ঝালকাঠিতে টোল প্লাজায় ট্রাকচাপায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪, তদন্তে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ১২
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ৩৭

ঝালকাঠিতে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের প্রাইভেট কার ও অটোরিকশা চাপা দেওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। নিহতদের মধ্যে চার শিশু, তিনজন নারী ও পুরুষ রয়েছেন সাতজন। তাঁদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঠালিয়া উপজেলায়। আজ বুধবার বেলা পৌনে ২টায় ঝালকাঠি শহরতলির গাবখান সেতুর পূর্ব টোল প্লাজায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল, শেবাচিম হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের সূত্রে নিহতদের এ তথ্য জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের পরিচয় প্রকাশ করেনি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এদিকে দুর্ঘটনায় ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুর্ঘটনা পর ট্রাকচালক আল-আমিন (২৯) ও চালকের সহকারী নাজমুলকে (২২) আটক করা হয়েছে। আল-আমিনের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলায় এবং নাজমুলের বাড়ি খুলনা। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, বরিশালে বিয়েবাড়িতে যাচ্ছিল একটি প্রাইভেট কার। এ ছাড়া তিনটি অটোরিকশা যাচ্ছিল শহরে। বেলা পৌনে ২টার দিকে গাবখান টোল প্লাজায় টোল দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি অটোরিকশা। এ চারটি যানবাহন ঝালকাঠি শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।

এ সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক (খুলনা মেট্রো ০৯৫৭) প্রাইভেট কার ও অটোরিকশাগুলোকে চাপা দেয়। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় প্রাইভেট কার ও অটোরিকশাগুলো। ঘটনাস্থলেই মারা যায় অটোরিকশার ছয় যাত্রী। পরে প্রাইভেট কার থেকে আরও আট যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আটজনের মৃত্যু হয়। তিনি জানান, ১৪ জনের মধ্যে শিশু রয়েছে চারজন, নারী তিনজন ও পুরুষ সাতজন। নিহতদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঠালিয়া উপজেলায়।

দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার। ছবি: আজকের পত্রিকা 

স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সিমেন্টবোঝাই ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলোর উদ্ধার কার্যক্রম চলমান আছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। পুলিশ ট্রাকটিকে জব্দ করেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী গাবখান টোল প্লাজার কর্মী আবুল বাশার বলেন, প্রাইভেট কার ও তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা টোল দেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। হঠাৎ করে পশ্চিম দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকটি প্রাইভেট কার এবং অটোকে চাপা দিলে কার ও অটো দুমড়েমুচড়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে শুধু রক্ত আর কান্না। 

আবুল বাশার আরও বলেন, ‘আমার ধারণা ট্রাকের ব্রেক ফেল করেছিল। এ কারণে টোল প্লাজায় ব্রেক না করেই সরাসরি প্রাইভেট কার ও অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।’ 

ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মৃতদের নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই চলছে।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম জানান, ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোল প্লাজায় সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে চাপা দেয়। দুর্ঘটনার তদন্তে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ববরণকারীদের তিন লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে জানান তিনি। 

ঝালকাঠি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঝালকাঠি ডিবি পুলিশ ট্রাকচালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত