কঠিন চ্যালেঞ্জে খোমেনিদের কর্তৃত্ব, ঘনীভূত পরমাণু সংকট

জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯: ০০
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ৩৯

ব্যাপক সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ, নাগরিকদের ওপর নির্দয় আক্রমণ ও অভিযান এবং রাশিয়ার কাছে অস্ত্র সরবরাহ—সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটি কয়েক দশকের মধ্যে বাকি বিশ্ব থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। এর ফাঁকে ঘনীভূত হচ্ছে পরমাণু সংকট। 

২০০৯ সালের সবুজ আন্দোলনের পর যত বিক্ষোভ হয়েছে তার মধ্যে এবারই খোমেনিদের কর্তৃত্ব সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মানুষ এখন বাধ্যতামূলক হিজাবকে সরকারের দুর্বৃত্তায়ন এবং বৃহত্তর নিপীড়নের প্রতীক হিসেবে দেখছে। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। 

ইরান সরকার প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছে অত্যন্ত কঠোর। এরই মধ্যে কয়েক ডজন শিশুসহ শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। প্রতিবাদকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। বহু মানুষ জেলে, নির্যাতনের শিকার। যদিও শাসকেরা এটিকে বিদেশি চক্রান্ত হিসেবেই চিত্রিত করছে। 

ইরানের তরুণ বিক্ষোভকারীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো বয়স্ক মধ্যবিত্ত নাগরিকদের পক্ষে টানা। তাঁদের অনেকেই অবশ্য তরুণদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু আমূল পরিবর্তনকে ভয় পান। 

এই শ্রেণির প্রত্যক্ষ সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া ইরানে সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। আর এই সমর্থনও আসবে না যদি তরুণদের মধ্য থেকে তেমন কোনো নেতা দাঁড়িয়ে না যায়। সরকার নির্যাতনকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে নিলেও সমাজের অভ্যন্তরের ক্রোধ বেশি দিন দমিয়ে রাখতে পারবে না। 

এদিকে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে স্থগিত ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার আলোচনা এখন সম্পূর্ণ স্থবির। তেহরানের পারমাণবিক সক্ষমতা গত কয়েক বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা প্রসারিত হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পর্যবেক্ষণের সুযোগ হ্রাস করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে এড়ানোর চেষ্টা করে আসছে—এমন সময় সম্ভবত আসন্ন যখন তাদের ইরানের পারমাণবিক বোমা অর্জনের সম্ভাবনাকে মেনে নিতে হবে অথবা তা প্রতিরোধ করতে শক্তি প্রয়োগ—এর মধ্যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে।

 ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে—সেটি হতে পারে একটি সংকট মুহূর্ত। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বিস্তার রোধে বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়াকে সাহায্য করার জন্য এই বিধিনিষেধগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। 

পশ্চিমা নেতাদের একমাত্র বিকল্প হলো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত করা। এটি সম্ভবত ইরানকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে প্ররোচিত করবে। এটি হয়ে উঠবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের জন্য যুদ্ধের বৈধতা নিশ্চিত করা। 

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর তাদের যে কোনো পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলে ঝুঁকি তৈরি করবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ইরান ইন্টারন্যাশনাল’ স্যাটেলাইট চ্যানেলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে সৌদি আরব। এ নিয়ে রিয়াদের ওপর খেপেছে তেহরান। এই টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানে বিক্ষোভ উসকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এটি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বহুমুখী দ্বন্দ্বে ঘি ঢালছে। তেহরানের সঙ্গে সংঘাতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়া মানে ইসরায়েলে নতুন করে উগ্র ডানপন্থী সরকারের পালে হাওয়া দেওয়া। 

এ পরিস্থিতি ইরানের পরমাণু সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে বিক্ষোভকারীরা লাভবান হবে—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং বিপদগ্রস্ত সরকার ঘরের সমস্যা মেটানোর জন্য আরও কঠোর হস্তে দমনের নীতি নিতে পারে। 

এদিকে গত ২৭ জানুয়ারি তেহরানে আজারবাইজানেরে দূতাবাসে হামলা ও এক রক্ষীকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাকু এবং ইস্তাম্বুলের সঙ্গে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইরান অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। সেই সঙ্গে তেহরানকে কঠোর বার্তা দিয়েছে ইস্তাম্বুল। 

সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সাধারণ জনগণের মধ্যে আজারবাইজান বিরোধী মনোভাব বাড়ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্কের কারণে সীমান্ত ঘেঁষা বাকুকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখে ইরান। ইসরায়েল আবার আজারবাইজানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। অন্যদিকে আজারবাইজান আবার তেহরানের ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র। 

ইরানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আজারবাইজানি বসবাস করেন, তাঁদের ভাষা তুর্কি। এই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার অভিযোগ করে তেহরান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত