সালাম ফারুক
বিছানার পাশে সোফায় হেলান দিয়ে টিভি দেখছিলেন বাবা। হঠাৎ তার সামনে লম্বালম্বি করে সাইকেলটি রাখল নিধি।
: বাবা, শক্ত করে ধরে রাখো।
: কেন?
: আ রে ধরো না। না ধরলে কিন্তু তোমার অনেক লস হয়ে যাবে। কথা শুনে বাবার তো আক্কেল গুড়ুম।
: কেন? আমার লস হবে কেন?
: না ধরলে তো আমি পড়ে যাব।
: তো?
: তখন আমাকে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে না? তখন তোমার অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে না?
কথা তো ঠিক। পাশ থেকে মেধা হাসি থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দূর থেকে ওর মা শুনে মুচকি হাসছেন। অগত্যা, পেছন থেকে শক্ত করে ধরে রাখলেন বাবা। আর সেই সাইকেলে বসে প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে মনের আনন্দে টিভি দেখছে নিধি। আর বারবার বলছে, ‘ঘুমিয়ে পড় না কিন্তু। হাত সরালেই লস তোমারই হবে বলে দিলাম।’
করোনা শুরুর পর থেকেই সাইকেল নিয়ে বাইরে যাওয়া বন্ধ ছিল দুই বোনের। দিনে বেশ কয়েকবার এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়া-আসা করত। দুই রুমের নাম দিয়েছিল ঢাকা ও টাঙ্গাইল। কখনো নিজেরা বসে হেঁটে হেঁটে, কখনোবা দুই সিটে দুটি পুতুল বসিয়ে চলত তাদের এ কথিত আন্তজেলা পরিবহন। কিন্তু ছোট্ট জায়গায় কত আর চালানোর মজা মেলে? তাই কদিন পরই সাইকেলটি অলস হয়ে পড়ে। ঠাঁই হয় বারান্দার এক কোণে।
মাস দুয়েক আগে বাসায় কাজ করানোর সময় আবার নজরে আসে সাইকেলটি। তত দিনে দুই চাকা পাংচারসহ বিভিন্ন স্থানে ধরেছে জং। মেরামত ছাড়া এটি নিয়ে বাইরে বের হওয়া সম্ভবই নয়। লকডাউনের কারণে সব বন্ধ থাকায় মেরামতের সুযোগ ছিল না বেশ কয়েক মাস। কিন্তু তাই বলে কি খেলা থেমে থাকবে? না। এই যে সাইকেলে বসে প্যাডেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে টিভি দেখছে নিধি।
এরই মধ্যে শুরু হলো বিজ্ঞাপন বিরতি। হঠাৎ বাবাকে নিধির প্রশ্ন—
: আচ্ছা বাবা, সাইকেল কে আবিষ্কার করেছেন, জানো?
: জানি না। তবে গুগল দেখে বলতে পারি।
: আচ্ছা, তুমি খুঁজে বের করো। আমি ততক্ষণ পায়ের ব্যায়াম করি।
মোবাইল হাতে নিয়ে বাবা গুগলে সার্চ দিলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই নিধির প্রশ্নের জবাব মিলল উইকিপিডিয়ায়। বাবা পড়ে শোনালেন।
: সাইকেল আবিষ্কারের দাবি করেন অনেকে। তবে দুই চাকার বাহন জনসমক্ষে প্রথম আনেন জার্মানির কার্ল ভন ড্যারন। তিনি ১৮১৭ সালে জার্মানির ম্যানহেইম শহরে তাঁর আবিষ্কৃত বাহনের প্রদর্শনী করেন। প্রথম দিকের সাইকেলের দুই চাকা সমান ছিল না। ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম দুই চাকা সমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় এবং চেন ও টায়ার সংযুক্ত করা হয়।
: আচ্ছা বাবা, সাইকেল চালানোর সময় মানুষ পড়ে যায় না কেন?
: সাইকেল চালানো একটা আর্ট। একটা কৌশল।
: যেমন?
: এই ধরো, চালানোর সময় সামনের দিকে তাকাতে হয়। অনেকে সামনের চাকার দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সাইকেলটা যেদিকে কাত হবে, সেদিকে সামনের চাকাটা ঘুরিয়ে প্যাডেল চাপ দিয়ে ব্যালেন্স করে নিলে আর পড়ে না।
: তুমিও কি এমন ছোট সাইকেল দিয়ে চালানো শিখেছ?
: না, আমি বড় সাইকেল দিয়ে শিখেছি।
: ছোটবেলা তুমি বড় সাইকেলের সিটে বসতে কী করে?
: সিটে তো বসতে পারতাম না। প্যাডেলের ওপরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে এক পা অপর প্রান্তের প্যাডেলে রাখতাম। এক হাতে সিটের সামনের পাইপটি ডান হাতে শক্ত করে ধরতাম আর বাঁ হাতে বাঁ পাশের হ্যান্ডেলটা ধরে চালাতাম।
: পড়ে যেতে না?
: প্রথম প্রথম তো অনেকবার পড়েছি। এরপর যখন শেখা হয়ে গেল তখন আর পড়িনি।
: ওহ, আচ্ছা।
: আমরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতাম। দোকানেও যেতাম। প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুরা মিলে ঘুরে বেড়াতাম। খুব মজা হতো।
: গাড়ির ভয় করত না?
: মফস্বল শহরে তখন বড় গাড়ি তেমন চলত না। তাই আমাদের ভয় ছিল না। ঢাকার রাস্তায় তো অনেক বড় বড় বাস-ট্রাক চলে। তাই এখানে বড় রাস্তায় সাইকেল চালানোটা নিরাপদ না।
: সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা থাকলে ভালো হতো। তাই না বাবা?
: তা তো হতোই। আমাদের দেশে এখন সাইকেলের খুব জনপ্রিয়তা। সাইকেল এখন অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। হয়তো একসময় এর জন্য আলাদা লেন হবে।
: ওহ! তাহলে তো খুব মজা হবে। আমরাও চালাতে পারব।
প্রশ্ন ছেড়ে এবার নিধির আবদার—
: বাবা, সাইকেলটা ঠিক করে আনো না।
: হুম, খুবই জরুরি। সময় বের করতে পারলেই নিয়ে যাব।
এমন সময় মেধার আবদার—
: বাবা, আমি তো বড় হয়ে গেছি। সাইকেলটার হ্যান্ডেল আমার হাঁটুতে লেগে যায়। ডানে-বামে ঘোরাতে কষ্ট হয়। আমাকে নতুন একটা কিনে দিতে হবে।
: হুম, আমি সেটাই ভাবছি। তবে দুটো শর্ত আছে।
: কী কী?
: পড়ায় ফাঁকিবাজি করা যাবে না।
: আচ্ছা। পড়ব।
: অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে যে রেজাল্ট হবে সেটা সন্তোষজনক হতে হবে।
মেধা ঘাড় কাত করে বুঝাল, ঠিক আছে।
: আরেকটা শর্ত কী বাবা?
: আম্মুর কথা সঙ্গে সঙ্গে শুনতে হবে। কোনো কথা যেন একাধিকবার বলা না লাগে।
: ঠিক আছে।
: মনে থাকে যেন। তুমি তো আবার ভুলে যাও।
: মনে থাকবে। ভুলব না।
: নতুন সাইকেল কিনলে আগেরটা ঠিক করা হবে না। তাই নিধিকেও চালাতে দিতে হবে।
: আমি আর কী দেব? আমারই তো চালাতে গিয়ে ওর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।
: হা হা হা।
রান্নাঘর থেকে এবার যোগ দিলেন মা।
: ভালো হলো। ভাঙারিওলার কাছে সাইকেলটা দিয়ে এটা-সেটা কেনা যাবে।
: উহু, তা হবে না। গিন্নির কথায় আপত্তি জানালেন কর্তা।
: তাহলে?
: পার্টসগুলো কাজে লাগাতে হবে।
: কী, শোপিস বানাবে নাকি?
: হুম, তেমনটিই ভাবছি। বিশেষ করে টায়ার-টিউব খুলে চাকা দুটো ড্রইংরুমের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখব। কেমন হবে?
: বুদ্ধি তো ভালোই। খারাপ হবে না মনে হচ্ছে।
: বাকিগুলোর মধ্যেও যেগুলো রাখা যায়, রাখব। যদি র্যাপিং পেপারে মুড়িয়েও শোপিস বানানো যায়, বানাব।
কথা শুনে সাইকেলেই উল্টো দিকে ঘুরে বাবার দিকে মুখ করে বসল নিধি। টিভির ভলিউম কমিয়ে মেধাও মনোযোগ দিল। বাবার এমন ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা তাদের খুব পছন্দ। মাঝেমধ্যে পরামর্শও দেয়। সাইকেলের যন্ত্রাংশ খুলে শোপিস বানানোর কথা ওঠায় তাদের মাথায় খেলতে থাকল নানান বুদ্ধি। বাবা-মার কথার মাঝখানে ঢুকে শুরু করল নিধি—
নিধি: বাবা, দুটো চাকার মাঝখানে কিছু দিয়ে তুমি বসার জিনিস বানাতে পারো। মোড়ার মতো করে।
মেধা: না বাবা, বেডসাইড টেবিল বানাবে।
নিধি: আর তিন কোণা ফ্রেমটা রং করে দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেব।
মেধা: র্যাপিং করে রাখতে পার। টেবিলের নিচের স্টিলের ফ্রেমটা যেভাবে রেখেছ।
নিধি: চেনটা কয়েলের মতো পেঁচিয়ে রাখব।
মেধা: হুম। আর চেনের চাকা দুইটাও সুন্দর। চকচক করে।
কন্যাদের একের পর এক মন্তব্যে বাবার যেন মাথা খুলছে। খুব মজা পাচ্ছেন মাও।
বাবা: তাহলে তোমার আম্মু ভাঙারিওলাকে কী দেবে?
মেধা: হ্যান্ডেল আর প্যাডেলগুলো কাজে লাগবে না।
নিধি: আম্মু ওগুলো তোমার।
কন্যার কথায় বাবা ও মা দুজনেই হেসে ওঠেন। ততক্ষণে মায়ের রান্না শেষ। টেবিলে খাবার সাজিয়ে হাসতে হাসতে মা বললেন–হইছে, আমার কথা ভাবতে হবে না। আসো, সবাই খেতে আসো।
মাসখানেক পর নতুন সাইকেল এল। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেধার মাপে। তাই নিধির জন্য একটু বড়ই হয়ে যায়। তবে এ সাইকেল চালিয়ে এরই মধ্যে দুয়েকটা প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও অর্জন করে নিয়েছে বড় জন। সর্বশেষ স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। আগেরবার হয়েছিল রানার্সআপ। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শেখানো যাচ্ছে না নিধিকে। চালাতে পারলেও সমস্যা হচ্ছে ওঠা-নামায়। তবুও মাঝেমধ্যে চেষ্টা করছে।
এদিকে, বারান্দার এক কোণে ঠাঁই হয়েছে অচল সাইকেলের। নতুন সাইকেল পেয়ে এখন আর কেউ ওটা ছুঁয়েও দেখে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক দিন আগে চাকা দুটো খোলা হলেও কোথায় যে রাখা হয়েছে তার খবর নেই। খোলার অপেক্ষায় থাকা অন্যসব পার্টসও যেন সখ্য গড়েছে মরিচার সঙ্গে।
বিছানার পাশে সোফায় হেলান দিয়ে টিভি দেখছিলেন বাবা। হঠাৎ তার সামনে লম্বালম্বি করে সাইকেলটি রাখল নিধি।
: বাবা, শক্ত করে ধরে রাখো।
: কেন?
: আ রে ধরো না। না ধরলে কিন্তু তোমার অনেক লস হয়ে যাবে। কথা শুনে বাবার তো আক্কেল গুড়ুম।
: কেন? আমার লস হবে কেন?
: না ধরলে তো আমি পড়ে যাব।
: তো?
: তখন আমাকে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে না? তখন তোমার অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে না?
কথা তো ঠিক। পাশ থেকে মেধা হাসি থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দূর থেকে ওর মা শুনে মুচকি হাসছেন। অগত্যা, পেছন থেকে শক্ত করে ধরে রাখলেন বাবা। আর সেই সাইকেলে বসে প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে মনের আনন্দে টিভি দেখছে নিধি। আর বারবার বলছে, ‘ঘুমিয়ে পড় না কিন্তু। হাত সরালেই লস তোমারই হবে বলে দিলাম।’
করোনা শুরুর পর থেকেই সাইকেল নিয়ে বাইরে যাওয়া বন্ধ ছিল দুই বোনের। দিনে বেশ কয়েকবার এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়া-আসা করত। দুই রুমের নাম দিয়েছিল ঢাকা ও টাঙ্গাইল। কখনো নিজেরা বসে হেঁটে হেঁটে, কখনোবা দুই সিটে দুটি পুতুল বসিয়ে চলত তাদের এ কথিত আন্তজেলা পরিবহন। কিন্তু ছোট্ট জায়গায় কত আর চালানোর মজা মেলে? তাই কদিন পরই সাইকেলটি অলস হয়ে পড়ে। ঠাঁই হয় বারান্দার এক কোণে।
মাস দুয়েক আগে বাসায় কাজ করানোর সময় আবার নজরে আসে সাইকেলটি। তত দিনে দুই চাকা পাংচারসহ বিভিন্ন স্থানে ধরেছে জং। মেরামত ছাড়া এটি নিয়ে বাইরে বের হওয়া সম্ভবই নয়। লকডাউনের কারণে সব বন্ধ থাকায় মেরামতের সুযোগ ছিল না বেশ কয়েক মাস। কিন্তু তাই বলে কি খেলা থেমে থাকবে? না। এই যে সাইকেলে বসে প্যাডেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে টিভি দেখছে নিধি।
এরই মধ্যে শুরু হলো বিজ্ঞাপন বিরতি। হঠাৎ বাবাকে নিধির প্রশ্ন—
: আচ্ছা বাবা, সাইকেল কে আবিষ্কার করেছেন, জানো?
: জানি না। তবে গুগল দেখে বলতে পারি।
: আচ্ছা, তুমি খুঁজে বের করো। আমি ততক্ষণ পায়ের ব্যায়াম করি।
মোবাইল হাতে নিয়ে বাবা গুগলে সার্চ দিলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই নিধির প্রশ্নের জবাব মিলল উইকিপিডিয়ায়। বাবা পড়ে শোনালেন।
: সাইকেল আবিষ্কারের দাবি করেন অনেকে। তবে দুই চাকার বাহন জনসমক্ষে প্রথম আনেন জার্মানির কার্ল ভন ড্যারন। তিনি ১৮১৭ সালে জার্মানির ম্যানহেইম শহরে তাঁর আবিষ্কৃত বাহনের প্রদর্শনী করেন। প্রথম দিকের সাইকেলের দুই চাকা সমান ছিল না। ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম দুই চাকা সমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় এবং চেন ও টায়ার সংযুক্ত করা হয়।
: আচ্ছা বাবা, সাইকেল চালানোর সময় মানুষ পড়ে যায় না কেন?
: সাইকেল চালানো একটা আর্ট। একটা কৌশল।
: যেমন?
: এই ধরো, চালানোর সময় সামনের দিকে তাকাতে হয়। অনেকে সামনের চাকার দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সাইকেলটা যেদিকে কাত হবে, সেদিকে সামনের চাকাটা ঘুরিয়ে প্যাডেল চাপ দিয়ে ব্যালেন্স করে নিলে আর পড়ে না।
: তুমিও কি এমন ছোট সাইকেল দিয়ে চালানো শিখেছ?
: না, আমি বড় সাইকেল দিয়ে শিখেছি।
: ছোটবেলা তুমি বড় সাইকেলের সিটে বসতে কী করে?
: সিটে তো বসতে পারতাম না। প্যাডেলের ওপরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে এক পা অপর প্রান্তের প্যাডেলে রাখতাম। এক হাতে সিটের সামনের পাইপটি ডান হাতে শক্ত করে ধরতাম আর বাঁ হাতে বাঁ পাশের হ্যান্ডেলটা ধরে চালাতাম।
: পড়ে যেতে না?
: প্রথম প্রথম তো অনেকবার পড়েছি। এরপর যখন শেখা হয়ে গেল তখন আর পড়িনি।
: ওহ, আচ্ছা।
: আমরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতাম। দোকানেও যেতাম। প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুরা মিলে ঘুরে বেড়াতাম। খুব মজা হতো।
: গাড়ির ভয় করত না?
: মফস্বল শহরে তখন বড় গাড়ি তেমন চলত না। তাই আমাদের ভয় ছিল না। ঢাকার রাস্তায় তো অনেক বড় বড় বাস-ট্রাক চলে। তাই এখানে বড় রাস্তায় সাইকেল চালানোটা নিরাপদ না।
: সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা থাকলে ভালো হতো। তাই না বাবা?
: তা তো হতোই। আমাদের দেশে এখন সাইকেলের খুব জনপ্রিয়তা। সাইকেল এখন অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। হয়তো একসময় এর জন্য আলাদা লেন হবে।
: ওহ! তাহলে তো খুব মজা হবে। আমরাও চালাতে পারব।
প্রশ্ন ছেড়ে এবার নিধির আবদার—
: বাবা, সাইকেলটা ঠিক করে আনো না।
: হুম, খুবই জরুরি। সময় বের করতে পারলেই নিয়ে যাব।
এমন সময় মেধার আবদার—
: বাবা, আমি তো বড় হয়ে গেছি। সাইকেলটার হ্যান্ডেল আমার হাঁটুতে লেগে যায়। ডানে-বামে ঘোরাতে কষ্ট হয়। আমাকে নতুন একটা কিনে দিতে হবে।
: হুম, আমি সেটাই ভাবছি। তবে দুটো শর্ত আছে।
: কী কী?
: পড়ায় ফাঁকিবাজি করা যাবে না।
: আচ্ছা। পড়ব।
: অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে যে রেজাল্ট হবে সেটা সন্তোষজনক হতে হবে।
মেধা ঘাড় কাত করে বুঝাল, ঠিক আছে।
: আরেকটা শর্ত কী বাবা?
: আম্মুর কথা সঙ্গে সঙ্গে শুনতে হবে। কোনো কথা যেন একাধিকবার বলা না লাগে।
: ঠিক আছে।
: মনে থাকে যেন। তুমি তো আবার ভুলে যাও।
: মনে থাকবে। ভুলব না।
: নতুন সাইকেল কিনলে আগেরটা ঠিক করা হবে না। তাই নিধিকেও চালাতে দিতে হবে।
: আমি আর কী দেব? আমারই তো চালাতে গিয়ে ওর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।
: হা হা হা।
রান্নাঘর থেকে এবার যোগ দিলেন মা।
: ভালো হলো। ভাঙারিওলার কাছে সাইকেলটা দিয়ে এটা-সেটা কেনা যাবে।
: উহু, তা হবে না। গিন্নির কথায় আপত্তি জানালেন কর্তা।
: তাহলে?
: পার্টসগুলো কাজে লাগাতে হবে।
: কী, শোপিস বানাবে নাকি?
: হুম, তেমনটিই ভাবছি। বিশেষ করে টায়ার-টিউব খুলে চাকা দুটো ড্রইংরুমের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখব। কেমন হবে?
: বুদ্ধি তো ভালোই। খারাপ হবে না মনে হচ্ছে।
: বাকিগুলোর মধ্যেও যেগুলো রাখা যায়, রাখব। যদি র্যাপিং পেপারে মুড়িয়েও শোপিস বানানো যায়, বানাব।
কথা শুনে সাইকেলেই উল্টো দিকে ঘুরে বাবার দিকে মুখ করে বসল নিধি। টিভির ভলিউম কমিয়ে মেধাও মনোযোগ দিল। বাবার এমন ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা তাদের খুব পছন্দ। মাঝেমধ্যে পরামর্শও দেয়। সাইকেলের যন্ত্রাংশ খুলে শোপিস বানানোর কথা ওঠায় তাদের মাথায় খেলতে থাকল নানান বুদ্ধি। বাবা-মার কথার মাঝখানে ঢুকে শুরু করল নিধি—
নিধি: বাবা, দুটো চাকার মাঝখানে কিছু দিয়ে তুমি বসার জিনিস বানাতে পারো। মোড়ার মতো করে।
মেধা: না বাবা, বেডসাইড টেবিল বানাবে।
নিধি: আর তিন কোণা ফ্রেমটা রং করে দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেব।
মেধা: র্যাপিং করে রাখতে পার। টেবিলের নিচের স্টিলের ফ্রেমটা যেভাবে রেখেছ।
নিধি: চেনটা কয়েলের মতো পেঁচিয়ে রাখব।
মেধা: হুম। আর চেনের চাকা দুইটাও সুন্দর। চকচক করে।
কন্যাদের একের পর এক মন্তব্যে বাবার যেন মাথা খুলছে। খুব মজা পাচ্ছেন মাও।
বাবা: তাহলে তোমার আম্মু ভাঙারিওলাকে কী দেবে?
মেধা: হ্যান্ডেল আর প্যাডেলগুলো কাজে লাগবে না।
নিধি: আম্মু ওগুলো তোমার।
কন্যার কথায় বাবা ও মা দুজনেই হেসে ওঠেন। ততক্ষণে মায়ের রান্না শেষ। টেবিলে খাবার সাজিয়ে হাসতে হাসতে মা বললেন–হইছে, আমার কথা ভাবতে হবে না। আসো, সবাই খেতে আসো।
মাসখানেক পর নতুন সাইকেল এল। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেধার মাপে। তাই নিধির জন্য একটু বড়ই হয়ে যায়। তবে এ সাইকেল চালিয়ে এরই মধ্যে দুয়েকটা প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও অর্জন করে নিয়েছে বড় জন। সর্বশেষ স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। আগেরবার হয়েছিল রানার্সআপ। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শেখানো যাচ্ছে না নিধিকে। চালাতে পারলেও সমস্যা হচ্ছে ওঠা-নামায়। তবুও মাঝেমধ্যে চেষ্টা করছে।
এদিকে, বারান্দার এক কোণে ঠাঁই হয়েছে অচল সাইকেলের। নতুন সাইকেল পেয়ে এখন আর কেউ ওটা ছুঁয়েও দেখে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক দিন আগে চাকা দুটো খোলা হলেও কোথায় যে রাখা হয়েছে তার খবর নেই। খোলার অপেক্ষায় থাকা অন্যসব পার্টসও যেন সখ্য গড়েছে মরিচার সঙ্গে।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে