বরিশালে দখল হচ্ছে খাসজমি

  • তদারকির অভাবে প্রায় ৪ হাজার একর খাসজমি দখল হয়েছে।
  • ভুয়া খতিয়ান খুলে জমির মালিকানা দাবি করে ভোগদখল।
  • জেগে ওঠা চরে অনেকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দখলে নিয়েছে।
মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১: ৪০
Thumbnail image
বরিশালের মুলাদী বন্দরসংলগ্ন জয়ন্তী নদীর পাড়ের খাসজমি দখল করে নির্মাণ করা দোকানঘর। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের মুলাদীতে প্রায় ৪ হাজার একর খাসজমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্দোবস্ত ছাড়াই এসব জমিতে ঘরবাড়ি, দোকান, পাকা স্থাপনা, ফসল ফলিয়ে দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। কেউ কেউ ভুয়া খতিয়ান খুলে জমির মালিকানা দাবি করে ভোগদখল করছে। আর এসব হচ্ছে কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব জমির মধ্যে মুলাদী পৌরসভার মধ্যেই প্রায় ৫০ একর রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার একর খাসজমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে গত চার বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাড়ে ৪০০ ঘর নির্মাণ করে প্রায় ১০ একর জমি ভূমিহীনদের নামে দলিল দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার একর জমি বিভিন্ন সময়ে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দিয়েছে সরকার। বাকি জমির একটি বড় অংশ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ, জয়ন্তী ও নয়াভাঙ্গনী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা চর, বিভিন্ন হাটবাজারে সরকারের জমি, খালবিলসহ উপজেলায় ৭ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। হাট-বাজারের পাশের নদী ও খাল ভরাট করে সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। জেগে ওঠা চরে অনেকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দখল করেছে।

উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের খাসেরহাট বন্দরের ব্যবসায়ী নূরু হাওলাদার বলেন, ‘খাসেরহাট বন্দরে প্রায় ৪ একর খাসজমি রয়েছে। এসব জমি বন্দোবস্ত ছাড়াই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। প্যাদারহাট বন্দরে কয়লার খালের দুই পাড় দখল করে দেড়-দুই শ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্যাদারহাট উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক একর জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ওই বন্দরের একটি ঘাট দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন এক ব্যবসায়ী। এ ছাড়া সোনামদ্দিন বন্দর, নোমরহাট, কুতুবপুর বাজার, আলীমাবাদ বাজার, চরপদ্মা মাদ্রাসারহাটসহ বিভিন্ন হাটের খাসজমি দখল হয়ে গেছে।’

মুলাদী পৌরসভার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, ‘পৌরসভার জয়ন্তী নদীর দুই পাড়ের সরকারি জমি দখল করে তিন শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকান নির্মাণের ফলে নদী ছোট হয়ে গেছে এবং ধীরে ধীরে নদীটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মুলাদী-হিজলা সংযোগ সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৪০ একর খাসজমি রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু নেতা যৌথভাবে একটি ভুয়া খতিয়ান খুলে প্রায় ২৬ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। ওই খতিয়ান বাতিল করার জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর গাছুয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন জেলা প্রশাসনের কাছে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন। কিন্তু খতিয়ান বাতিল কিংবা সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়নি।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার ফিরোজ খান বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার একর খাসজমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে কমপক্ষে ১ হাজার একর জমি ভুমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার যোগ্য। এ ছাড়া আরও প্রায় ৩ হাজার একর খাসজমি রয়েছে, যা কিছুটা নিচু কিংবা চর আকারে রয়েছে। এসব জমি বন্দোবস্ত না দেওয়া হলেও কেউ কেউ ভোগদখল করছে। কিন্তু কেন বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে না, তা জানা নেই।’

তদারকির অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরাগ সাহা। তিনি জানান, খাসজমি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘খাসজমি দখলের বিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন চাওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সরকারি জমি উদ্ধারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত