শর্টকাটের দিয়ে নিজের মতো কাস্টমাইজেশন করা যাবে। 

চিপসেট 
আইফোন ১৬ ও ১৬ প্লাসে অ্যাপলের বায়োনিক এ১৮ চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একটি ৩ এনএম চিপ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এ১৮ চিপের ৬ কোর জিপিইউ রয়েছে, যার মধ্যে দুটি পারফরম্যান্স কোর ও চারটি ইফেসিয়েন্সি কোর রয়েছে। আইফোন ১৫-এর এ১৬ বায়োনিক চিপের চেয়ে আইফোন ১৬-এর এই চিপ ৩০ গুণ বেশি গতিতে কাজ করবে বলে অ্যাপল দাবি করছে। 

রিসাইকলড অ্যালুমিনিয়াম থেকে চিপটি তৈরি। এর মাধ্যমে উন্নত গেমিং অভিজ্ঞতা, পাঁচ গুন বেশি ফ্রেম রেট, হাই রেজল্যুশনের এএএ শ্রেণির গেইম খেলার সুবিধা পাওয়া যাবে। 

ক্যামেরা স্পেসিফিকেশন 
আইফোন ১৬ ও আইফোন ১৬ প্লাসের ক্যামেরা স্পেসিফিকেশন একই। এই ফোনের ক্যামেরাগুলো আইফোন ১৪-এর মতো আকারে করা হয়েছে। 

নতুন আইফোন ১৬ ও আইফোন ১৬ প্লাসে ডুয়েল ক্যামেরা রয়েছে—একটি শক্তিশালী ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা এবং ১২ মেগাপিক্সেল আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা রয়েছে। এটি ৪৮ মেগাপিক্সেল ও ১২ মেগাপিক্সেল ছবিকে একত্রিত করে আরও পরিষ্কার ২৪ মেগাপিক্সেল ছবি তৈরি করে। আইফোনে ২ এক্স টেলিফটো জুম অপশনও রয়েছে। আর কম আলোয় ছবি তোলার জন্য এর দ্রুতগতি এফ/ ১.৬ অ্যাপারচার রয়েছে। 

এই ক্যামেরা দিয়ে ৪কে ডলবি ভিশন এইচডি ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। এ ছাড়া ক্যামেরাগুলো ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি আলো ধারণ করতে সক্ষম। দুই লেন্সের মাধ্যমেই স্পেশিয়াল ভিডিও ও ছবি তোলা যাবে। 

সেলফি ও ভিডিও কলের জন্য ১২ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা রয়েছে। স্ন্যাপচ্যাটে ক্যামেরা কন্ট্রোল ব্যবহারের সুযোগও মডেলগুলোতে পাওয়া যাবে। 

আইফোন ১৬ প্রো ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স স্পেসিফিকেশন 

ডিজাইন ও ডিসপ্লে 
আইফোন ১৬ প্রো ফোনে ৬ দশমিক ৩ ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে। আর আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের ডিসপ্লে ৬ দশমিক ৯ ইঞ্চি। অ্যাপলের মতে, আগের মডেলগুলোর তুলনা এবার প্রো ও প্রো ম্যাক্সের স্ক্রিনের চারদিকে কালো বর্ডার সবচেয়ে চিকন রাখা হয়েছে। এতে ১২০ হার্টজে রিফ্রেশ রেট রয়েছে। 

চিপসেট
আইফোন ১৬ প্রো ও প্রো ম্যাক্স উভয় মডেলেই দ্বিতীয় প্রজন্মের ৩ এনএম ট্রানজিস্টরের তৈরি এ১৮ প্রো চিপসেট রয়েছে। এই নতুন ৬ কোরের জিপিইউ আগে এ১৭ প্রোর তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দ্রুতগতির হবে বলে অ্যাপল দাবি করছে। এতে দুটি পারফরমেন্স কোর ও চারটি ইফিসিয়েন্সি কোর রয়েছে। এর ফলে এটি ২০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ করে ১৫ শতাংশ দ্রুতগতিতে কাজ করে। 

ক্যামেরা 
আইফোন ১৬ প্রো ও প্রো ম্যাক্সের ত্রিপল ক্যামেরায় বিভিন্ন আপডেট নিয়ে আসা হয়েছে। আইফোন ১৬ প্রো মডেলগুলোতে দ্বিতীয় প্রজন্মের কোয়াড পিক্সেল সেন্সরসহ নতুন ৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। ক্যামেরাটির মাধ্যমে ৪কে ১২০ ভিডিও ধারণ করা যাবে। এ ছাড়া ৪৮ মেগাপিক্সেল আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরার সঙ্গে অটো ফোকাস সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। দুটি প্রো মডেলেই ৫ এক্স টেলিফটো লেন্সসহ ১২ মেগাপিক্সেল সেন্সর থাকবে। 

এ ছাড়া অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রেই স্পেশিয়াল অডিও ক্যাপচার রয়েছে। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ থেকে কথাবার্তা আলাদা করতে পারবে। 

ব্যাটারি 
ব্যাটারির সাইজ সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি অ্যাপল। তবে এর পারফরম্যান্স আরও উন্নত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। অ্যাপল জানিয়েছে, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ও বড় ডিসপ্লের জন্য মডেলগুলোতে বড় ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। 

তথ্যসূত্র: দ্য ভার্জ, ইন্ডিয়া টুডে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত