
ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
১৮ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৮ দিন আগে