ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে: সন্তু লারমা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ১৭: ৫৬
Thumbnail image

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি সন্তু লারমা দাবি করেছেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেখানে এমন কোনো পরিবার নেই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘শাসকগোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের চিরতরে বিলুপ্ত করতে চায়। এর আগে ১৯৭২ সালে সংবিধান রচনার সময় সবাইকে বাঙালি বলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের পরিচয় হরণ করা হয়েছিল।’ 

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সন্তু লারমা। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান থেকে অধিকার রক্ষায় ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতারা। 

তাদের দাবিগুলো হলো
 ১. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারসহ ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’দের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
 ২. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
 ৩. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
 ৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে সময়সূচিভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। ভূমি কমিশন আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
 ৫. সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
 ৬. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভূমিতে তাদের স্বাধীন পূর্ব সম্মতি ছাড়া ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, টুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা চলবে না।
 ৭. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ওপর সব নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করাসহ সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ বিষয়ক ঘোষণাপত্র ও আইএলও ১৬৯ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।
 ৯. জাতীয় সংসদে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য বিশেষ কোটা সংরক্ষণ বা আসন বরাদ্দ রাখতে হবে।
 ১০. সরকারি প্রথম শ্রেণিতে পূর্বের মতো ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা’ সংরক্ষণ করতে হবে এবং অন্যান্য চাকরিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
 ১১. রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ উদ্‌যাপন করতে হবে।

এর আগে সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তির পরিণতি এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সমতলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হত্যার বিচার হয়নি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলা যাবে না বলে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছিল তারা কারা? তারা বলছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে না, এরা লুণ্ঠিত হয়ে চলে গেছে।’

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারী পরিষদের সভাপতি বাসন্তী মুর্মু বলেছেন, ‘পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য জাতীয় সংসদে দুটি সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ রাখতে হবে।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আদিবাসীর পরিবর্তে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দের ব্যবহারকে “অবমাননাকর”। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সমস্যা সামাজিকভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। তাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আজকে যারা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বললে সংবিধান লঙ্ঘন হবে, তারা আসলে সংবিধান বোঝেন না। এ সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের রক্ষায় সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আজ বৈষম্য হচ্ছে। আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যাবে না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জয় অবশ্যই হবে।’

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শাসকেরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নাগরিক বলে মনে করে না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও মানুষ, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল ফোরাম। এরপর একটি র‍্যালি নিয়ে শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি হয়ে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত