খামারি ঠকিয়ে বেশি দামে দুধ বিক্রি করে মিল্ক ভিটা

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১: ২১
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৪১
Thumbnail image
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েরপুর ইউনিয়নের বিআঙ্গরু এলাকার গো বাথান। ছবি: আজকের পত্রিকা

সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করছে লিটারপ্রতি ৪৫-৪৭ টাকায়। অথচ দুধ সংগ্রহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ খোলাবাজারে ৭০-৮০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মিল্ক ভিটার প্যাকেটজাত ১ লিটার দুধের দাম ৯০ টাকা। অন্যান্য অনেক কোম্পানিও ৯০-১০০ টাকায় দুধ বিক্রি করে। সে হিসাবে মিল্ক ভিটা বেশি লাভ করছে।

খামারিরা বলছেন, খৈল, ভুসি, মসুর, ফিড, ওষুধসহ গোখাদ্যের দাম বাড়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে খামারিদের দুধের দাম বাড়িয়ে থাকে। কিন্তু মিল্ক ভিটা বেশি দাম না দেওয়ায় তাঁদের সমিতিভুক্ত খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ক্রমাগত লোকসানের মুখে মিল্ক ভিটার সমিতিভুক্ত খামারিরা।

মিল্ক ভিটা ও খামারি সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা করা হয় এই অঞ্চলে। এরপর সেখানে গড়ে ওঠে শত শত গরুর খামার। বর্তমানে এসব খামারের ৪ লক্ষাধিক গবাদিপশু থেকে উৎপাদিত দুধ দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করছে। আর এই গাভি পালন করে সচ্ছলতা এসেছিল এখানকার মানুষের।

কিন্তু বর্তমানের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। ক্রমাগত গোখাদ্য, ওষুধসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলেও মিল্ক ভিটা দুধের দাম না বাড়াচ্ছে না। এ ছাড়া উচ্চমূল্যে কেনা অধিকাংশ গোখাদ্যে রয়েছে ভেজাল। আর লোকসানে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় গবাদিপশু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক খামারি।

মিল্ক ভিটা বাঘাবাড়ীঘাট কারখানার আওতায় এই এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি সমবায় সমিতি। এসব সমিতির আওতায় বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার গবাদিপশু লালনপালন করছেন সমিতির সদস্যরা। এসব গো-খামার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করছে মিল্ক ভিটা। বর্তমানে খামারিদের প্রতি লিটার দুধের দাম দেওয়া হচ্ছে ৪৫-৪৭ টাকা, যা অন্যান্য দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান ও খোলাবাজারের চেয়ে ৩৫-৩৮ টাকা কম।

শাহজাদপুর উপজেলার দক্ষিণ বাঙলাপাড়া দুগ্ধ সমবায় সমিতির সদস্য আব্দুল করিম সরদার বলেন, ‘গরু-বাছুর পেইলে অব্যেশ, তাই পালি। মিল্ক ভিটা ৪৫-৪৭ টাকা লিটারে দাম দেয়। গরু পালা কষ্ট হয়ে পড়েছে। বাপ-দাদার অভ্যেস, তাই ছাড়তে পারি না। ভুসি, খৈল, মসুর, ফিড সবকিছুর প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকা সর্বনিম্ন দাম। খরচ অনেক বেশি বলে গরু পালা আমাদের কঠিন হয়ে গেছে।’

খামারি আজিজুল সরকার বলেন, ‘খৈল-ভুসির দাম আগে কম ছিল; এখন বস্তাপ্রতি ১৮০০-২০০০ টাকা। দুধে পোষায় না। দুধের দাম যদি ৬৫-৭০ টাকা হইত তাহলে আমাদের পোষাইত। কিন্তু এখন আমাদের ঘাটতি হচ্ছে। গরু পালা হচ্ছে; কিন্তু আমারে কিছুই থাকছে না।’ মিল্ক ভিটা লাভ খেয়ে নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

পদ্মমারী আন্নির বাথান এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘খাদ্যে এখন অনেক ভেজাল আছে। কীভাবে আমরা সঠিক খাদ্য পাব, সেইটা সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের দাবি, দুধের দাম বাড়ানো এবং গোখাদ্যের মূল্য কমানো, তাহলে খামারিরা বাঁচবে।’

মিল্ক ভিটার পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মনির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে মিল্ক ভিটা ধ্বংস করা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর চাচাকে মিল্ক ভিটার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা কেন্দ্রীয় সমিতি বাতিল করব। চালু করা হবে প্রাথমিক সমিতি। খামারিদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে স্বল্পপরিমাণে লিজমূল্যে শত শত বিঘা গোচারণ ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। খামারিদের রক্ষা করাই হচ্ছে আমাদের চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে গোখাদ্যের মূল্য অনুযায়ী দুধের দাম নির্ধারণ করা হবে। আগে ভর্তুতি দেওয়া হতো। সেটাও বিগত সরকারের আমলে বন্ধ করা হয়েছে। আমরা ভর্তুকি দেব। খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করব। খামারি যেন দুধের ন্যায্য মূল্য পান, এজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত