Ajker Patrika

ফেমিসাইড: নানা অজুহাতে নারীহত্যা

শাকেরা তাসনীম ইরা, ঢাকা
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০: ০২
ফেমিসাইড: নানা অজুহাতে নারীহত্যা

এক নারীকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে, পেটানো হচ্ছে লাঠি দিয়ে। একপর্যায়ে ইট দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে নিশ্চিত করা হলো মৃত্যু। এর সবটাই করছেন চার থেকে ছয়জন পুরুষ মিলে! এই পুরুষদের মধ্যে একজন নারীটির স্বামী এবং একজন দেবর। 

অতি সম্প্রতি অত্যন্ত রোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজাপুর জেলায়। আলকানি আদিবাসী গোষ্ঠীর এক নারীকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত থাকার অভিযোগে কয়েকজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করেছেন তাঁর স্বামী। সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পরিবারের সম্মান রক্ষায় পিটিয়ে ও পাথর ছুড়ে ওই নারীকে হত্যা করেছেন অভিযুক্তরা। 

বিশ্বব্যাপী এ ধরনের নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা যেমন নতুন নয়, তেমনি ইংরেজিতে ‘ফেমিসাইড’ শব্দটিও নতুন নয়। তবে নারীহত্যা সংক্রান্ত আলোচনায় ফেমিসাইডকে নতুন সংযোজনই বলা যায়। নারীবিদ্বেষের অন্যতম উদাহরণ এ শব্দটি। ১৮০১ সালে ইংল্যান্ডে নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বড়সড় আওয়াজ উঠলে প্রথম ফেমিসাইড শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তবে গত শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে শব্দটির ব্যবহার সর্বজনীন রূপ পায়। 

নারীবিদ্বেষ থেকে কোনো নারীকে হত্যা করাই হচ্ছে ফেমিসাইড। এটি মূলত লিঙ্গভিত্তিক বিদ্বেষমূলক অপরাধ। এ অপরাধ অনেক ধরনের হয়ে থাকে। সিরিয়াল ফেমিসাইড, অনার কিলিং, নারী গণহত্যা, জাতিগত নারী হত্যা, লেসবিয়ান হত্যা, ইন্টিমেট পার্টনার কিলিং ইত্যাদি হচ্ছে ফেমিসাইডের বিশ্বজুড়ে পরিচিত কিছু প্রকরণ। আর আমাদের দেশের ক্ষেত্রে খুবই সাধারণ উদাহরণ হতে পারে যৌতুক। উপমহাদেশের দেশগুলোতে প্রতি বছর কত নারী প্রাণ দিচ্ছে এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।

২০২১ সালের হিসাবে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ নারীহত্যার হার ছিল হন্ডুরাসে। সূত্র: স্ট্যাটিস্টাফেমিসাইড প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন এর ধরনগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা। প্রায় সব মহাদেশে ফেমিসাইডের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। ‘ইকোনমিক কমিশন ফর ল্যাটিন আমেরিকা অ্যান্ড ক্যারাবিয়ানে’র তথ্য মতে, ২০২১ সালে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে হন্ডুরাসে ছিল সর্বোচ্চ নারীহত্যার ঘটনা। ধারণা করা হয়, সে বছর মধ্য আমেরিকার এই দেশটিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল শুধু তাদের লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে! 

ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইড 
ফেমিসাইডের অন্য যে কোনো ধরনের চেয়ে প্রকট ইন্টিমেট পার্টনার কিলিং। অন্তত ৪৭ শতাংশ ফেমিসাইড ঘটে নারীর অন্তরঙ্গ সঙ্গী, যেমন— স্বামী, প্রেমিক কিংবা সাবেক স্বামী বা প্রেমিকের মাধ্যমে। অন্তরঙ্গ সঙ্গীর হাতে নারী হত্যাই ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইড বলে পরিচিত। গবেষণা জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ ফেমিসাইড ঘটে ইন্টিমেট পার্টনারের মাধ্যমে। সরকারি হিসাবে, ভারতে প্রতি বছর ৫ হাজার নারী তাঁর স্বামী কিংবা প্রেমিকের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। 

গবেষকেরা মনে করেন, ফেমিসাইডের পেছনে পুরুষের কঠোর পিতৃতান্ত্রিক এবং কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব কাজ করে। আরও হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশে যৌতুকের ব্যাপারটি বাদ দিলে, ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইডের শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে সিংহভাগই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। বিশ্লেষকেরা এই ব্যাপারটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, স্বাবলম্বী নারীরা সংসারে কিংবা প্রেমের সম্পর্কে সব বিষয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে পুরুষের সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চান না। ফলে পুরুষের মনে ধীরে ধীরে একধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ফেমিসাইড। 

ফেমিসাইডের ৪৭ ভাগ দখল করে রেখেছে ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইড। সূত্র: স্লাইডশেয়ার ডট নেটরেসিজম ফেমিসাইড 
রেসিজম ফেমিসাইড বা বর্ণবাদী নারী হত্যার হতাশাজনক ব্যাপার হলো, নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের সোচ্চার কণ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রে রেসিজম ফেমিসাইডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে খুন হন বহু কৃষ্ণাঙ্গ নারী। অনেক গবেষকের ধারণা, এ ধরনের রেসিস্ট ফেমিসাইডের মতো অপরাধের সঠিক বিচার হচ্ছে না বলে ক্রমাগত এটি বেড়ে চলেছে। 

সিরিয়াল ফেমিসাইড 
লিঙ্গভিত্তিক ধর্ষকামী নারীহত্যাকে বলা হয় সিরিয়াল ফেমিসাইড। চার্লস শোভরাজ (বিকিনি কিলার নামেই বেশি পরিচিত), জর্জ হেনার্ড, টনি কস্তা, কেন্ডাল ফ্রাংকোয়েস, ওয়াল্টার এলিস, জো বল, ডেনিস রাডার, রবার্ট ইয়েটসসহ আরও অসংখ্য দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার এ ধরনের ঘটিয়েছে। সিরিয়াল ফেমিসাইডের জন্য শিকার হিসেবে বেছে নেওয়া হয় নারীদের। যেখানে সিরিয়াল কিলিং–ই একটি ভয়াবহ ব্যাপার সেখানে সিরিয়াল ফেমিসাইড নারীর জন্য আরও বেশি আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে। 

লেসবিসাইড 
সমকামী নারীকে সমকামিতার অপরাধে হত্যা করা হলো লেসবিসাইড। তবে বিশ্বজুড়ে সমকামী নারীদের ওপর অত্যাচার ও হত্যার ইতিহাস অনেক পুরোনো। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্য, মধ্যযুগীয় ইউরোপ, এমনকি ফরাসি বিপ্লবের আগে পর্যন্ত ফ্রান্সেও সমকামী নারীদের হত্যা করা আইনসিদ্ধ ছিল। ‘উইচ হান্ট’ বা ডাইনি নিধনের সময় সবচেয়ে বেশি যে দুটি অভিযোগে নিরপরাধ নারীদের হত্যা করা হতো, তার একটি হচ্ছে ‘হেরেসি’ বা ধর্মদ্রোহিতা এবং অন্যটি সমকামিতা। যদিও বর্তমানে আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সমকামী হত্যা বন্ধ করা হয়েছে তবুও বিশ্বজুড়ে লেসবিসাইড ঘটে চলেছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, সমকামিতার প্রতি সহানুভূতিশীল দাবি করা উন্নত দেশগুলোতেও লেসবিসাইডের হার উল্লেখযোগ্য।

ধর্ষণ পরবর্তী ফেমিসাইড
প্রতিবছর বিশ্বে অর্ধকোটি নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ সালের হিসাবে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাতেই বছরে ৫ লাখের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ওই গবেষণায় আরও বলা হয়, অন্তত ৪০ ভাগ দক্ষিণ আফ্রিকান নারী তাঁদের জীবনের কোনো না কোনো সময় ধর্ষিত হবেনই! হতাশাজনক ব্যাপার হলো, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে নারী ধর্ষণের হার বেশি। ধর্ষণের এই উদ্বেগজনক হার বাংলাদেশেও ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারি হিসাবে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৭৩৭ টি। গত কয়েক বছরে এই হার আরও বেড়েছে।

‘কারেকটিভ রেপ’ নামে নতুন এক বিকৃত যৌনাচারের কথা সাম্প্রতিককালে প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে। মূলত সমকামী নারীদের সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে তাঁর মধ্যে ‘নারীত্ব’ দেওয়ার চেষ্টা কিংবা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ জাগানোর চেষ্টাই হচ্ছে সংশোধনমূলক ধর্ষণ বা কারেকটিভ রেপ! এর ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু। 

অনার কিলিং
সামাজিক সম্মান রক্ষার অজুহাতে কোনো পরিবারের সদস্যের হাতে নারী খুন হওয়ার ঘটনাকে বলে অনার কিলিং ফেমিসাইড। অনার কিলিংয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীকে তাঁর সতীত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে হত্যা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টিই প্রকট হয়।

ভারতে প্রতি বছর ঠিক কত মেয়ে অনার কিলিংয়ের শিকার হয় তার সঠিক হিসাব নেই। তবে ধারণা করা হয়, প্রায় ৯০০ মেয়ে প্রতি বছর এর শিকার। যেসব রাজ্যে এসব ঘটনা ঘটে তার মধ্যে হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশ উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানে সরকারি হিসাবে বছরে ১ হাজার ২০০ টির মতো অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে। 

যৌতুকের জন্য ফেমিসাইড
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে ইরান এবং অস্ট্রেলিয়াতেও প্রতি বছর ঘটছে যৌতুকের জন্য নারী হত্যার ঘটনা। তবে আশার কথা হচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশে এর সংখ্যাটা দিন দিন কমছে। 

গবেষক, বিশ্লেষক এবং নারীবাদীদের মতে, ফেমিসাইডের মূল কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এবং কর্তৃত্বপরায়ণ দৃষ্টিভঙ্গি। একদিকে নারীর অধিকার এবং ক্ষমতায়নের জন্য সোচ্চার হচ্ছে পুরুষদের একাংশ, অন্যদিকে নারীর ক্ষমতায়নকেই আবার নিজেদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ মনে করছে পুরুষদের আরেক অংশ। ফলে কারণে–অকারণে বেড়েই চলেছে নারীর প্রতি বিদ্বেষ। 

সত্তর দশকের নারীবাদী আন্দোলন। সংগৃহীতনারীহত্যা প্রসঙ্গটা দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদী আন্দোলনের সময়ও ইউরোপ–আমেরিকায় আলোচনায় ছিল। ফেমিসাইড শব্দটির আইনগত ও সমাজতাত্ত্বিক সংজ্ঞা দিয়েছিলেন ডায়না রাসেল। তিনি সে সংজ্ঞায় ‘উইমেন’ শব্দটি না লিখে ‘ফিমেল’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন মূলত পুরো স্ত্রীলিঙ্গ অর্থাৎ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক সব বয়সের নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। 

ফেমিসাইড সংক্রান্ত তাত্ত্বিক বিতর্কে নারীবাদীরা যে প্রশ্নটির মুখোমুখি হন সেটি হলো, হত্যা তো হত্যাই, সে ক্ষেত্রে ফেমিসাইডকে কেন আলাদা করে দেখা হবে? সত্তরের দশকের নারীবাদী আন্দোলনকারীরা মনে করেন, নারীহত্যা বা ফেমিসাইড হোমিসাইডের চেয়ে আলাদা। কেননা নারীহত্যা হচ্ছে সেই হত্যাকাণ্ড, যেখানে একজন নারী বা বালিকা বা নারী শিশুকে হত্যা করা হয় শুধু নারী বলে। আরও স্পষ্টভাবে বললে, নারীর লিঙ্গ পরিচয়ই এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। 

ডায়না রাসেলের সংজ্ঞা অনুযায়ী, নারীহত্যা হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে পরিচালিত যে কোনো সহিংসতা, যার মধ্যে আছে সকল প্রকার যৌন নির্যাতন, হোক সেটা কথা দিয়ে বা শারীরিকভাবে। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও নারীহত্যা আইন নিয়ে ভাবা উচিত বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কেননা ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌতুকের জন্য তাঁরা সহিংসতা বা হত্যার শিকার হন। অধিকাংশ ঘটনারই বিচার দূরের কথা, কোনো মামলাও হয় না। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারিক নিবন্ধন খাতার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে শুধু ঢাকায় ২০১৬ সালে ২৭ জন, ২০১৫ সালে ২৫ জন, ২০১৪ সালে ২২ জন, ২০১৩ সালে ৩০ জন, ২০১২ সালে ২৫ জন, ২০১১ সালে ২৬ জন এবং ২০১০ সালে ১৫ জন নারীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ কারণে ঢাকায় যে হারে নারীরা হত্যার শিকার হয়েছেন, সে অনুপাতে সাজার হার খুব কম। একই সূত্রের তথ্য আরও জানাচ্ছে, ২০০২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়া যৌতুকের জন্য হত্যা মামলার মাত্র ৩ শতাংশের সাজা হয়েছে। 

যেসব দেশে ফেমিসাইডের হার দিন দিন বাড়ছে সেসব দেশে এটি রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। তাই বাংলাদেশেও নারী হত্যার জন্য বিশেষ আইনে প্রণয়নের পাশাপাশি প্রচলিত আইনের সংশোধন এবং সংযোজন নিয়ে নতুন করে ভাবা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। 

সূত্র: 
ফেমিসাইড কানাডা ডট সিএ
ইউএনওডিসি
স্লাইডশেয়ার ডট নেট 
ইমতিয়াজ মাহমুদ, ফেমিসাইড বা নারীহত্যা প্রসঙ্গে, ফেমিসাইট ফ্যাক্টর ডট কম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
আসাদুজ্জামান, ঢাকায় যৌতুকের কারণে বছরে হত্যা ২২ নারী, প্রথম আলো, ২০ মে ২০১৯ 
পাকিস্তানে নারীকে পাথর নিক্ষেপ করে, মাথা থেঁতলে হত্যা, ডন, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলা রাবি শিক্ষকের অপসারণ চায় মহিলা পরিষদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) আলাদা বিবৃতিতে এই নিন্দা জানায় সংগঠনগুলো। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয়ে বেগম রোকেয়াকে নিয়ে ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য রাষ্ট্রীয় আইন এবং পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে সংগঠনগুলো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমাজ সংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ-কাফির’ আখ্যায়িত করে পোস্ট দেন। এর নিন্দা জানিয়ে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলা ও বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, যাঁর অবদান আমাদের শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি। তাঁকে নিয়ে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য কেবল নিন্দনীয়ই নয়, এটি নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, যিনি নিজেদের পেশার নৈতিকতা, শালীনতা এবং প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক হওয়ার কথা, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন।’

আসক মনে করে, ‘এ ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার সীমা ছাড়িয়ে সমাজে বিভাজন, নারীবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উসকে দেয়। যা মানবাধিকার মানদণ্ড, রাষ্ট্রীয় আইন এবং একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন। বেগম রোকেয়া শুধুই একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাঙালি নারীর মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি। তাঁকে অবমাননা করা মানে বাঙালির সামষ্টিক অগ্রযাত্রাকে আঘাত করা।’

নারী অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তাদের বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যারা ধর্মের অপব্যাখ্যার ওপর ভর করে নারীদের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক তাদেরই একজন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৫০ বছর আগে নারী মুক্তির যে স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, তাঁর আদর্শ এখনো প্রাসঙ্গিক হওয়ায় নারী প্রগতিবিরোধী একটি গোষ্ঠী তাঁকে ভয় পায়। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে যখন দেশের মেয়েরা সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন শিক্ষক নামধারী একজন ব্যক্তির এই অপপ্রচার, তার শিক্ষকতার যোগ্যতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।’

মহিলা পরিষদ মনে করে, ‘যখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রোকেয়া দিবস পালন করা হচ্ছে, রোকেয়া পদকের প্রবর্তন করা হয়েছে, তখন এ ধরনের অপপ্রচার রাষ্ট্রীয় নীতিবিরোধী কাজ। এ ধরনের অপচেষ্টা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার একটি ষড়যন্ত্র এবং দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপতৎপরতা। এই অপপ্রচার সুস্থ সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। সমাজের মধ্যে বসবাসকারী নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর এ ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্মিলিতভাবে এখনই প্রতিহত করা দরকার।’

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারীপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেগম রোকেয়া কখনোই ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না। বরং তিনি আজীবন অন্ধ কুসংস্কার, বৈষম্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ধর্মের ব্যবহার করে নারীকে অসম্মান-অপদস্থ করা, নারীর অধিকার খর্ব করা এবং নারীকে চার দেয়ালের অন্ধকারে আবদ্ধ করে রাখার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।’

নারীপক্ষের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কাউকে অসম্মান ও হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় শব্দ-বাক্য ব্যবহার করা অন্যায় এবং সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয়। রোকেয়াসহ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো মানুষের প্রতিই এমন বক্তব্য ও আচরণের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানায় নারীপক্ষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৪
ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার
প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে এক শ কোটির বেশি মানুষ যাদের বয়স ১৫ বছর কিংবা এর বেশি; তারা শৈশবে কোনো না কোনোভাবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ৬০ কোটির বেশি নারী তাঁর সঙ্গীর দ্বারা সহিসংতার শিকার হয়েছেন ২০২৩ সালে। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এমন নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি। বিখ্যাত চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এমন সহিংসতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এইডস এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগের সংক্রমণের হারও বেশি।

এই গবেষণার জন্য ২০২৩ সালের ‘গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজের’ (জিবিডি) তথ্য নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় যুক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনসহ ৬০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। ল্যানসেটের ওই গবেষণায় বলা হচ্ছে, জীবনসঙ্গীর ওপর চালানো নির্যাতন ও শিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম একটি উপায়। এটি সমাজে এবং ভুক্তভোগীদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলছে। এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব ভয়ংকর।

তবে এটি জানার পরও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

এই নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, এমন সহিসংতার কারণে ভুক্তভোগীরা যে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ও প্রতিবন্ধিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এর চিত্র উঠে এসেছে গবেষণায়। নারীরা যে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন এর অন্যতম আটটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ বিষণ্নতা ও উদ্বেগজনিত রোগ। সহিংসতার শিকার নারীরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে তাদের অনেকে প্রতিবন্ধিতা বরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া শিশুরা যারা এমন যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে, তারা মানসিক এবং এইডস, ডায়াবেটিসসহ ক্রনিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে জীবনসঙ্গীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বিশ্বজুড়ে ২০২৩ সালে মারা গেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছে। আবার নির্যাতনের কারণে এইডসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে কেউ কেউ। ল্যানসেট বলছে, ২০২৩ সালে ৩০ হাজার নারীকে হত্যা করেছেন তাঁর সঙ্গী। ২০২৩ সালে যৌন সহিংসতার কারণে মারা গেছে ২ লাখ ৯০ হাজার শিশু। এর একটি বড় অংশ আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া এইডস, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অনেকে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণও ছিল যৌন সহিংসতা।

দক্ষিণ এশিয়ায় এখন যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, যারা শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অনেকে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর নারীরা যাঁরা কিনা শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দুশ্চিন্তাজনিত রোগ বেড়েছে।

ল্যানসেটের এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের সহকারী অধ্যাপক লুইসা সোরিও ফ্লোর। তিনি বলেন, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে দীর্ঘ সময় ধরে যেভাবে সমাজ দেখে আসছে, নতুন এই গবেষণা সেটাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এমন ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কী, সেটাও সামনে এনেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাহমুদা পারভীন। নামটি এখনো খুব পরিচিত নয়। সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। তবে তাঁর আরেকটি পরিচয় আরও উজ্জ্বল; তিনি একজন মুহূর্ত-শিকারি, ফটোগ্রাফার। কোনো প্রশিক্ষণ নেই, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে গ্রুমিংও নয়; নিজের ভালোবাসা আর অনুভূতির টানে তিনি ধরে রাখতে শুরু করেছিলেন প্রিয় মুহূর্তগুলো।

মা, বাবা, ভাই, ভাবি এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে মাহমুদার পরিবার। সেখানে আর কেউ ছবি তোলে না; তাই ফটোগ্রাফি নিয়ে তাঁর যে জগৎ, সেটি পুরোপুরি নিজের হাতে গড়া। একাকী এই পথচলাই যেন তাঁকে আরও বিশেষ মনোযোগী করে তুলেছে, আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

শুরুটা খুব সাধারণ, তারপরও বিশেষ

‘সুন্দর মুহূর্ত ধরে রাখতে ভালো লাগে’—এমনই এক সাধারণ অনুভূতি থেকে মাহমুদা ছবি তুলতে শুরু করেন। সময়কে কেউ থামাতে পারে না। কিন্তু ছবি সেই সময়ের ছাপকে ধরে রাখতে পারে। এই টান থেকে তাঁর ফটোগ্রাফির যাত্রা।

প্রথম ক্যামেরা? ক্যামেরা বলা যাবে না। কারণ, এখন পর্যন্ত তিনি মোবাইল ফোন দিয়েই ছবি তোলেন। এই মোবাইল যেন তাঁর হাতে এক জাদুর বাক্স।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

স্বীকৃতির প্রথম ধাপ

মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা তাঁর ছবি প্রথমবার জায়গা করে নেয় ‘তরুণেরাই পরিবর্তনের প্রভাবক’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে। জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল প্রদর্শনী। সেখান থেকে তিনি পেয়েছেন একটি সার্টিফিকেট। এটি তাঁর কাছে শুধু একটি কাগজ নয়, নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার সাহস।

অনলাইন প্রতিযোগিতায় তাঁর সাফল্য রয়েছে। ‘প্রাণোচ্ছ্বাস আত্মসেবা নয়, মানবসেবা’-এর ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ফটোগ্রাফি কনটেস্টে তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন।

মাহমুদা পারভীন।
মাহমুদা পারভীন।

যেসব ছবি ছুঁয়ে যায়

প্রিয় ছবির কথা উঠলে তিনি স্মরণ করেন এই নভেম্বরের এক ভোরের স্মৃতি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়াশাঘেরা পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখেছিলেন, একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে কুয়াশা, ভোরের ঠান্ডা, নিস্তব্ধতা আর দুই বন্ধুর পথচলার মিষ্টি স্মৃতি। তিনি মোবাইল ফোনে মুহূর্তটাকে বন্দী করেছিলেন।

ভয়ের দিক

যে কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়, সেটির পেছনেও ভয় থাকে। মাহমুদার ভয় খুব সাধারণ, কিন্তু বাস্তব। তা হলো, সব সময় অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা যায় না। কেউ যদি বিরক্ত হয়! কেউ রাগ করলে? এসব মাঝে মাঝে তাঁকে থামিয়ে দেয়।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নারী ফটোগ্রাফার হওয়ার বাড়তি চ্যালেঞ্জ

বাইরের মানুষ বাজে কথা না বললেও অনেক জায়গায় শুনতে হয়, মেয়ে হয়ে ছবি তুলছেন? বিষয়টি সবাই ভালো চোখে দেখে না। তার ওপর বিশেষ চ্যালেঞ্জ হলো, বাড়ির লোকজন এখনো জানেই না, তিনি ছবি তোলেন! তাই নিজের ভালোবাসার কাজটুকু তাঁকে চুপিচুপি, নিজের মতো করে করতে হয়।

পাখির ছবি, প্রকৃতির ছবি

মাহমুদার ভালো লাগে ল্যান্ডস্কেপ, স্ট্রিট ফটোগ্রাফি ও পোর্ট্রেট। বারান্দায় এসে ডেকে ওঠা শালিক পাখিগুলো তাঁর ছবি তোলার নিয়মিত বিষয়। খেলা করতে করতে শালিকদের যে স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি, সেগুলো তিনি ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অভাববোধ করেন একজন গাইডের

মাহমুদার বড় আফসোস, কেউ নেই যিনি বলে দেবেন, কোন ছবি ভালো, কোনটা নয়, কোথায় ভুল, কীভাবে আরও ভালো হওয়া যায়। একজন অভিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে পথনির্দেশনা পেলে তিনি বিশ্বাস করেন, গল্প আরও গভীরভাবে বলতে পারবেন।

স্বপ্ন এখনো চলমান

একদিন চাকরি হবে, ব্যস্ততা তখন নিশ্চয় বাড়বে। কিন্তু ছবি তোলার নেশা কখনো হারিয়ে যাবে না। সুযোগ পেলে নিজের একটি ক্যামেরা কিনবেন; তখন আরও দক্ষভাবে, আরও গল্পময় ছবি তুলবেন। নতুন নতুন গল্পের সন্ধানে পথচলা অব্যাহত থাকবে— মাহমুদার স্বপ্ন আপাতত এতটুকুই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বিয়ের পর থেকে আমি নানা জুলুমের শিকার। বলতে গেলে, সব ধরনের জুলুম হয়েছে ১৪ বছর ধরে। আমাদের ৮ বছরের একটি সন্তান আছে। ইশারা-ইঙ্গিতে সাহায্য চায়। অর্থাৎ যৌতুক। সেটা পায় না বলে নানা কারণে রাগ প্রকাশ করে এবং চাপ দেয়। এর থেকে রক্ষা পেতে আমি কী করতে পারি?

নুসরাত জিনিয়া, মুন্সিগঞ্জ

উত্তর: দীর্ঘ ১৪ বছরের মানসিক-শারীরিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক চাপ এবং ইঙ্গিতে যৌতুক দাবি করা—এ সবই আইনের চোখে অপরাধ।

যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী

  • যৌতুক দাবি করা, গ্রহণ করা কিংবা সে জন্য চাপ দেওয়া—সবই দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • এর শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
  • ইঙ্গিতে বা আচরণে চাপ দেওয়া—এটিও অপরাধের মধ্যে গণ্য হয়।

এ ক্ষেত্রে যা করতে পারেন, তা হলো:

  • নথি বা প্রমাণ সংগ্রহ করুন
  • আপনার নিরাপত্তা সবার আগে। প্রমাণ বলতে—হুমকি বা দাবি-সম্পর্কিত অডিও বা ভিডিও
  • মেসেজ, কল রেকর্ড
  • প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের সাক্ষ্য
  • চিকিৎসার রিপোর্ট (যদি শারীরিক নির্যাতন থাকে)
  • ১৪ বছরের নির্যাতনের যেকোনো প্রমাণ
  • কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করবেন না।
  • স্থানীয় থানায় জিডি করুন। জিডি করলে—
  • আপনার নিরাপত্তার রেকর্ড তৈরি হবে
  • ভবিষ্যতে মামলা করলে আপনার বক্তব্য শক্তিশালী হবে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার সুযোগ যদি শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন থাকে—

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ শাস্তির বিধান আছে।

যৌতুক মামলা করতে চাইলে কী হয়

যৌতুক মামলায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করবে এবং প্রমাণ পেলে মামলাটি আদালতে যাবে।

সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য সুবিধা

  • স্বামীর পক্ষ থেকে যৌতুকের চাপ বা নির্যাতন আইনি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
  • তিনি দোষী প্রমাণিত হলে জরিমানা ও কারাদণ্ড হতে পারে।
  • এটি আপনাকে ভবিষ্যতের নির্যাতন থেকে আইনগত সুরক্ষা দেবে।
  • পরবর্তী সময়ে ভরণপোষণ বা হেফাজত বা ডিভোর্সের মামলা করলে আপনার আইনি অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে।
  • আপনার সন্তানের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ভরণপোষণ ও সন্তানের হেফাজতের অধিকার

আপনি পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণ মামলা এবং সন্তানের হেফাজত মামলা করতে পারবেন। ৮ বছর বয়সী সন্তানের হেফাজত সাধারণত মায়ের পক্ষেই যায়, যদিও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচারক সিদ্ধান্ত নেন।

মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয়, নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কি না? তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

নিরাপদ আশ্রয় বা জরুরি সহায়তা যদি আপনি বিপদের মুখে থাকেন—

  • ৯৯৯-এ কল করুন
  • জাতীয় মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের ১০৯ নম্বরে কল করতে পারেন।
  • স্থানীয় নারী সহায়তা কেন্দ্র বা আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করতে পারেন।

তবে মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয় নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আছে কি না?

তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

পরিস্থিতি অনুযায়ী মামলা করা আপনার প্রতি চলমান নির্যাতন এবং যৌতুকের চাপ থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে। তবে এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত