দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে মারধর, এমপি–মেয়রসহ আ.লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

রংপুরের বদরগঞ্জে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এমপি আহসানুল হক চৌধুরী ওরফে ডিউক চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট, পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরী, সাবেক মেয়র উত্তম কুমার সাহা, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক  পলিন চৌধুরীর বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও দুই ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলায় সংঘর্ষে এক সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। 

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ওই জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হলেও কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে দেখা যায়নি। বিকেল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা চলে গেলে বদরগঞ্জ থানা-পুলিশ ওই নেতাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। পরে বদরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনেন। 

জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে বদরগঞ্জ পৌর শহরের জিতেন দত্ত বিজয় মঞ্চের কাছে অবস্থান নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা তাদের মুখোমুখি হয়। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই কর্মসূচি থেকে দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে মারধর করে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তাঁরা ওই নেতাদের ধাওয়া করেন। এ সময় নেতা–কর্মীরা রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরীর জিতেন দত্ত বিজয় মঞ্চ সংলগ্ন বাসভবনে আশ্রয় নেন। শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে হাতে লাঠি, ইট পাটকেল নিয়ে ওই নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এ সময় একটি কারসহ নেতা–কর্মীদের অন্তত ৪০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। হামলার শিকার হন ভোরের কাগজের বদরগঞ্জ প্রতিনিধি মাহফুজ রহমানসহ (৬১) অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও নেতা–কর্মী। 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীরা স্থানীয় নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: আজকের পত্রিকানাম প্রকাশ না করার শর্তে বদরগঞ্জ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাতে আমরা নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে যেন কোনো নেতা–কর্মী বাধা না দেন সেটি বলা হয়। যদি শিক্ষার্থীরা অন্যায়ভাবে কোনো ভাঙচুর চালায় আমরা তা মোকাবিলা করব। কিন্তু আমাদের জবাবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছিলেন, আপনারা থানা সামলাবেন, আমরা মাঠ সামলাব। 

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যদি আজ শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম নেতা–কর্মীরা হামলা না চালাতেন, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।’ 

আক্রান্ত নেতা–কর্মীদের বাড়িতে দেরিতে আসা প্রসঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কয়েক হাজার শিক্ষার্থী হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে, সেখানে আমরা কয়েকজন পুলিশ সদস্য গিয়ে কী করব! যে নেতারা মাঠ সামলাতে চেয়েছিলেন তারা আজ নিজেদের বাড়িঘর সামলাতে ব্যর্থ হলেন!’ 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীরা স্থানীয় নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: আজকের পত্রিকাবদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান কবির বলেন, ‘নেতাদের কারণে আজ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বদরগঞ্জ। যদি তারা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম হামলা না চালাতেন তাহলে এমন পরিস্থিতি দেখতে হতো না।’ 

ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. যাদবেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘আমরা আহত ১৭ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। একজন ভর্তি রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত