দীঘিতে আর টলমলে জল নেই

নওগাঁ প্রতিনিধি
Thumbnail image

ছায়া-সুশীতল দীঘিটির শান্ত পানিতে একসময় পদ্মফুল ফুটত। মেলা বসাত পরিযায়ী পাখিরা। কিন্তু এখন আর দীঘিতে জল টলমল করে না। নেই গাছের সুশীতল ছায়া। উড়ে গেছে অতিথি পাখিরা। প্রাকৃতিক কোনো কারণে এমনটি হয়নি, স্রেফ উন্নয়নের নামে সংকটে ফেলা হয়েছে নওগাঁর ধামইরহাটের আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানকে।

ঐতিহাসিক আলাতদীঘির পাড় থেকে পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে অন্তত ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত বছরের বিশাল এক প্রাকৃতিক শালবন। ২০১১ সালে আলতাদীঘি শালবনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, শালবনের মধ্যে অবস্থিত আলতাদীঘি সংস্কারের নামে মাত্র কয়েক মাসে দীঘির চারপাশের হাজারো গাছ কেটে উজাড় করেছে বন বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় বন ঘেঁষে দীঘির পাশ দিয়ে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস, পর্যটকদের সুবিধার্থে রেস্টহাউস, পিকনিক কর্নার, পার্ক, টয়লেটসহ বেশ কিছু স্থাপনা তৈরির প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দীঘির দক্ষিণ পাড়ে তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৭০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার।

শালবনে ঘুরতে আসা তানজিম হোসেন বলেন, দীঘির চারপাশে গাছগুলো কাটায় এখন মনে হচ্ছে, কোনো মরু অঞ্চলে এসেছি। আগে দীঘিরপাড়ে এলে প্রাণ জুড়াত, এখন রোদ-গরমে হাঁসফাঁস লাগছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হিরক মণ্ডল বলেন, সম্প্রসারণের নামে ২০১৪-১৫ সালের দিকে বনের ভেতরে লাখখানেক বেতের চারা রোপণ করা হয়েছে। সেই বেতগাছ এখন উদ্যানের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্য প্রাণীরা ভেতরে আর বসবাস করতে পারে না। চারপাশে শুধু বেতের কাঁটা।

বন বিভাগ সূত্র বলেছে, সম্প্রতি আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত দীঘি ৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনঃ খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। দীঘির পানি শুকিয়ে এ বছর জানুয়ারি মাসে খনন শুরু হয়েছে। এখন খনন শেষ।

ধামইরহাট প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা ও প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল মালেক বলেন, পাঁচ-সাত বছর আগেও শালবনে শিয়াল, মেছোবাঘ, গুইসাপ, মনিয়া পাখি, ঘুঘু, বুনো হাঁসসহ শত শত প্রজাতির প্রাণী ও পাখি দেখা যেত। সেগুলো এখন শুধুই অতীত।

পরিবেশকর্মী নাইস পারভীন বলেন, গত দুই বছরে অন্তত ১০ বার আগুন লেগেছে শালবনে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা আজও পরিষ্কার নয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, গাছ কেটে ফেলায় পশুপাখিরা এলাকা ছেড়েছে। দীঘি খননের কারণে জলজ উদ্ভিদগুলো ধ্বংস হয়েছে। বনে একেক পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও চিন্তিত করার মতো।

ধামইরহাট বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, দীঘির চারপাড়ে যে গাছ কাটা হয়েছে, সেগুলো ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি জাতের। নিয়ম মেনে মোট ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৬ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে ১ হাজার ১০২টি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। নতুন করে গাছ রোপণ করা হবে। প্রাকৃতিক শালবনে বেত রোপণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাছ চুরি রোধে এটি করা হয়েছিল। এখন অতিরিক্ত বেতগাছের কারণে কিছু কিছু গাছের ক্ষতি হচ্ছে। শালবনে বারবার আগুন লাগার বিষয়েও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

আর সামাজিক বনায়ন নওগাঁ জোনের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মেহেদিজ্জামান বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পর্যটনসুবিধা বাড়বে, দৃষ্টিনন্দন হবে আলতাদীঘি শালবন।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, প্রকল্পের যে মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, তার থেকে যদি অতিরিক্ত কিছু করে বন ও পরিবেশের ক্ষতি করা হয়, তবে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় শালবনের মধ্যে অবস্থিত আলতাদীঘি সংস্কারের নামে চারপাশের হাজারো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। দীঘির পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে কংক্রিটের স্থাপনা। এতে গাছগাছালিতে ভরা শালবন যেন মরুভূমির রূপ ধারণ করেছে। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত