ঈশ্বরগঞ্জে ৯ মাস ধরে হাসপাতালে নেই জলাতঙ্কের টিকা, বিপাকে রোগীরা

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩৪
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৪৫
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে কুকুর-শিয়ালে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা। কিন্তু ৯ মাস ধরে হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক রোগের টিকা। সামর্থ্যবানেরা বাইরে থেকে টিকা কিনতে পারলেও বিপাকে পড়ছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।

কার্তিক মাস এলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে বেওয়ারিশ কুকুর। সেই সঙ্গে রাতে গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে শিয়ালের উৎপাত। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে আতঙ্কে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে হচ্ছে। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার হুমায়রা (৪) ও আরাফাত (৭) নামে দুই শিশু কুকুরের কামড়ে জখম হলে অভিভাবকেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁরা জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক এআরভি (অ্যান্টির্যাবিস ভ্যাকসিন) পাননি। পরে বাইরে থেকে টিকা কিনে শিশুদের শরীরে প্রয়োগ করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কুকুর-শিয়ালে কামড়ানো অন্তত শতাধিক রোগী এসেছে। চলতি মাসে জলাতঙ্কের উপসর্গ নিয়ে রোগী এসেছে অন্তত ২০ জন। প্রায় ৯ মাস আগে হাসপাতালে একবার জলাতঙ্কের টিকা এসেছিল। এর পর থেকে আর সরবরাহ করা হয়নি। এতে প্রতিদিনই হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে লোকজন এলেও বিনা মূল্যে টিকা মিলছে না।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, হাসপাতালে টিকা না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়। এতে প্রায়ই দেখা যায়, রোগীরা অনীহা প্রকাশ করে। প্রতিটি এআরভি টিকার দাম ৫৫০ টাকা। একজন রোগীকে চারটি করে ভ্যাকসিন দিতে হয়। অনেক দরিদ্র মানুষ থাকে, যাদের আসলে এত দাম দিয়ে টিকা কেনার সামর্থ্য থাকে না।

সম্প্রতি বিড়ালের আঁচড় জখম হন জুবায়ের হোসেন খান নামের এক যুবক। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন অনেক আগে থেকেই জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ নেই। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই যুবক বলেন, ‘একটি সরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের টিকা নেই, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। টানা চার দিন মমেক হাসপাতালে গিয়ে টিকা দিয়েছি। এতে যাওয়া-আসার খরচসহ অনেক সময়ও অপচয় হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিনটা থাকলে সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হতো।’

উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুল্লাপাড়া গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়া শুরু হয়। কুয়াশায় গ্রামের রাস্তাঘাট কিছুই দেখা যায় না। ওই সময় বন-জঙ্গল ছেড়ে শিয়ালের দল লোকালয়ে এসে চরম উৎপাত শুরু করে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া রাতে ঘর থেকে বের হওয়া ছেড়ে দিয়েছে গ্রামবাসী। কয়েক দিন আগে আমার ওপরও শিয়াল হানা দিলে অল্পের জন্য বেঁচে যাই।

পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের মো. খোকন মিয়া বলেন, বেওয়ারিশ ও বেপরোয়া কুকুরের সংখ্যা চারদিকে বেড়েই চলেছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুল-প্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পায়। আগে দেখতাম পৌরসভার উদ্যোগে কুকুরকে এক ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া হতো। এতে নাকি কুকুর কামড়ালেও জলাতঙ্ক রোগ হতো না। এটি আবার চালু করলে তো চরম উপকার হতো।

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘কুকুরের কামড়ে যেন জলাতঙ্ক রোগ না ছড়ায়, সে জন্য একসময় পৌরসভা থেকে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হতো। সেটা কি কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া হতো, না কি পৌরসভার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেওয়া হতো—আমার জানা নেই। তবে যেহেতু পৌরসভায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যেভাবেই হোক ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাদিয়া তাসনিম মুনমুন বলেন, ‘আমি যোগদানের পরই জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক এআরভির চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। টিকা সরবরাহ পেলেই বিনা মূল্যে দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত