শিবালয়ে যমুনার বালু লুটে ভাঙছে তীর

  • নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু লুট।
  • তেওতা ইউনিয়নে নদীতীরে তীব্র ভাঙন।
  • লুটকারীরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
মো. আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) 
Thumbnail image
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামসংলগ্ন যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালু লুটকারী চক্র। নদীতে খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে বালু তুলে বিক্রি করে দিচ্ছে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময় যারা ভাড়া করা ড্রেজার ও শ্রমিক দিয়ে বালু লুট করেছিল, তারা আত্মগোপনে গেছে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। একই ড্রেজার ও শ্রমিক দিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে দিন-রাত বালু তুলে বিক্রি করে দিচ্ছে তারা।

এতে অসময়ে নদীতীরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার একটি উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প, মুজিব কেল্লা, দুটি সরকারি

প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।

নতুন করে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, রাস্তাসহ কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। ভাঙন-আতঙ্কে রয়েছে নদীপারের হাজারো মানুষ। স্থানীয় ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু লুট বন্ধ এবং ভাঙন রোধে এলাকাবাসী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ এবং মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের যমুনা নদীতে বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এ বালু উত্তোলন করা হতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ দলীয় পদধারী নেতারা। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা মূলত শিবালয়ের বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করত।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে মাসখানেক সময় বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। বর্তমানে প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় সেই আগের বালু লুট চক্রের সদস্যরাই শুধু ‘হাতবদলের’ মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বালুমহালের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিবালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রশাসনের অবৈধ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রভাবশালী একটি চক্র এই বালু লুট করছে।

স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের বিএনপির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলদারি বা কোনো অপরাধ করলে দল দায়ভার নেবে না। কেউ যদি অন্যায়-অনিয়ম করে, তার দায়

তাকেই নিতে হবে।

উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলেও এখানে বালু তোলার কারণে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। নদীতে বিলীন হয়েছে শিবালয় ইউনিয়নের চর শিবালয় এলাকার সম্পূর্ণ অংশ। তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়ার এক-তৃতীয়াংশ নদীতে চলে গেছে। বাড়িঘর হারিয়েছে শতাধিক পরিবার।

আলোকদিয়া গ্রামে নদীতীরে ভাঙন। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
আলোকদিয়া গ্রামে নদীতীরে ভাঙন। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

এদিকে অব্যাহত নদীভাঙনে চর শিবালয় ও আলোকদিয়ায় স্থাপিত ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ ও ২, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রুস্তম আলী হাওলাদার উচ্চবিদ্যালয়, ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লা, মধ্যনগর ও চরবৈষ্টমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আলোকদিয়ায় যমুনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, অপরদিকে চলছে নদীভাঙন। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছে নদীশিকস্তি এলাকার মানুষ।

ভাঙনকবলিত আলোকদিয়া চর এলাকার মো. রাশেদ ও ফরিদ মিয়া বলেন, ‘যারা নদী থেকে মাটি তোলে, তারা রাজনৈতিক দলের লোক হওয়ায় ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তারা আমাদের গ্রামটি শেষ করে দিয়েছে। আমাদের গ্রামটির নদীতীর দুই মাইল দৈর্ঘ্যের ছিল। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটায় বর্তমানে আমাদের গ্রাম এখন আধা কিলোমিটারও নেই।’

একই এলাকার সবুজ প্রামাণিক, আজিজ ও খায়ের মোল্লা বলেন, যমুনা নদীতে ড্রেজার বসানো হয়েছে। এর আগেও চক্রটি এখান থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে নিয়েছে। যে কারণে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে বালু লুট চললে আমরা চাষাবাদও করতে পারব না।’

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ অবৈধ কাজ করেন, তার দায়ভার দল নেবে না, ব্যক্তিকেই নিতে হবে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। গুরুত্বসহকারে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত