বিদেশি বালাইনাশকে দেশি আমের সর্বনাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ২১: ৪১
Thumbnail image

বিগত ২৩ বছরে দেশে আম উৎপাদন বেড়েছে ১১ দশমিক ৯৬ গুণ। কিন্তু উৎপাদনের এই সম্ভাবনাকে সেভাবে কাজে লাগানো যায়নি। কারণ, অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমের কদর তৈরি হয়নি। অথচ এসব বালাইনাশকের ৯৮ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করা। 

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের আম উৎপাদন: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকা (সিজেএফডি)। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, মোট জমির পরিমাণ ও উৎপাদনের নিরিখে আম বাংলাদেশের এক নম্বর ফল। এ দেশে আম উৎপাদনের জমির পরিমাণ, মোট উৎপাদনে ও ফলন ক্রমান্বয়ে বাড়লেও উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানি পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমচাষি, ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও রপ্তানিকারকেরা এর সুফল পুরোপুরি পাচ্ছেন না। 

আম চাষের কিছু চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে ড. মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি ও আম চাষ এবং বাজারজাতকরণে উত্তম কৃষি পদ্ধতির ব্যবহারের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই প্রতিরোধ বা প্রতিকারে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি। আম উৎপাদনে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার, অপরিপক্ব আম আহরণ ও বাজারজাতকরণ। তা ছাড়া আম পাকানো ও সংরক্ষণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। 

ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এত আমের উৎপাদন হচ্ছে, কিন্তু কয়টা আম প্রক্রিয়াজাত কারখানা পর্যন্ত যেতে পারছে। এটা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে যতক্ষণ পর্যন্ত না নিতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এটা উৎকর্ষতা পাবে না। 

বালাইনাশক নিয়ে কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘বালাইনাশকের কারণে আমাদের দেশের খাদ্যের বিদেশে বাজার নষ্ট হচ্ছে। শুধু আম না, অন্য শাকসবজিও রয়েছে। খাদ্যকে যদি বিষমুক্ত আপনি প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে ওরা (বিদেশি) খাদ্যতালিকায় নেবে না, শুধু ফাইটোস্যানেটারি সার্টিফিকেট এনাফ (যথেষ্ট) না।’ 

দেশে ১২ হাজার বালাইনাশকের ব্র্যান্ড আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই ১২ হাজার কীটনাশক ব্র্যান্ডের পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে আসছে। 

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতেই আমের চাষ বেশি হয়। জীবন–জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখন আম চাষ হচ্ছে। ২০২১ সালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে সিলেট চট্টগ্রামে বিভিন্ন গাড়িতে আম যেত, তখন ফরমালিনের কথা বলে সব আম নষ্ট করে দেওয়া হতো। এ থেকেই বাংলাদেশের মানুষের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী আমের প্রতি আকর্ষণ কমে যায় এই জন্য যে তারা আমে ফরমালিন ব্যবহার করেন। সাংবাদিকদের অতিরঞ্জিতভাবে খবরগুলো প্রচারিত করার কারণেই রাজশাহী অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও আমচাষি ভাইয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’ 

সিজেএফডির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সিজেএফডির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার হক প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত