Ajker Patrika

মধুপুরে জমিতে বছরে ৪ ফসল চাষে সফল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
মধুপুরে জমিতে বছরে ৪ ফসল চাষে সফল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

টাঙ্গাইলের মধুপুরে কয়েক বছরের চেষ্টায় দুই ফসলি জমিতে চার ফসল উৎপাদন করে তাক লাগিয়েছেন ডা. শফিকুল ইসলাম নামের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং পৃথক বীজতলায় আগাম চারা উৎপাদন করে পতিত জমির যথাযথ ব্যবহার করে এই সফলতা পেয়েছেন তিনি। তাঁর এই সফলতার গল্প কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে খোদ কৃষি বিভাগ। 

ডা. শফিকুল তার জমিতে দুইবার বোরো, একবার আমন ও একবার সরিষা আবাদ করে ফলনও পেয়েছেন অনেক বেশি। তাঁর সফলতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় অন্য কৃষকেরাও। 

এলাকাবাসী জানায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী ইউনিয়নের কুড়িবাড়ী গ্রামের ডা. মো. শফিকুল ইসলাম মানব সেবার পাশাপাশি কৃষিতেও সময় ব্যয় করেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার মানসিকতা থেকে তিনি একই জমির বহুমাত্রিক ব্যবহার ও পতিত জমির যথাযথ ব্যবহারে উদ্যোগী হন। এ জন্য তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গবেষণা শুরু করেন। সাধারণ কৃষকদের মতো তিনিও তার এক বিঘা জমিতে হাইব্রীড হীরা-১৯ জাতের বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে গোল্ডেন-১ ও পাইজাম ধান এবং সরিষা আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন। প্রতিটি ধাপেই ফলন পেয়েছেন অন্য মৌসুমগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমানে তাঁর কৃষি জমিতে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। 

এ বিষয়ে ডা. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ফসল সংগ্রহের পর দীর্ঘসময় জমি অনাবাদি থাকে। আমি সেই অনাবাদি পতিত জমিগুলো আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা করি। প্রথমে স্বল্প আয়ুর উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন করি। এরপর কৃষকদের সাথেই বোরো ধান হাইব্রীড হীরা ১৯ আবাদ করি। এই ধান পরিপক্ব হওয়ার আগেই পৃথক বীজতলায় ধানের চারা উৎপাদন করি। ধান কাটার পরপরই ওই জমি চাষ দিয়ে গোল্ডেন-১ জাতের ধানের চারা রোপণ করি। এই ধান সংগ্রহের কয়েক দিনের মধ্যেই আগের উৎপাদন করা পাইজাম ধানের চারা বপন করি। সেই ধান কেটে লাগিয়েছি সরিষা। সরিষা সংগ্রহের পর ধানের চারা প্রস্তুত রেখেছি পরবর্তী বোরো মৌসুমের ধান লাগানোর জন্য।’ 

তিরি আরও বলেন, ‘এইভাবে বছরে দুইবার বোরো, একবার আমন ও সরিষা আবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। এতে করে প্রতি মৌসুমেই ৪০ থেকে ৪২ দিন অতিরিক্ত সময় পাওয়া গেছে। যার ফলে চারবার ফলন পেতে সহজ হয়েছে। এভাবে দুইবার বোরো ধান আবাদ করে বিঘা প্রতি ৩৫ মন আর আমন মৌসুমে ১০ মন ধান পেয়েছি। গত বছরের ধারাবাহিকতায় সরিষাও সাত মনের অধিক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ 
 
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষক মোজাফ্ফর আলী, নাজমুল হোসেন, ছোমেদ আলী, মোকাদ্দেস হোসেনসহ অনেকেই তার এই পদ্ধতিতে ফসল আবাদ শুরু করেছেন। 

মোজাফ্ফর আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে বছরে ৮০ মন ধান আবাদের পর সাত মন সরিষা এ তো এক চমক। একটু চেষ্টায় আমরাও যদি এই সফলতা পাই, তাহলে আমরাও লাভবান হব, দেশও খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।’ 

এ বিষয়ে উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শফিকুল ইসলামের ফসল উৎপাদনের পদ্ধতি ব্যবহার এবং পরিচর্যা অনুসরণ করলে প্রতিটি কৃষক উপকৃত হবেন। দেশ লাভবান হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে একই জমিতে বহুমাত্রিক ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। চলতি বছর আউশ ও আমন ধান আবাদের মধ্যবর্তী সময়ে দুই হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। অতীতে যে জমি সম্পূর্ণ অনাবাদি পরে থাকত। কৃষিকে লাভজনক করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রণোদনা দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত