‘একসঙ্গে চারটি কবর, আমার আর কেউ নেই’ 

পিরোজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২১: ৩৪
Thumbnail image

‘গত বুধবার রাত ১১টার সময় শাওন ও তার পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয়। তখন তারা আমতলী ফেরিঘাটে ছিল। এরপরে আর কথা হয়নি। গভীর রাতে কেউ ফোন করে বলে ওরা পানিতে ডুবে মারা গেছে। একসঙ্গে চারটি কবর, আমার আর কেউ নেই।’ 

পিরোজপুরের নাজিরপুরে প্রাইভেট কার খালে পড়ে নিহত আমেনা বেগমের (২৫) মা এভাবেই আহাজারি করছিলেন। দুর্ঘটনায় আমেনা বেগম, তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে প্রাণ হারিয়েছেন। একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে তাঁর বাড়ি বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

আজ শুক্রবার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রামে শাওনের বাড়িতেও পরিবারের সদস্যদের আহাজারি করতে দেখা যায়। এদিকে দুর্ঘটনায় ঘটনায় তিন সদস্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

নিহত শাওনের ভাই জাহিদ মৃধা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শাওনের পরিবারের চারজন সদস্যের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়। 

গত বুধবার রাতে পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কের নূরানী গেট এলাকায় তাঁদের বহনকারী প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে নিহত আটজনের মধ্যে চারজনই পিরোজপুরের। 

তাঁরা হলেন নাজিরপুরের হোগাবুনিয়া এলাকার মৃত আসাদ মৃধার ছেলে শাওন (৩২), শাওনের স্ত্রী আমেনা বেগম (২৫), তাঁদের ছেলে শাহাদাত (১০) ও আব্দুল্লাহ (৩)।

শাওনের ভাই জাহিদ বলেন, ‘গত বুধবার গভীর রাতে আমার ভাই ও তার বন্ধুর পরিবারের আটজন প্রাইভেট কার দুর্ঘটনায় মারা যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা শাওন, তার স্ত্রী ও তার দুই সন্তানের মরদেহ বুঝে পাই। বাড়িতে নিয়ে দাফন–কাফন সম্পন্ন করি। আমাদের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।’ 

শাওনের শাশুড়ি জাকিয়া বেগম বলেন, ‘শাওনের সঙ্গে শেষ কথা হয় তখন তারা আমতলী ফেরিঘাটে ছিল। এরপর আর তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারিনি। গভীর রাতে কেউ ফোন করে বলে ওরা পানিতে ডুবে মারা গেছে। একসঙ্গে চারটি কবর, আমার আর কেউ নেই।’চারজনের লাশ পাশপাশি দাফন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিহত শাওনের মামা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমার ভাগনের পরিবারের লাশ বাড়িতে এনে জানাজা শেষে রাতে দাফন করি। আমাদের পরিবারে এমন শোকের ছায়া নেমে আসবে, কখনো বুঝিনি।’ 

পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মুকিত হাসান খান জানান, প্রাইভেট কার দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের আটজনের নিহতের ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। 

তিনি বলেন, ‘গতকাল বরিশাল বিভাগের রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ মঞ্জুর মোরশেদ আলম স্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নগদ ২০ হাজার টাকা এবং পুলিশের গাড়িতে লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত