Ajker Patrika

মাটির সঙ্গে মিশে গেল উচ্চবংশীয় গরু-ছাগলের খামার সাদিক অ্যাগ্রো 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৪, ০৯: ১৩
মাটির সঙ্গে মিশে গেল উচ্চবংশীয় গরু-ছাগলের খামার সাদিক অ্যাগ্রো 

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ হাউজিং সংলগ্ন রামচন্দ্রপুর খাল ভরাট করে গড়ে ওঠা বহুল আলোচিত খামার সাদিক অ্যাগ্রো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আজ শনিবার তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালিয়ে উচ্চবংশীয় গরু-ছাগলের খামারটি পুরো উচ্ছেদ করা হয়। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ভ্রামমাণ আদালত। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পর ভেকু মেশিন দিয়ে খাল খননের কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে। 

ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিএস নকশা অনুসারে খাল উদ্ধারে অভিযান চলছে। রামচন্দ্রপুর খালের এই অংশে চারদিনের উচ্ছেদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল রোববারও উচ্ছেদ অভিযান এবং খাল খননের কার্যক্রম চলবে।’

বৃহস্পতিবার সাদিক অ্যাগ্রোর খামারের একাংশ উচ্ছেদ করা হলেও আজ শনিবার পুরো খামার গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কোটি টাকার ‘অভিজাত’ গরু এবং ‘১৫ লাখ টাকার’ ছাগল নিয়ে আলোচনায় আসে এই খামার।

উচ্ছেদের ঘটনায় সাত মসজিদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা শিরিন বেগম বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানে আমরা খুশি। আমরা চাই খালে আবার পানি আসুক। এতদিন সাদিক অ্যগ্রোর ফেলা ময়লায় দুর্গন্ধে টেকা যেত না।’

সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে খাল দখল ছাড়াও অনেক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। ২০২১ সালে কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু আমদানি করেছিলেন ইমরান নিজেই। 

জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় সরকার গরুগুলো জব্দ করে। সাভারে প্রাণিসম্পদের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা এসব গরু পরে নামমাত্র মূল্যে নিলামে কিনে নেন ইমরান। শর্ত ছিল, গরুগুলো জবাই করে রমজানে সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রি করবেন। মাংস তিনি ঠিকই বিক্রি করেছেন, তবে অন্য গরুর। কৌশলে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো নিজের কাছে রেখে দেন চতুর এই ব্যাবসায়ী। এই গরু থেকে কয়েক লাখ টাকার সিমেন বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।

গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী’ পরিচালনায় আড়াই কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইমরান হোসেন। প্রদর্শনীতে স্টল বরাদ্দের মাধ্যমে অন্য খামারিদের কাছ থেকে এই টাকা উঠিয়েও নিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রদর্শনী আয়োজনে প্রতিশ্রুত কোনো টাকাই ইমরান দেননি। ২০২৩ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে একই রকম কান্ড ঘটিয়েছেন তিনি।

ইমরানের এসব প্রতারণায় ক্ষুব্ধ খামারিরা। মোহাম্মদপুরের বুড়িগঙ্গা অ্যাগ্রোর মালিক ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সায়েম শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইমরানের প্রতারণার কারণে খামারিদের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের জায়গা নষ্ট হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে সে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু এনে বিমানবন্দরে ধরা পড়েন। সে সময় জালিয়াতির পরেও কোনো শাস্তি না হওয়ায় তাঁর সাহস বেড়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত