Ajker Patrika

‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’: জন্মদিনে মৃত্যুদিনের গান ও কবিতা

জাহীদ রেজা নূর
‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’: জন্মদিনে মৃত্যুদিনের গান ও কবিতা

জন্মদিনে মৃত্যুর কথা বলা কি ঠিক? জন্মদিনের মানেই তো নতুনের আবাহন। চির নতুনের ডাকে নতুন করে ভাবতে শেখা। সেই নতুনের মাঝে মৃত্যুর কথা কেন?

কারণ আর কিছুই নয়, মৃত্যু যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন গানের কাছে ফিরতে চাইছেন সুকুমার রায়। কবিতার কাছে ফিরতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথ। একটা পরম আনন্দ যেন থেকে যায় গান আর কবিতার ভেতর। এবং চলে যাওয়ার পথটাকে কোনোভাবেই তা অমসৃণ করে তোলে না।

সে কথাই বলব আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবসে।

সুকুমার রায়কে খুব ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। যখন বেঁচে ছিলেন সুকুমার, তখন বিভিন্ন মানুষের কাছে সুকুমারের প্রতিভার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো চিঠিতে কিংবা কোনো লেখায় তার প্রমাণ নেই। সুকুমারের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালে, মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। আজ থেকে ঠিক এক শ বছর আগে। ১৯৪০ সালে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশের সময় সুকুমার-পত্নী সুপ্রভা রায়ের অনুরোধে বইটির ভূমিকাস্বরূপ সুকুমারকে নিয়ে এই কথাগুলো লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ:

‘সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে, তা অতুলনীয়। তাঁর সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তাঁর ভাবসমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। তাঁর স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গাম্ভীর্য ছিল, সেইজন্যই তিনি তার বৈপরীত্ব্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিত্যে ব্যাঙ্গ রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়াছে, কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যচ্ছাস্যের বিশেষত্ব তার প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।’

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বিলেত যান, তখন ছাপাখানা নিয়ে আরও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে সেখানে ছিলেন সুকুমার রায়। সে যাত্রায় কবির সঙ্গে অনেক অন্তরঙ্গতা হয়েছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি। ভারতীয় সাহিত্য নিয়ে যে লেকচার দিয়েছিলেন তিনি, সেখানে অন্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে ১৯২১ সালের ২১ জুন সুকুমার রায় একটি চিঠি লিখেছিলেন বোন পুণ্যলতাকে। সে চিঠির কয়েকটি লাইন এ রকম, ‘পরশুদিন মি. পিয়ারসন তাঁর বাড়িতে আমার বেঙ্গলি লিটারেচার সম্বন্ধে একটি পেপার পড়বার নেমন্তন্ন করেছিলেন…সেখানে গিয়ে দেখি মি. অ্যান্ড মিসেস আরনল্ড, মি. অ্যান্ড মিসেস রটেনস্টাইন, ড. পিসি রায়, মিসেস সর্বাধিকারী প্রভৃতি অনেক পরিচিত। তাছাড়া কয়েকজন অচেনা সাহেব মেম উপস্থিত। শুধু তাই নয়, ঘরে ঢুকে দেখি রবিবাবু বসে আছেন। বুঝতেই পারছিস আমার কী অবস্থা। যা হোক, চোখ কান বুঁজে পড়ে ছিলাম। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে বইটই এনে ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করতে হয়েছিল। তা ছাড়া রবিবাবুর কয়েকটি কবিতা—(সুদূর, পরশ পাথর, সন্ধ্যা, কুঁড়ির ভিতর কাঁদিছে গন্ধ ইত্যাদি ট্রান্সলেট করেছিলাম। মি. ক্রানমার বিং (নর্থব্রুক সোসাইটির সেক্রেটারি, ‘আর উইজডম অব দি ইস্ট’ সিরিজের এডিটর) খুব খুশি।…আমাকে ধরেছেন আরো ট্রান্সলেট করতে, তিনি পাবলিশ করবেন।’

১৯১৩ সালের ২১ জুলাই লন্ডনের ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট সোসাইটিতে সুকুমার রায় ‘দ্য স্পিরিট অব রবীন্দ্রনাথ’ নামে যে প্রবন্ধটি পড়েন, সেটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ভারতীয়দের পক্ষে প্রথম পাবলিক ভাষণ। সে সময় ছয় মাস আমেরিকায় কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ শরীরে লন্ডনের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

সে বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথ সিটি অব লাহোর জাহাজে করে লন্ডন থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন। ২০ দিন ধরে চলেছিল সে জাহাজ। সে ভ্রমণে রবীন্দ্রনাথের পাশে ছিলেন কালীমোহন ঘোষ ও সুকুমার রায়।

সুকুমার রায়ের বিয়ে হয় সে বছরেই। বিলেত থেকে ফেরার পর।  যখন বিয়ে হয়, তখন কলকাতায় ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। জমিদারির কাজে শিলাইদহে ছিলেন। বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছেলের বিয়েতে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। সুকুমার রায় নিজেও কবিকে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।

কলকাতার বাইরে থাকার অজুহাত দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বলেছিলেন, বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু বিয়ের লগ্নের আগেই বাড়ির বাইরে শোরগোল উঠল কেন, তা দেখতে এসে অভ্যাগতদের মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। শত বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হাজির হয়েছেন সুকুমার রায়ের বিয়েতে। সুকুমার রায়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্নেহের টান ছিল এতটাই প্রবল।

স্বল্প আয়ু নিয়ে জন্মেছিলেন সুকুমার রায়। কিন্তু এই স্বল্প সময়টির প্রতিটি মুহূর্তই বুঝি সৃষ্টিশীল কাজে লাগিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর সাহিত্যকে তিনি যে কোথায় নিয়ে গেলেন, সে তো তাঁর ‘হ য ব র ল’ কিংবা ‘পাগলা দাশু’ পড়লেই টের পাওয়া যায়। আর জীবজন্তু নিয়ে তাঁর যে লেখাগুলো, তার তুলনা আজ অবধি কি আছে?

সুকুমার রায় দুরারোগ্য কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে সুকুমার যখন শেষ শয্যা নিলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ছত্রিশ বছর। যখন তিনি বুঝলেন, বাঁচার আর আশা নেই, তখন শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন—রবীন্দ্রনাথকে দেখতে চাই।

রবীন্দ্রনাথ এলেন সুকুমার রায়ের কাছে। রবীন্দ্রনাথকে দেখে সুকুমার রায় অনুরোধ করলেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’ গানটি করতে। রবীন্দ্রনাথ গাইলেন সে গান।

এরপর সুকুমার আরও একটি গান শুনতে চাইলেন। ‘দুঃখ এ নয়, সুখ নয়গো, গভীর শান্তি এ যে’ ছিল পরের গান। রবীন্দ্রনাথ এই গানটি শোনালেন দুবার। সুকুমার রায়ের হৃদয় ভরে উঠল। এর  কিছুদিন পরেই জীবনের পথচলা শেষ হলো সুকুমার রায়ের।

মৃত্যুর আগে রবীন্দ্রসংগীত
নিজের মৃত্যু বিষয়ে কুমার জয়ন্তনাথ রায়কে ১৯৩৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে। যদি মৃত্যুর পূর্বে হাসিমুখে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারি, তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করি না।’

প্রবাসীর ভাদ্র সংখ্যায় পাওয়া যাবে এই কথাগুলো।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভাগ্যে সে রকম মৃত্যু আসেনি। অস্ত্রোপচারের পর মারা গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে পেলেন খুব যন্ত্রণা। রবীন্দ্রনাথ অস্ত্রোপচারের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন, তাঁর এই অসুখ থেকে মুক্তি পেতে হলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ।

১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন তিনি কালিম্পঙে গেলেন, তখন সেখানেই তাঁর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল ইউরিনের গন্ডগোল আর প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যাই তাঁকে ২২শে শ্রাবণ বা ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে অকস্মাৎ জীবনের যবনিকা ঘটিয়েছিল।

গোটা জীবনই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পার করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম যে বড় অসুখ হয়েছিল তাঁর, সেটার নাম ছিল ইরিসিপেলাস।

রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হলেও চাইতেন না কেউ তাঁর ঘরে থাকুক। নিজ দেহে কারও হাতের স্পর্শ পছন্দ করতেন না। তিনি বলেছিলেন একবার, ‘দৈহিক সেবা নিতান্ত অবান্তর। আসল জিনিস হচ্ছে স্নিগ্ধ সঙ্গ। যতক্ষণ পাই, ততক্ষণ লাভ।’

১৯৪১ সালের ১৩ মে। কিছুদিন আগেই পালিত হয়েছে ২৫শে বৈশাখ। অসুস্থ শরীরেই এদিন এল কবিতার ডাক। মাথায় প্রবল যন্ত্রণা, গায়ে জ্বর। তারই মধ্যে বলে উঠলেন, ‘রূপনারাণের কূলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়।’

বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিলেন। একটু পর কথা খুঁজে পেয়ে বললেন, ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ, চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।’

বড় ক্লান্ত তিনি। এটুকু বলে ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে বললেন, ‘বাকিটা লেখ।’ রানী চন্দ লিখে নিলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা…।’

লেখালেখি চলছে, কিন্তু শরীর ভেঙে পড়ছে। শান্তিনিকেতনে ছিলেন। ২৫ জুলাই বা ৯ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথকে আসতে হলো শান্তিনিকেতন ছেড়ে। কলকাতার সেই বাড়িতে, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন।

২৭ জুলাই ভোরেই কবিতা ভর করল তাঁকে। রানী চন্দকে বললেন, ‘লিখে রাখ।’

`প্রথম দিনের সূর্য

প্রশ্ন করেছিল

সত্তার নতুন আবির্ভাবে

কে তুমি?

মেলে নি উত্তর।’

একটু বলেন, একটু থামেন।

‘বৎসর বৎসর চলে গেল

দিবসের শেষ সূর্য

শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল

পশ্চিম সাগর তীরে

নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়

কে তুমি?

পেল না উত্তর।’

এরপর রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত রানী চন্দ, রানী মহলানবীশ, অমিতা ঠাকুর, নন্দিনী কৃপালনীকে দেখলেন শয্যাপাশে। বললেন, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ কবিতাটি শুনতে চাই।

নিজেই বললেন, ‘দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।’

৩০ জুলাই রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তাঁর শেষ কবিতা—

তোমার সৃষ্টির পথ

রেখেছ আকীর্ণ করি

বিচিত্র ছলনা জালে

হে ছলনাময়ী—

শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে

আপন ভাণ্ডারে…।’

কবিতায় কিছু গোলমাল আছে, পরে ঠিক করে নেবেন বলে জানালেন।

সেদিনই অপারেশন হলো রবীন্দ্রনাথের শরীরে। ডা. লোলিতমোহন ব্যানার্জি করলেন অপারেশন। কিন্তু অপারেশনের পর শরীর আর ভালো হয়নি। ৩ আগস্ট থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ৫ আগস্ট থেকে জ্ঞান ছিল না কবির।

এই মর্ত্যজীবনে রবীন্দ্রনাথের শেষ খাবার ছিল দেড় আউন্স আখের রস আর আধ আউন্স বার্লি। আখের রস খেয়েছিলেন সন্ধ্যা ছটায়, আর বার্লি খেয়েছিলেন রাত নটায়।

২২ শ্রাবণ দুপুর দুটোর দিকে রবীন্দ্রনাথের পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে লাগল। হৃদস্পন্দন থেমে যেতে থাকল। ১২টা ১০ মিনিটে থেমে গেল সব।

পৃথিবী যেন বিড়বিড় করে উঠল,

‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে

তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত