Ajker Patrika

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে উপবাসে বহু মৃত্যু, বাংলাদেশেও ঘটেছিল এমন ঘটনা

আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১২: ১৮
কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে উপবাসে বহু মৃত্যু, বাংলাদেশেও ঘটেছিল এমন ঘটনা

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে করছে প্রশাসন।

এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে বলে ‘কাল্ট’। এরা প্রচলিত ধর্মীয় আচারের বাইরে গিয়ে কঠোর বা সহিংস পন্থা বেছে নেয়। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় অথবা অসীমে মিশে যেতে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জন দেয়, কখনো কখনো বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

আজ থেকে ১৬ বছর আগে ঠিক এ ধরনেই একটি ঘটনা ঘটেছিল ময়মনসিংহ জেলায়। এক পরিবারের নয়জন সদস্য ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিশুও ছিল।

ঘটনাকাল ২০০৭ সালের ১১ জুলাই, বেলা ৩টা ১০ মিনিট। জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা জিএম এক্সপ্রেস ২৫৪ লোকাল ট্রেনটি ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার ইটখোলায় পৌঁছালে হঠাৎ চালকের নজরে পড়ে রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেললাইনের দিকে আসছে। এরপর তাঁরা রেললাইন ধরে চুপচাপ বসে পড়েন। প্রথমে চালক ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেননি। ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো রেললাইন পার হচ্ছেন। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে কিছুই করার ছিল না। নয়জনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় রেলগাড়ির চাকা।

এরপর চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। মুহূর্তে শত শত মানুষ জড়ো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান তাঁদের পরিচয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মা,দুই ছেলে, চার মেয়ে এবং দুই নাতি-নাতনি। তাঁরা হলেন- মা হেনা আনোয়ার (৬০), ছেলে আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), মেয়ে আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনি মৌ আনোয়ার (১০)। রেললাইনের পাশেই তাদের বাড়ি।

এ নিয়ে পরের দিন দেশে সব জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হয়। সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায় ওই এলাকায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকেরা দেখতে পান সুনসান নীরবতা। একটি পাকা বাড়ির পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো গর্ত। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাটিয়া। রান্নাঘরে পড়ে আছে কাটা মাছ ও তরিতরকারি।

আদম পরিবারের হোল্ডিং প্লেটবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। কিছু বাংলায়, কিছু ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল, ‘আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম। সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব।’—এ ধরনের কথাবার্তা ছিল সেখানে।

পরে পুলিশের বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী বা এলাকার লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আনোয়ার দরবেশ নামে এক লোক ‘আদম ধর্ম’-এর প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতেন। নিজেকে আনোয়ার আদম বলে পরিচয় দিতেন। তিনিই তৈরি করেছিলেন এই কাল্ট। তাঁর ছোট ভাই আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাই (আনোয়ার দরবেশ) হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সবাই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকেই তাঁদের আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে।

অবশ্য আনোয়ার দরবেশের বাড়িতে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নথিপত্র বা বইপুস্তক পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গির্জাতেও তাঁরা কখনো যাননি।

এই আনোয়ার দরবেশের কার্যক্রম সম্পর্কে ওই সময় পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য বেরোয় সেগুলো হলো—সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ধর্মে মন দেন। এলাকার মানুষ দরবেশ, ফকির ও পীর বলে ডাকতে শুরু করেন। তবে ধীরে ধীরে চিন্তায় পরিবর্তন আসে। প্রচলিত ইসলাম ধর্মের বাইরে নানা কথা বলতে শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে এলাকায় অনেকের সঙ্গে তর্কও হতো প্রায়ই। এ কারণে একবার লোকজন তাঁকে মারধরও করে। বলতে গেলে এরপরই আনোয়ার একঘরে হয়ে পড়েন। নিভৃতে থাকতে শুরু করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরিবারের লোকজন ধীরে ধীরে তাঁর মুরিদ হতে শুরু করে। পরিবারের বাইরেও কয়েকজন মুরিদ ছিলেন বলে জানা যায়।

২০০০ সালের ১১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার। মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আগেই লিখে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল করাবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্য রকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।’

আদম পরিবারের নেমফ্লেট লেখা নির্দেশনাপরিবারের লোকজন সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই কবর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে গোসল, কাফন পরানো এবং জানাজা নামাজের পর তাঁকে ইসলামি রীতিতে কবর দেওয়া হয়।

আনোয়ার আদমের জানাজা এবং দাফন নিয়ে জটিলতায় আদম পরিবারটি ক্রমেই আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবারটির ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। আদম পরিবারের গৃহকর্মী রিনার ভাষ্যমতে, ‘নানা ভাবে তারা ফার্নিচার, টিউবওয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে। টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলেছে। বাথরুমের পাইপ নিয়ে গেছে। ওরা বাড়ির ভেতর ঢুকে গাছ কাটার চেষ্টা করেছে।’

এ ঘটনার পর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে যায়। বড় ছেলে আরিফ পরিবারের খরচ চালাতেন। কিন্তু তিনি কী করতেন তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য ছোট ছেলের ডায়েরিতে খুনের ইঙ্গিত আছে। তিনি লিখেছেন, ‘So who we are? I have already given my and our identity as ‘‘ADAMS’’...We have come to establish the truth and reallity in to the world but our bodies were killed again and again by mohamod’s rules, law and relisions. ’

আনোয়ার আদম মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে আরিফ বাবার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ‘আদম ধর্ম’-এর নেতার ভূমিকা পালন করেন। আরিফ সম্বন্ধে তাঁর পরিবারের অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর ছোট বোন শারমিন ডায়েরিতে লিখেছিলেন—‘My brother worked as dean in many 52 international university in Dhaka and in outside. He is extraordinary smart, intelligent and individual and intellectual man I ever met. There is no doubt. He is different. I am very proud to be his sister...My brother left by muhamad’s attacked.’ 

২০০৫ সালে ঢাকায় আরিফ মারা যান নাকি খুন হন, সেটিও রহস্য। এরপর পরিবারটি গ্রামে ফিরে যায়। তখন পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য রাহাত। সেখানে পরিবারটি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত সেটি জানা যায় না। রাহাতের ডায়েরিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘We are the only family in the world that is independent and selfdepanded. We are the only one family in the world that is totally independed and selfdepended and out of mohamod’s rules. , law and relisious activities and relisions. ’

বড় বোন আক্তারী আনোয়ার বাবার প্রতিষ্ঠিত আদম ধর্মের পুরোহিত হয়ে বসেন। মৃত বাবা ও ভাইয়ের আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পুরো পরিবার নিয়মিত ধ্যান করত। আক্তারী বেগমের ওপরই বাবার আত্মা ভর করত। তাঁর মুখ দিয়েই আসত বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ। 

ডায়েরি এবং হাতে লেখা কাগজপত্র অনুযায়ী, তাঁদের বিশ্বাস ছিল—আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্ম গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আদম হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন আনোয়ার আদম। নবী মোহাম্মদের (সা.) অনুসারীদের (শরিয়তপন্থী) তাঁরা ঘৃণা করতেন।

প্রত্যেক সদস্যই মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে গেছেন। অধিকাংশ লেখাই ইংরেজিতে। তবে মায়ের হয়ে তাঁর কথাগুলো লিখে দিয়েছেন মেয়ে। এমনকি দুটি শিশুর কথাও ডায়েরিতে রয়েছে। অবশ্য তাদেরটি কেউ লিখে দিয়ে থাকতে পারে।

আদম পরিবার আত্মহত্যার জন্য যাত্রা করে এই বাড়ি থেকেইমূলত বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁরা আত্মহত্যারই পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাঁরা এমন ভেবেছিলেন। ডায়েরির লেখাজোখা থেকে তেমনটিই জানা যায়। ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যারও আয়োজন করেছিলেন। 

এ ঘটনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল Mental Health, Religion & Culture সাময়িকীতে, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ডা. নাসিমা সেলিমের সেই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ‘An extraordinary truth? The Adam ‘‘suicide’’ notes from Bangladesh’। 

সেখানে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: আনোয়ার আদমের চিন্তাধারায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল শরিয়তবিরোধী ধ্যানধারণা। ১৯৯৫ সালে আনোয়ার আদমের চেতনায় যে পরিবর্তন তৈরি হয়েছিল, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে বিভ্রান্তি (Delusion)। পরিবারের প্রত্যেকেই সেই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন, এটিকে বলে Shared Delusion বা যৌথ বিভ্রান্তি। 

এ বিষয়ে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: Shared Psychotic Disorder (SPD), referring to a condition where all members of a family share the delusions This is an extremely rare condition, but one that has been found in many different cultures. 

এ ছাড়া নাসিমা সেলিম এই রোগকে সম্ভাব্য `Folie a famille' বলে চিহ্নিত করেছেন। ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগে সাধারণত পরিবারের সদস্যরা অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। বিশেষত একজন সদস্যের কোনো অস্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। 

এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে সুইডেনে। উরুসুলা এরিকসন নামে এক নারী রাস্তায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। একটু পরেই তাঁর যমজ বোন সাবিনা এরিকসনও একইভাবে হাইওয়েতে বের হয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে তিনিও বেঁচে যান। মনোবিদেরা বলেন, তাঁরা ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগের শিকার। 

এ ছাড়া ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে চলে যান। কিন্তু তাদের কোনো উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা ছিল না। স্রেফ একজন ভেবেছেন বাড়ি থেকে দূরে গেলেই ভালো! বাকিরাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১১
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সাধারণত অস্থায়ী পেশা হিসেবে ফুড ডেলিভারির চাকরি অনেকেই করেন। কেউ আবার মূল চাকরির ফাঁকে ফুড ডেলিভারি দেন অতিরিক্ত আয়ের জন্য। কিন্তু এ কাজ করেও যে লাখ টাকার মালিক হওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং নামের এক তরুণ।

ফুড ডেলিভারি করতে করতে মাত্র পাঁচ বছরে ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান সঞ্চয় করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান। প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ আর কঠোর মিতব্যয়িতাই তাঁকে লাখপতি বানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

ব্যর্থ ব্যবসা, তারপর নতুন শুরু

ঝাংয়ের বাড়ি ফুজিয়ান প্রদেশের ঝাংঝো শহরে। ২০১৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি নাশতার দোকান চালু করেন। শুরুতে কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসার অবস্থা হয়ে যায় টালমাটাল। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকে, ক্রেতা কমে যায় এবং প্রতিদিনের খরচ টানতে গিয়ে তিনি চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং তাঁর কাঁধে চাপে প্রায় ৫০ হাজার ইউয়ানের ঋণ।

চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন
চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন

এ ব্যর্থতা তরুণ ঝাংকে মানসিকভাবে দমিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি পরিবারকে বিষয়টি বুঝতে দিতে চাননি। তাই সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে একাই রওনা দেন সাংহাইয়ের পথে। বড় শহরে গিয়ে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তবুও লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শোধ করা, আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো মূলধন জোগাড় করা এবং নিজের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা।

১৪ ঘণ্টার কর্মদিবস এবং অবিশ্বাস্য পরিশ্রম

সাংহাইয়ের মিনহাং জেলায় উঝং রোডের একটি ডেলিভারি স্টেশনে তিনি কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টা ৪০ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি, ঠান্ডা কিংবা গরম—সব পরিস্থিতিতেই তিনি মাঠে থাকেন ডেলিভারির কাজে। সবার আগে অর্ডার ধরতে এবং দ্রুত ডেলিভারি দিতে তিনি সব সময় ছুটে চলেন। ডেলিভারি স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ান বলেন, ‘ছেলেটা খুব কম কথা বলে, কিন্তু কাজ করে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম দিয়ে। প্রতিদিনই দেখি সে সময় বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে।’

কাজের দক্ষতার কারণে সহকর্মীরা তাঁকে ডাকেন ‘অর্ডারের রাজা’ নামে। টানা দীর্ঘ শিফটের পরও তিনি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নিশ্চিত করেন, যাতে পরদিন আবার পুরো শক্তিতে কাজ করতে পারেন।

কঠোর মিতব্যয়িতা

ঝাংয়ের সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় রহস্য তাঁর মিতব্যয়ী জীবনযাপন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কোনো খরচ করেন না। বাইরে খাওয়া, বিনোদন, ভ্রমণ—কোনো কিছুতেই ব্যয় করেন না তিনি। এমনকি চন্দ্র নববর্ষেও তিনি বাড়ি যান না। তখন শহরে থেকে উচ্চমূল্যের অর্ডার ডেলিভারি করেন। এই কঠোর জীবনযাপন ও পরিশ্রম মিলিয়ে পাঁচ বছরে তাঁর মোট আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ ইউয়ান। প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে সঞ্চয় হয় ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান।

ঝাং জানান, তাঁর পরিবার এখনো জানে না যে তিনি ঋণ শোধ করে বড় অঙ্কের সঞ্চয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘একবার ব্যর্থ হয়েছি বলে থেমে থাকব না। ভবিষ্যতে আবার ব্যবসা শুরু করার পুঁজি হিসেবেই এ টাকা জমাচ্ছি।’

চীনের তরুণদের নতুন পেশা হিসেবে ডেলিভারি

অর্থনৈতিক ধাক্কা ও চাকরির বাজারের পরিবর্তনের মধ্যে চীনে ডেলিভারি পেশা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ঝাওপিনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশটিতে ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীর হার দুই বছরে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। আয়ও অনেক অফিসকর্মীর চেয়ে বেশি। বেইজিং বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে যেখানে সাধারণ একজন অফিসকর্মী মাসে গড়ে আয় করেন ৬ হাজার ইউয়ান, সেখানে ডেলিভারি ড্রাইভারদের গড় আয় মাসে ৭ হাজার ৩৫০ ইউয়ান পর্যন্ত। ব্যস্ত দিনে ঝাংয়ের মতো পরিশ্রমী ডেলিভারি কর্মীরা দিনে হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারেন।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে বিস্ময়কর সেই দুর্ঘটনাটি। সেদিন প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক স্কাইডাইভার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের টুলি এয়ারপোর্টের আকাশে ১৭ জন প্যারাস্যুটার একটি ‘সিক্সটিন-ওয়ে ফরমেশন জাম্পে’ অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন যখন বিমান থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর রিজার্ভ প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেলটি বিমানের উইং ফ্ল্যাপে আটকে যায়। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই রিজার্ভ প্যারাস্যুট খুলে যায় এবং বাতাসের হঠাৎ টানে পেছনের দিকে ছিটকে গিয়ে বিমানের ডানায় ধাক্কা খান এবং আটকে যান ওই স্কাইডাইভার। এতে বিমানের ডানায় ও স্ট্যাবিলাইজারে গুরুতর ক্ষতি হয়।

প্যারাস্যুটের দড়ি স্ট্যাবিলাইজারের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়ায় স্কাইডাইভার ঝুলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে পড়েন। অন্য প্যারাস্যুটারেরা জাম্প সম্পন্ন করলেও দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন। ঝুলে থাকা প্যারাস্যুটার জীবন বাঁচাতে তাঁর হুক নাইফ বের করে রিজার্ভ প্যারাস্যুটের ১১টি লাইন কেটে নিজেকে মুক্ত করেন। এরপর তিনি মূল প্যারাস্যুট খুলতে সক্ষম হন, যদিও রিজার্ভ প্যারাস্যুটের কিছু লাইন তখনো তাঁকে জড়িয়ে ছিল।

এদিকে পাইলট হঠাৎ বিমানটিকে ওপরের দিকে ঢলে যেতে এবং গতি কমে যেতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন বিমানটিতে ত্রুটি হয়েছে। পরে তাঁকে জানানো হয়, একজন স্কাইডাইভার বিমানের পেছনে ডানায় ঝুলে আছেন। এ অবস্থায় পাইলট জরুরি ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান এবং প্রয়োজনে নিজেও বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট বুঝতে পারেন, বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট-খাটো আঘাত নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেন ওই স্কাইডাইভার এবং পাইলটও ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর স্কাইডাইভারদের প্রতি এক সতর্কবার্তায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’ বলেছে—বিমানের দরজার কাছে প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেল সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য হুক নাইফ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ব্যুরো আরও জানিয়েছে, বিমানের ওজন ও ভারসাম্য নির্ণয় স্কাইডাইভিং অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে এসব কারণে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিয়ম শৃঙ্খলা বড়ই আজব জিনিস। যেমন, সময় মতো অফিসে উপস্থিত হওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সময়ের আগে যদি নিয়মিত নিয়ম নেমে অফিস করতে শুরু করেন, আর তাতে যদি অফিস আপত্তি জানায়, সেটা আবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়তে পারবে! অন্তত স্পেনের একটি আদালত তাই বলছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বা আগে অফিসে উপস্থিত হয়ে চাকরি হারিয়েছেন সে দেশের এক নারী কর্মী! চাকরি ফিরে পেতে তিনি গিয়েছিলেন আদালতে। আদালত জানিয়েছেন, তিনিই আসলে দোষ করেছেন!

স্পেনের আলিকান্তে অঞ্চলের একটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২২ বছর বয়সী এক নারী কর্মীর চাকরিচ্যুতি দেশটিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, তিনি নিয়মিত নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসে পৌঁছাতেন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এই আচরণ বরং কাজের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সেই নারী আদালতে মামলা করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে সময়ের আগে অফিসে হাজিরা দেওয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করার অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করে। তিনি এই বরখাস্তের বিরুদ্ধে ভ্যালেন্সিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতে তাঁর যুক্তি, অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে আগে আসা প্রমাণসাপেক্ষ না হওয়ায় গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে বরখাস্তের রায় শ্রম আইন অনুযায়ী বৈধ ধরা হয়েছে।

নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে অফিসে পৌঁছানো

নারী কর্মীর চাকরির চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, তাঁর কর্মঘণ্টা শুরু হবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতেন। এই অভ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এতে তাঁর সুপারভাইজারদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরক্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হতে থাকে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে সতর্ক করার জন্য একাধিকবার মৌখিকভাবে এবং লিখিত নোটিশ জারি করে। নোটিশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, কর্মীকে অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক সময় মেনে অফিসে উপস্থিত হতে হবে। তবে এসব সতর্কতা উপেক্ষা করে তিনি আগেভাগে অফিসে আসা চালিয়ে যান, যা কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সতর্কতার পরও অভ্যাস না বদলানো

প্রতিষ্ঠানের একাধিক সতর্কতা অগ্রাহ্য করে তিনি আরও ১৯ বার সময়ের আগে অফিসে এসে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি ডিউটি শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশনে লগইন করতেও উদ্যোগ নেন, যা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম বিরোধী।

প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ

আদালতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তি দিয়েছে, আগেভাগে আসাকে ইতিবাচক মনে হলেও বাস্তবে তা দলগত কাজে কোনো সুফল আনছিল না। প্রতিষ্ঠানটি জানায়—

  • ওই সময় সহকর্মীদের প্রস্তুতি ছাড়া তাঁকে কোনো কাজ দেওয়া যেত না।
  • কাজের প্রবাহ নির্দিষ্ট সমন্বয়ের ওপর নির্ভরশীল।
  • তাঁর আগাম উপস্থিতি কর্মপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করছিল।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আগাম কাজ শুরুর চেষ্টা দলগত সহযোগিতা ব্যাহত করছিল।

কর্মীর যুক্তি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি

কর্মী দাবি করেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে তাঁর বেশি সময় প্রয়োজন ছিল। তবে আদালতে এই দাবি প্রমাণ করার মতো কোনো নথি তিনি দিতে পারেননি। সময়ের আগে অফিসে আসার বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত একটি গাড়ি বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

বিচারকের সিদ্ধান্ত

বিচারক রায়ে বলেন, কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, নিয়মভঙ্গ এবং একই আচরণ বারবার পুনরাবৃত্তি স্প্যানিশ শ্রম আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করা আইনসম্মত।

শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আলবের্তো পায়া মন্তব্য করেন, এই রায় প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক

ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্প্যানিশ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দেরি করলে শাস্তি, আগে এলে বরখাস্ত। তাহলে কর্মীর মূল্যায়ন কোথায়!’ অন্যদিকে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলছেন, নির্ধারিত নিয়ম ভাঙা কোনোভাবেই প্রশংসনীয় নয়।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত