Ajker Patrika

গরমে আরাম পেতে

আলমগীর আলম
গরমে আরাম পেতে

এখন প্রচণ্ড গরম যাচ্ছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গরমই থাকে আমাদের প্রকৃতিতে। মাঝে মাঝে ঝোড়ো বাতাস স্বস্তি দিলেও গরম থাকে। এই গরমে আমরা বৃষ্টির অপেক্ষা করছি। প্রকৃতি শীতল হওয়ার একমাত্র উপায় বৃষ্টি। আমরা যারা শহরে বাস করি, গরমে তাদের অবস্থা আরও বেশি খারাপ; বিশেষ করে শহরে যানবাহন, এসির গরম হাওয়া, ধুলা, উঁচু ইমারত, গাছপালা কম থাকা, জলাধারের অভাব, খাল-নদীর সংখ্যা কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে প্রকৃতি শীতল হওয়া বেশ কঠিন।

দিনে তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে মানুষের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে; বিশেষ করে অতি গরমে ডিহাইড্রেশন হয়ে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় মিনারেল বের হয়ে যাচ্ছে, শরীরে ইলেট্রোলাইটজনিত সমস্যা হচ্ছে। শরীরে পানিশূন্যতা বেড়ে গেলে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর হিট স্ট্রোক হওয়ার ভয় তো আছেই।

গরমে শরীরে কী ঘটে
গরমে সবচেয়ে বড় যে কারণে মানুষ অসুস্থ হয়, তা হলো পানির ঘাটতি। এতে মাথা ঘোরা থেকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া কিংবা শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ফ্লুইড শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি ও চুলকানি দেখা দেওয়া, রক্তে পানির প্রবাহ সঠিক মাত্রায় সঞ্চালন না হওয়ায় অনেকের গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। অনেকের আবার রাতে ঘুমের সময় পেশিতে চাপ বাড়ে কিংবা চোখে ঝাপসা দৃষ্টি হয়ে যায়। গলা শুকিয়ে যায়। এ কারণে যাদের হৃদ্‌রোগ বা বক্ষব্যাধি রয়েছে, তাদের কষ্ট বেড়ে যায়। 

কী করলে গরম কম লাগবে
ঠান্ডা খাবার খেলে গরম কম অনুভূত হবে। শরীরে যদি পানির ঘাটতি না হয়, তাহলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে না। সে জন্য সকালের নাশতায় একটি স্মুদি খেতে পারেন। এই স্মুদি সহজে বাসায় তৈরি করা যায় এবং এটি খেতেও ভালো। ডায়াবেটিসের রোগীরাও এটা খেতে পারবেন। 

স্মুদির উপকরণ

  •  শসা ১টি
  • ৪ ভাগের ১ ভাগ আনারস
  • ১০টি পুদিনাপাতা
  • ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
  • ১ গ্লাস পানি
  • ১ টেবিল চামচ গুড় 

সব উপকরণ মিশিয়ে সকালে নাশতার সঙ্গে খেয়ে নিন। দেখবেন সারা দিন গরম খুব কম অনুভূত হবে; বিশেষ করে এই স্মুদি খেয়ে গরমের কারণে যে মিনারেলের ঘাটতি হয়, তা হবে না। এতে শরীরে পানির ঘাটতি থাকবে না। শসা শরীরে ডিহাইড্রেশন কমায়, আনারস মিনারেল ঘাটতি পূরণ করে, লেবু ভিটামিন সি পূরণ করে এবং একই সঙ্গে শরীর ডিটক্স রাখবে। আর পুদিনাপাতা পেট ঠান্ডা রাখার কাজ করবে। এই স্মুদি ডায়াবেটিসের রোগীরাও খেতে পারবেন, এতে বরং সুগার লেবেল কমবে। অনেক ক্ষেত্রে যাঁরা নিয়মিত ইনসুলিন নেন, তাঁদের এর মাত্রা কমে আসবে।

এই গরমে যা করবেন না
প্রচণ্ড তাপের কারণে অনেকের ঢক ঢক করে পানি পানের প্রবণতা থাকে। গরমে পানি বেশি পান করতে হবে ঠিক আছে, কিন্তু সেটাও পরিমিত হতে হবে; নয়তো কিডনিজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য পানি পানে সতর্ক থাকতে হবে। সারা দিনে পানি পানের আদর্শ পরিমাণ ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ লিটার এবং সেই পানি পান করতে হবে ধীরে ধীরে, একবারে দুই-তিন গ্লাসের বেশি পান করা উচিত নয়। প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর আধা গ্লাস করে পানি পান করলে শরীর পানিময় থাকবে, অতিরিক্ত পানির চাপ কিডনিতে পড়বে না, শরীরও ডিহাইড্রেশন হবে না।

এই গরমে যা খাবেন না

  • ঠান্ডা পানি: গরমে ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়। এতে ঠান্ডা আর গরমের কারণে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গলা বসে যাওয়া, কাশি কিংবা জ্বর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • চিনিযুক্ত খাবার: আইসক্রিম, কোমল পানীয়, চা ও কফি গরমে পান করা উচিত নয়। এগুলো শরীর পানিশূন্য করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।

গরমে নিজেকে ভালো রাখতে নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখবেন।

পরামর্শ: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত