ডা. ফারজানা রহমান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মানসিক রোগীর হার ১৮ শতাংশ। গবেষকেরা বলছেন, জেনারেশন জেডের মানসিক স্বাস্থ্যের লড়াই ভিন্ন।
২০২১ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শহুরে ছেলেমেয়েদের ৬০ শতাংশের বেশি মাঝারি থেকে তীব্র মানসিক চাপে ভোগে। ব্যবস্থা না নিলে মানসিক চাপ থেকে অন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই গবেষণায়।
এই স্ট্রেস বা মানসিক চাপের ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিশোর-কিশোরীদের বড় অংশের স্থূলতা ও বিষণ্নতা বা অবসাদে ভোগা তারই বহিঃপ্রকাশ।
দেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন, পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের করা যৌথ এই গবেষণায় দেখা গেছে, সন্তানদের এ ধরনের মানসিক চাপের ব্যাপারে পরিবারে বা অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য আগের তুলনায় খারাপের দিকে যাচ্ছে। ১৯ শতাংশ নারী অর্থাৎ প্রতি ৫ জনে প্রায় ১ জন অস্থিরতা নয়তো অবসাদে ভুগছে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ নারী একবার হলেও নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে; বিশেষ করে টিন এজ মেয়েদের মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের এমন আচরণ ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৬৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার তথ্য এসেছে সমীক্ষায়। ৭৫ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয় ২৪ বছর বয়সের আগেই। অর্থাৎ তরুণ নারীরা এ ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণী নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। পুরুষের চেয়ে নারীর এই পরিসংখ্যান দ্বিগুণ।
২৬ শতাংশ তরুণী উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগেন। তরুণ পুরুষের তুলনায় এই হার ৩ গুণ।
তরুণদের মানসিক সমস্যা
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ডিপ্রেশন, উদ্বেগজনিত সমস্যা, স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, ওসিডি, মাদকাসক্তি, সম্পর্কের জটিলতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, ইন্টারনেট আসক্তি, খাওয়া ও ঘুমের সমস্যা বা ইটিং-স্লিপ ডিজঅর্ডার, সাইকো সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার, জেন্ডার ডিসফোরিয়া ইত্যাদি মানসিক সমস্যা বেশি দেখা যায়। ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি ৭ জন তরুণীর মধ্যে ১ জনের পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা পিটিএসডি রয়েছে। এদের মধ্যে ৭২ শতাংশের আত্মহত্যার প্রবণতার কারণে কাউন্সেলিং নিতে হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্বেগ, মানসিক চাপ বেড়ে চলার সবচেয়ে বড় কারণ হলো দীর্ঘক্ষণ সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটানো এবং স্ক্রিন টাইম। জ্যঁ টুইঞ্জ, মনোবিদ
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাঁদের বেশির ভাগ নিজেদের জীবনের কোনো ইতিবাচক অর্থ খুঁজে পান না। জীবন যে উপভোগ করা যায়, সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই তাঁদের। এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা এক দিনে গড়ে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্যয় করে।
মানসিক অবসাদের কিছু কারণ
» অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিশ্বায়ন ও আধুনিকায়ন
» যৌথ পরিবারে ভাঙন
» ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা
» মূল্যবোধের অবক্ষয়
» প্রযুক্তির অবাধ ও অসংযত ব্যবহার।
কোনো মানসিক রোগ হঠাৎ শুরু হয় না। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে। যেমন—
জেনেটিক কারণ: পরিবারের যে কারও মধ্যে মানসিক রোগের বা মাদকাসক্তির ইতিহাস থাকলে তা অন্য সদস্যেরও হতে পারে।
পরিবারের গঠন: পরিবারে সহিংসতা, দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন বা অবহেলা থাকলে ওই পরিবারে বেড়ে ওঠা সন্তানের মানসিক গঠন স্বাভাবিক হবে না। শুধু তা-ই নয়, মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, বৈষম্যমূলক আচরণ একজন মানুষের মধ্যে মানসিক রোগের বীজ বপন করে দেয়।
যৌন নিগ্রহ, নির্যাতন, বুলিং: যৌন নিগ্রহ বা নির্যাতনের ইতিহাস থাকলে মানসিক সমস্যা প্রায় অনিবার্য হয়ে ওঠে। স্কুল-কলেজে যারা বুলিং বা সহিংসতার শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যেও মানসিক সমস্যার হার বেশি। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মানসিক সমস্যায় ভোগা ৫৩ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিশুকালে ও পরিণত বয়সে শারীরিক যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের এক-তৃতীয়াংশ আজীবন প্রাণঘাতী ট্রমা থেকে বের হতে পারে না। এদের মধ্যে ১৬ শতাংশ পোস্টট্রমাটিক ডিজঅর্ডারে ভুগে থাকে। শিশু বয়সে ও বড় হয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ বা প্রতি ৩ জনে ১ জন নারী আত্মহননের পথ বেছে নেন। আর প্রতি ৫ জনে ১ জন বা ২২ শতাংশ নিজের কোনো না কোনো ক্ষতি করে বসেন।
সাইবার ও সম্পর্ক: পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ, সম্পর্কের জটিলতা, অসম প্রতিযোগিতা। নির্ভরযোগ্য বন্ধু না থাকা, জীবনযুদ্ধ, পেশাগত, শিক্ষাগত—সবক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার ভয় থেকে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
মানসিক চাপ: ক্রমাগত মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে বিভিন্ন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার যেমন আড্রেনালিন, নর-আড্রেনালিন, কর্টিসোল কিংবা গ্রোথ হরমোনের অস্বাভাবিক নিঃসরণ ঘটে; যাকে আমরা বলি ফাইট অর ফ্লাইট রিঅ্যাকশন। শারীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে সমস্যা হলে মানসিক রোগ হয়।
প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার, চটকদার বিজ্ঞাপনের কারণে অনেক তরুণ-তরুণী পণ্য কেনা থেকে শুরু করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতারিত বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। সেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, প্যানিক ডিজঅর্ডার, স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, আত্মহত্যার প্রবণতা, সম্পর্কের জটিলতা।
প্রতিকার
সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টদের কথা শুনে ভয় পাওয়া যাবে না। কারও সাময়িক সমস্যা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সে জন্য প্রফেশনাল কারও সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, কারও মানসিক সমস্যা মানেই সে মানসিক রোগী নয়। মানসিক রোগীরা সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে। তাই মানসিক রোগ বিষয়ে কোনো অবৈজ্ঞানিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করা যাবে না। সচেতন হতে হবে। পরিবারে সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, সুন্দর ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, মেধা ও মননের চর্চা আর মনের যত্ন নিলে মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাবে নতুন প্রজন্ম।
ডা. ফারজানা রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মানসিক রোগীর হার ১৮ শতাংশ। গবেষকেরা বলছেন, জেনারেশন জেডের মানসিক স্বাস্থ্যের লড়াই ভিন্ন।
২০২১ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শহুরে ছেলেমেয়েদের ৬০ শতাংশের বেশি মাঝারি থেকে তীব্র মানসিক চাপে ভোগে। ব্যবস্থা না নিলে মানসিক চাপ থেকে অন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই গবেষণায়।
এই স্ট্রেস বা মানসিক চাপের ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিশোর-কিশোরীদের বড় অংশের স্থূলতা ও বিষণ্নতা বা অবসাদে ভোগা তারই বহিঃপ্রকাশ।
দেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন, পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের করা যৌথ এই গবেষণায় দেখা গেছে, সন্তানদের এ ধরনের মানসিক চাপের ব্যাপারে পরিবারে বা অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম।
নারীর মানসিক স্বাস্থ্য আগের তুলনায় খারাপের দিকে যাচ্ছে। ১৯ শতাংশ নারী অর্থাৎ প্রতি ৫ জনে প্রায় ১ জন অস্থিরতা নয়তো অবসাদে ভুগছে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ নারী একবার হলেও নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে; বিশেষ করে টিন এজ মেয়েদের মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের এমন আচরণ ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৬৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার তথ্য এসেছে সমীক্ষায়। ৭৫ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয় ২৪ বছর বয়সের আগেই। অর্থাৎ তরুণ নারীরা এ ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণী নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। পুরুষের চেয়ে নারীর এই পরিসংখ্যান দ্বিগুণ।
২৬ শতাংশ তরুণী উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগেন। তরুণ পুরুষের তুলনায় এই হার ৩ গুণ।
তরুণদের মানসিক সমস্যা
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ডিপ্রেশন, উদ্বেগজনিত সমস্যা, স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, ওসিডি, মাদকাসক্তি, সম্পর্কের জটিলতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, ইন্টারনেট আসক্তি, খাওয়া ও ঘুমের সমস্যা বা ইটিং-স্লিপ ডিজঅর্ডার, সাইকো সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার, জেন্ডার ডিসফোরিয়া ইত্যাদি মানসিক সমস্যা বেশি দেখা যায়। ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি ৭ জন তরুণীর মধ্যে ১ জনের পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা পিটিএসডি রয়েছে। এদের মধ্যে ৭২ শতাংশের আত্মহত্যার প্রবণতার কারণে কাউন্সেলিং নিতে হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্বেগ, মানসিক চাপ বেড়ে চলার সবচেয়ে বড় কারণ হলো দীর্ঘক্ষণ সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটানো এবং স্ক্রিন টাইম। জ্যঁ টুইঞ্জ, মনোবিদ
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাঁদের বেশির ভাগ নিজেদের জীবনের কোনো ইতিবাচক অর্থ খুঁজে পান না। জীবন যে উপভোগ করা যায়, সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই তাঁদের। এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা এক দিনে গড়ে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্যয় করে।
মানসিক অবসাদের কিছু কারণ
» অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিশ্বায়ন ও আধুনিকায়ন
» যৌথ পরিবারে ভাঙন
» ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা
» মূল্যবোধের অবক্ষয়
» প্রযুক্তির অবাধ ও অসংযত ব্যবহার।
কোনো মানসিক রোগ হঠাৎ শুরু হয় না। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে। যেমন—
জেনেটিক কারণ: পরিবারের যে কারও মধ্যে মানসিক রোগের বা মাদকাসক্তির ইতিহাস থাকলে তা অন্য সদস্যেরও হতে পারে।
পরিবারের গঠন: পরিবারে সহিংসতা, দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন বা অবহেলা থাকলে ওই পরিবারে বেড়ে ওঠা সন্তানের মানসিক গঠন স্বাভাবিক হবে না। শুধু তা-ই নয়, মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, বৈষম্যমূলক আচরণ একজন মানুষের মধ্যে মানসিক রোগের বীজ বপন করে দেয়।
যৌন নিগ্রহ, নির্যাতন, বুলিং: যৌন নিগ্রহ বা নির্যাতনের ইতিহাস থাকলে মানসিক সমস্যা প্রায় অনিবার্য হয়ে ওঠে। স্কুল-কলেজে যারা বুলিং বা সহিংসতার শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যেও মানসিক সমস্যার হার বেশি। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মানসিক সমস্যায় ভোগা ৫৩ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিশুকালে ও পরিণত বয়সে শারীরিক যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের এক-তৃতীয়াংশ আজীবন প্রাণঘাতী ট্রমা থেকে বের হতে পারে না। এদের মধ্যে ১৬ শতাংশ পোস্টট্রমাটিক ডিজঅর্ডারে ভুগে থাকে। শিশু বয়সে ও বড় হয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ বা প্রতি ৩ জনে ১ জন নারী আত্মহননের পথ বেছে নেন। আর প্রতি ৫ জনে ১ জন বা ২২ শতাংশ নিজের কোনো না কোনো ক্ষতি করে বসেন।
সাইবার ও সম্পর্ক: পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ, সম্পর্কের জটিলতা, অসম প্রতিযোগিতা। নির্ভরযোগ্য বন্ধু না থাকা, জীবনযুদ্ধ, পেশাগত, শিক্ষাগত—সবক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার ভয় থেকে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
মানসিক চাপ: ক্রমাগত মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে বিভিন্ন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার যেমন আড্রেনালিন, নর-আড্রেনালিন, কর্টিসোল কিংবা গ্রোথ হরমোনের অস্বাভাবিক নিঃসরণ ঘটে; যাকে আমরা বলি ফাইট অর ফ্লাইট রিঅ্যাকশন। শারীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে সমস্যা হলে মানসিক রোগ হয়।
প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার, চটকদার বিজ্ঞাপনের কারণে অনেক তরুণ-তরুণী পণ্য কেনা থেকে শুরু করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতারিত বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। সেখান থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, প্যানিক ডিজঅর্ডার, স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, আত্মহত্যার প্রবণতা, সম্পর্কের জটিলতা।
প্রতিকার
সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টদের কথা শুনে ভয় পাওয়া যাবে না। কারও সাময়িক সমস্যা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সে জন্য প্রফেশনাল কারও সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, কারও মানসিক সমস্যা মানেই সে মানসিক রোগী নয়। মানসিক রোগীরা সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে। তাই মানসিক রোগ বিষয়ে কোনো অবৈজ্ঞানিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করা যাবে না। সচেতন হতে হবে। পরিবারে সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, সুন্দর ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, মেধা ও মননের চর্চা আর মনের যত্ন নিলে মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাবে নতুন প্রজন্ম।
ডা. ফারজানা রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
নড়াইল শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের খেলার মাঠের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে চারতলা ভবন। নাম ‘অন্তি কটেজ’। এ ভবনের ৩ হাজার বর্গফুট ছাদজুড়ে তনিমা আফরিনের বাগান। তিনতলায় স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া তনিমা।
৮ ঘণ্টা আগেঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ৮টা ৫০ মিনিট। শিক্ষার্থীসহ অন্যদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ছে না। কিন্তু এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছেন তিনি। সকাল ৯টায় ওই বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা, সেখানে তিনি প্রধান অতিথি।
৮ ঘণ্টা আগেদিন যত যাচ্ছে, গৃহকর্মী নির্যাতন যেন বাড়ছেই। বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৫ লাখ গৃহকর্মী কাজ করে। আর বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশের ৮০ শতাংশ গৃহকর্মী নারী।
৯ ঘণ্টা আগেহতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানী। কিন্তু হলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। নাম তাঁর ইডা টারবেল। উনিশ শতকে পৃথিবীময় তেল ব্যবসার ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত রকফেলারদের প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি। সেই প্রতিষ্ঠানের কালো দিক উন্মোচন করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ইডা।
৯ ঘণ্টা আগে