অনলাইন ডেস্ক
বিগত ১০ বছর ভারত ছিল পরীক্ষাগারের মতো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংসদীয় গণতন্ত্রের এই দেশে সংবাদমাধ্যম প্রধানত বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত এবং বৈচিত্র্যময় ধরনের। কিন্তু বিগত এক দশকে গণমাধ্যমকে বশ করতে রাষ্ট্র কতটা নাছোড়বান্দা, তা সমাজবিজ্ঞানীরা যাচাই করে দেখেছেন। তবে গণমাধ্যমের এই বশীকরণে রাষ্ট্রের পুরো দশক লাগেনি। বিজেপির নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আসার ৯ বছর পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের একমাত্র ইংরেজি সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি কিনে নেয় অন্যতম শীর্ষ ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি; যিনি মোদির বেশ ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত।
অতীতে বিজেপি সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিল এনডিটিভি। এ ক্ষেত্রে সমমানের আর কোনো গণমাধ্যমের নাম তেমন পাওয়া যায় না। কারণ, মুকেশ আম্বানিসহ অন্য ভারতীয় ধনকুবেরদের পরিচালিত সংবাদপত্র ও সম্প্রচারমাধ্যমগুলো বহু আগে থেকেই এত বেশি বিজেপি ও মোদি ঘেঁষা ছিল যে, মানুষ সেগুলোকে ‘গোদি মিডিয়া’ অর্থাৎ সরকারের ‘কোলে উঠে বসা’ সংবাদমাধ্যম বলত।
ভারতে ইংরেজি সম্প্রচার ও সংবাদপত্রগুলোর পাঠক সংখ্যার সঙ্গে প্রভাবও খুব কম। ফলে তাঁরা সরকারের গুণকীর্তন করলেও সেটি খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। বিপরীতে তাদের প্রতিযোগী হিন্দিভাষী চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমগুলো উৎসাহী হয়ে সরকারের পক্ষে গুছিয়ে বক্তব্য তুলে ধরছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া অসংখ্যা ভিডিওতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
এসব ক্লিপে দেখা যায়, সাক্ষাৎকারের সময় মোদিকে কঠিন প্রশ্ন করার পরিবর্তে বেশ তোষামোদি প্রশ্ন করা হয়। যেমন, তিনি কীভাবে আম খান কিংবা নিজের সুখ-দুখ শেয়ার করার জন্য ভালো বন্ধু আছে কি না, অথবা তাঁর অসাধারণ কর্মস্পৃহা কোত্থেকে আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। যেসব প্রশ্ন আসলে টেইলর সুইফটের মতো সেলিব্রেটিরা শুনে থাকেন। গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক নেতা বা প্রধানমন্ত্রীদের জন্য এমন তুলতুলে প্রশ্ন মানানসই নয়।
লোকসভা নির্বাচনের পুরো সময়ে বেছে বেছে ডজনখানেক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোদি। ওই সাংবাদিকদের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, তারা মিসরের ফেরাউনের গোলাম, তাঁর সামনে বসে আছেন। কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলার বদলে মোদিকে তৈলমর্দনে ব্যস্ত ছিলেন সাংবাদিক নামধারী এসব তোষামোদকারী।
এসব সাংবাদিকের এমন সব প্রশ্ন করেছেন, যেন তাঁরা মোদির ‘অতিমানবীয় সত্তাকে’ তুলে ধরছেন। এসব সাক্ষাৎকারে মোদির নিজের ঢোল পেটানোর চেষ্টা করতে হয়নি। কারণ, সে কাজটি সাংবাদিকেরাই করেছেন—যেন মোদি মানুষের ঘরে জন্ম নেননি, তাঁর অতিমানবীয় শক্তির উৎস তাঁর নশ্বর দেহ নয় এবং তিনি কেবল ভগবানের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছেন—ইত্যাদি বিষয়গুলো।
কিন্তু যেই একজন নারী সাংবাদিক স্তুতির লাইন ছেড়ে মোদিকে সামান্য হলেও চেপে ধরার চেষ্টা করলেন তখনই বাধল গোল। মোদির কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁর সরকার বিরোধীদের দমনে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করছে বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ তুলছেন, সে বিষয়ে তাঁর বক্তব্য কী? জবাবে মোদি বলেন, তিনি (সাংবাদিক) কেন এ ধরনের ফালতু প্রশ্ন করলেন? একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কী প্রশ্ন করতে হয় তা কী তিনি জানেন না? কিংবা যারা এসব অভিযোগ করেছে, তাদের কাছে সেগুলোর প্রমাণ না চেয়ে তিনি কেন এসব অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর সামনে করছেন?
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মোদির দূরত্ব নতুন নয়। ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গার সময় মোদি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে সময় বিবিসির এক প্রামাণ্যচিত্রে মোদির কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, তাঁর চোখের সামনে যা ঘটেছে, তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে কি না? তাঁর একটি মাত্র আক্ষেপই ছিল, গণমাধ্যমের সামনে কীভাবে হাজির হতে হয় তা তিনি জানতেন না।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোদি বাঁচার কৌশল পেয়ে যান। আর তা হলো—গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়া। মোদি সব সময়ই দেশের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমকে বেছে নেন। আর বাকি সংবাদমাধ্যম মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বুঝিয়ে দেন, সমালোচনামূলক কোনো প্রচার-প্রকাশনা সহ্য করা হবে না। তিনি স্পষ্ট করে দেন, ভিন্নমত পোষণ করলে শাস্তি পেতে হবে।
সংবাদমাধ্যমগুলোকে যেহেতু সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর ব্যাপক নির্ভর করতে হয় এবং কেউই এনডিটিভির ভাগ্যবরণ করতে চায় না; তাই তারা সবাই জোট বেঁধে সরকারের স্তুতিতে মেতে উঠে। অথচ একই সম্পাদক ও উপস্থাপকরা মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসের জোট সরকারের দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় হেডলাইন করেছে। তাঁরাই আজ বিরোধী নিপীড়নকারী গৃহপালিত হিসেবে সমসুরে চেঁচাচ্ছেন।
আর যেসব সংবাদমাধ্যম এদের সঙ্গে সুর মেলায়নি, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যেমন বিবিসির কার্যালয়ে আয়কর কর্তৃপক্ষ হানা দিয়েছে। হোয়াইট হাউসে মোদিকে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকী। এর জন্য তাঁকে বড় মাশুল গুণতে হয়, কয়েক দিন পর বিজেপির অনলাইন ট্রল বাহিনী তাঁকে অনলাইনে ব্যাপক হয়রানি করে।
সংশয়প্রবণ সাংবাদিক ও লেখকদের জন্য ভারত কখনই নিরাপদ ছিল না। বিগত ১০ বছরে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ ২০১৭ সালে ফিল্মি কায়দায় খুন হন। তিনি কন্নড় ভাষার ট্যাবলয়েডের লেখক ও সম্পাদক ছিলেন। সেক্যুলার এই বুদ্ধিজীবী কেবল একা নন, তাঁরও আগে আরও তিন বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। তাঁরা হলেন নরেন্দ্র দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে ও এমএম কালবুর্গী।
ভারতে সাংবাদিকদের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ মধ্যপ্রদেশের সরকারনিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা কেলেঙ্কারির ঘটনা তার বড় উদাহরণ হতে পারে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ও এর সাক্ষীসহ প্রায় ২ ডজন মানুষ অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ২০১৫ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন এক সাংবাদিক। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থাগুলোর পক্ষে ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করার আগে দুবার চিন্তা করা মোটেও অযৌক্তিক নয়।
কিন্তু তাই বলে এই উপসংহার টানা ভুল হবে যে, কেবল ভয়ের কারণেই গণমাধ্যমগুলো সরকারের পক্ষে কথা বলে। কিছু কিছু গণমাধ্যম আছে সরকারি বয়ান তোতাপাখির মতো আওড়ায়। তাঁদের ভয় পেতে হয় না, এরা এমনিতেই বাকবাকুম। টাইমস নাউ, রিপাবলিক টিভি, ইন্ডিয়া টুডে টিভি এবং অন্য সংবাদভিত্তিক চ্যানেলগুলো এর উদারহণ। এরা এমনভাবে সরকারি বয়ান তুলে ধরে যে তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় মোদির একনিষ্ঠ ভক্ত তাঁরা।
কৃষক বিক্ষোভ, বিদেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা, ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গা, গোহত্যা, অ-নথিভুক্ত মুসলিম, হিজাব বিতর্ক এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিষয়ে এসব গণমাধ্যম যে ‘বিতর্কের’ আয়োজন করেছিল, তা খুবই জনবিচ্ছিন্ন ছিল। সংখ্যালঘুদের দৃষ্টিভঙ্গি সেখানে ঠাঁই পায়নি। এর মধ্যে এটিই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে এসব সংবাদমাধ্যমের উপস্থাপকেরা সরকারের হিন্দুত্ব প্রকল্পের স্বেচ্ছা সৈনিক হিসেবে হাজির হয়েছিল। এই অবস্থায় মোদি যদি শিকারি হয়ে থাকেন, তাহলে ভারতের নিউজ করপোরেশনগুলো সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে।
বিগত ১০ বছর ভারত ছিল পরীক্ষাগারের মতো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংসদীয় গণতন্ত্রের এই দেশে সংবাদমাধ্যম প্রধানত বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত এবং বৈচিত্র্যময় ধরনের। কিন্তু বিগত এক দশকে গণমাধ্যমকে বশ করতে রাষ্ট্র কতটা নাছোড়বান্দা, তা সমাজবিজ্ঞানীরা যাচাই করে দেখেছেন। তবে গণমাধ্যমের এই বশীকরণে রাষ্ট্রের পুরো দশক লাগেনি। বিজেপির নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আসার ৯ বছর পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের একমাত্র ইংরেজি সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি কিনে নেয় অন্যতম শীর্ষ ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি; যিনি মোদির বেশ ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত।
অতীতে বিজেপি সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিল এনডিটিভি। এ ক্ষেত্রে সমমানের আর কোনো গণমাধ্যমের নাম তেমন পাওয়া যায় না। কারণ, মুকেশ আম্বানিসহ অন্য ভারতীয় ধনকুবেরদের পরিচালিত সংবাদপত্র ও সম্প্রচারমাধ্যমগুলো বহু আগে থেকেই এত বেশি বিজেপি ও মোদি ঘেঁষা ছিল যে, মানুষ সেগুলোকে ‘গোদি মিডিয়া’ অর্থাৎ সরকারের ‘কোলে উঠে বসা’ সংবাদমাধ্যম বলত।
ভারতে ইংরেজি সম্প্রচার ও সংবাদপত্রগুলোর পাঠক সংখ্যার সঙ্গে প্রভাবও খুব কম। ফলে তাঁরা সরকারের গুণকীর্তন করলেও সেটি খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। বিপরীতে তাদের প্রতিযোগী হিন্দিভাষী চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমগুলো উৎসাহী হয়ে সরকারের পক্ষে গুছিয়ে বক্তব্য তুলে ধরছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া অসংখ্যা ভিডিওতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
এসব ক্লিপে দেখা যায়, সাক্ষাৎকারের সময় মোদিকে কঠিন প্রশ্ন করার পরিবর্তে বেশ তোষামোদি প্রশ্ন করা হয়। যেমন, তিনি কীভাবে আম খান কিংবা নিজের সুখ-দুখ শেয়ার করার জন্য ভালো বন্ধু আছে কি না, অথবা তাঁর অসাধারণ কর্মস্পৃহা কোত্থেকে আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। যেসব প্রশ্ন আসলে টেইলর সুইফটের মতো সেলিব্রেটিরা শুনে থাকেন। গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক নেতা বা প্রধানমন্ত্রীদের জন্য এমন তুলতুলে প্রশ্ন মানানসই নয়।
লোকসভা নির্বাচনের পুরো সময়ে বেছে বেছে ডজনখানেক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোদি। ওই সাংবাদিকদের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, তারা মিসরের ফেরাউনের গোলাম, তাঁর সামনে বসে আছেন। কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলার বদলে মোদিকে তৈলমর্দনে ব্যস্ত ছিলেন সাংবাদিক নামধারী এসব তোষামোদকারী।
এসব সাংবাদিকের এমন সব প্রশ্ন করেছেন, যেন তাঁরা মোদির ‘অতিমানবীয় সত্তাকে’ তুলে ধরছেন। এসব সাক্ষাৎকারে মোদির নিজের ঢোল পেটানোর চেষ্টা করতে হয়নি। কারণ, সে কাজটি সাংবাদিকেরাই করেছেন—যেন মোদি মানুষের ঘরে জন্ম নেননি, তাঁর অতিমানবীয় শক্তির উৎস তাঁর নশ্বর দেহ নয় এবং তিনি কেবল ভগবানের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছেন—ইত্যাদি বিষয়গুলো।
কিন্তু যেই একজন নারী সাংবাদিক স্তুতির লাইন ছেড়ে মোদিকে সামান্য হলেও চেপে ধরার চেষ্টা করলেন তখনই বাধল গোল। মোদির কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁর সরকার বিরোধীদের দমনে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করছে বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ তুলছেন, সে বিষয়ে তাঁর বক্তব্য কী? জবাবে মোদি বলেন, তিনি (সাংবাদিক) কেন এ ধরনের ফালতু প্রশ্ন করলেন? একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কী প্রশ্ন করতে হয় তা কী তিনি জানেন না? কিংবা যারা এসব অভিযোগ করেছে, তাদের কাছে সেগুলোর প্রমাণ না চেয়ে তিনি কেন এসব অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর সামনে করছেন?
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মোদির দূরত্ব নতুন নয়। ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গার সময় মোদি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে সময় বিবিসির এক প্রামাণ্যচিত্রে মোদির কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, তাঁর চোখের সামনে যা ঘটেছে, তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে কি না? তাঁর একটি মাত্র আক্ষেপই ছিল, গণমাধ্যমের সামনে কীভাবে হাজির হতে হয় তা তিনি জানতেন না।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোদি বাঁচার কৌশল পেয়ে যান। আর তা হলো—গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়া। মোদি সব সময়ই দেশের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমকে বেছে নেন। আর বাকি সংবাদমাধ্যম মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বুঝিয়ে দেন, সমালোচনামূলক কোনো প্রচার-প্রকাশনা সহ্য করা হবে না। তিনি স্পষ্ট করে দেন, ভিন্নমত পোষণ করলে শাস্তি পেতে হবে।
সংবাদমাধ্যমগুলোকে যেহেতু সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর ব্যাপক নির্ভর করতে হয় এবং কেউই এনডিটিভির ভাগ্যবরণ করতে চায় না; তাই তারা সবাই জোট বেঁধে সরকারের স্তুতিতে মেতে উঠে। অথচ একই সম্পাদক ও উপস্থাপকরা মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসের জোট সরকারের দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় হেডলাইন করেছে। তাঁরাই আজ বিরোধী নিপীড়নকারী গৃহপালিত হিসেবে সমসুরে চেঁচাচ্ছেন।
আর যেসব সংবাদমাধ্যম এদের সঙ্গে সুর মেলায়নি, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যেমন বিবিসির কার্যালয়ে আয়কর কর্তৃপক্ষ হানা দিয়েছে। হোয়াইট হাউসে মোদিকে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকী। এর জন্য তাঁকে বড় মাশুল গুণতে হয়, কয়েক দিন পর বিজেপির অনলাইন ট্রল বাহিনী তাঁকে অনলাইনে ব্যাপক হয়রানি করে।
সংশয়প্রবণ সাংবাদিক ও লেখকদের জন্য ভারত কখনই নিরাপদ ছিল না। বিগত ১০ বছরে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ ২০১৭ সালে ফিল্মি কায়দায় খুন হন। তিনি কন্নড় ভাষার ট্যাবলয়েডের লেখক ও সম্পাদক ছিলেন। সেক্যুলার এই বুদ্ধিজীবী কেবল একা নন, তাঁরও আগে আরও তিন বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। তাঁরা হলেন নরেন্দ্র দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে ও এমএম কালবুর্গী।
ভারতে সাংবাদিকদের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ মধ্যপ্রদেশের সরকারনিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা কেলেঙ্কারির ঘটনা তার বড় উদাহরণ হতে পারে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ও এর সাক্ষীসহ প্রায় ২ ডজন মানুষ অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ২০১৫ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন এক সাংবাদিক। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থাগুলোর পক্ষে ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করার আগে দুবার চিন্তা করা মোটেও অযৌক্তিক নয়।
কিন্তু তাই বলে এই উপসংহার টানা ভুল হবে যে, কেবল ভয়ের কারণেই গণমাধ্যমগুলো সরকারের পক্ষে কথা বলে। কিছু কিছু গণমাধ্যম আছে সরকারি বয়ান তোতাপাখির মতো আওড়ায়। তাঁদের ভয় পেতে হয় না, এরা এমনিতেই বাকবাকুম। টাইমস নাউ, রিপাবলিক টিভি, ইন্ডিয়া টুডে টিভি এবং অন্য সংবাদভিত্তিক চ্যানেলগুলো এর উদারহণ। এরা এমনভাবে সরকারি বয়ান তুলে ধরে যে তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় মোদির একনিষ্ঠ ভক্ত তাঁরা।
কৃষক বিক্ষোভ, বিদেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা, ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গা, গোহত্যা, অ-নথিভুক্ত মুসলিম, হিজাব বিতর্ক এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিষয়ে এসব গণমাধ্যম যে ‘বিতর্কের’ আয়োজন করেছিল, তা খুবই জনবিচ্ছিন্ন ছিল। সংখ্যালঘুদের দৃষ্টিভঙ্গি সেখানে ঠাঁই পায়নি। এর মধ্যে এটিই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে এসব সংবাদমাধ্যমের উপস্থাপকেরা সরকারের হিন্দুত্ব প্রকল্পের স্বেচ্ছা সৈনিক হিসেবে হাজির হয়েছিল। এই অবস্থায় মোদি যদি শিকারি হয়ে থাকেন, তাহলে ভারতের নিউজ করপোরেশনগুলো সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে।
ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
১৮ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে