রাবির হলে ছোট ভাইয়ের সামনে বড় ভাইয়ের পেটে ছুরি, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ১৫: ২৩
Thumbnail image

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হলে পেটে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁর কক্ষে কলেজপড়ুয়া আপন ছোট ভাই ছিল। এই ছুরির ঘটনায় একে অপরকে অভিযোগ করেছেন দুই ভাই। 

গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মখদুম হলের ৩৪১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর আহত ওই শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই শিক্ষার্থীর নাম জয়দেব দাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায়। ঘটনার সময় ওই কক্ষে ছিল তাঁর ছোট ভাই দীপ্র দাস। সে নোয়াখালীর চৌধুরী এসি কলেজের শিক্ষার্থী। 

প্রত্যক্ষদর্শী এবং হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে চিৎকার শুনে আশপাশের শিক্ষার্থীরা ৩৪১ নম্বর রুমের সামনে আসেন। এ সময় তাঁরা জয়দেবের বুকের নিচে ছুরি ঢুকে থাকতে দেখেন। তিনি নিজের বুকে ছুরিকাঘাত করছিলেন এবং তার ছোট ভাইয়ের দিকে ইশারা করে বলতে থাকেন—‘তুই মেরেছিস’। এই অবস্থায় হলের কয়েকজন তাঁকে ধরাধরি করে ছুরি বের করেন। পরে বুকে কাপড় বেঁধে তাঁকে হাসপাতালে নেন তাঁরা। 

আহত জয়দেবের রুমমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে জয়দেব মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। তিনি বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন। তবে বিভাগের অ্যাসাইনমেন্টসহ কিছু কাজ থাকায় যেতে পারেননি। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় তার ছোট ভাই ক্যাম্পাসে এসেছে। তারা দুই ভাই একসঙ্গে দুপুর ও রাতের খাবারও খেয়েছিল। তারপর হঠাৎ করেই রাতে এ ঘটনা ঘটে।’ 

এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর ছোট ভাই দীপ্র দাস আজকের পত্রিকাকে বলে, ‘আমি গতকালই দাদার কাছে এসেছি। আমরা রাতে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে দুজন দুই বেডে শুয়ে পড়েছিলাম। একসময় কেউ একজন দরজায় নক করলে আমি দরজা খুলে দিই। তখন আমার পেছনে দাঁড়িয়ে দাদা নিজের বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিলেন আর আমাকে দোষারোপ করছিলেন। তখন আমি তাঁকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু পারছিলাম না। তখন অনেক ভয় পেয়েছিলাম। এরপর কয়েকজন ভাই এসে ছুরিটা বের করেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’ 

ছুরিকাঘাতের খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন হলে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ওই কক্ষ পরিদর্শন করেন। পরে পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব এবং মতিহার থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক পারভেজ কক্ষ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় ওসি আঘাত করা ছুরি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। 

এ বিষয়ে শাহ্ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘এই দুর্ঘটনার খবর শোনামাত্রই আমি হলে চলে এসেছি। জয়দেবের রুমমেট এবং আশপাশের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পারলাম, সে মানসিকভাবে অসুস্থ। সে জন্য তার ছোট ভাই বাড়ি থেকে তাকে নিতে এসেছে। তার বাবাও আসবে। প্রাথমিকভাবে আমরা তার কক্ষ সিলগালা করেছি। মতিহার থানার ওসি এসে কক্ষ পরিদর্শন করে ছুরিসহ কিছু আলামত নিয়ে গেছেন। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আমরা এ ঘটনা খতিয়ে দেখব।’ 

এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক পারভেজ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। তদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত